সোনা কান্তি বড়ুয়া : আজ মঙ্গলবার শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমায় মহাশান্তি মহাপ্রেম! ২৫৬৭ বুদ্ধাব্দের ১ আগস্ট ২০২৩ ইংরেজী খ্রিষ্টাব্দ। সুপ্রভাত- ও শুভ কামনা সকলের প্রতি। পরম পূজনীয় গৌতম বুদ্ধ ৩৫ বৎসর বয়সে আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে বারাণসীর ঋষিপতন মৃগদাবে ধর্মচক্র সূত্র প্রবর্তন করেন। সৃষ্টির সূচনালগ্ন হতে বর্তমান বিশ্ব বৌদ্ধ ইতিহাসের নানান বাঁকে সংঘটিত হয়েছে তাৎপর্যমণ্ডিত অজস্র ঘটনা। বৌদ্ধ ইতিহাসের স্তরে স্তরে, কালের প্রতিবিম্ব, পৃথিবীর নানা পরিবর্তনের ধাপে ধাপে, মানবসভ্যতায় প্রভাব ও বিশ্ব বৌদ্ধ সভ্যতার সংশ্লিষ্টতা বিদ্যমান। বিশ্ব বৌদ্ধ সভ্যতা ও মানবেতিহাসের এক অবিস্মরণীয় ও অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হচ্ছে নমো শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা “কালের কপোল তলে শুভ্র সমুজ্জ্বল! THE CROWN PRINCE সিদ্ধার্থ (গৌতম বুদ্ধ) বেড়ে ওঠেন বিলাস ও প্রাচুর্যের মাঝে, কিন্তু ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগী হয়ে তিনি বোধনের সন্ধান শুরু করেন। সিদ্ধার্থ কপিলাবস্তু রাজ্যের স্বর্ণ সিংহাসন উপেক্ষা করে পিতা-মাতা, স্ত্রী-পুত্র, পরিবার-পরিজনবর্গ সর্বস্ব ত্যাগ করে সত্যের সন্ধানে সন্যাসব্রত গ্রহণ করতঃ ছয় বৎসর কঠোর সাধনার পর মহান বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে তিনি সর্বজ্ঞতা জ্ঞান বুদ্ধত্ব লাভ করেন।
শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্রের ইহাই ছিল মূল বিষয়। গৌতম বুদ্ধ বললেন — “হে ভিক্ষুগণ! স্ব নামে বন্ধু সম্বোধন করে তথাগতের সহিত আচরণ করিও না। তিনি যে অর্হৎ সম্যক সম্বুদ্ধ, তোমরা অবহিত হও। অমৃত অধিগত হয়েছে আমি অনুশাসন প্রদান করছি। ধর্ম উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা যেভাবে উপদিষ্ট হবে সেভাবে প্রতিপন্ন হলে অচিরে যেজন্য ব্র²চর্য পালন করছ তার সার্থকতা প্রতিপন্ন হবে।” গৌতম বুদ্ধ দেশনা করলেন – “হে ভিক্ষুগণ! দুই অন্তে অনুশীলন করবে না। ১। কামের প্রতি অনুরক্তি; যা হীন গ্রাম্য ইতরজন সেব্য অনার্যজনোচিত ও অনর্থযুক্ত। ২। আত্মনিগ্রহে অনুরক্তি যা দুঃখদায়ক। এই দুই অন্তের অনুশীলন না করে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে যা চক্ষুকরণী, জ্ঞানকরণী এবং যা উপশম সম্বোধি ও নির্বাণ অভিমুখে সংবর্তিত করে। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই এই মধ্যম পন্থা। ১) সম্যক দৃষ্টি, ২) সম্যক সংকল্প, ৩) সম্যক বাক্য, ৪) সম্যক কর্ম, ৫) সম্যক আজীব, ৬) সম্যক ব্যায়াম,৭) সম্যক স্মৃতি ও ৮) সম্যক সমাধি। হে ভিক্ষুগণ!”
