Home কলাম নমো বুদ্ধপূর্ণিমা “কালের কপোল তলে শুভ্র সমুজ্জ্বল”

নমো বুদ্ধপূর্ণিমা “কালের কপোল তলে শুভ্র সমুজ্জ্বল”

সোনা কান্তি বড়ুয়া : পূজনীয় জগজ্যোতি গৌতমবুদ্ধের শুভ বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন ও ২৫৬৬তম বুদ্ধাব্দ বুদ্ধজয়ন্তীতে উদ্ভাসিত ধরনীতল! ১৪ মে, ২০২২ ইং, সকাল ৮টায় ঢাকায় বুদ্ধপূর্ণিমা উপলক্ষে শান্তি ও স¤প্রীতি শোভাযাত্রা বাংলাদেশ বৌদ্ধ সাংস্কৃতিক পরিষদের উদ্যোগে ঢাকার প্রতিনিধিত্বকারী সকল বৌদ্ধ সংগঠনের সম্মিলিত প্রয়াসে আগামী ১৪ মে, ২০২২ ইং, শনিবার, সকাল ৮.৩০ মিনিটে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে “শুভ বুদ্ধ পূর্ণিমা জাতীয় সম্মিলিত শান্তি শোভাযাত্রা ও স¤প্রীতি উৎসব-২০২২” বর্ণাঢ্যভাবে উদযাপন করতে যাচ্ছে। উক্ত বর্ণাঢ্য শান্তি শোভাযাত্রায় ঢাকায় বসবাসরত নারী পুরুষ, পাহাড়ী বাঙালি নির্বিশেষে সকল বৌদ্ধ নাগরিককে সকাল ৮টায় উপস্থিত থেকে শান্তি শোভাযাত্রাকে সফল করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানানো হয়েছে।

১৫ মে, ২০২২ ইং, সকাল ৯টায় এক ভাব গম্ভীর বৌদ্ধ ধর্মীয় ঐতিহ্যের পরিবেশে টরন্টো বাংলাদেশী বৌদ্ধ বিহারে বুদ্ধ পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে। পূজনীয় বুদ্ধের বুদ্ধজয়ন্তি, বোধি লাভ, এবং মহা পরিনির্বানসহ ত্রিস্মৃতি বিজরিত বৌদ্ধজগতের পরম পবিত্র বুদ্ধপূর্ণিমায় ২৫৬৪তম বুদ্ধাব্দের শুভ বুদ্ধজয়ন্তি বর্ষ স্থানীয় সুমনোরম বুড্ডিষ্ট Society of Ontario উদ্যোগে মানবতার জয়গানে বিগত ১৯ই মে (২০১৯) মহামতি (১০, Harrow Road, Mississauga) স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সহযোগীতায় মহষসমারোহে সমাপ্ত হয়েছে। বাংলাদেশের বৌদ্ধ ভিক্ষুসহ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশের ভিক্ষু সংঘের কাছ থেকে ত্রিশরনসহ পঞ্চশীল প্রার্থনা, নিমন্ত্রিত বৌদ্ধ ভিক্ষু সংঘকে সঙ্ঘ দান, পিন্ডপাত প্রদান, নিমন্ত্রিত উপাসক উপাসিকাগণকে আহার প্রদান এবং পুণ্যানুমোদনের পুণ্য অনুষ্ঠানসমূহ সুচারুভাবে সুসম্পন্ন হয়। বিশ্বব্যাপী বুদ্ধপূর্ণিমা উদযাপন ও ২৫৬৬তম বুদ্ধজয়ন্তীতে উদ্ভাসিত ধরনীতল!

