নৃত্যশিল্পী অরুণা হায়দার

শিল্পী সৃষ্টি হয় না বা তৈরিও করা যায় না, বরং বলা যেতে পারে তাঁরা জন্ম থেকেই শিল্পী। সাধনার মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের এই গুণকে উচ্চতর শিল্পে উন্নীত করেন এবং নিজেদেরকে প্রস্ফুটিত করেন শৈল্পিক নান্দনিকতায়। শিল্পের একটি অনন্য মাধ্যম হলো নৃত্যকলা। নাচ এমন একটি মাধ্যম যা শিল্পীর দেহ ও মন’কে এক সুতোয় বেঁধে শিল্পের এমন একটি পর্যায়ে নিয়ে যায় এবং এমন একটি ঘোর সৃষ্টি করে যা দর্শকদের জন্য হয়ে ওঠে উপভোগ্য এবং দৃষ্টি নন্দন। নিবেদন ও গ্রহণের মাধ্যমে সৃষ্টি হয় এক অপার্থিব পরিবেশ।
টরন্টোর জনপ্রিয় নৃত্যশিল্পী অরুণা হায়দার সাংস্কৃতিক জগতে এক উজ্জ্বল নাম। তিনি ভারত উপমহাদেশের প্রথিতযশা নৃত্যশিল্পী পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছে নৃত্যের তালিম নিয়েছেন। নৃত্য পরিবেশন করেছেন বাংলাদেশ, ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে। অরুণার মত তাঁর মা সুলতানা হায়দারও বাংলাদেশের নৃত্যকলায় এক স্বনামধন্য নাম। আশির দশকে বাংলাদেশে সাদা-কালো টেলিভিশনে তাঁদের দ্বৈত উপস্থিতি দর্শকদের কাছে খুবই প্রশংসিত হয়েছিল। শিল্পী অরুণার হায়দারের নৃত্যকলা ও জীবন নিয়ে তাঁর সাথে গল্প করেছেন টরন্টোর অতি পরিচিত সাংকৃতিক কর্মী শারমীন শরীফ শর্মী। ‘বাংলা কাগজ’ এর পাঠকদের জন্য অরুণা হায়দার এবং শারমীন শরীফ শর্মী’র কথোপকথনটি উপস্থাপন করা হলো।

শর্মী : কেমন আছো অরুণা, আন্টি কেমন আছেন?
অরুণা : ভালো আছি শর্মী, মা ও ভালো আছেন, এখন তো আমার কাছেই আছেন এখানে।
শর্মী : তাই? ভালোই হলো, মা কাছে থাকলে কত আনন্দ তাই না? তোমার কাছ থেকে অনেক গল্প শুনবো আজকে। তোমার সাথে অনেক জায়গাতে দেখা হয়, দাওয়াত খাই একসাথে কিন্তু এভাবে আড্ডা হয়নি কখনো। চলো আজ তোমার কিছু গল্প শুনি।
অরুণা : ঠিক বলেছ এভাবে আমাদের আড্ডা হয়নি কখনো চলো, কি শুনতে চাও জিজ্ঞেস করো।

শর্মী : প্রথমে বল নাচের জগতে কি করে এলে?
অরুণা : মজার বিষয় হল নাচের জগতে আমি না বরং আমার মা আসতে চেয়েছিলেন।

শর্মী : একটু খুলে বল।
অরুণা : অনেক লম্বা গল্প কিন্তু!

