অনলাইন ডেস্ক : সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তার দেশত্যাগের পর সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদধারীদের পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দিন দিন এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ব্যক্তিগত ও শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র দিয়েছেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ। এরপর বুধবার (৭ আগস্ট) ব্যক্তিগত অসুবিধার কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি বরাবর পদত্যাগপত্র দেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বুধবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমকে বরখাস্তের দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়। চেয়ারম্যানকে বরখাস্ত করে আয়কর, কাস্টমস এবং এক্সাইজ ও ভ্যাট ক্যাডার থেকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়া, প্রশাসন ক্যাডার থেকে কোনো কর্মকর্তাকে প্রেষণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পদায়ন না করাসহ ৯ দাবি জানান এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।।
বাংলাদেশ ব্যাংকেও কর্মকর্তাদের ক্ষোভে চরম অস্থিরতা বিরাজ করে আজ। এরই মধ্যে চার ডেপুটি গভর্নর, হেড অব বিএফআইইউ ও নীতি উপদেষ্টা পদত্যাগ করেছেন। তবে অফিস করেননি গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তার পদত্যাগ ও গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর অফিসে আসেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। মঙ্গলবার না এলেও আজ বুধবার অফিসে আসেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আহসান হাবিব এবং মো. আলমগীর। এদিন দুপুর একটার দিকে ইসি ভবনে আসেন ইসি সচিব শফিউল আজিম।
শিক্ষাঙ্গনেও পড়েছে পদত্যাগের হিড়িক। পদত্যাগ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম। আজ বুধবার রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে ই-মেইলযোগে পদত্যাগপত্র জমা দেন তিনি। পদত্যাগপত্রে নূরুল আলম বলেন, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল এবং সে অনুসারে আমি আমার দায়িত্ব পালনে সর্বোচ্চ সচেষ্ট ছিলাম। বর্তমানে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে আমি উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করলাম।
পদত্যাগ করেছেন রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশীদ। এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শকে পদত্যাগের জন্য আল্টিমেটাম দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেকৃবি সমন্বয়ক মো. তৌহিদ আহমেদ আশিক।
রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ বিভিন্ন দপ্তরের পরিচালক ও প্রধানরা পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, পরিবহন পুলের পরিচালক, লাইব্রেরি পরিচালক, বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট, বহিরাঙ্গণ বিভাগের পরিচালক এবং ছাত্র উপদেষ্টা ও পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক পদত্যাগ করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান শরিফুল ইসলাম, পরিবহন পুলের দায়িত্বে ছিলেন প্রফেসর কামরুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু হলের পরিচালক বিজন মোহন চাকি, বহিরাঙ্গন বিভাগের পরিচালক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী এবং ছাত্র উপদেষ্টা ও পরামর্শ দপ্তরের পরিচালক ছিলেন সৈয়দ আনোয়ারুল আজিম।
এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনেও (দুদক) বুধবার সকাল থেকেই সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। যদিও তার আগে দুদক চেয়ারম্যানের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়ে। তবে চেয়ারম্যান দপ্তর সূত্র বলছে, চেয়ারম্যানের পদত্যাগের তথ্য সঠিক নয়, এটা গুজব। এখনও তো সরকার গঠন হয়নি। নতুন সরকার পুনর্গঠন হলে তারা এই কমিশন রাখবে কি না, সেটা দেখার বিষয়। তবে দু-একদিনের মধ্যে তিনি পদত্যাগ করতে পারেন বলেও জানা গেছে।