তসলিমা হাসান

(১)
শরতের শুভ্র আকাশ, সমস্ত আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের ভেলা। হঠাৎ বাস এসে স্টেশনে থামলো। বাস থেকে নেমে এলো একটু লম্বা হেন্ডসাম যুবক, এই সুদর্শন যুবকের নাম তপু। তপু ভালো ছাত্র হিসেবে এলাকায় ব্যাপক পরিচিত। তপু ঝঝঈ ও ঐঝঈ পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ড সেরা দশে জায়গা করে নেন। গরীব মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে তপু। খুব ছোট বেলা থেকে কষ্ট ও সংগ্রাম করে পড়াশোনা চালিয়ে এতদূর আসছে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য তপু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়। মা বাবা ও ছোট একবোনের সংসার।

সমাজের উচ্চবিত্ত মানুষের আর্থিক সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সম্পন্ন করে ঢাকা থেকে বাসায় ফিরছে। গরীব দিনমজুর বাবার ছেলে তপুর এমন কৃতিত্বে এলাকায় তপুর নাম গ্রামের হাট বাজার ও মহল্লার মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে।

তপু বাসায় এসে হঠাৎ একদিন গ্রামের বাজারে যাওয়ার পথে হঠাৎ ছিপছিপে লম্বা গড়নের এক সুন্দরী মেয়েকে দেখতে পেলো। তপুর চোখ আটকে গেলো মেয়েটার দিকে। মেয়েটার ডোরাকাটা চোখের দিকে তপু তাকিয়ে রইল। হঠাৎ মেয়েটার সম্বোধনে তপুর খেয়াল ফিরে এলো।

তপু দা কেমন আছেন? কবে ভার্সিটি থেকে আসলেন।
তপু : আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি। আমি যদি ভুল না করি তুমি নিশ্চয় নীলিমা? অনেক সুন্দর হয়ে গেছো আগের থেকে।
নীলিমা : হ্যাঁ আমি নীলিমা, আপনি আমাদের স্কুলের সেরা ছাত্র ছিলেন, আমি তখন ক্লাস ৮ এ পড়ি আর আপনি ক্লাস টেনে। আমাকে প্রত্যহ বাড়িতে এসে গণিত ও ইংরেজি পড়াতেন। এবার মনে পড়েছে নিশ্চয়?
তপু : হ্যাঁ, এবার তুমি কিসে ভর্তি হয়েছ কোন কলেজে?
নীলিমা : আমি বগুড়া সরকারি মহিলা কলেজে মানবিক বিভাগে ভর্তি হয়েছি। বগুড়া শহরে মেসে থাকি।

(২)
কথোপকথন শেষে নীলিমা বললো তপু ভাইয়া সময় পেলে আমাদের বাসায় আসবেন।
তপু তখন নীলিমাকে হ্যাঁ জানিয়ে বিদায় জানালো।
নীলিমার বাবা এলাকায় একজন ধনী ব্যক্তি, গ্রামের বাজার ওনার বড় বিজনেস ও অনেক জমিজমা আছে। নীলিমার বাবা অল্প শিক্ষিত হলেও ব্যবসা করে এত সম্পদ, টাকা ও জমিজমা কিনেছে। নীলিমা সংসারের বড় মেয়ে, নীলিমার এক ছোট বোন ও ভাই আছে।
তপুর একটা নিয়মিত অভ্যাস হলো গ্রামে আসলে সে গোটা গ্রাম ও গ্রামের বাজার ঘুরে ঘুরে মানুষের সাথে মতবিনিময় করে। সুমিষ্ট ও ভালো ব্যবহার ও বিনয়ী ছেলে হিসেবেও এলাকায় তপুর অনেক সুনাম আছে। গ্রামের বাজারে যাওয়ার পথে নীলিমার বাবা হঠাৎ তপুকে দেখে পিছন থেকে ডাক দিলো।
তপু : আসসালামু আলাইকুম আংকেল, কেমন আছেন?
নীলিমার বাবা : ওয়ালাইকুম সালাম বাবা, তপু কেমন তুমি বাবা? কবে এসেছ ভার্সিটি থেকে?