ছোট্ট অরুণা হায়দার

শর্মী : পুরো সময় তোমার জন্য, যতক্ষণ লাগে লাগুক, তুমি বল।
অরুণা : আমার মায়ের বিয়ে হয়েছিল খুব অল্প বয়সে, আমি যখন মায়ের কোলে আসি তখন মার বয়স ১৪র মত হবে। মায়ের বয়স ১৭/১৮ হতে হতে আমরা তিন ভাই বোন এসে গিয়েছি এই পৃথিবীতে। মা ছোট বেলা থেকেই নাচের পাগল ছিলেন। করাচি স্কুলে যখন পড়তেন স্কুলের অনুষ্ঠানে নাচ হলে মা সেটা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। এরপরে ঢাকায় কামরুন্নেসা স্কুলে লায়লা হাসান ছিলেন তাঁর সিনিয়র ক্লাসে, তিনি নাচতেন সেটাও মা মনোযোগ দিয়ে দেখতেন। এঁদের নাচ দেখে মা বাসায় নাচতেন এবং রীতিমত নাচের চর্চা করতেন একা একা। আমরা তখন থাকতাম অভিসার সিনেমা হলের পেছনে, হাটখোলা রোডে, কাছেই ছিল অভয়দাশ লেন যেখানে ছিল ‘জাগো আর্ট সেন্টার’ এবং সেখানে নাচ শেখাতেন গওহর জামিল, তিনি এবং রওশন জামিল এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। সেই সময়ে একটা সিনেমা মুক্তি পায়, ‘বাদি থেকে বেগম’ এবং, সেই সিনেমায় ববিতার একটি উচ্চাঙ্গ নৃত্য ছিল যার পরিচালক ছিলেন গওহর জামিল ও তাঁর বড় মেয়ে কান্তা জামিল, সেই নাচ দেখে মায়ের ঘুম হারাম হয়ে গেল। মায়ের খুব শখ হলো সে সেখানে নাচ শিখবেই। কিন্তু আমার বাবার পরিবার ছিলেন অত্যন্ত গোঁড়া এবং আমারদের সব সিদ্ধান্ত আসত আমার বড় চাচার কাছ থেকে যাকে আমরা বড় আব্বা বলে ডাকতাম। মা তাঁর মনের ইচ্ছে আব্বাকে ব্যক্ত করলেন কিন্তু আব্বা স্রেফ বলে দিলেন তিনি এ সবের মধ্যে নেই, বড় চাচার কাছ থেকে অনুমতি নিতে। আমরা প্রতি ঈদের পাবনা যেতাম সবাই মিলে ঈদ করবার জন্য, সে বছরেও গেলাম।

শর্মী : বাপরে, এত পুরো সিনেমার গল্প, তারপরে কি হল বল।
অরুণা : হ্যাঁ রে, আসলেই তাই! তো সে বারে পাবনা গিয়ে ঈদের পরে ঢাকায় ফিরে আসার আগে মা ঠিক করলেন বড় আব্বার কাছ থেকে পারমিশন নেবেন। মা দোয়া দরূদ পড়ে যখন বড় আব্বার রুমে ঢুকছেন তখন বাড়ির বাকি সব আত্মীয়-স্বজন বড় আব্বার রুমের বাইরে জড় হল কি হয় দেখার জন্য, বড় আব্বার চীত্কার ও বকা শুনবার জন্য। মা দুরু দুরু বুকে রুমের মধ্যে ঢুকে গেলেন এবং চারিদিকে তখন পিনপতন নিস্তব্ধতা, সবাই অপেক্ষা করছে মায়ের কালো মুখটি দেখার জন্য। কিছুক্ষণ পরে মা রুম থেকে বেরিয়ে এলেন হাসতে হাসতে, মা কারো সাথে কথা না বলে গট গট করে নিজের রুমে ঢুকে গেলেন আর সবাই হাঁ করে মায়ের গমন পথে তাকিয়ে রইলো।
শুরু হল মায়ের নতুন পথচলা। আমি তখন ক্লাস ওয়ানে পড়ি। মা একদিন আমাকে নিয়ে গিয়ে হাজির হলেন জাগো আর্ট সেন্টারে। সেখানে গিয়ে মা দেখলেন সব শিক্ষার্থীর বয়স ৬ থেকে ১০ বছর। মা দমে গেলেন কিন্তু আমাকে ভর্তি করে দিলেন। এভাবে শুরু হল আমার নাচের হাতেখড়ি।

মঞ্চে নৃত্যরত অরুণা হায়দারের ছাত্রীরা

শর্মী : বুঝলাম আন্টির ইচ্ছে ছিল তোমরা দু’জনেই নাচ শিখবে কিন্তু ভর্তি হলে তুমি একা, আন্টি এরপরে কি করলেন?
অরুণা : এর মধ্যে হল কি, আমার ঢোকার ৫/৬ মাস পড়ে ইউনিভার্সিটির কিছু মেয়ে এসে নাচ শেখার জন্য ভর্তি হল সেখানে এবং প্রায় ওই একই সময় আমার এক সহ শিক্ষার্থীর নানি, ইয়াং নানি অবশ্য তিনিও ভর্তি হলেন নাচ শিখবেন বলে। ব্যাস আমার মা’কে আর পায় কে, সাথে সাথে তিনিও ভর্তি হয়ে গেলেন জাগো আর্ট সেন্টারে নাচ শেখার জন্য। শুরু হল আমাদের মা মেয়ের নতুন ইতিহাস। মায়ের বয়স তখন হবে ২০।

শর্মী : কি অসাধারণ তোমাদের গল্প অরুণা! এরপরে কি করলে?
অরুণা : বড় আব্বা অনুমতি দিলেও আমার দাদা বাড়ির অনেকে মায়ের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়েছে তখন, কিন্তু মা এসবের তেমন পাত্তা দেয়নি। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা গুরুজীর প্রিয় ছাত্রি হয়ে গেলাম। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা গুরুজীকে বেশি দিন পাইনি। ৮০ সালের সেপ্টেম্বরে এক সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুজী প্রাণ হারান।