পঞ্চবর্গীয় শিষ্যেরা বুদ্ধের উপদেশ শ্রবণ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করলে বুদ্ধ ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্র দেশনা করলেন যাতে সমগ্র ত্রিপিটক শাস্ত্রের মূল বিষয় নিহিত রয়েছে। বুদ্ধ আরো বললেন, “যেখানে চারি আর্যসত্য ও আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ নেই সেখানে কোন ধর্ম নেই, থাকতে পারে না।” দেশনা শেষে আঠার কোঠি দেবতা, মনুষ্যের ধর্মচক্ষু উৎপন্ন হয়েছিল। সময়টা ছিল যখন স্বর্ণবরণ গোলাকৃতি সূর্য পশ্চিমাংশে অস্থায়মান এবং রূপালী বরণ গোলাকৃতি চন্দ্রিমা পূর্বাকাশে উদীয়মান এমন সান্ধ্যক্ষণের গোধুলি লগ্নে পবিত্র আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে এই সূত্র দেশনা করেছিলেন। ধর্মচক্র সূত্র বুদ্ধের প্রথম ধর্মদেশনা। সেই ধর্ম দেশনা শোনার জন্য বহু সংখ্যক দেবতা ও ব্র²া উপস্থিত হলেও মনুষ্য শ্রোতা ছিলেন মাত্র পাঁচজন। যাঁদেরকে আমরা পঞ্চবর্গীয় শিষ্য বলে থাকি। এরপর ছোট একটি সূত্র দেশনা করেছিলেন। সেটি ছিল হেমবন্ত সূত্র। সেই রাত্রেই অহধঃধলক্ষণ সূত্র দেশনা করা হয়েছিল।
গৌতম বুদ্ধকে স্মরণ করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গানে লিখেছেন :
“নূতন তব জন্ম লাগি কাতর যত প্রাণী-
কর’ ত্রাণ মহাপ্রাণ, আন’ অমৃতবাণী,
বিকশিত কর’ প্রেমপদ্ম চিরমধুনিষ্যন্দ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর’ কলঙ্কশূন্য।
এস’ দানবীর, দাও ত্যাগকঠিন দীক্ষা।
মহাভিক্ষু, লও সবার অহঙ্কারভিক্ষা।”
২৬০০ হাজার পূর্বে পরম পূজনীয় গৌতমবুদ্ধ জীবন দর্শনকে জীবনের মুকুটের শীর্ষে স্থাপন করেছেন। জীবনের অনেক আপাত তুচ্ছ ঘটনাকে তিনি ভিন্ন চোখে দেখতে লাগলেন, অনেক বৃহদার্থে। আর শেষ করেছেন এক অমোঘ সত্য উচ্চারণ করে, “জন্ম দুঃখ, জরা দুঃখ, ব্যাধি দুঃখ, মরণ দুঃখ, অপ্রিয় সংযোগ দুঃখ, প্রিয় বিচ্ছেদ দুঃখ, ইষ্পিত বস্তুর অলাভ জনিত দুঃখ সংক্ষেপে পঞ্চ উপাদান ষ্কন্ধ দুঃখ আর্যসত্য। ‘ফিরিয়া ফল কী? পৃথিবীতে কে কাহার?’ সত্যিই তো তাই। মানবজাতির গুরুর দায়িত্ব নিয়ে গৌতমবুদ্ধ আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে পৃথিবীতে নিঃসঙ্গপ্রায় জীবন কিন্তু বাস্তবতার সাথে কল্পনার মিশেলে অভিনব সৃষ্টি।