তপু : আলহামদুলিল্লাহ, আমি গত পরশু ঢাকা থেকে এসেছি।
সবকথা শেষ করে নীলিমার বাবা তারপর নিজের বাইকের পিছনে তপুকে তুলে নিলেন। বাজারে গিয়ে চা খেলেন একসাথে। তারপর অনেক আলাপ শেষ করে তপুকে বললো – তুমি আমাদের বাসায় এসো সময় করে, নীলিমাকে একটু ইংরেজি গ্রামারটা ভালো করে বুঝিয়ে দিও। ওহ ইংরেজিতে বেশ কাঁচা, তুমি তো সবই জানো ওহ তোমার প্রাক্তন ছাত্রী। অবশেষে হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়ে, সালাম জানিয়ে তপু বিদায় নিলো।

(৩)
হঠাৎ করে বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে গাছের পাতাগুলো ধুয়ে আরো সবুজ ও সতেজ হয়েছে। নির্মল বাতাস বইছে। আজ তপুর মনটা খুব ভালো, সে আজ নীলিমাদের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলো। নীলিমাদের বাড়িটি বাজারে যাওয়ার পথে আর তপুদের বাড়ি থেকে ২০-২৫ মিনিটের রাস্তা, এক কথায় বলা যায় পায়ে হাঁটার পথমাত্র। কিছুক্ষণ পরে নীলিমাদের বাসার গেটে এসে কলিং বেল চেপ দিল তপু। একটু পরে ভিতর থেকে গেট খুলে দিলো নীলিমা।

নীলিমাকে দেখে তপু আরো মুগ্ধ হলো। একটা পাতলা টপস ও জিন্স পড়ে আছে, চুলগুলো লুটেপুটে আছে কপাল অবধি, ঠোঁট দুটো কমলালেবুর মতো। বয়স অল্প হলেও নীলিমার শারীরিক গঠন অসাধারণ। ৫ ফিট ৫ ইঞ্চি লম্বা একটা মেয়ে, গ্রাম এলাকায় এমন মেয়ে হাজারে একটা মেলা বড়ো কঠিন। সম্বোধন শেষে নীলিমা তপুকে বসতে দিলো ড্রয়িং রুমে। একটু পরে নীলিমার মা চা ও নাস্তা নিয়ে এলো। নীলিমার মায়ের সাথে সব আলাপ শেষ করে বইপত্র নিয়ে নীলিমার সাথে পড়ার টেবিলে বসলো তপু। কিছুক্ষণ পড়িয়ে বাসায় ফিরলো তপু।

এভাবে কিছুদিন তপু নীলিমাকে পড়ালো। এইদিকে তপুর ছুটি শেষ হয়ে এসেছে সে আবার ভার্সিটিতে চলে গেলো। ভার্সিটিতে গিয়ে বার-বার নীলিমার পবিত্র মুখটা তপুর বার-বার মনে পড়তে লাগলো। সকল কাজের মাঝে নীলিমার স্মৃতি তপুর মনে উঁকি দিচ্ছে। এটা প্রেম নাকি মায়া, এই নিয়ে তপু কিছুটা দ্বিধান্বিত।

(৪)
ভার্সিটি থেকে ক্লাস শেষ করে এসে তপু টিউশনিতে যায়। সন্ধ্যারাত পর্যন্ত টিউশনি শেষ করে সে হোস্টেলে ফিরে। দুটা টিউশনির টাকায় তপুর পড়াশোনা খরচ চলে। ভালো রেজাল্ট ও গরীব পরিবারের ছাত্র হওয়ার কারণে ডাচ বাংলা ব্যাংক থেকে মাসিক শিক্ষাবৃত্তি পায় তপু। টিউশনি থেকে কিছু টাকা সে গ্রামের বাড়িতে ছোট বোনের পড়াশোনার জন্য পাঠায়। তার ছোট বোন এলাকায় কলেজে পড়ে,সে নীলিমার সমবয়সী।