শর্মী : গওহর জামিল (জন্ম ১৯২৫ – মৃত্যু ২১ সেপ্টেম্বর ১৯৮০, বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত নৃত্যশিল্পী ও জাগো আর্ট সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। তার পূর্বনাম ছিল গণেশচন্দ্র নাগ। ১৯৫২ সালে রওশন জামিল’কে বিয়ে করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে নাম নেন গওহর জামিল) যখন মারা যান তখন তাঁর বয়স মাত্র ৫২ বছর ছিল। বাংলাদেশের নৃত্যকলায় কি অপূরণীয় ক্ষতি সেদিন হয়েছিল তা বলবার অপেক্ষা রাখে না। শ্রদ্ধেয় গওহর জামিলের প্রয়াণের পরে কি করলে তোমরা?
অরুণা : আমার বয়স যখন ১৭/১৮ আমি লম্বায় মায়ের সমান হয়ে গেলাম তখন মানুষ আমাদের দুই বোন বলে ভুল করত। আমরা তখন বিটিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচতে শুরু করলাম। আমাদের জুটি প্রথম জনপ্রিয় হয় ‘অন্তরালে’ ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে। এরপরে আমরা নাচ করলাম ‘নৃত্যের তালে তালে’ আনুষ্ঠানে। মা-মেয়ের জুটি তখন সবার চেনা, সবার প্রিয়। আমরা তখন অনেক রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার আমন্ত্রণ পেয়েছিলাম। এরপরে আমরা ‘পারফর্মিং আর্টস একাডেমী’ তে ভর্তি হলাম পরে যেটা হয়ে গেল শিল্পকলা একাডেমী এবং সেই সাথে ছিল আমার পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্ততা।

শর্মী : আমি জানি তুমি ইন্ডিয়াতেও নাচ নিয়ে পড়াশুনা করেছ। সেটা কবে এবং কোথায় করলে?
অরুণা : ১৯৯১ তে আমি স্কলারশীপ পেয়েছিলাম ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনশীপ’ দিল্লিতে। সেখানে গিয়ে ‘কত্থক কেন্দ্র’ ও ‘শ্রীরাম ভারতীয় কলা কেন্দ্রে’ নাচ শিখতে শুরু করলাম।

শর্মী : কত দিনের স্কলারশীপ পেলে?
অরুণা : ৩ বছরের স্কলারশীপ ছিল সেটা। এরপরে আমার পারফরমেন্স ও নিষ্ঠা দেখে সেটা বাড়িয়ে আরো ২ বছর করা হল, তো স্কলারশিপটা গিয়ে মোট ৫ বছরে দাঁড়িয়েছিল।

ছাত্রীদের সাথে নৃত্যরত অরুণা হায়দার

শর্মী : স্কলারশীপ শেষ করে দেশে ফিরে এলে?
অরুণা : না, আমার স্কলারশীপ শেষ হতে স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল আমার ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর চেষ্টা করলেন এবং আমাকে আরো কিছুদিন রেখে দিলেন, আমি আমার গুরুজী পণ্ডিত বিরজু মহারাজের তত্ত্বাবধানে কাজ পেয়ে গেলাম। গুরুজী একটা ড্যান্স ড্রামা গ্রুপের সাথে মিলে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং ইন্ডিয়ার বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে অনুষ্ঠান করতেন। সেই দলের সাথে আমি থেকে গেলাম আরো ৪ বছর।

শর্মী : ইন্ডিয়াতে তুমি কার কার কাছে নাচের তালিম নিয়েছো?
অরুণা : প্রথমে গিয়েছিলাম পণ্ডিত বিরজু মহারাজের কাছে উচ্চাঙ্গ নৃত্যের তালিম নিতে। তিনি ছিলেন ভারতে কত্থক নৃত্যে লক্ষ্ণৌ হতে আগত কালকা-বিনন্দাদিন ঘরাণার একজন প্রধান শিল্পী। পণ্ডিত বিরজু মহারাজ ১৯৩৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন এবং ২০২২ সালের ১৬ই জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। এরপরে আরো কত্থকের তালিম নেই গুরুজি পন্ডিত রামমোহন মহারাজের কাছে। পন্ডিত রামমোহন মহারাজ কত্থক নৃত্যের লক্ষ্ণৌ ঘরানার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা। ‘কালকা-বিন্দাদিন’ ঘরানার কথকের মর্যাদাপূর্ণ পরিবারে তাঁর জন্ম। তিনি কিংবদন্তি পণ্ডিত সম্ভু মহারাজের পুত্র। তারপরে গুরুজী রানি খানম জীর। রানী খানম আজ কথকের লক্ষ্ণৌ ঘরানার সবচেয়ে সংবেদনশীল এবং বিচক্ষণ নৃত্যশিল্পীদের একজন। তাঁর কাছে শিখেছিলাম কত্থক। আমি ছৌ নাচ শিখেছিলাম গুরু লোকনাথ ধাধার কাছে দিল্লী এবং উড়িষ্যাতে, গুরুজির পদবি হল ধাধা।