বিশ্ববৌদ্ধ স¤প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা! “কালের কপোল তলে শুভ্র সমুজ্জ্বল! জগতের সকল প্রাণী সুখী হোক, অশান্ত পৃথিবীতে শান্তি বিরাজ করুক। বিশ্বব্যাপী সকল প্রাণীর মঙ্গল কামনাই বৌদ্ধদের মৈত্রী ভাবনা। মনে মৈত্রী করুণ রস, বাণী অমৃত পদ। জনে জনে হিতের তরেপড়েন সত্যের সন্ধানে বৌদ্ধ সাহিত্য! বুদ্ধ পূর্ণিমা বৌদ্ধ স¤প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। বৈশাখ মাসের এই পূর্ণিমা দিবসে মহামানব বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল বলে দিনটি ‘বুদ্ধ পূর্ণিমা’ নামে খ্যাত। খ্রিস্টপূর্ব ৬২৩ অব্দের এ দিনে গৌতম বুদ্ধ জন্মগ্রহণ করেন, ৫৮৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এ দিনে তিনি সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে জগতে বুদ্ধ নামে খ্যাত হন এবং ৫৪৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দের এ দিনে তিনি মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। সিদ্ধার্থের বুদ্ধত্বলাভের মধ্য দিয়েই জগতে বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তিত হয়।

অহিংসা মানবতার পথ এবং হিংসা মানুষজাতির সর্বনাশের পথ। সেবা, ভালবাসা বা বিশ্বমৈত্রী দিয়ে মানুষের মনের অন্ধকার ধ্বংস করে প্রতিটি মানব মনে মানবতার আলোই আলোকিত বিশ্ব গড়ে তুলবে। ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের বৌদ্ধ তিরুপতি মহাবিহার দখল করে হিন্দু মন্দিরে রুপান্তরিত করেছে! ভারতবর্ষে বৌদ্ধ বিহার ভেঙ্গে গড়ে তোলা হয়েছে পুরীর হিন্দু মন্দির! ব্রাহ্মণ্যবাদী প্রতারণার রাজনীতিতে বৌদ্ধদের ভারত ভূমি ও দেশ দখল করার নাম হিন্দু ধর্ম! বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বুদ্ধদেব সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন, “ভারতবর্ষে বুদ্ধদেব, মানবকে বড় করিয়াছিলেন। তিনি জাতি মানেন নাই, যাগযজ্ঞের অবলম্বন হইতে মানুষকে মুক্তি দিয়াছিলেন, দেবতাকে মানুষের লক্ষ্য হইতে অপসৃত করিয়াছিলেন। তিনি মানুষের আত্মশক্তি প্রচার করিয়াছিলেন। দয়া এবং করুণা তিনি স্বর্গ হইতে প্রার্থনা করেন নাই, মানুষের অন্তর হইতেই তাহা তিনি আহ্বান করিয়াছিলেন। এমনি করিয়া শ্রদ্ধার দ্বারা, ভক্তির দ্বারা, মানুষের অন্তরের জ্ঞানশক্তি ও উদ্যমকে তিনি মহীয়ান করিয়া তুলিলেন। মানুষ যে দীন দৈবাধীন হীন পদার্থ নহে, তাহা তিনি ঘোষণা করিলেন।”

বৈশাখী পূর্ণিমাতে মহাসংকটের দিনে দুর্গতি, ভয় সংশয় বিনাশকারী মহাশক্তিধর, মহাপ্রেমধারী বুদ্ধদেবকে স্মরণ করে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর গানে লিখেছেনঃ
“নূতন তব জন্ম লাগি কাতর যত প্রাণী–
কর’ ত্রাণ মহাপ্রাণ, আন’ অমৃতবাণী,
বিকশিত কর’ প্রেমপদ্ম চিরমধুনিষ্যন্দ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্তপুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর’ কলঙ্কশূন্য।
এস’ দানবীর, দাও ত্যাগকঠিন দীক্ষা।
মহাভিক্ষু, লও সবার অহঙ্কারভিক্ষা।”

পরিশেষে বলি যে, মানবপ্রেমিক রবীন্দ্রনাথের গভীর প্রেম ছিল জীবন ও মাটির পৃথিবীটার জন্য। স্বর্গের চাইতে মর্ত্যকে, পরলোকের চাইতে ইহলোককে এবং দেবতার চাইতে মানুষকেই বেশি মূল্য দিয়েছেন তিনি। তাই হয়ত, সবাই যাঁকে ‘ভগবান’ বুদ্ধ বলেছেন, কবি তাঁকে প্রণাম নিবেদন করে অন্তরের সমস্ত শ্রদ্ধা ঢেলে ‘শ্রেষ্ঠ মানব’ বলে উল্লেখ করেছেন।
বৌদ্ধধর্ম চর্চার জন্য মায়ানমারে ছুটে এসেছেন ইতালির মেয়ে গৌতমী ইয়াদানার!
গৌতমী ইয়াদানার একজন ইতালীয় মেয়ে যিনি দীর্ঘদিন বৌদ্ধধর্ম চর্চা করছেন ও বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধধর্ম প্রচারে কাজ করছেন। বর্তমানে মিয়ানমারে আছেন এবং মান্দালয়ে ভিক্ষুণী হিসেবে চীবর গ্রহণ করে শ্রদ্ধামুণি থেরী নাম ধারণ করে গভীরভাবে ধর্মচর্চা করছেন।