তপু টিউশনি থেকে ফিরে একদিন শুয়ে আছে নিজের রুমে। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো একটা অচেনা নাম্বার থেকে আসা কলে। ফোন রিসিভ করে অপর প্রান্তে শুনতে পেলো একটা মেয়েলি কন্ঠ। তখন তপুর আর বুঝতে অসুবিধা হলো না যে মেয়েটা কে।

নীলিমা : কেমন আছেন? আমাকে এভাবে ভুলে গেলেন? কেন না বলে চলে গেলেন ঢাকায়?
তপু : ভালো আছি, তোমাকে ভুলিনি নীলিমা, ছুটি শেষ হওয়ায় আমার ক্লাস শুরু হয়ে গেছে তাই তাড়াহুড়ো করে চলে আসছি, তোমাকে বলতে পারিনি, সে জন্য আমি সত্যি দুঃখিত। তাছাড়া তোমার নাম্বারও আমার কাছে নাই। তুমি কিভাবে আমার নাম্বার পেলে নীলিমা?
নীলিমা : আপনার ছোট বোন ফাতেমার সাথে আমার কথা হয়। ওর কাছে থেকে আপনার কথা শুনলাম ও পরে নাম্বারটা নিলাম।

(৫)
এর পর থেকে প্রায় বিভিন্ন বিষয়ে নীলিমা তপুকে কল করে ও মোবাইলে এসএমএস দেয়, তপুও কল দেয় ও রিপ্লাই দেয়। ধীরে-ধীরে তপু নীলিমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়ে, তপুর সমস্ত চিন্তা ও চেতনা জুড়ে এখন নীলিমা, কিন্তু তপু সাহস করে বলতে পারেনা নিজের প্রেমের কথা। কারণ তপুর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তার আর্থিক অবস্থা ভালো না, নীলিমাদের পরিবারের সঙ্গে তুলনায় তপুর পরিবার কিছু না। এইদিকে নীলিমা তপুর প্রতি দূর্বল। একসময় নিজের অজান্তে সাহস নিয়ে নীলিমা তপুকে তার প্রেম নিবেদন করে। তপু নীলিমার প্রেমকে সন্মান জানিয়ে বাস্তব অবস্থা জানিয়ে প্রথমে প্রত্যাখ্যান করে।

(৬)
নীলিমার কান্নাকাটি ও চোখের জলের শব্দের কাছে তপু হার মানলো, সে নীলিমার ভালোবাসায় সম্মতি দিলো। এভাবে দিনের পর দিন চলছে তাদের প্রেম। সময় করে তপু বগুড়া শহরে আসে নীলিমার সঙ্গে দেখা করে আবার চলে যায়। বগুড়া শহর তপুর অতি পরিচিত শহর। বগুড়া সহজে সে বিভিন্ন কোচিং এ ক্লাস নিতো কলেজ জীবনে, তাছাড়া তার অনেক পরিচিত বন্ধুবান্ধব ও শুভাকাঙ্ক্ষী আছে বগুড়া শহরে। তপু পকেটে টাকা না থাকলেও অনেক সময় বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শেষ করে রাতের ট্রেনে বিনাটিকেটে সরারাত দাঁড়িয়ে থেকে সকালবেলা বগুড়া শহরে নেমে নীলিমাকে শুভসকাল জানাতো। আবার শনিবার রাতে ঢাকায় বেক করে রবিবার সকালে ভার্সিটিতে ক্লাসে এটেন্ড করতো। এভাবে চলছে তাদের প্রেম।