শর্মী : এই যে আরো চার বছর থাকলে, এই সময় কি কি করলে
অরুণা : এই সময়ে আমি ‘শ্রীরাম ভারতীয় কলাকেন্দ্র ব্যালে ট্রæপে’র সাথে এবং ‘কত্থক কেন্দ্রে’র সাথে সমস্ত ইন্ডিয়ার ঘুরে ঘুরে নাচ করেছি এবং দেশের বাইরেও অজস্র নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। কিছু নাটকের কাজ করেছি তখন, ওখানে ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামা আছে, সেখানকার এক শিক্ষকের নাম হল রীতা গাংগুলি বিয়ের পরে পদবী হয়েছে কোঠারী। সেই রীতা কোঠারির সাথে ড্যান্স ড্রামার কাজ করেছি। এছাড়া দিল্লী দূরদর্শন এ অভিজিত লাহিড়ীর বিপরীতে একটা হিন্দী নাটকে অভিনয় করি এবং মঞ্চে দিল্লী ও বোম্বেতে ‘মৃচ্ছকটিক’ নাটকে বেশ কয়েকটি শো’তে অভিনয় করি।

শর্মী : চার বছর পরে কি তোমার ইন্ডিয়াতে থাকা আরো বাড়িয়ে নিলে, না দেশে ফিরলে?
অরুণা : না, আর থাকলাম না। ৯৬ র দিকে আমি দেশে ফিরে এলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল দেশে ফিরে আমি পুরো বেকার হয়ে গিয়েছিলাম বলতে পার। কোন কাজ পাচ্ছিলাম না কোথাও। তথাকথিত মামা বা খালুদের কাছে দেন দরবার করলে আমার কাজের অভাব হত না কিন্তু আমি আমার যোগ্যতা দিয়ে কাজ পেতে চেয়েছিলাম। গুরুজি গওহর জামিল আমাদের শিখিয়েছিলেন চাচা, মামার কাছে না গিয়ে নিজের যোগ্যতার বলে ইন্ডাস্ট্রিতে জায়গা করে নিতে। ইন্ডিয়াতে আমার কাজের ও যোগ্যতার মাধ্যমে আমি দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছি কিন্তু নিজের দেশে সে যোগ্যতা বা গুণাবলী কোন কাজেই এল না। খুব অভিমান হয়েছিল আমার। সত্যি কথা হল যে এক সময়ে আমার আপন মামাও মন্ত্রী ছিলেন কিন্তু আমি বা আমার মা আমরা কেউ মামার কাছে গিয়ে সুপারিশের জন্য তদবির করিনি কখনো। আমি পুরোপরি দেশে সেটেল হতে না পেরে ইন্ডিয়াতে যাওয়া এবং অনুষ্ঠান করা অব্যহত রেখেছিলাম এবং পাকাপোক্তভাবে দেশে ফিরেছিলাম ২০০০ সালে। ৯৭ পর্যন্ত আমি ‘শ্রীরাম ভারতীয় কলাকেন্দ্র ব্যালে ট্রুপে’র সাথেই ছিলাম এবং ৯৭ এর পরে আমি ফ্রি-ল্যান্সার হয়ে গেলাম। এই সময়ে আমি মরিশাসেও কিছুদিন ছিলাম এবং সেখানে ইন্দিরা গান্ধি ইনস্টিটিউটে কিছুদিন নাচ শিখিয়েছি এবং এই স্কুলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দেশে গিয়ে ওয়ার্কশপ করেছি এবং করিয়েছি।