গৌতমী ইয়াদানার ইতালীতে জন্ম ও বড় হলেও তিনি বার্মিজ ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির ভক্ত। এছাড়াও বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, ভারতের বৌদ্ধ ধর্ম ও সংস্কৃতি নিয়ে তার ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে।

একজন থেরবাদী বৌদ্ধ নারী হিসেবে তিনি দৃঢ?ভাবে বিশ্বাস করেন যে, বৌদ্ধধর্ম মতে নারী ও পুরুষ উভয়েরই ধর্ম পালন করার এবং নির্বাণ লাভের সমান সুযোগ রয়েছে। একই সাথে তিনি মনে করেন, ধর্ম প্রচারে পুরুষের মতো নারীদের কোন বাঁধা নেই। তিনি প্রাণীদের প্রতি দয়ালু ও পরিবেশবান্ধব একজন মানুষ।

ঈদের ছুটিতে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে রের্কড পরিমাণ দর্শানার্থী, আয় ১২ লক্ষ টাকা!
ঈদের তিনদিনের ছুটিতে নওগাঁর বিশ্বঐতিহ্য ও দেশের সবচেয়ে বড় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারে (সোমপুর বিহার) দর্শানার্থীর আগমন ঘটেছে রের্কড পরিমাণ। টিকিট বিক্রি থেকে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে প্রায় ১২ লাখ টাকা। আর লক্ষাধিক পর্যটকরা ভ্রমণ করেছে এই পাহাড়পুর। মহামারি করোনা ভাইরাসের সংকট কেটে প্রায় দীর্ঘ দুই বছর পর আবারো নতুন করে পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার প্রাঙ্গন। বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক আনিসুল হকসহ দেশের বিশিষ্টজনরা এই ঈদে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ভ্রমণ করেছেন। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় বিহার এই পাহাড়পুর। এর আদি নাম সোমপুর বিহার।

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে অবস্থিত এটি। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো এটিকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করে। পাল আমল হতে এটি মূলতঃ বিশ্ববিদ্যালয় ছিলো। এখানে সে সময় ভিক্ষুরা পড়ালেখা করতো। এখানে সারা বছর দেশ ও বিদেশ থেকে আগত দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। তবে দীর্ঘ প্রায় দুই বছর ঘরে বন্দি থাকায় এই ঈদে খোলা পেয়ে লক্ষাধিক দর্শনাথীরা পাহাড়পুরে আসছেন।

বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, সত্যিই পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার ও তার পরিবেশ খুবই সুন্দর। তবে এখানে মোবাইল নেটওয়ার্কের খুবই সমস্যা। কিন্তু আজকের দিনে এমন ঐতিহাসিক স্থানে এমন সমস্যা সত্যিই খুবই দু:খজনক। এই সমস্যা দ্রæত সমাধানের লক্ষ্যে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। আমি এখানে এই প্রথম আসলাম। হাজার বছর আগের কীর্তি দর্শন করতে পেরে খুবই ভালো লাগছে।

পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের কাস্টোডিয়ান মুহাম্মদ ফজলুল করিম আরজু বলেন, এই বারের ঈদে পাহাড়পুরের ইতিহাসে রের্কড পরিমাণ দর্শক এসেছে। আমরা সীমিত লোকজন নিয়ে আগত দর্শনার্থীদের মানসম্মত সেবা প্রদানের চেস্টা করে আসছি। এতো দর্শনাথী সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। বুদ্ধভূমি পুন্ড্রবর্দ্ধনে (বগুড়া) গৌতমবুদ্ধের বাংলাদেশ! সেইদিনের (2600 years ago) বাংলাদেশের পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার এবং বগুড়ায় মহাস্থানগড়ে ঐতিহাসিক স্মৃতিখন্ড পবিত্র বুদ্ধ তীর্থভূমি যেখানে গৌতমবুদ্ধ তাঁর অমৃতময় ধর্ম প্রচার করেছিলেন, সম্রাট অশোক সেই মহান পুণ্যভূমিকে স্মরনীয় করার জন্যে বৌদ্ধবিহার (বাসু বিহার) ও বুদ্ধচৈত্য নির্মাণ করেছিলেন এবং আজ ও সম্রাট অশোকের “প্রাচীন বাংলা ভাষায়” (ব্রাহ্মী লিপিতে) শিলালিপিটা কলকাতা জাদুঘরে বিরাজমান। বিশ্বসমাজ সুখী হও সুখী হও / এ মৈত্রী ভাবনা । / দিবা নিশি হিত সুখ করিনু প্রার্থনা। অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের মতে “ধর্মহীন বিজ্ঞান খোঁড়া, বিজ্ঞানহীন ধর্ম অন্ধ।”

হিন্দু ধর্ম কিভাবে বৌদ্ধধর্মকে ধ্বংস করল? দেশ এবং আনন্দবাজার পত্রিকায় হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ প্রসঙ্গ! সম্রাট অশোকের তীর্থভূমিবুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা কেন? বৌদ্ধদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধদেরকে দলিত বানিয়ে হিন্দুধর্মের নামে নীচু জাত করে মনুষ্যত্ব কেড়ে নিল (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২)

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৌদ্ধধর্মের পতনের কারন সম্বন্ধে জবাবদিহি করেছেন, “তাঁর (গৌতমবুদ্ধের) তপস্যা কি শুধু ইতিহাসের পাতায় লেখা আছে? ভারতের মাটিতে আজ তাঁর তপস্যা বিলুপ্ত হয়েছে। আমাদের অমূল্য ভান্ডারে দ্বার ভেঙ্গে গেছে। “ভারতে বৌদ্ধধর্মকে অপহরণ এবং ধ্বংস করতে বাংলাদেশের পঞ্জিকায় (ক্যালেন্ডারে) বুদ্ধাব্দ লেখা হলো না কেন? ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজা শশাংক (৬৫০ সালে) বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষ ধ্বংস করে এবং মহাবোধি মন্দিরে পূজনীয় বুদ্ধমূর্তিকে সরিয়ে হিন্দু দেব দেবীর মূর্তি সমূহ প্রতিষ্ঠিত করলেন। কারণ কর্নাটকের রাজা বিজয় সেনের বাংলাদেশ দখল করাতে একাদশ শতাব্দীতে বাংলাদেশী বৌদ্ধ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলো। বৌদ্ধ পাল রাজত্বের পতনের যুগে এবং ব্রাহ্মণ্য ধর্মের পূনরুত্থান কালে অস্থির ঘটনা চাঞ্চল্যের দ্বারা চঞ্চল সেন বর্মন রাষ্ট্রের প্রবল আধিপত্যের প্রেক্ষাপটে চর্যাপদের জন্ম আধুনিক গণতান্ত্রিক অধিকারের মেনিফিষ্টো হিসেবে। এর মধ্যে নিহিত রয়েছে বাঙালীর সর্বপ্রথম গনতন্ত্রের বীজ ‘বাক স্বাধীনতার অধিকার’।