(৭)
১৪-ই, এপ্রিল, পহেলা বৈশাখ, তপু কষ্ট করে টিউশনি থেকে জমানো টাকা দিয়ে নীলিমার জন্য একটা নীল শাড়ী কিনলো গিফট হিসেবে। আর নীলিমা তার বাবার কাছ থেকে মেস খরচ ও প্রাইভেট খরচ বাবদ প্রাপ্ত টাকা বাঁচিয়ে একটা পাঞ্জাবি ও পায়জামা কিনলো তপুর জন্য। তপু বৈশাখের আগের রাতে বগুড়া শহরে এসে একটা কোচিং সেন্টারে গেস্ট টিচার হিসেবে রুমে উঠলো। পহেলা বৈশাখের দিন সকাল বেলা তপু বের হলো নীলিমাকে নিয়ে রিকশা চেপে। নীলিমা নীল শাড়ী, মাথার খোঁপায় বেলি ফুলের মালা জড়িয়ে তপুর হাতে হাত রাখলো। রিকশায় ঝিরিঝিরি বাতাসে নীলিমার চুলগুলো উড়ে তপুর মুখে এসে বারবার তপুকে মাতাল করে দিচ্ছিল। তপু নিজের অজান্তে নীলিমার হাতে আলতু চুমু দিলো গোপনে। পহেলা বৈশাখ শেষে তপু ফিরে গেলো ঢাকায়।

(৮)
এদিকে তপু ও নীলিমার ঘনঘন দেখা করার কারণে বগুড়া শহরে পরিচিত অনেক লোকজন তাদেরকে একসাথে দেখে ফেলে। এদের প্রেমের কথা নীলিমার বাবার কানে চলে যায়। নীলিমার বাবা লোক হিসেবে খুব সৎ ও কঠোর ছিলেন। ছোট বেলা থেকে নিজের মেয়েকেও সৎ ও ভদ্র হিসেবে গড়ে তুলেছেন। নীলিমার বাবা নীলিমাকে তপুর ও তার সম্পর্ক সম্পর্কে জিঙ্গেস করলে সে ভয়ে সব অস্বীকার করে। নীলিমার বাবা তখন নীলিমাকে প্রতিজ্ঞা করায় যেন এমন কোন কাজ না করে যাতে তার মান সন্মান নষ্ট হয়। এইদিকে আবার নীলিমার বাবা তপুকেও ফোন করে অনেক কটু কথা বলে ও নীলিমার সাথে দেখা করতে নিষেধ করে। কথায় আছে প্রেমে যত বাঁধা হয় প্রেম তত মজবুত হয়। পরিবারের চোখ ফাঁকি দিয়ে নীলিমা ও তপু আবার দেখা করে। একসময় উভয়ে সিদ্ধান্ত নেয় গোপনে কোর্ট ম্যারিজ করে রাখার। পরের বছর ঈদের সময় বাসায় আসে তপু ও নিজের বাড়িতে আসে নীলিমা, এইদিকে নীলিমাকে না জানিয়ে নীলিমার মা বাবা তার ফুফাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে ঠিক করে, ছেলেটা ব্র্যাক ব্যাংকে অফিসার পদে আছেন। ছেলেটাও মনে-মনে নীলিমাকে পছন্দ করে।

(৯)
বাসায় এসে বিয়ের কথা শুনে নীলিমা কিছুটা বিষন্ন। সাধারণ বাসায় আসলে নীলিমা ও তপুর কথা হতো না, কারণ নীলিমার ছোট ভাই ও বোন সব সময় নীলিমার সাথে থাকতো ও ওর ফোন হাতে নিতো। এক সময় কোন উপায় না পেয়ে নীলিমা তপুকে তার বিয়ের ব্যাপারে বলে, তখন তপু নীলিমাকে নিয়ে গোপনে বিয়ে করে ঢাকায় পালিয়ে যেতে চায় ও টিউশনি করে সংসার চালাতে চায়। নীলিমা এই ব্যাপারে কিছুটা ভয় ও সংকোচে আছে। নীলিমা তপুকে অনেক ভালোবাসে আবার তার জন্য তার বাবা কষ্ট পাক কিংবা ওনার মান সন্মান নষ্ট হোক এটাও সে চায় না। সব মিলিয়ে নীলিমা অনেক চিন্তায় পড়ে গেলো। এইদিকে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। তপু নিরুপায় হয়ে তার বাবা মাকে সবকিছু খুলে বলে, তার বাবা নীলিমার পরিবারের কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। গরীব বলে অবহেলা করে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে উল্টো খুব অপমান করে নীলিমার বাবা।