ত্রিস্মৃতি বিজরিত বৌদ্ধজগতের পরম পবিত্র ২৫৬৩তম বুদ্ধাব্দের শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমায় (১) Prince সিদ্ধার্থের (বুদ্ধের) গৃহত্যাগ (২) গৌতম বুদ্ধের দেশিত ধর্মচক্র প্রবর্তন সূত্রের শুভ দিন এবং (৩) বৌদ্ধ ভিক্ষুসংঘ প্রতিষ্ঠা দিবস! বাংলাদেশের বুড্ডিষ্ট Society of Ontario উদ্যোগে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা স্থানীয় টরন্টো Buddhist Monastery and Meditation Centre হলে মহষ সমারোহে সমাপ্ত হয়েছে। পরম পূজনীয় বুদ্ধের শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমায় মানবতার জয়গানের মাধ্যমে গৌতম বুদ্ধের জীবন ও দর্শনের বিভিন্ন দৃশ্যাবলীর সচিত্র প্রদর্শণী অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনাই বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে মহাশান্তি মহাপ্রেম শীর্ষক বৌদ্ধদের মৈত্রী ভাবনা। এক ভাব গম্ভীর বৌদ্ধ ধর্মীয় ঐতিহ্যের পরিবেশে বাংলাদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশের ভিক্ষু সংঘের কাছ থেকে ত্রিশরনসহ পঞ্চশীল প্রার্থনা, নিমন্ত্রিত বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে সঙ্ঘ দান, পিন্ডপাত প্রদান, নিমন্ত্রিত উপাসক উপাসিকাগণকে আহার প্রদান এবং পুণ্যানুমোদনের পুণ্য অনুষ্ঠানসমূহ সুচারুভাবে সুসম্পন্ন হয়।
পৃথিবীতে কে কাহার? কিন্তু ২৯ বছর বয়সে গৃহত্যাগী হয়ে সিদ্ধার্থ কপিলাবস্তু রাজ্যের স্বর্ণ সিংহাসন উপেক্ষা করে বিদায় বেলার মনোভাব প্রকাশ করছেন এই ভাবে, ‘যখন নৌকায় উঠিলেন এবং নৌকা ছাড়িয়া দিল, বর্ষা বিস্ফোরিত নদী ধরণীর উচ্ছলিত অশ্রুরাশির মতো চারিদিকে ছলছল করিতে লাগল, তখন হৃদয়ের মধ্যে অত্যন্ত একটা বেদনা অনুভব করিতে লাগিলেন, একটা সামান্য বালিকার করুণ মুখচ্ছবি যেন এক বিশ্বব্যাপী বৃহৎ অব্যক্ত মর্মব্যথা প্রকাশ করিতে লাগিল। একবার নিতান্ত ইচ্ছা হইল ফিরিয়া যাই, জগতের ক্রোড়বিচ্যুত সেই অনাথিনীকে সঙ্গে করিয়া লইয়া আসি। কিন্তু তখন পালে বাতাস পাইয়াছে, বর্ষার স্রোত খরবেগে বহিতেছে, গ্রাম অতিক্রম করিয়া নদীক‚লের শ্মশান দেখা দিয়াছে এবং নদী প্রবাহে ভাসমান পথিকের উদাস হৃদয়ে এই তত্তে¡র উদয় হইল, জীবনে এমন কত বিচ্ছেদ কত মৃত্যু আছে, ফিরিয়া ফল কী? (বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পোস্টমাস্টার’ গল্প)!
