রহমান মাহবুব : নিউইয়র্ক এখন আরকোভিড-১৯-এর কেন্দ্রস্থল নয়। তবে কয়েক সপ্তাহ ধরে এই নগর যেন অপরাধের কেন্দ্রস্থল পরিণত হয়েছে। হত্যা, চুরি ডাকাতি, রাহাজানি, ধর্ষণ, বন্দুকযুদ্ধসহ হেন অপরাধ নেই, যা এই নগরে ঘটছে না। নিউইয়র্ক এখন রীতিমতো আতঙ্কের নগরে পরিণত হয়েছে।
সাবওয়ে স্টেশন যাত্রী দাঁড়িয়ে আছে, পেছন থেকে এসে একজন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। নগরে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুত বেগে গাড়ি এসে ধাক্কা দেয়, পথচারীর মৃত্যু হয়। চালক উধাও হয়ে যায়। পুলিশ কি এদের খুঁজে বের করবে?
ব্রুকলিনে বন্দুকযুদ্ধের সময় এক বছরের শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। বাংলাদেশি আমেরিকান তরুণ প্রযুক্তিবিদ তরুণ মিলিয়নিয়ার বাংলাদেশে রাইড শেয়ার অ্যাপ পাঠাওয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা ফাহিম সালেহ (৩৩) নিজ ফ্ল্যাটে খুন হন।
এভাবে প্রতিদিনই ঘটছে নানা ভয়াবহ অপরাধের ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। নিউইয়র্ক নগরে অপরাধের মাত্রাএতটাই বেড়েছে, নগরবাসী চরম উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
আমেরিকার রক্ষণশীল নেতারা এই পরিস্থিতির জন্য নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্য ও নগরের ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্বকে দায়ী করছেন। এদের একজন একজন বিখ্যাত রক্ষণশীল টকশো হোস্ট সোন হেনেটি। তিনি তাঁর টিভি প্রোগ্রামে বলেছেন, ‘কমরেড’ ডি ব্লাজিও অনেক ন্যক্কারজনক কাজ করছেন, যা নিউইয়র্ককে ধ্বংস করে দিচ্ছে। অনেক প্রাণহানি ঘটাচ্ছে। নিউইয়র্ক নগরে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা আর অপরাধের ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে।
সোন হেনেটি আরও বলেন, সাদা পোশাকধারী পুলিশ অফিসারদের সমন্বয়ে গঠিত নিউইয়র্ক নগরের অ্যান্টি-ক্রাইম ইউনিটকে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ‘স্টপ অ্যান্ড ফ্রিক্স’ নামের শক্তিশালী নীতিকেও পরিত্যক্ত করা হয়েছে। এনওয়াইপিডি বাজেটের বিলিয়ন ডলার কাটছাট করেছেন মেয়র। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইনপ্রণেতারা এমনকি বলছেন, নগরের পুলিশকে তাদের ব্যক্তিগত ‘আইনি দায়বদ্ধতা বিমা’র খরচ নিজেকে বহন করতে হব।
এই রক্ষণশীল টিভি হোস্ট নিউইয়র্ক নগরের পুলিশকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘হয় তারা স্বেচ্ছায় অবসরে চলে যাক, নতুবা অন্য কাজ খুঁজুক। কারণ নগর কর্তৃপক্ষ তাদের মধ্যাঙ্গুলি প্রদর্শন করছেন। ভালোবাসার জায়গা থেকে আমি তাদের এমন পরামর্শ দিতে চাই। যারা পুলিশের চাকরিতে নতুন ঢুকেছেন, তারা এ কাজ ছেড়ে অন্য কাজ খুঁজতে পারেন।’
হেনেটি এরপর অপরাধীদের নতুন জামিন সংষ্কার আইন চালু করায় নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমোর প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এই নতুন আইনকে আহাম্মকের আইন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, কট্টর বামপন্থী এই রাজ্যের গভর্নর একটি চরম আত্মঘাতী আইন পাস করলেন। যে আইনের কারণে হিংস্র সব অপরাধী কোনো জামিন ছাড়াই মুক্তি পাবে। অপরাধ ঘটানোর দিনেই ছাড়া পেয়ে যাবে। আর তাও এক পয়সার বন্ড ছাড়াই।
নগরের সাম্প্রতিক শোচনীয় পরিস্থিতিকে অপরাধের প্রতি নমনীয় হওয়ার নীতির পরিণাম বলে উল্লেখ করেন সোন হেনেটি। তিনি বলেন, যখন আইনের প্রয়োগ হয় না, যখন পুলিশের বাজেট কর্তন করা হয়, পুলিশকে যখন সাপোর্ট দেওয়া হয় না, অপরাধীদের জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়—তখনতো বিশৃঙ্খলা হবে, হত্যাকাণ্ড ঘটবে, এটা নিশ্চিত। এটা কোনো কঠিন অঙ্ক নয়।
তবে নিউইয়র্কের বাম ঘরানার রাজনীতিকেরা ভিন্ন কথা বলছেন। অসাম্প্রদায়িক ও উদারনৈতিক নেতারা বলেন, মানুষ এখন চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে। এমন অবস্থা মহামন্দার সময় ছাড়া আর কখনো দেখা যায়নি। এমনও হতে পারে, লোকজন বাসা ভাড়া দিতে পারছেন না। আবার কেউ কেউ ঘর ভাড়া না দিয়ে অর্থ হাতে রাখছেন, যাতে সন্তানদের টেবিলে রুটি তুলে দিতে পারেন। অনেক মানুষকে বেছে নিতে হচ্ছে, সে ক্ষুধার্ত থাকবে; না কি চুরি করে পরিবারের জন্য খাবার এনে টেবিলে রাখবে।
আমেরিকাজুড়ে ‘ডিফান্ড পুলিশ-এর অন্যতম সমর্থক নিউইয়র্ক থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসওমেন ওকাসিও সব সময়ই পুলিশ সংস্কারের পক্ষে। আমেরিকার ধনী-দরিদ্রের সমান অধিকার নিয়ে কথা বলেন তিনি। নিউইয়র্ক নগরের মেয়র বিল ডি ব্লাজিও পুলিশের বাজেট থেকে এক বিলিয়ন ডলার কর্তনের পরও সমালোচনা করেছেন ওকাসিও। তিনি বলেছেন, তাঁর উচিত ছিল পুলিশের পুরো তহবিল কর্তন করা।