শর্মী : দেশে থাকাকালীন সময় কি কি করলে?
অরুণা : মজার একটা গল্প বলি, বিটিভিতে কোন অনুষ্ঠানের জন্য এর নীচতলায় আমরা রিহার্সাল করতাম। আমাদের ঠিক ওপরতলায় বসতেন বিভিন্ন বিভাগের প্রযোজকরা। আমি আর মা প্রায়ই দেখতাম অনেক আর্টিস্টরা গিফট নিয়ে ওপর তলায় যাচ্ছে কিন্তু আমি আর মা জানতামই না কে বা কারা আছেন সেখানে কারণ আমরা কোনদিন সেখানে যাইনি। এরপরে নৃত্যের তালে তালের প্রযোজক কামরুন্নেসা হাসান এলেন ওপরতলায়, তখন আম্মা আমাকে নিয়ে একদিন ওপরতলায় গিয়েছিল কামরুন্নেসা হাসানের অফিসে।

শর্মী : ‘সুকন্যা নৃত্যাঙ্গন’ কবে শুরু হল?
অরুণা : আম্মা ৯৬তে প্রথম ‘সুকন্যা নৃত্যাঙ্গন’ প্রতিষ্ঠা করেন বাংলাদেশে। আর আমি এখানে শুরু করি ২০০৫-এ।

শর্মী : কানাডায় কবে এলে?
অরুণা : দেশে কিছু করতে না পেরে রাগ করে একসময় ভাবলাম যে দেশে আর থাকব না, বাইরে কোথাও চলে যাব। ২০০০ সালে নজরুল সম্মেলনে আমি আর আম্মা আমারিকার ফ্লোরিডা ষ্টেটে গিয়েছিলাম নাচের আমন্ত্রনে, সেখানে গিয়ে মনে হয়েছিল এদিকে চলে আসতে পারলে ভাল হত। ২০০০ সালের শেষের দিকে কানাডায় রেসিডেন্সির একটা সুযোগ হয় এবং আমি সে সুযোগ লুফে নেই।

নৃত্যশিল্পী অরুণা হায়দার

শর্মী : এখানে এসে কি করলে?
অরুণা : কানাডায় এসে আমি প্রথমে বাংলাদেশ সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সূচনা করি ৩০০০ ড্যানফোর্থে এবং সেখানে গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি, বাংলা শেখানো, কি-বোর্ড শেখানো এবং তবলা শেখানো হত। এভাবে ভালই চলছিল কিন্তু একসময় ল্যান্ডলর্ড এভাবে পুরোটা আর আমাকে দিতে চাইল না, তাঁরা ছোট ছোট রুম করে বিভিন্নজনকে ভাড়া দিতে চাইল। আমি দেখলাম যে আমি পুরোটা আর এফোর্ড করতে পারবো না তখন সব ছেড়ে দিয়ে আমি শুধু নাচের স্কুলটা আকড়ে ধরে থাকলাম এবং তখন নাম বদলে আমি ‘সুকন্যা নৃত্যাঙ্গন টরন্টো শাখা’ প্রতিষ্ঠা করলাম ২০০৫ এ।

শর্মী : এ পর্যন্ত কত স্টুডেন্ট তোমার হাত থেকে বেড়িয়েছে?
অরুণা : ইন্ডিয়া আর কানাডা মিলে ৬০০র মত আর শুধু কানাডায় ২৫০ এর মত স্টুডেন্ট আমার কাছে নাচ শিখেছে। আমার প্রথম ব্যাচের ছাত্রীরা তো প্রায় সবাই স্বামী-বাচ্চা নিয়ে সংসারী।

শর্মী : তাঁদের সাথে যোগাযোগ আছে?
অরুণা : হ্যাঁ, রে, সবার সাথেই যোগাযোগ আছে। আমার নাচের স্কুলটা একটা বিশাল পরিবার, সব বাচ্চা এবং তাদের পরিবারদের সাথে, সবার সাথে সবার যোগাযোগ হয়েছে এবং এখনো আছে। এক সময় আমি আমার বাসায় নাচের স্কুল করেছিলাম, তখন রবিবার সকালে ক্লাস নিতাম। আমি খুব সকালে ঘুম থেকে উঠে বড় বড় হাড়িতে ভাত, ডাল আর একটা তরকারি বাঁ খিচুড়ি রান্না করে ফেলতাম, বাচ্চারা নাচ শিখত যখন তখন মা, বাবারা অপেক্ষা করত বাচ্চাদের জন্য, ক্লাস শেষ হলে সবাই মিলে খেয়ে-দেয়ে বিকেলে বাড়ি যেত। এই বাচ্চাগুলো আমার নিজের সন্তানের মত হয়ে গিয়েছে।

শর্মী : অরুণা আমরা তোমার অসুস্থতা নিয়ে কি একটূ কথা বলতে পারি?
অরুণা : অবশ্যই! আমি চাই আমাদের কমিউনিটির মানুষ জানুক এই বিষয়ে। আমার এই জার্নি বা অভিজ্ঞতা পড়ে যদি কারো কাজে আসে বা আসি তাহলে আমি সেটা স্বতস্ফুর্তভাবে করতে রাজি।