হিন্দুরা স্রেফ গায়ের জোরে ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করেছে এবং তিরুপতি বালাজী বুদ্ধ (Andra Pradesh) মূর্তিকে হিন্দুর ভগবান বেঙ্কটশ্বর বানিয়েছে। ডাক্তার কে যমানাদাসের লেখা ‘তিরুপতি বালাজি ওয়াজ এ বুদ্ধিষ্ঠ স্রাইন’ শীর্ষক মহাগ্রন্থে লেখা আছে, “আসলে এটি একটি প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি। ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্ম পতনের সময় হিন্দুরা স্রেফ গায়ের জোরে বিহারটিকে দখল করে নেয়। পুরীর (উড়িষ্যা) জগন্নাথ দেবের মন্দির ও আসলে বুদ্ধ মন্দির।
মানুষের সকল মৌলিক অধিকার পরিপন্থী এবং মানবতা বিরোধী এক কালো আইনের নাম “বুদ্ধগয়া Management Committee! পলিটিক্যাল হিন্দুধর্ম নাম যশের জন্যে বৌদ্ধধর্মের গলা টিপে দিয়ে বৌদ্ধদের অবলোকিতশ্বর বোধিসত্বকে হিন্দুদের শিব বানিয়ে বৌদ্ধ ঐতিহ্যসমূহসহ বুদ্ধগয়া মহাবোধি মন্দির তীর্থভূমি দখল করে নিয়েছে। বৌদ্ধগণ হিন্দুরাজনীতিকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন! যেই পবিত্র তীর্থভূমি বোধিবৃক্ষের তলে বসে (বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির) রাজকুমার সিদ্ধার্থ কঠোর সাধনার মাধ্যমে সম্যক সম্বুদ্ধ বা বুদ্ধত্ব লাভ করেন, বিশ্ববৌদ্ধদের শ্রেষ্ঠতম তীর্থস্থান “বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির” হিন্দু রাজনীতি দখলে রাখবে। এই ঐতিহাসিক পূঞ্জীভূত দুঃখ ও বেদনায় বৌদ্ধগণ কেমনে রাখে আঁখি বারি চাপিয়া! আমরা বৌদ্ধগণ সদাশয় ভারত সরকারের নিকট আনন্দবাজারের উক্ত কার্টুনের ভাষার বিরুদ্ধে যথাযথ বিচারের আশা রাখি। সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা বুদ্ধগয়ায় মহাবোধি মন্দির দখল করতে দিনের পর দিন মহাবোধি মন্দিরের ভেতরে শিবলিঙ্গ সহ হিন্দুদের দেবদেবী স্থাপন করেছে। অহিংসার আয়নায় দেখলে মানুষ মানুষের ভাই। হিংসার আয়নায় দেখলে ভাই ভাইয়ের শত্রু। দেশের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ, কোন রাষ্ঠ্রধর্ম নয়! বুদ্ধগয়া পুণ্যভূমিতে পাপের হিন্দুরাজনীতির এ কেমন আস্ফালন?

২৩০০ বছর পূর্বে সম্রাট অশোকের মৃত্যুর পর পুরোহিত ও হিন্দু রাজ শক্তি মানবাধিকার ধ্বংস করতে দিনের পরদিন বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ প্রবর্তন করার পর ও সমাজে সাম্য ও মৈত্রী প্রতিষ্ঠার’ জন্যই নাটক চর্চা করতেন! পলিটিক্যাল হিন্দুধর্ম বুদ্ধগয়া মহাবোধি মন্দির দখল করল কেন? ভূপালে (ভারত) সাঁচীর তোরনদ্বারের দক্ষিণ তোরণের পশ্চিমের স্তম্ভের মাঝের দুটো প্যানেলে সেই মহামতি সম্রাট অশোকের তীর্থভূমি বুদ্ধগয়ায় মহাবোধিবৃক্ষে বুদ্ধ বন্দনার অমর এ্যালবাম আজ ও অম্লান হয়ে আছে। জাতিভেদ প্রথার ট্রাজেডিতে “বৌদ্ধগণ” ভারতে হিন্দু রাজনীতির ক্রীতদাসে পরিণত হছে। হিন্দুরাজনীতির বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ চক্রান্তে (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২) জাতিভেদ প্রথার ট্রাজেডিতে “বৌদ্ধগণ” ভারতে হিন্দু রাজনীতির ক্রীতদাসে পরিনত হয়ে বৌদ্ধগণ মুসলমান হয়েছিলেন!