২৬০০ হাজার পূর্বে প্রাচীন বাংলাদেশে পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) এবং পাহারপুরে (রাজশাহীর সোমপুরী বিহার) যেদিন গৌতমবুদ্ধ স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন এবং দিনের পর দিন বাঙালি সমাজকে দান, শীল, ভাবনা সুন্দর ভাবে জীবন যাপনের শিক্ষা দিয়েছেন! এবং স্মৃতির মনিমালায় পোড়ামাটির শিল্পকর্মে “গৌতমবুদ্ধ ধর্মচক্র মূদ্রায়” আজ ও বাংলাদেশে বিরাজমান। গৌতমবুদ্ধ অহিংসা পরম ধর্ম প্রচার করে বিশ্বমানবতায় আমাদের মানবজাতির প্রাণ সঞ্চার করে এক নবযুগের দ্বার উন্মোচন করে দিয়ে গেলেন। আজও তাঁর দেখানো পথ ধরেই চলছে আমাদের মানবজাতি। হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্ঠানসহ সকল মানব সন্তান! ভাষা যদিও পালটেছে, রকম-সকম, ধরনও পালটেছে অনেক, উপমা-শৈলী, প্রেক্ষাপট, বিষয়বস্তুতে ও ঘটে গেছে ব্যাপক রদ-বদল! তবু কি করে অহিংসা পরম ধর্ম দাঁড় করাতে হয় কাঠামো, এর আবেদনটা মূলত কেমন হবে, গোড়ার বিষয়টুকু হাতে ধরে মূলত সফল মানবজাতির গুরু গৌতমবুদ্ধই শিখিয়েছেন আমাদের। রাজনীতি ও ধর্ম মানবাধিকারকে ধ্বংস করা অমানবিক অপরাধ বলে কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ভাষায়, “গোত্র দেবতা গর্তে পুরিয়া, / এশিয়া মিলাল শাক্যমুনি(গৌতমবুদ্ধ)। গৌতমবুদ্ধের জীবনী নিয়ে আমাদের বাংলা সাহিত্যের মহাকবি নবীন চন্দ্র সেনের (চট্টগ্রাম) রচিত ‘অমিতাভ (১৩০২)’ এবং যশস্বী লেখক আবুল ফজল সাহেবের রচিত ‘মানবপুত্র বুদ্ধ’ গ্রন্থদ্বয় বিরাজমান। “ভারতবর্ষে লোভী ব্রাহ্মণদের হাত থেকে বঙ্গলিপিসহ বিভিন্নলিপি রক্ষা করতে বুদ্ধ সর্বপ্রথম চেষ্ঠা করেন সফলও হন (দেশ, কোলকাতা, ১ ফেব্রুয়ারী ১৯৯২)।
হিন্দু রাষ্ট্রশক্তি বৌদ্ধ ত্রিপিটককে নিশ্চিহ্ন করে হিন্দু ধর্মকে মহিমান্বিত করতে বৌদ্ধ জাতকের গল্পকে চুরি করে ((১) রামায়ন (২) মহাভারত (৩) বেতাল পঞ্চবিংশতি (৮) পঞ্চতন্ত্র, (৫) HITOPADESA এবং (৬) কথাসরিৎসাগর রচনা করেছেন (WEEKLY BARTAMAN MAGAZINE EDITORIAL page 4, dated 2 January 2016)! ইউরোপীয়ষন লেখকগণের লেখায় বৌদ্ধ জাতকে রামায়ন ও মহাভারত! আজও ইউরোপের ইউরোপীয়ষন লেখকগণের লেখায় এবং গবেষণষয় কোন্ কোন্ বৌদ্ধ জাতকের গল্পকে চুরি করে হিন্দু ব্রাহ্মণেরা রামায়ন ও মহাভারত রচনা করেছেন? মহর্ষি পতঞ্জলি বৌদ্ধ MEDITATION SUTRA (MAHASATIPATTANA SUTTA) SYSTEM কের চুরি করে প্রায় ২ হাজার ২০০ বছর পূর্বে ‘যোগসূত্র’ নামক বইয়ে যোগের আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করেন। পরমাত্মার সঙ্গে যুক্ত হতে হলে পরমাত্মাকে জানতে হবে। এই যে জানার প্রক্রিয়া এটাই যোগ সাধনা বা যোগক্রিয়া।
মহর্ষি পতঞ্জলি প্রায় ২ হাজার ২০০ বছর পূর্বে ‘যোগসূত্র’ নামক বইয়ে যোগের আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করেন। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মনীষী বিভিন্নভাবে যোগের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংযোজন করেন। তৎসত্তে¡ও পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগই মূল যোগধারা হিসেবে বিবেচিত হয়ে এসেছে। পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগকে অনেকে অষ্টসিদ্ধি, আবার অনেকে অষ্টাঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করেন। আমার মতে, প্রথমটাই প্রাধান্য পাবে। কারণ, প্রথম সিঁড়ি পার না হলে দ্বিতীয় সিঁড়ি যেমন পার হওয়া যায় না, তেমনি পতঞ্জলির এই অষ্টাঙ্গ হলো (LORD BUDDHA ÔS EIGHTFOLD PATH AND 37 BODHI PAKKHIYA DHAMMA)-শ ম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি। গৌতম বুদ্ধ দেশনা করলেন-হে ভিক্ষুগণ! দুই অন্তে অনুশীলন করবে না। ১। কামের প্রতি অনুরক্তি; যা হীন গ্রাম্য ইতরজন সেব্য অনার্যজনোচিত ও অনর্থযুক্ত। ২। আত্মনিগ্রহে অনুরক্তি যা দুঃখদায়ক। এই দুই অন্তের অনুশীলন না করে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করবে যা চক্ষুকরণী, জ্ঞানকরণী এবং যা উপশম সম্বোধি ও নির্বাণ অভিমুখে সংবর্তিত করে। আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গই এই মধ্যম পন্থা। ১) সম্যক দৃষ্টি, ২) সম্যক সংকল্প, ৩) সম্যক বাক্য, ৪) সম্যক কর্ম, ৫) সম্যক আজীব, ৬) সম্যক ব্যায়াম, ৭) সম্যক স্মৃতি ও ৮) সম্যক সমাধি। হে ভিক্ষুগণ! হিন্দু রাষ্ট্রশক্তি বৌদ্ধ ত্রিপিটককে নিশ্চিহ্ন করে হিন্দু ধর্মকে মহিমান্বিত করতে বৌদ্ধ জাতকের গল্পকে চুরি করে ((১) রামায়ন (২) মহাভারত (৩) বেতাল পঞ্চবিংশতি (৮) পঞ্চতন্ত্র, (৫) HITOPADESA এবং (৬) কথাসরিৎসাগর রচনা করেছেন (WEEKLY BARTAMAN MAGAZINE EDITORIAL page 4, dated 2 January 2016)! ১৮৯৭ সালে Mr. H. LUDERS এর লেখা “LEGEND IN THE EPICS AND IN THE PALI JATAKAS“ বই এবং RENATE SÖHNEN – THIEME এর লেখা “BUDDHIST TALES IN THE MAHABHARATA” বই ২টি (Please find it in your Google) প্রকাশে স্বীকার করেছেন হিন্দু ব্রাহ্মণলেখকগণ বৌদ্ধ জাতককে বদলায়ে মহাভারত বানিয়েছে! সঙ্গে সঙ্গে ঝড় ওঠে ইউরোপের German & ব্রিটেনে। বিখ্যাত ইউরোপীয়ষন সাহিত্যিকগণকে গভীর ভাবে প্রভাবিতকরেছে, তাঁরা বার বার ফিরে এসেছেন বই ২টির কাছে। ক্রমশ তার আঁচ পড়তে থাকে আমেরিকা এবং ইউরোপের অন্যান্য রাজ্যে। ছড়াতে থাকে গোটা বিশ্বেই। হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির “সত্য“ বড় বিষম বস্তু। রাষ্ট্রীয় সেন্সরশিপের ফলে তাতে কোপ পড়লে গণতন্ত্রের বিপদ, আবার শাসকবর্গের কায়েমি স্বার্থে তার বাগাড়ম্বর ও সমস্যাকর। বস্তুত, সত্যকে সহজভাবে প্রকাশিত হতে না দিলে তা কি আর সত্য থাকে? রামায়ন ও মহাভারতের কথাই ধরা যাক।
কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকে হত্যা করলে কুকুর বিড়াল হত্যার সমান পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবেন (মনুস্মৃতি ১১/ ১৩২)! “রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের (অধ্যায়) বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতম বুদ্ধকে চোর বলে গালাগাল এবং মনুষ্যত্ব কেড়ে নেওয়াটাই উচ্চবর্ণের হিন্দুরাজনীতির হিন্দু ধর্ম! চর্যাপদে আমরা দেখতে পাই সেন আমলে সর্বগ্রাসী হিন্দু রাজনীতি গায়ের জোরে উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসকগণ বৌদ্ধগণকে দলিত বানিয়েছিলেন (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)!