মঞ্চে নৃত্যরত অরুণা হায়দারের ছাত্রীরা

শর্মী : তোমার ক্যান্সার কবে ধরা পড়ল? সেই থেকে কী কী হল যদি একটু বল?
অরুণা : ২০২০-র সেপ্টেম্বরে আমার ক্যান্সার ধরা পরে। আমি প্রতি বছর ফেব্রæয়ারীতে দেশে যাই, ২০২০ মার্চে, প্যানডেমিক শুরুর ঠিক আগখানে আমি দেশ থেকে ফিরি, তখন আমি জেমিসন নিউট্রাসিটিক্যাল কোম্পানিতে কাজ করি। দেশে গেলে হাত খালি হয়ে যায় সেটা সবার জানা, তো সেটা কাভার করার জন্য আমি তখন সপ্তাহে ৬/৭ দিন করে কাজ করছিলাম। এর মধ্যে হঠাত দেখলাম বাঁ ব্রেস্টের উপরে ছোট্ট একটা ব্রণের মত। তেমন পাত্তা দিলাম না, ব্যস্ততা বেড়েই যাচ্ছিল। খেয়াল করলাম ছোট্ট দানাটা একটু বড় হয়েছে। এরপরে একটু চিন্তিত হয়ে ডাক্তারকে ফোন করলান। প্যানডেমিকের কারণে তখন ডাক্তারতো শুধু ফোন ভিজিট নিচ্ছিল তো আমি ভিডিও কলে ডাক্তারকে দানাটা দেখালে সে বলল যে এটা পরীক্ষা করতে হবে। ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান বলল যে সে আমার ফাইল হসপিটালে পাঠিয়ে দিচ্ছে এবং হসপিটাল আমার সাথে যোগাযোগ করবে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে। এর মধ্যে দেড় মাস কেটে গেল কোন কল এল না। তখন আমি আবার আমার ফিজিশিয়ানকে কল করলে সে জানালো যে আমার ফাইল সানিব্রুক হসপিটালে পাঠানো হয়েছে। ততদিনে দানাটা বেড়ে ডাবল সাইজ হয়ে গিয়েছে। খেয়াল করলাম আমি খুব অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে যাই, খুব ঘুম পেত। কাজ থেকে বাসা ১২ মিনিট, এই সময়টুকুর মধ্যে লাল লাইটে বসে আমি ঘুমিয়ে যেতাম প্রায়। আমি এগুলো ডাক্তারকে বলাতে সে বলল যে আমার ফাইল আরো সব হসপিটালে পাঠিয়ে দিচ্ছে ইমারজেন্সি মার্ক করে। এরও প্রায় ৩ সপ্তাহ পরে স্কারবোরো জেনারেল থেকে আমার কাছে কল এল। ওরা আমার অনেক টেস্ট, বায়াপ্সি এগুলো খুব দ্রুত করে ফেলল। রেজান্ট হাতে পেয়েই স্পেশালিষ্ট আমাকে ডেকে পাঠাল। তাঁর প্রথম প্রশ্ন ছিল টরন্টো শহরে তোমার কে কে আছে? এটা শুনেই আমি বুঝে নিয়েছিলাম যে রেজাল্ট ভাল না। স্কারবোরো জেনারেল যখন অপারেশনের প্ল্যান নিচ্ছে, তখন আমার কাছে প্রিন্সেস মারগারেট হসপিটাল থেকে কল এল, এবং ক্যন্সারের জন্য এই হসপিটাল সব থেকে ভাল। তখন স্পেশালিষ্ট আমার ফাইল সহ সব কিছু প্রিন্সেস মারগারেটে পাঠিয়ে দিল। শুরু হল আমার কেমোথেরাপি। দানাটা সাইজে অনেক ছোট হবার পরে ওরা অপারেশন করে আমার দু’টো ব্রেস্টই কেটে ফেলে দিল কারণ অন্যটায়ও অনেক লাম্প ছিল। অপারেশনের ধাক্কা সামলে উঠতেই শুরু হয়েছিল রেডিয়েশন।

শর্মী : যখন অপারেশন হল তখন কোন স্টেজে ছিল?
অরুণা : তখন অলরেডি ৩য় স্টেজে ছিল। ২ মাসের মধ্যে এটা ১ম থেকে ৩য় স্টেজে চলে গিয়েছিল।