বৌদ্ধবিশ্বের প্রার্থনার জায়গা বুদ্ধগয়ায় হিন্দু রাজনীতির শিবলিঙ্গ দুর্বৃত্তপনা কেন? বাংলাদেশে বৌদ্ধ রাজত্ব ছিল হিন্দুরাজনীতির প্রাচীন বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞের জন্যে ভারত, পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের বৌদ্ধগণ by force মুসলমান হয়েছিলেন (দেশ, ৪ মে ২০০১ কলিকাতা পৃষ্ঠা ১২) “আমার বাপের ঘরে আগুন দিল কে রে, আমি খুঁজিয়ে বেড়াই তারে।” আনন্দবাজার পত্রিকার (সম্পাদকীয়, ২২ আগষ্ট, ১৯৯৩) মতে, “সেই উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা কেমন করিয়া ভুলিয়া গেলেন যে, একদা রাশি রাশি বৌদ্ধ ধর্মস্থান ধ্বংস করিয়া একদিন গড়িয়া উঠিয়াছিল রাশি রাশি হিন্দু মন্দির।” হিন্দু পুরোহিত প্রধান শঙ্করাচার্যের নির্দেশে বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ যেই শুরু হয়েছিল আজ ও তা শেষ হয়নি। সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারত গোলেমালে হিন্দু ইন্ডিয়া হল কেন? ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজা শশাংক (৬৫০ সালে) বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষ ধ্বংস করে এবং মহাবোধি মন্দিরে পূজনীয় বুদ্ধমূর্তিকে সরিয়ে হিন্দু দেব দেবীর মূর্তিসমূহ প্রতিষ্ঠিত করলেন। তখন থেকে হিন্দু শাসকদের ষড়যন্ত্রে এবং বৌদ্ধগণ হিন্দুরাজনীতিকে কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন!

সময় এসেছে সা¤প্রদায়িক ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতির “জাতিভেদ প্রথার” বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার। বিশ্ব বিখ্যাত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ত্রয়দশ শতাব্দীতে তূর্কিশাসক সন্ত্রাসী বক্তিয়ার খিলজী ধ্বংস করেছিলেন। আটশত বছর পর চীন ও জাপানের দুই বিলিয়ন ডলার এবং ভারত সরকারের সাহায্যে দুইহাজার আঠারো সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাস শুরু হয়েছে। দুঃখের বিষয় এই যে অমর্ত্য সেন উচ্চশিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ শিক্ষা প্রশাসক হয়েও বিশ্ব জনতার আকুল আশা অনন্ত পিপাসা ধ্বংস করতে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটি কোটি টাকা বিভিন্নভাবে পকেটেস্থ করেছে।

নেপালে কাশ্যপবুদ্ধের বৌদ্ধনাথ্ শীর্ষক বিরাটকায় বৌদ্ধ স্তুপ কাঠমান্ডু নগরে বিরাজমান! ভারতে হিন্দুধর্মের পূর্বে কাশ্যপব্দ্ধুর বৌদ্ধধর্ম প্রসঙ্গ! প্রায় ৫ হাজার পূর্বে রাজর্ষি মহেঞ্জোদারো বোধিসত্তে¡র প্রত্নতাত্তিক নিদর্শন (পাকিস্তান)! উক্ত হিন্দু রামায়নের অযোধ্যা কান্ডের বত্রিশ নম্বর শ্লোকে গৌতমবুদ্ধকে চোর এবং বৌদ্ধদেরকে নাস্তিক বানিয়েছে। হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধ ধর্মচক্রকে বদলায়ে অশোকচক্র বানিয়েছে এবং সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারতকে হিন্দু ভারত করেছেন। উচ্চবর্ণের হিন্দু সমাজ ১৯২৫ সালে আরএসএস (Hindu Organization) প্রতিষ্ঠার সময় থেকে!

১৯৪৯ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর আদেশে উক্ত শিবলিঙ্গ বুদ্ধগয়ার মহাবোধি মন্দির থেকে সরিয়ে নেওয়া হল এবং বুদ্ধগয়ায় আজ বিভিন্ন বৌদ্ধ দেশের বৌদ্ধ মন্দিরসমূহ সগৌরবে বিরাজমান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বৈদিক জাতিভেদ প্রথার বিরুদ্ধে বৌদ্ধধর্মের জয়গান গেয়ে চন্ডালিকা শীর্ষক নৃত্যনাট্য রচনা করেছিলেন এবং তিনি তাঁর ভারতীয় সমাজের কাছে! আল্লাহ এবং রাম সর্ব শক্তিমান স্রষ্টা হলে হিন্দুশাসকগণ ভারতের বৌদ্ধ মন্দিরসমূহ (পুরীর জগন্নাথ মন্দির, তিরুপতি বালাজী সহ শত শত বৌদ্ধ মন্দির) দখলে রেখে ভগবান রামের নামে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করলো কেন? কারণ ভারতে অহিন্দু ধর্মসমূহকে স্বামী বিবেকানন্দ ও তাই মনে করতেন। স্যার যদুনাথ, নগেন্দ্রনাথ বসু, ডঃ ভাও লোকান্ডের উদ্ধৃতি ও নৃতাত্বিক প্রমাণাদিসহ ড. যমানাদাস হিন্দু ধর্মের সহনশীলতা এই বহু কথিত গুণটিকেই কাঠগোড়ায় দাঁড় করিয়েছেন।

