অনলাইন ডেস্ক : এই একটা শিরোপা পিএসজিকে জেতানোর পণ নিয়ে তিন বছর আগে বার্সেলোনা ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন প্যারিসে। অনেক সমালোচনা হয়েছিল তাঁর। অনেকে বলেছিলেন, টাকার জন্যই প্যারিস গেছেন নেইমার।

সমালোচনাগুলোর জবাব দেওয়া হয়নি। লিওনেল মেসির ছায়া থেকে বেরিয়ে নিজের মতো করে একটা ক্লাবকে ইউরোপসেরা করার স্বপ্ন পূরণ হয়নি ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের। তা-ও এমন ক্লাব, নয় বছর আগে কাতারের তেলেধন্য হয়ে ফ্রান্সে ছড়িয়ে ঘোরালেও ইউরোপে যারা নাদান। ইউরোপে যারা কূলীন হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল। যে স্বপ্নের সারথি ছিলেন নেইমার।

লিসবনে আজ সে স্বপ্নের জ্বলাঞ্জলি হলো নেইমারের চোখের জলে। ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চ আরেকবার বুঝিয়ে দিল, ইউরোপের কূলীন হতে ঐতিহ্য লাগে। খুব কাছে এসেও নেইমার-এমবাপ্পেদের ফিরতে হলো খালি হাতে। জলমাখা শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখতে হলো মাত্রই ইতিহাস রাঙানো বায়ার্ন মিউনিখের উচ্ছ্বাস। পিএসজিকে ১-০ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে ষষ্ঠবারের মতো ইউরোপসেরা হলো এই মৌসুমে বুলডোজারের মতো একের পর এক প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে আসা বায়ার্ন!

ফাইনালে আজ আর প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতে পারেনি মোটেও বায়ার্ন। তবে তা দিয়ে কী যায়-আসে! শিরোপা তো এসেছে, তাতে ইতিহাস তো গড়েছে হান্সি ফ্লিকের দলটা! মৌসুমে জার্মান লিগ ও জার্মান কাপের পর চ্যাম্পিয়নস লিগ – তিন শিরোপার তিনটিই জিতে ‘ত্রিমুকুট’ হলো বায়ার্নের। নিজেদের ইতিহাসের দ্বিতীয়বারের মতো। এর আগে ২০১৩ সালেও ত্রিমুকুট জিতেছিল বায়ার্ন।

ইউরোপে আর একটি ক্লাবেরই একের বেশিবার ত্রিমুকুট জেতার রেকর্ড আছে – কোয়ার্টার ফাইনালে যাদের ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত করে এসেছিল বায়ার্ন, সেই বার্সেলোনা – ২০০৯ ও ২০১৫ সালে। এর মধ্যে শেষবার মেসি-সুয়ারেজের সঙ্গে মিলে বার্সেলোনাকে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতিয়েছিলেন নেইমারই।

তবে একটা জায়গায় বার্সা তো নয়ই, এমনকি ইউরোপসেরা টুর্নামেন্টটির ‘রাজা’ রিয়াল মাদ্রিদকেও টেক্কা দিয়ে গেছে বায়ার্ন। যে কীর্তি চ্যাম্পিয়নস লিগ তার এত বছরের ইতিহাসে দেখেনি, তা-ই আজ করে দেখিয়েছেন লেভানডফস্কি-মুলাররা। শিরোপা জেতার পথে ১১ ম্যাচে এটি ছিল বায়ার্নের ১১তম জয়। সব ম্যাচ জিতে শিরোপা এর আগে আর জেতেনি কোনো দল।

এর মধ্যে আজকের জয়টিই সবচেয়ে কষ্টেসৃষ্টে ছিল? বলা যায়। এই ১১ ম্যাচে ৪৩ গোল করেছে বায়ার্ন, এর আগে কোনো ম্যাচেই দুইয়ের কম গোলে জেতেনি। দুই গোল করে জিতেছেই মাত্র এক ম্যাচে। বাকি সব ম্যাচে অন্তত করেছে তিন গোল!

অথচ আজ দুই দলের ফর্ম বিবেচনায় গোল-উৎসবই ছিল পূর্বাভাস। পিএসজিতে নেইমার-এমবাপ্পেরা আছেন, সেমিফাইনালেই দুর্দান্ত খেলে আরেক জার্মান দল লাইপজিগকে যাঁরা উড়িয়ে দিয়েছেন ৩-০ গোলে। আর বায়ার্ন? টুর্নামেন্টজুড়েই তো স্টিমরোলার চালিয়েছে। বার্সাকে কোয়ার্টার ফাইনালে ৮-২ গোলে বিধ্বস্ত করার পর সেমিফাইনালে লিওঁকে হারিয়েছে ৩-০ গোলে।

কিন্তু গোল উৎসব যদি হয় প্রত্যাশিত, সে ক্ষেত্রে পর্বতের হয়েছে মুষিক প্রসব। দুই দলই যেন একে অন্যকে রুখতে গিয়ে নিজেদের খেলা সেভাবে খেলতে পারেনি। বায়ার্নের রক্ষণ উঁচুতে উঠে খেলে, যেটিকে হাইলাইন ডিফেন্স বলে, সেমিফাইনালে লিওঁ বেশ কবার সেটির সুবিধা নিয়ে বায়ার্নকে ভুগিয়েছে। পিএসজি আজ সেটির ফায়দা তোলার জন্যই বারবার লম্বা পাসে ‘ফ্রি’ করে দিতে চেয়েছে নেইমার-এমবাপ্পেদের। লাভ একেবারে হয়নি, তা নয়। তবে সুযোগগুলো কাজে লাগানো হয়নি।

এর মধ্যে দুই অর্ধের একেবারে শেষের দিকে দুটি সুযোগ তো পিএসজি সমর্থকদের দুঃস্বপ্ন দেখাবে অনেকদিন। প্রথমার্ধের একেবারে শেষের দিকে – ম্যাচ তখনো গোলশুন্য – বায়ার্নের রক্ষণের ভুলে বল পেয়ে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়া করেন এমবাপ্পে। বল যখন পেলেন এমবাপ্পে, তিনি বায়ার্ন বক্সে পোস্ট থেকে ৫-৬ গজ দূরে। কিন্তু বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি স্ট্রাইকার চাপে মাথা ঠান্ডা রাখতে পারলেন কই! শুধু বায়ার্ন গোলকিপার ম্যানুয়েল ন্যয়ারকে ফাঁকি দিতে পারলেই গোল, এমন সুযোগে এমবাপ্পের পা থেকে বেরোল নিরীহদর্শন এক শট, তা-ও পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ন্যয়ারের গায়ের দিকে।