নাদিরা তাবাসসুম : আমাদের প্রায়ই মন খারাপ থাকে বা মন খারাপ হয়ে যায়, আমরা যখন তখন ছোট বড় বিভিন্ন বিষয়ে কষ্ট পেয়ে থাকি। কারণ হতে পারে – আশেপাশের মানুষগুলোর নিকট থেকে কোন অপ্রীতিকর পরিবেশ পরিস্থিতি, অতি কাছের অতি প্রিয় আত্মীয়স্বজন, অনাত্মীয়দের নিকট থেকে খারাপ ব্যবহার, আচরণ, ঝগড়া-মারামারি অথবা অযৌক্তিক কোন কথা কাটাকাটি। এসময়ে নিজেকে খুবই অসহায় ও হীনবল মনে হয়। তাছাড়া সমাজে সংসারে হাজারো সমস্যা তো রয়েছেই। চাকুরী নেই, সংসার চালানোর মতো পর্যাপ্ত টাকা পয়সা হাতে নেই, অসুস্থ পিতামাতার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানোর টাকা নেই ইত্যাদি ইত্যাদি। দিনের পর দিন চোখে ঘুম নেই “কি হবে, কি ঘটবে, আমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না” ইত্যাদি নানা দুশ্চিন্তা আর টেনশন। এ সকল অবস্থা এবং সমস্যা সবই কিন্তু আপনার শরীর ও চিন্তার বাইরে ঘটছে। যখন আমরা এগুলো নিয়ে দুশ্চিন্তা আর টেনশন করছি তা ঘটছে আমাদের মনের ভিতরে মাথার মধ্যে ঘটছে। অর্থাৎ কিনা সমস্যাগুলো আমাদের শরীরের বাইরের ঘটনা যেগুলোতে আমাদের নিজের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই কিন্তু দুশ্চিন্তা, টেনশন ও অনুভূতি সেগুলো আমাদের নিজেদের শরীরে ও মনে ঘটছে তাই সেগুলো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমাদের শরীরের বাইরে যেসকল সমস্যা বা ঘটনা ঘটছে সেগুলো দেখে আমরা মাথায় চিন্তা করি এবং অনুভূতি জাগ্রত হয় অতপর আমরা যেকোন কাজে জড়িয়ে পড়ি। সমস্যা বা ঘটনা যা আমাদের চিন্তায় ফেলে সেগুলো ভালো অথবা মন্দ হতে পারে। ভাল চিন্তাগুলো বলতে যা নিজের বা পরের উপকারে লাগে আর মন্দ চিন্তা বলতে যা নিজের বা পরের ক্ষতি করে। ভালোগুলো হলো ‘পজিটিভ’ আর খারাপগুলো হলো ‘নেগেটিভ’।

আমরা রেগে গেলে, দুশ্চিন্তা টেনশনে যখন ছটপট করি তখন আমাদের ব্যবহার আচরণে ক্রোধের মাত্রা বেড়ে গিয়ে আমাদের হার্ট বিট বেড়ে যায়, প্রেসার বেড়ে যায় উঠানামা করে, অত্যধিক ঠান্ডা বা অত্যধিক গরম অনুভব করতে থাকি। শরীর খারাপ হওয়ার সাথে সাথে আমরা অসুস্থ হয়ে যাই। এসব ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া দ্রুততার সাথে আমাদের শরীরে সংঘটিত হতে থাকে। বার বার একই অবস্থায় নিরন্তর এই ‘অশুভ চক্রে’ ঘুরপাক খেতে থাকি। বিখ্যাত ডাক্তার, গবেষক ও মনোবিজ্ঞ্যানী ডঃ ক্রিস উইলিয়ামস একে ‘ভিশাস সাইকেল’ বলেছেন। আমরা অতি দ্রæত যদি এই রাগ, দুশ্চিন্তা, টেনশন, ঝগড়া, তর্ক-বিতর্ক ইত্যাদি নেগেটিভ চিন্তা ও অনুভূতিগুলো বুঝতে পেরে তাদেরকে দূরে সরিয়ে দিয়ে উল্টোদিকে শান্ত হয়ে ভালো চিন্তাগুলো না করি তবে আমরা ‘অশুভ চক্রে’ জড়িয়ে যাবো। বিষয়টি একটি উদাহরণ দিয়ে বোঝানো যেতে পারে। যেমন ধরুন কোন একটা বিষয় নিয়ে আপনি খুউব টেনশন করছেন কারণ আপনি বাজার করতে গিয়ে আপনার টাকা রাখার পার্সটা খুঁজে পাচ্ছেন না। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও যখন পাচ্ছেন না তখন ধরেই নিয়েছেন যে আপনার পার্সটা হয়তো হারিয়ে গেছে যেখানে আপনার টাকা পয়সা, ঘরের চাবি ছাড়াও আরও কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল। এই অবস্থায় আপনার দুশ্চিন্তা টেনশনে প্রেশার দ্রæত বেড়ে যাচ্ছে। এখন কি হবে, কি ব্যবস্থা নিবেন ইত্যাদি চিন্তায় হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তখন কি করা উচিত কি ব্যবস্থা নেয়া উচিত ঠান্ডা মাথায় চিন্তাগুলোকে ফিরিয়ে এনে কিভাবে কোথায় গিয়ে রিপোর্ট করা হলে পার্স ফিরে পাওয়া যাবে সে বিষয়ে ধীর স্থিরভাবে চিন্তা করা এবং উপায় খুঁজে বের করা। তেমনিভাবে কখনো কোন বন্ধু বা আত্মীয় স্বজনের সাথে তর্ক-বিতর্ক, রাগারাগি, ঝগড়াবিবাদ এ জাতীয় কিছু ঘটে থাকলে সংগে সংগে নিজেকে শান্ত করে নিতে হবে। আপনি জানছেন ও বুঝতে পারছেন যে আপনি ঠিক এবং আপনি সত্য কথা বলছেন তথাপি আপনি নিজেই চুপ হয়ে শান্ত হয়ে নিজের চিন্তাগুলোকে ভাল দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের কাজে মনোনিবেশ করবেন অথবা বাইরে কোথাও গিয়ে হেঁটে আসবেন। কারণ আপনি জানেন যে, যুক্তিতর্ক, রাগারাগি, মারামারি, ঝগড়াবিবাদ ইত্যাদি আপনার মনে খারাপ চিন্তা ও অনুভূতির সৃষ্টি করবে; তারপর সবার সাথে আপনার ব্যবহার আচরণ খারাপ হয়ে যাবে এবং আস্তে আস্তে আপনি শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পরবেন, হার্টবিট প্রেশার বেড়ে গিয়ে হার্ট এটাকের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। আপনারই ক্ষতি হবে ও সমস্যা বাড়বে। এ কারণে যখনই স্বামী-স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, মা-বাবা, শ্বশুর শ্বাশুড়ী, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব-এর সাথে এরকম পরিস্থিতি ঘটতে যাবে তখনই আপনি নিজেকে সরিয়ে নেবেন, বাইরে হাঁটতে যাবেন, নিজের রুটিন কাজে ব্যস্ত হয়ে যাবেন অথবা যাকে ভালোবাসেন, যে আপনকে ভালো জানে তার সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত হবেন- এভাবে নিজেকে নিজের কাজে ‘বুষ্টার’ করবেন। যত কাজ বেশি করবেন তত খারাপ চিন্তা, অনুভূতি ও কাজগুলো যেগুলো ‘নেগেটিভ এনার্জি’ সৃষ্টি করে সেগুলো থেকে দূরে থাকতে পারবেন। মনে রাখবেন যত কম কাজ ও অলস সময় তত খারাপ চিন্তা ও খারাপ অনুভূতির সৃষ্টি আপনাকে ‘নেগেটিভ এনার্জি’র দিকে ঠেলে দিবে।
তাই পরিকল্পনা করুন, যে কাজগুলো করা হলে আপনি নিজে খুশি হন, অন্যজনেরা খুশি হয় অথবা আপনি ভালোভাবে করে কৃতিত্ব দেখাতে পারেন সেই কাজগুলো করুন। রুটিন কাজগুলোর পাশাপাশি নিজের ভালো লাগার কাজগুলো করুন। এগুলো হতে পারে, মজার মজার রান্নাবান্না, ঘর গোছানো, ঘরবাড়ী পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা, গান শোনা, টিভিতে কোন ভালো অনুষ্ঠান দেখা, ব্যায়াম