ভারতের সাবেক রাষ্ঠ্রপতি ডক্টর রাজেন্দ্র প্রসাদ ও বলেছিলেন, ‘বুদ্ধগয়ার মন্দিরটিকে দখলে এনে আসলে আমরা অন্যায় করে চলেছি।’ উত্তরে মহান বিদ্বান লেখক রাহুল সাংকৃত্যায়ন বলেন, ‘বুদ্ধগয়া মন্দিরের ষোল আনাই বৌদ্ধদের হাতে দিয়ে দেওয়া উচিত (আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৪ ফেব্রæয়ারী ১৯৯৭, বৌদ্ধ মঠের কঙ্কাল বিধু বাহিরেতে)।”

হিন্দু মুসলমান রাজনীতির প্রাচীন বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ! বাংলাভাষা পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজনীতি পালি বর্ণমালাকে ব্রাহ্মী বর্ণমালা করেছিল কেন? সম্রাট অশোক ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষা বাদ দিয়ে পালি ভাষা গ্রহণ করেছিলেন। সম্রাট অশোক ব্রাহ্মণ শাসিত সংস্কৃত ভাষা বাদ দিয়ে বৌদ্ধ ত্রিপিটক পালি ভাষায় প্রকাশনা প্রচার ও প্রসার করার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।

সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারত গোলে মালে হিন্দু ইন্ডিয়া হল কেন? হিন্দু সমাজে মানবাধিকার নেই এবং বৌদ্ধধর্মকে হিন্দু রাজনীতি তিলে তিলে কিডন্যাপ করেছিলেন। সম্রাট অশোকের বৌদ্ধ ভারত গোলেমালে হিন্দু ইন্ডিয়া হল কেন? প্রতারণার রাজনীতিতে মহাভারতে হিংসার বিভীষিকা বন্ধ হয়ে গেল একমাত্র গৌতমবুদ্ধের অহিংসা পরমধর্মে। সম্রাট অশোক বর্ণাশ্রমবাদী (গীতা ৪/১৩ এবং ১৮/ ৪৪ জাতিভেদ প্রথা) বৈদিক ব্রাহ্মণ্যধর্ম এবং জৈনধর্ম ত্যাগ করে করুনাঘন বুদ্ধের ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। ভারতীয় বৈদিকবাদী রাজনীতিকগণ খুব চতুর লোক হয়ে অন্যদেরকে বেকুবভাবে! ব্রাহ্মণগণ শ্রেষ্ঠ হলে বৌদ্ধসহ অন্য মানব সন্তান নিকৃষ্ট হয় কেন? ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দুরাজা শশাংক (৬৫০ সালে) বুদ্ধগয়ায় বোধিবৃক্ষ ধ্বংস করে এবং মহাবোধি মন্দিরে পূজনীয় বুদ্ধমূর্তিকে সরিয়ে হিন্দু দেব দেবীর মূর্তিসমূহ প্রতিষ্ঠিত করলেন। তখন থেকে হিন্দু শাসকদের ষড়যন্ত্রে এবং হিন্দু পুরোহিত প্রধান শঙ্করাচার্যের নির্দেশে বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞ যেই শুরু হয়েছিল আজ ও তা শেষ হয়নি।
লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, কানাডা, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রণেতা, প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, থাইল্যান্ডের ব্যঙ্কস্থ বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব সঙ্ঘ পত্রিকারসহ সম্পাদক, এবং জাতিসংঘে সাবেক বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!

Exit mobile version