হিন্দু রাষ্ট্রশক্তির হিন্দুগণ হিন্দু মন্দিরে বুদ্ধ পূজা না করে ও “রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের (অধ্যায়) বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতম বুদ্ধকে চোর বলে গালাগাল এবং বৌদ্ধগণকে নীচ জাতি করে রাখেন। চর্যাপদে আমরা দেখতে পাই সেন আমলে সর্বগ্রাসী হিন্দু রাজনীতি গায়ের জোরে উচ্চবর্ণের হিন্দু শাসকগণ বৌদ্ধগণকে দলিত বানিয়েছিলেন (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)! ১৮৯৬ সালে বৌদ্ধ পন্ডিত হেনরি ওয়ারেন ক্লার্ক “বুড্ডিজম ইন ট্রানশ্লেশন “শীর্ষক মূল্যবান গ্রন্থ লেখা এবং হার্ভাট অরিয়েন্টাল সিরিস সম্পাদনা করে অমর হয়েছেন। হিন্দুরাজনীতি ও হিন্দু ব্রাহ্মণেরা বৌদ্ধ জাতক থেকে রামায়ন ও মহাভারত রচনা করার গভীর ষড়যন্ত্র এবং রহস্য দ্রæত উদঘাটন করা হয়েছে! হিন্দু লেখকগণ বৌদ্ধ দশরথ জাতককে বদলায়ে হিন্দু রামায়ন এবং ১০০ বৌদ্ধ জাতককে বদলায়ে মহাভারত বানিয়েছে! হিন্দুরাজা শশাংক বৌদ্ধদের প্রার্থনার জায়গা (৬৫০ সালে) বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষ ধ্বংস করেছিলেন! হিন্দু শাসক শশাঙ্ক, আদি শঙ্করাচার্য্য এবং কুমারিল ভট্ট ফতোয়া দিলেন, “বৌদ্ধ মাত্রই বধ্য বা বৌদ্ধদেরকে হত্যা কর (পৃষ্ঠা ১২, দেশ, কলিকাতা, ৪ মে, ২০০১)।”
হিন্দু ব্রাহ্মণেরা বৌদ্ধ দশরথ জাতক থেকে রামায়ন রচনা করেছেন! গৌতমবুদ্ধ তাঁর ভিক্ষুসংঘকে উপদেশ প্রসঙ্গে দশরথ জাতক (রামায়ন) সমাধান করতে গিয়ে বলেছেন, “তখন (পূর্ব জন্মে) শুদ্ধোধন রাজা ছিলেন দশরথ মহারাজা, মহামায়া ছিলেন সে মাতা, রাহুলমাতা (গোপা) ছিলেন রাজকুমারী সীতা, আনন্দ ছিলেন রাজপুত্র ভরত, সারীপুত্র ছিলেন রাজপুত্র লক্ষন, বুদ্ধ পরিষদ সে পরিষদ, আমি (বুদ্ধ) ছিলাম সে রাম পন্ডিত (দশরথ জাতক নম্বর ৪৬১, জাতক অট্টকথা, পালি টেক্সট সোসাইটি, লন্ডন)।
চীন, কোরিয়া, তিব্বত, মঙ্গোলিয়া, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, কম্বোডিয়া, SEVERAL BUDDHIST COUNTRIES লাওস, শ্রীলঙ্কা ও জাপানের আনাপানাস্মৃতি ভাবনা (বৌদ্ধ MEDITATION সাধনা) কি হিন্দুদের বৈদিক সংস্কৃতি? যোগ সাধনার ইতিহাসে গৌতমবুদ্ধের শিক্ষাপদ ত্রিপিটক সহ আনাপানাস্মৃতি ভাবনা শীর্ষক সূত্রের অবদান মানব সমাজে আজ ও দেদীপ্যমান হয়ে আছে। চীন দেশের বৌদ্ধ মন্দিরে বিশ্ববিখ্যাত ব্রæশ লী কংফু বা যোগ সাধনায় ট্রেনিং নিয়ে দুর্লভ বিজয় মালা লাভ করেছিলেন। জাপানে কারাটে নামক যোগ ব্যয়াম বৌদ্ধ মন্দিরে আজ ও শিক্ষা দেয়া হয়। এই প্রসঙ্গে ইহা ও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, হিন্দু