করা, পার্কে গিয়ে হাঁটাহাঁটি করে আসা ইত্যাদি। আপনি যদি আপনার পছন্দনীয় কাজগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তাহলে অস্বাস্থ্যকর ‘নেগেটিভ’ চিন্তাগুলো থেকে দূরে থাকতে পারবেন। নানারকম সমস্যা, বিপদআপদ, দুর্ঘটনা আপনার চারপাশে থাকবেই কিন্তু এগুলো দেখলেই আপনাকে বুঝতে হবে যে এগুলো হচ্ছে অশুভ, অস্বাস্থ্যকর, ও ক্ষতিকর বিষাক্ত পোকামাকড়ের মতো। এগুলোকে দূরে সরিয়ে দিন মোটেই গুরুত্ব দেবেন না। শক্ত হয়ে নিজের পায়ের ওপর দাঁড়ান এবং ভাবেন এগুলো আপনার ক্ষতি করতে চায় তাই নিজেকে নিয়ে ভালো চিন্তা করুন, নিজেকে বিশ্বাস করুন একজন ভাল বন্ধুর মতো; অবশেষে সমস্যাগুলোকে ভিন্নভাবে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনুন।

এতক্ষণে আপনি বুঝে গিয়েছেন যে, উপরে বর্ণিত অস্বাস্থ্যকর ক্ষতিকারক চিন্তাগুলো আপনাকে অনবরত সেই ‘ভিসাস সাইকেলে’ ফেলে দিচ্ছে। অর্থাৎ বাইরের ঘটনা বা সমস্যাগুলো (অশুভ) অশুভ চিন্তা শারীরিক সমস্যা/ অসুস্থতা অশুভ ব্যবহার আচরণ অশুভ অনুভূতি।

আর যখনই আপনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হবেন তখন আর কোন কাজই সুষ্ঠরূপে করতে পারবেন না, সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাবে। চরম সিদ্ধান্তহীনতা ও নিদ্রাহীনতায় ডুবে যাবেন ধীরে ধীরে। সুতরাং এ পরিস্থিতিকে চিন্তা থেকে দূরে সরিয়ে নিজেকে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করুন মনে মনে ভাবুন আপনি পারবেন সকল খারাপ, অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর চিন্তা/অনুভূতিগুলো দূরে সরিয়ে গঠনমূলক ও স্বাস্থ্যকর চিন্তাগুলো নিয়ে নিজেকে কাজে ব্যস্ত করে ফেলতে।
সমাজের চারপাশের ঘটনা এবং সমস্যাগুলো যখন আপনাকে হেয়, নীচু ও ক্ষমতাহীন করতে চাইবে ঠিক তখনই আপনাকে আপনার ভেতরের বিশ্বাস, শক্তি ও সাহসকে কাজে লাগিয়ে স্থির হতে হবে এবং বেছে নিতে হবে যেটা স্বাস্থ্যকর ও মঙ্গলজনক। আপনি চিন্তা করবেন আপনার এমন অনেক দক্ষতা ও গুণাবলী আছে যেগুলো নিয়ে অনেকে আপনার প্রশংসা করেছে বা করে। সেগুলোর তালিকা তৈরী করুন, নিজের মনকে শক্ত করুন, হাঁটা, চলাফেরা, কাজে কর্মে এবং ব্যবহার আচরণে আত্মবিশ্বাসী হউন।

খারাপ চিন্তাগুলোকে বাদ দেয়ার বা সরিয়ে ফেলার জন্য অন্য যেকোন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন সে কাজটা অতিরিক্ত না করা হয় এবং অভ্যাসে পরিণত না হয়ে যায়। যেমন- মনের দুশ্চিন্তা, টেনশন ও কষ্ট দূর করতে অনেকে বেশী শপিং-এ যেতে , বেশী খাওয়ার অভ্যাসে অথবা চকলেট খাওয়ার অভ্যাসে জড়িয়ে পড়েন । বার বার করা হলে এই অভ্যাসগুলোর উপর নির্ভরশীলতা চলে আসে যা আবার ‘নেগেটিভ ভিসাস সাইকেলে’ জড়িয়ে ফেলে। তাই এই নির্ভরশীল অভ্যাসগুলো কি কি তা খুঁজে বের করে একটা একটা করে অভ্যাস কমানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে এবং সেু অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যেতে হবে।

সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা, নিজের মনকে অবিচল শান্ত রাখা, নিজের যতœ করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এগুলোর পাশাপাশি খেয়াল রাখা যেন কোনকিছুর উপর বা কোন ব্যাক্তির উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা না আসে । বেশি বা কম নির্ভরতা পরীক্ষা করার জন্য আমরা লাল, হলুদ সবুজ আলো বা কার্ড ব্যবহার করতে পারি । যে অভ্যাসটি বেশি বেশি করা হচ্ছে সেটিকে লাল জোনে, যেটি একটু কম সেটি হলুদ এবং যেটি একেবারেই কম সেটিকে ফেলে সবুজ জোনে ফেলে পরীক্ষা করা যেতে পারে ।

এই বিষয়গুলো মা-বাবা হিসাবে ছেলেমেয়েদের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে এবং তাদেরকে শেখানো যেতে পারে। ছেলেমেয়েরা ঘরে মা-বাবাকে দেখেও শিখতে পারে।
মানুষ সমাজবদ্ধ জীব হিসাবে বসবাস করে। তাই পিতা-মাতা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, সমাজ- রাষ্ট্র নিয়ে বসবাস ও ভাবনা চিন্তা করতে হয় । একসাথে বসবাসকালে প্রায়শই কোন না কোন বিষয়ে বা কারনে মতভেদ, তর্ক-বিতর্ক, ঝগড়া বিবাদ, দ্ব›দ্ব, মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। মানুষ যুক্তি তর্ক অথবা শারীরিক শক্তি দেখিয়ে একজন আরেকজনের উপরে বিজয়ী হতে পছন্দ করে। বাইরে থেকে এরকম বিজয়কে বিজয় মনে হলেও আসলে এটা বিজয় নয়- এটা প্র্র্কৃতপক্ষে নিজের রাগ, মেজাজ ও উত্তেজনার কাছে পরাজয়। সকল প্রকার উত্তেজনা, রাগ, দুশ্চিন্তাগুলোকে দমন ও সংযম করতে পারাটাই আসল বীরত্ব। অন্যকে রাগ, মেজাজ, ক্ষমতা ও ভয় দেখিয়ে নয় বরং নিজেকে সংবরন ও সংযম করতে পারাটাই হবে বীরত্ব। একজনের সাথে ঝগড়া-বিবাদ, তর্ক-বিতর্ক ও মারামারিতে জড়ালে আশেপাশের পুরো পরিবেশটাই অশুভ হয়ে যায়। এরূপ পরিস্থিতিতে সামনে সাধারণত দুটো পথ খোলা থাকে; একটা পথ হল- ঝগড়া মারামারি চালিয়ে যাওয়া আর অন্য পথটা হল- তাড়াতাড়ি নিজেকে একেবারে শান্ত- শীতল মানুষে পরিণত করে ফেলা। যদিও অনেকে মনে করে যে, অন্যকে ঝগড়া, তর্ক বা মারামারিতে হারিয়ে অনেক শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান হয়ে গেছে কিন্তু আসলে এতে মানুষ আরও ক্ষমতাহীন হয়ে যায় যা সে বুঝতে পারে না। কারন এভাবে আবার সেই ‘অশুভ চক্রে’ জড়িয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে যে চুপচাপ শান্ত হয়ে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিল তাকে আপাদদৃষ্টে ক্ষমতাহীন বা বোকা মনে হলেও, সেই প্রকৃত বিজয়ী কারন তখন তার নিজের ভেতরে ভাল অনুভূতির সৃষ্টি হয় এবং এতে মানসিক ও শারিরিক প্রতিক্রিয়া শুভ ও কল্যাণকর হয়। এসময় নিজেকে শান্ত করার পাশাপাশি কিছুক্ষণ দীর্ঘ সময় ধরে শ্বাস প্রশ্বাস নিতে থাকুন। নিজের দক্ষতা ও বিশ্বাস নিয়ে চিন্তা করুন এবং অশুভ পরিবেশ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন, অন্যকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করবেন না, নিজের ভেতরে শক্তি সঞ্চয় করুন, নিজের সাথে বোঝাপড়া করুন কিভাবে নিজের রাগ ও উত্তেজনা কমিয়ে ফেলবেন। প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যান এবং অভ্যাস করুন। নিশ্চয়ই আপনি বিজয়ী হবেন।

