অনলাইন ডেস্ক : কারও প্রতি প্রতিশোধ না নিয়ে সবাইকে নিয়ে একটি নতুন সিরিয়া গড়ায় মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দামেস্ক দখলকারী প্রধান বিদ্রোহী সশস্ত্রগোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল শামের (এইচটিএস) নেতা আবু মোহাম্মদ আল জোলানি। রোববার রাজধানী দখলের কয়েক ঘণ্টা পর ঐতিহাসিক উমাইয়া মসজিদে বিজয় ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। এদিকে নির্বাচনের আগে ১৮ মাস পর্যন্ত অন্তর্বর্তী শাসনব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছেন সিরিয়ার প্রধান বিরোধী গোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক শাখার নেতা হাদি আল বাহরা। খবর বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, আলজাজিরার।

এইচটিএস নেতা আল জোলানি বলেছেন, ‘প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের অপসারণের পর সিরিয়ার জনগণই এ দেশের বৈধ মালিক এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এক নতুন ইতিহাস রচিত হয়েছে।’

ইসলামি ইতিহাসে দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামি ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, কেয়ামতের আগে ঈসা (আ.) দামেস্কের এই উমাইয়া মসজিদেই অবতরণ করবেন। সেই মসজিদে দেওয়া ভাষণে আল জোলানি বা আহমেদ আল শারা বলেন, ‘আমার ভাইয়েরা, এ মহান বিজয়ের পর পুরো অঞ্চলে এক নতুন ইতিহাস লেখা হচ্ছে।’ একই সঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, নতুন সিরিয়া গড়তে সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তিনি সবাইকে এ বিজয়ের জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ আপনাদের ব্যর্থ হতে দেবেন না। এ বিজয় সব সিরিয়ানের, তারা সবাই এ বিজয়ের অংশ।’

আল জোলানি ইরান সরকার এবং সিরিয়ায় তাদের ভূমিকার সমালোচনা করেন এবং বলেন, এখন আর ইরানের মতো বহিরাগত শক্তির দ্বারা প্রভাবিত সরকার থাকবে না।

এদিকে বাশার সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা মোহাম্মদ গাজী আল জালালি বলেছেন, দামেস্কের বেশির ভাগ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যই এখনো দাপ্তরিক কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। স্কাই নিউজ অ্যারাবিয়া টিভিকে তিনি সোমবার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময় যাতে দ্রুত এবং সাবলীল হয়, সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, দেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আগের দিনের তুলনায় এখন বেশ অগ্রগতি হয়েছে।

বাশার আল আসাদ এবং তার পরিবারকে রাশিয়ায় মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে বলে ক্রেমলিনের একটি সূত্র রুশ গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে।

১৮ মাসের অন্তর্বর্তী শাসনের আহ্বান : সিরিয়ায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নিরাপদ, নিরপেক্ষ ও শান্ত পরিবেশ গড়ে তোলা প্রয়োজন। আর এজন্য নির্বাচনের আগে ১৮ মাস পর্যন্ত অন্তর্বর্তী শাসনব্যবস্থার আহ্বান জানিয়েছেন সিরিয়ার প্রধান বিরোধী গোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক শাখার নেতা হাদি আল বাহরা। রোববার দোহা ফোরামের সাইডলাইনে রয়টার্সকে তিনি এ কথা বলেন। সিরিয়ার জাতীয় জোটের প্রেসিডেন্ট আল বাহরা বলেন, সিরিয়ায় ছয় মাসের মধ্যে একটি সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যার ভিত্তিতে প্রথম নির্বাচনটি হবে গণভোট।

আইএস-এর ৭৫ ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা : সিরিয়ায় জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ৭৫টি ঘাঁটিতে রোববার বিমান হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, আইএস-এর শীর্ষ নেতা, সহযোগী এবং বিভিন্ন ক্যাম্প লক্ষ্য করে এসব হামলা চালানো হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে ইউএস সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, বি-৫২, এফ-১৫ এবং এ-১০-সহ একাধিক মার্কিন বিমান ৭৫টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।

গোলান মালভূমির বাফার জোন ইসরাইলের দখলে : সিরিয়ার গোলান মালভূমির বেসামরিক বাফার জোন সাময়িকভাবে দখলে নিয়েছে ইসরাইল। সোমবার এক ঘোষণায় এ দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, গোলান মালভূমিতে ইসরাইল অধিকৃত এলাকা থেকে বাফার জোন এবং আশপাশের কমান্ডিং অবস্থানগুলোয় ঢোকার জন্য তিনি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) নির্দেশ দিয়েছেন।

বাশারের বাসভবনে লুটপাট-ভাঙচুর : বাশার আল আসাদের পতনের পর প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে ঢুকে লুটপাট চালিয়েছেন অনেকে। বিদ্রোহীরা দামেস্ক দখলের পর বাশার আল আসাদের বাসভবনে অনেকেই ঢুকে পড়েন। তাদের মধ্যে নারী, শিশু ও পুরুষ ছিল। অনেককে সেখান থেকে জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখা গেছে। ক্ষুব্ধ জনতা বিভিন্ন কক্ষ তছনছ করেছে। সম্মেলনকক্ষেও তারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এছাড়া অনেক সরকারি ভবনেও হামলার খবর পাওয়া গেছে। তবে কে বা কারা এসব হামলা চালিয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এমন বিশৃঙ্খলা ও লুটপাট ঠেকাতেই রাজধানী দামেস্কে ১৩ ঘণ্টার জন্য কারফিউ ঘোষণা করা হয়েছিল। রোববার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা থেকে আজ সোমবার ভোর ৫টা পর্যন্ত এ কারফিউ চলবে বলে বিদ্রোহী গোষ্ঠীর এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছিল।

দ্য প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেস বা আশ শাব (পিপলস প্যালেস) নামের এ ভবন ১৯৮৫ সালে নির্মাণ শুরু হয়ে ১৯৯০ সালে শেষ হয়। জাপানি আর্কিটেক্ট কেঞ্জো টাঙ্গের নকশায় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ নির্মাণে ১০০ কোটি ডলার খরচ হয়েছিল। পাঁচ লাখ বর্গমিটারের এলাকায় নির্মিত এ বাসভবন কম্পাউন্ডের ভেতরে প্রেসিডেন্সিয়াল হাসপাতালও ছিল। সেই সঙ্গে ছিল রিপাবলিকান গার্ডের হেডকোয়ার্টার।