শর্মী : আহারে কি কষ্ট! এই সময়ে একা একা কি করে সামলেছো তুমি?
অরুণা : রেডিয়েশনে বুকের চামরা উঠে ঘা হয়ে গিয়েছিল। সারা শরীর জ্বলত আমার। আমি ফ্লোরে শুয়ে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদতাম। আমার দু’টা কুকুর ছিল। লাইসা আর লিও। ওরা আমাকে পাহাড়া দিয়ে রাখত। আমি একদিন সুইসাইড করার জন্য ব্যালকনির দেয়ালে উঠে গিয়েছিলাম, আমার কুকুর দু’টো ব্যালকনির দরজা আঁচড়াচ্ছিল আর জোরে জোরে কাঁদছিল আর আমাকে ডাকছিল। ওদের কান্না শুনে আমি দেয়াল থেকে নেমে আসি, ঘরের মধ্যে ঢুকতেই ওরা আমার গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে আমার উপরে উঠে শুয়ে ছিল যাতে আমি উঠে যেতে না পারি। আরেকদিন আমি ছুড়ি দিয়ে হাতে পোঁচ দিয়েছিলাম, লাইসা এসে হাত দিয়ে থাবা দিয়ে ছুড়িটা ফেলে দিয়েছিল। ওরা আমাকে জড়িয়ে আমার পাশে ঘুমাত। আমার পা জ্বলত বলে লাইসা আমার পায়ের নীচ চেটে দিত। আর সপ্তাহে ৩ দিন একজন কেয়ার গিভার আসত আমাকে গোসল করতে সাহায্য করবার জন্য। তখন আমার স্কুলের বাচ্চাদের মায়েরা, বাচ্চারা আমার অনেক দেখাশুনা করেছে। পুরো বাঙালি ক্যমিউনিটি মিলে আমাকে আর্থিকভাবেও সাহায্য করেছিল। সব থেকে কষ্টের কথা কি জান আমি সুস্থ হলাম আর আমার বড় ডগি লাইসা মারা গেল ক্যনাসারে। মনে হয়েছিল ও যেন আমার রোগটা নিয়ে নিয়েছিল। ওকে আমি ৩ সপ্তাহ বয়সে নিয়ে এসেছিলাম আর ও যখন মারা যায় তখন ওর বয়স ৮ বছর। লাইসা মারা যাবার আগে ও খুব এটেনশন চাইত আমার। লিও আমার কাছে আসলে অনেক কান্না করত আর ওকে রেখে যখন বাইরে যেতাম তখনও অনেক কান্না করত এরকম আগে কখনো করেনি।

শর্মী : ভীষণ একটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছ তুমি অরুণা। ওই সময়টাতে তুমি একা ছিলে আবার ছিলেও না। ক্যনাসারের ধাক্কাটা তোমাকে একলাই সামলাতে হয়েছে এবং লাইসা, লিওর কথা না হয় নাইবা বললাম, তোমার অনেক বন্ধুরা তোমার পাশে ছিল তখন, একদিক থেকে তুমি ভাগ্যবতীও বটে। এবারে বল নাচ নিয়ে তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি?
অরুণা : হ্যাঁ শর্মী, আমার বন্ধু ভাগ্য খুব ভাল। ওরা সবাই খুব ভাল, আমাকে ভালবাসে ভীষণ আর আমিও ওদের ভালবাসি। এখন লিও একা আছে, ভাবছি আরেকটা কুকুর আনব, লিওর জন্য একটা সঙ্গী প্রয়োজন।

নৃত্যরত মা-মেয়ে, অরুণা হায়দার ও সুলতানা হায়দার (ডানে)

নাচ নিয়ে পরিকল্পনা হল, করোনার সময়ে আমার স্টুডেন্ট অনেক কমে গিয়েছে, আবার নতুন করে আসছেও কিছু, কিন্তু ওরা আমার আগের স্টুডেন্টদের মত এত সিরিয়াস না। তবুও মা, বাবার জোরাজুরিতে হয়তো আসে। আম্মা যেহেতু এখন এখানে আছেন তিনিও সবাইকে অনেক উত্সাহ দিচ্ছেন। আমি একটা নতুন ক্লাস খুলেছি, বাচ্চাদের মায়েদের জন্য। হয়ত অনেকেরই নাচের শখ ছিল, পরিস্থিতির কারণে হয়ে ওঠেনি আবার এটাকে ব্যায়াম হিসেবেও নেয়া যেতে পারে। সেখানেও বেশ ভাল সাড়া পেয়েছি। শুধু মা নয়, একটা স্টুডেন্টের বাবাও আমার ক্লাসে আসে এবং পুরো পরিবার উদীচীর অনুষ্ঠানে নেচেছে। তুমি দেখেছো নিশ্চয়ই? তুমি তো জান প্রতি বছর আমি ‘সাউন্ড অফ ঘুঙরু’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকি। গত দু’বছর প্যানডেমিকের কারণে হয়নি তবে ২০২৩ এর সামারের শুরুতে সেটা আবার শুরু করব। এবারে ইচ্ছে আছে ড্যান্স ড্রামা করার যেহেতু আম্মা আছেন এ বছর। আমাদের ছেলে ড্যান্সার প্রয়োজন, আশা করি আরো ছেলেরা আমার নাচের দলে যোগ দেবে।

