এইচ বি রিতা, নিউইয়র্ক : অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি নিউইয়র্ক এখন নতুন সংকটের মুখোমুখি। নিউইয়র্কে সহিংস ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে করোনাকালীন দুর্যোগ এবং জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে অস্ত্র সহিংসতা অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে ভেঙে পড়ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও। ৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে পরদিন সকাল নয়টা পর্যন্ত নগরীতে ২৩টি গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে চারজন নিহত ও ৪১ জন আহত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নিউইয়র্ক সিটিজুড়ে রাতারাতি ঘটে যাওয়া এই সহিংস ঘটনা তদন্তে পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে।
এ ছাড়া ৪ জুন ভোরে এনওয়াইপিডির গাড়ি লক্ষ্য করে উইন্ডশিল্ডে গুলি করা হয়। সে সময় গাড়িতে একজন নারী ও একজন পুরুষ পুলিশ অফিসার ছিলেন। ব্রঙ্কসের মট হ্যাভেনের ২৫৭ আলেকজান্ডার অ্যাভিনিউয়ে এ ঘটনা ঘটে। এনওয়াইপিডি বিভাগের চিফ অব ডিপার্টমেন্ট টেরেন্স মনোহান এক টুইট বার্তায় বলেন, গাড়িতে থাকা পুলিশের দুই কর্মকর্তাই আহত হয়েছেন। তাঁদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কর্মকর্তাদের টার্গেট করে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে কিনা তা এখনো অস্পষ্ট। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
নগরীতে সহিংসতা ৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে সকালে পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এসব ঘটনায় মাউন্ট সিনাই সেন্ট লুক হাসপাতালে ২৩ বছর বয়সী একজনকে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। পুলিশ বলছে, পিঠে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ব্রুকলিনের সাটার অ্যাভিনিউয়ে ৪০ বছর বয়সী এক লোক বুকে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। একই সময়ে ইস্ট ফ্ল্যাটবুশে দুই তরুণও গুলিবিদ্ধ হয়। এ ছাড়া গুলিবিদ্ধ ১৯ বছর বয়সী কিশোরীকে হাসপাতালে মৃত ঘোষণা করা হয়। ইস্ট নিউইয়র্কের অ্যাটকিনস অ্যাভিনিউয়ে গুলিবিদ্ধ ২০ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে ব্রুকডেল হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। হারলেমে ৫ জুলাই সকালে ছয়জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, ছয়জনকেই হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, ৫ জুলাই সকালে ম্যানহাটনের ইনউড বিভাগে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এসব সহিংসতার ঘটনায় কুইন্সে একজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অপর দিকে রুজভেল্ট অ্যাভিনিউ এবং ৫২ স্ট্রিট সাবওয়ে স্টেশনে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আরও একজনকে আটক করা হয়েছে।
গত ২৫ মে মেনিয়াপোলিসে পুলিশের হাতে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড নিহত হন। এর প্রতিবাদে আমেরিকায় নাগরিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় পুলিশ প্রশাসনের প্রতি নাগরিকের বিশ্বাস ও পুলিশ কর্মকর্তাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নিউইয়র্কে এ আন্দোলনের সুযোগে ব্যাপক লুটতরাজ হয়েছে। বিপুলসংখ্যক পুলিশ আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। নিউইয়র্ক রাজ্য ও নগরী পুলিশ সংস্কারে উদ্যোগ গ্রহণ করে। নিউইয়র্কের অনেক পুলিশ স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন। জর্জ ফ্লয়েড হত্যার পর থেকে গত ২৩ জুন পর্যন্ত ২৭২ জন এনওয়াইপিডির কর্মকর্তা ইতিমধ্যে অবসরে যাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।