নিজেকে সংযমী এবং সুখী করতে নীচের ১০টি বিষয় সবসময় মনে রাখুন এবং মেনে চলুন-
১। নিজের অবস্থার পরিবর্তন করুন। যেমন – রাগ বা উত্তেজনার মুহূর্তে ওই স্থান থেকে নিজেকে সরিয়ে নিন। বাইরে গিয়ে কোথাও ঘুরে আসুন, পার্কে হাঁটাহাঁটি করুন, নিজের পছন্দনীয় কোন কাজে লেগে পড়ুন অথবা ব্যায়াম ইয়োগা করুন। এতে শরীরে যে ‘সেরোটিডিন হরমোন’ নির্গত হবে তাতে মনে আনন্দ ও সুখ অনুভব হবে।
২। পুষ্টিকর ও সবাস্থ্যসম্মত শাক সব্জি, ফলমূল, খাবার দাবার খাবেন। যেমন- কলা, কমলা, ব্রক লি, গাজর, শসা, এভোকেদো ইত্যাদি।
৩। সব সময় নিজের মাথাকে নির্দেশনা দিন শুভ এবং পজিটিভ চিন্তা ভাবনা করার জন্য।
৪। যেকোন সুন্দর জিনিষ চোখে পড়লেই “ওয়াও” শব্দটি উচ্চারণ করুন। এটা আয়নার সামনে দাঁড়িয়েও করতে পারেন। দেখবেন মুহূর্তেই আপনার দৃষ্টিভংগী ও মনোভাব পরিবর্তন হয়ে গেছে। আশেপাশের মানুষদের ভাল গুণাবলীগুলোর প্রসংসা করুন। প্রকৃতি, আবহাওয়া, পশুপাখি, গাছপালা, ফলম্লূ, নদনদীর দিকে তাকিয়ে বলুন “ওয়াও”।
৫। যে গান শুনে অথবা মুভি দেখে আনন্দ পান তাই করুন।
৬। ভাল বন্ধু, প্রতিবেশী, আত্মীয় স্বজনের সাথে ভাল কোন বিষয় নিয়ে কথা বলুন।
৭। নিজের পছন্দনীয় সৃষ্টিশীল কাজে আত্মনিয়োগ করুন।
৮। কোন গরীব, দুঃখী, অসহায় মানুষকে সাহায্য করুন। পাড়াপ্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবের প্রয়োজনে সাহায্য করুন। কমিউনিটি লোকদের স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন।
৯। একসঙ্গে একাধিক কাজে না জড়িয়ে ধীরে ধীরে নিজেকে সংযমী করুন এবং ধাপে ধাপে ভাল কাজের অভ্যাস গড়ে তোলার জন্য সামনে অগ্রসর হউন।
১০। দীর্ঘক্ষণ ধরে শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করুন। এটা অত্যন্ত কার্যকর ও গুরুতবপূর্ণ। নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া সুন্দর সময় ও ঘটনাগুলো লিখে রাখুন। বাইরের পৃথিবীটা বদলানো সম্ভব নয় বরং নিজেকে বদলানো সম্ভব, তাই নিজেকে বদলে ফেলুন। নিজের মনে ও শরীরে প্রশান্তি অনুভব করুন এবং ভাল ভাবে বাঁচুন।
পারসিয়ান কবি ও ইসলামি সুফী সাধক জালালুদ্দিন মুহাম্মদ রুমি বলেছেন, ”গতকাল আমি চতুর ছিলাম, তাই বিশ্বকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলাম। আজ আমি জ্ঞানী, তাই আমি নিজেকে পরিবর্তন করছি”।
নাদিরা তাবাসসুম (লেখাটি যুক্তরাজ্যের বিশিষ্ট মনোবিজ্ঞানী ডঃ ক্রিস উইলিয়ামস-এর গবেষণা থেকে সংগৃহীত ও অনুবাদ করা হয়েছে)