শর্মী : আন্টি কি থাকবেন অনেকদিন?
অরুণা : আম্মা সুপার ভিসায় এসেছেন, আছেন ৫ মাস হল, দেখি কতদিন তাঁর ভাল লাগে থাকতে।

শর্মী : আমি জানি তুমি নাচ ছাড়াও আরো দু’ একটি সংগঠনে জড়িত আছ। সেটা নিয়ে কিছু বল? কবিতায় এলে কি করে?
অরুণা : হ্যাঁ, ঠিক বলেছ আমি একটি নাট্য সংগঠন ‘বাংলাদেশ থিয়েটার’ আর একটি আবৃত্তি সংগঠন ‘বাচনিক’-এর সাথে জড়িত। ঢাকা থিয়েটারের দুলাল ভাইয়ের আহবানে আমি সেখানে অনেক বছর ধরে নাটক করছি আর বাচনিকের সদস্যরা সবাই আমার বন্ধু। আমি এক সময় একটু লিখতাম, সেটা বলার কিছু নেই তবে ওই ভালবাসার টানেই আর বন্ধুদের আহবানে আমি বাচনিকের সাথে জড়িয়েছি আর লেগেও তো আছি অনেক বছর ধরে। ভাবিনি এত বছর এভাবে লেগে থাকতে পারব।

শর্মী : অনেক গল্প হল অরুণা, আমরা প্রায় শেষ করে ফেলেছি, এবারে বল তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কি?
অরুণা : নাচ আমার ভালবাসা আর এই ভালবাসাই আমাকে দিয়েছে সব কিছু, আজ যা কিছু আছে আমার সবই পেয়েছি এই নাচের মাধ্যমে, তাই যতদিন সম্ভব নাচ করে যাব। তোমাদের সকলের ভালবাসা আর সহযোগিতায় নাচের নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে আসব তোমাদের সামনে।

শর্মী : আমাদের সময় দেবার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ অরুণা। সেই সাথে তোমাকে ও আন্টিকে অজস্র শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জানাচ্ছি। ভাল থেক। নাচের ছন্দের মত বয়ে চলুক তোমার জীবন।
অরুণা : তোমাকেও অনেক ধন্যবাদ এতটা সময় ধরে আমার গল্প শুনবার জন্য এবং সেই সাথে ‘বাংলা কাগজ’কেও অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি আমার এই গল্প ছাপাবার জন্য।

অরুণা হায়দার ও শারমিন শরীফ শর্মী

শর্মী : নিয়তি তাদেরই পরীক্ষা নেয় যারা কঠিন ইস্পাতের মত, যারা কোন কিছুকেই ভয় পায় না, যারা জানে কি করে সব বাঁধা তুচ্ছ করে এগিয়ে যেতে হয় সামনের দিকে। অরুণা ভেঙ্গে পড়েনি, সে সুস্থ বরং অনেক সুস্থ মানুষের থেকেও সুস্থ। দীর্ঘ অসুস্থতা বা চিকিত্সা তাঁকে কাবু করতে পারেনি বরং যেন আরো দৃঢ়, আরো শক্তিশালী করেছে তাঁকে। আমরা যখন শুধু করোনার সাথে যুদ্ধ করছি, আমাদের এই নাচের যোদ্ধাটি তখন ক্যান্সার ও করোনা দুই শত্রুর সাথে পাশাপাশি যুদ্ধ করেছে এমনই অসাধারণ তাঁর মনোবল। মানুষ, জীব ও নাচের প্রতি তাঁর ভালবাসা অকৃত্রিম ও সাবলীল এবং সেই সাথে অদম্য তাঁর উত্সাহ।
অনেক কিছু শিখবার আছে অরুণার কাছ থেকে, আমরা যেন তাঁর কাছ থেকে বেঁচে থাকার প্রেরণা নিতে পারি, ধার নিতে পারি একটু জীবনীশক্তি। অনেক ভালবাসা ও শুভেচ্ছা রইলো মা আর মেয়ে, সুলতানা হায়দার ও অরুণা হায়দারের জন্য।