(১০)
মোবাইল এসএমএসে কথা হচ্ছে তপু ও নীলিমার। কারণ বাসায় আসলে ফোন কলে কথা কম হয়। আর মাত্র ঈদের একদিন বাঁকী আছে। হঠাৎ তপু দেখলো নীলিমার ফোন বন্ধ ও তার ফোন থেকে কোন এসএমএস আসেনি। তখন তপু দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। তপু অনেকের কাছে জানতে পারলো আজকে রাতে নীলিমার বিয়ে হতে পারে তার ফুফুতো ভাইয়ের সাথে। তপু অনেক ভাবে নীলিমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো, নীলিমাকে বিয়ে করার জন্য সে এলাকায় উচ্চবিত্ত ও প্রভাবশালী পরিচিত অনেক লোকজনকে রিকুয়েষ্ট করলো নীলিমার বাবাকে বুঝানোর জন্য। সকলে তপুকে আশ্বস্ত করলো যে নীলিমার বিয়ে এত সহজে দিবে না। চিন্তামুক্ত থাকো। তপুও মনে মনে বিশ্বাস করে যে যত বাঁধা আসুক নীলিমা তপুকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করবে না।
হঠাৎ রাত ১১-১২টার দিকে তপু জানতে পারলো নীলিমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এসময় তপু পাগলপ্রায়। কিছুক্ষণ পরে তপু জানতে পারলো তার বন্ধুদের কাছ থেকে যে সত্যি নীলিমার বিয়ে হয়ে গেছে। তপু নিস্তব্ধ, নির্বাক হয়ে রইলো।

(১১)
তপুর পরিবারের সবাই জানতো নীলিমার সাথে তপুর সম্পর্কের কথা। এমনকি তারা মনে-মনে নীলিমাকে তপুর বউ হিসেবে গ্রহণ করেছিল। তপু এখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে উঠবে। ২-১ বছর পরে পড়াশোনা শেষ করে তাদের বিয়ে হবে, জব হবে। এই সকল কারণে তপুর মা বাবা ও বোন মোবাইলে নিয়মিত কথা বলতো। এই ঘটনার পরে তপুর মতো তার পরিবারও অনেক কষ্ট পেয়েছে। পরের দিন ঈদের দিন। তপু ঈদগাহ ঈদের পরে এসে কিছু খায়নি। শুয়ে আছে নিজের রুমে। তপুর মা বাবা, বোন কেউ কিছু খাইনি। তাদের বাড়িতে ঈদের আনন্দ নেয় যেন কোন মানুষ মারা গেছে। পরাজিত মানুষের মতো তপু হতবাক হয়ে কান্নাভেজা চোখে সব কষ্ট বুকে চেপে কয়েকদিন পরে ঢাকায় গেলো।

এভাবে কয়েক মাস গেলো। তপু এখন কিছুটা ছন্নছাড়া,মলিন চেহারা। আগের তপু আর বর্তমানের তপুর মধ্যে রাত দিন তফাৎ। কাছের বন্ধু বান্ধব তপুকে স্বাভাবিক করার অনেক চেষ্টা করছে। কিন্তু তপু কিছুতেই নীলিমাকে ভুলতে পারছে না। মনের মধ্যে নিজের কষ্ট গোপন করছে। এর মধ্যে কয়েকমাস পরে নীলিমা এক অচেনা নাম্বার থেকে তপুকে কল করে কান্নাজড়িত কন্ঠে ক্ষমা করার কথা বলে নিজের পরিচয় দিয়ে ও সে আবার তপুর জীবনে ফিরে আসতে চায় কারন সে সুখী নয়।