বৈদিকযুগের পূর্বে সিন্ধু সভ্যতায় মহেঞ্জোদারোতে কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধধর্মে যোগ সাধনা এবং যোগ ব্যায়ামের প্রচলন বৌদ্ধদের পরম তীর্থভ‚মি বুদ্ধগয়াকে বেআইনি ভাবে দখল করার পরে জাতিসঙ্ঘে আজ হিন্দু রাজনীতি আবার যোগ ব্যায়ামকে ও হিন্দু ঐতিহ্যের অবদান বানিয়ে বৌদ্ধ সংস্কৃতি (যোগাচার) থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। বৌদ্ধযুগের বৌদ্ধ সভ্যতায় গৌতমবুদ্ধ যোগাসনে ধ্যানস্থ হলে ও সর্বকালের বৌদ্ধ ভারতে ইহা কি হিন্দু সংস্কৃতি? কোন হিন্দু মন্দিরে বুদ্ধ পূজা হয় না। ভারতে মনুষ্যত্ব ও মানবাধিকার নেই।সর্বদা বুদ্ধগয়ার বুদ্ধ মন্দিরে গৌতম বুদ্ধের মূর্তির সম্মুখে ব্রাহ্মণ ঠাকুরগণ শিব লিঙ্গের গর্ত পূজা করে কেন?
হিন্দুরা স্রেফ গায়ের জোরে ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করেছে এবং তিরুপতি বালাজী বুদ্ধ (Andra Pradesh) মূর্তিকে হিন্দুর ভগবান বেঙ্কটশ্বর বানিয়েছে। ডাক্তার কে যমানাদাসের লেখা ‘তিরুপতি বালাজি ওয়াজ এ বুদ্ধিষ্ঠ স্রাইন’ শীর্ষক মহাগ্রন্থে লেখা আছে, “আসলে এটি একটি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি। ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম পতনের সময় হিন্দুরা স্রেফ গায়ের জোরে বিহারটিকে দখল করে নেয়। পুরীর (উড়িষ্যা) জগন্নাথ দেবের মন্দির ও আসলে বুদ্ধ মন্দির।
মানুষের সকল মৌলিক অধিকার পরিপন্থী এবং মানবতা বিরোধী এক কালো আইনের নাম “বুদ্ধগয়া Management Committee! পলিটিক্যাল হিন্দুধর্ম নাম যশের জন্যে বৌদ্ধধর্মের গলা টিপে দিয়ে বৌদ্ধদের অবলোকিতশ্বর বোধিসত্বকে হিন্দুদের শিব বানিয়ে বৌদ্ধ ঐতিহ্যসমূহসহ বুদ্ধগয়া মহাবোধি মন্দির তীর্থভ‚মি দখল করে নিয়েছে। বৌদ্ধগণ হিন্দুরাজনীতিকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন! যেই পবিত্র তীর্থভ‚মি বোধিবৃক্ষের তলে বসে (বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির) রাজকুমার সিদ্ধার্থ কঠোর সাধনার মাধ্যমে সম্যক সম্বুদ্ধ বা বুদ্ধত্ব লাভ করেন, বিশ্ববৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম তীর্থস্থান “বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির” হিন্দু রাজনীতি দখলে রাখবে। এই ঐতিহাসিক পূঞ্জীভ‚ত দুঃখ ও বেদনায় বৌদ্ধগণ কেমনে রাখে আঁখি বারি চাপিয়া!
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া ((Bachelor of Arts, University of Toronto), The AuthorÕs World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি