সোনা কান্তি বড়ুয়া : ২০২২ সালে ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে (গত ১৯, জুলাই ২০২২)! প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০৯ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে ‘আদিবাসী’ শব্দ উল্লেখ করে শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছিলেন। এ লজ্জা কার? আর কত কাল এই ঘৃণ্য রাজনীতি সহ্য করতে হবে? ২১ জুলাই ভোট গণনা শেষে ভারতের ১৫তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেন দ্রৌপদী মুর্মু। তিনি দেশটির প্রথম আদিবাসী রাষ্ট্রপতি। ভারতে আদিবাসী স¤প্রদায় থেকে রাস্ট্রপতি বানাচ্ছে আর বাংলাদেশে আদিবাসী শব্দটি ও বিলুপ্ত করে দিয়েছে। ২৪ বছর পাকিস্তান সরকার শাসন করে কাপ্তাই জলবিদ্যুত প্রকল্প বানিয়ে লক্ষাধিক লোক উদ্ভাস্তু করল, ১৯০০ সালের শাসন ব্যবস্থা টুকুরো টুকরো করে দিল। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়ে ৫০ বছর পর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অবস্থান একদম প্রান্তিক পর্যায়ের শেষ অংশে ঠেকেছে।
তদুপরি এ কথাও আজ দিবালোকের মতো সত্য যে, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকারই ১৯৭২ সালে যে আই এলও কনভেনশন ১০৭ অনুস্বাক্ষর করে গেছেন সেখানেও আদিবাসী বা Indigenous শব্দটি শুধু ব্যবহারই নয়, তাদের সকল অধিকারের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। এ ছাড়া কয়েক মেয়াদে ক্ষমতাসীন বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে আদিবাসী দিবস উপলক্ষে তার দেয়া বানীতে আদিবাসীদের নিজস্ব পরিচয়ে সকল অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠার উপর বলিষ্ঠ ভাষায় গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরর ভাষায়, “মানুষের অধিকারে বঞ্চিত করেছ যারে, / সন্মুখে দাঁড়ায়ে রেখে তবু কোলে দাও নাই স্থান!” এটি বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসেবে ১৯৯৩ সালে এবং প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ২০০০ ও ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে ‘আদিবাসী’ শব্দ উল্লেখ করে শুভেচ্ছা বাণী দিয়েছিলেন। এমনকি ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নির্বাচনী ইসতেহারে ‘আদিবাসী’ শব্দটি উল্লেখ করে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি ও বেহাত হওয়া জায়গা-জমি পুনরুদ্ধারের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের অঙ্গীকার করেছিলেন। বিশ্ব মানবাধিকারের আলোকে দেশে আইনের শাসনে ‘আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা বিশ্বমানবাধিকার কেঁপে উঠেছে!
সকল মুক্তিকামী মানুষদের আন্তরিক শুভেচ্ছায় পরবর্তীতে বাংলাদেশে আদিবাসী’ রাস্ট্রপতির তরে সোনার ঘটে আলোক ভরবে! আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার না করার সার্কুলার সংবিধান-পরিপন্থী! ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সালের মধ্যে পাহাড়ীদের ভিটে-মটিতে পাঁচ লক্ষ মুসলমান বর্তমান ১০ লক্ষ মুসলমান সেটেলার এনে সাংস্কৃতিক গণহত্যা (Cultural Genocide) ও নির্যাতন! সাংস্কৃতিক গণহত্যা কেন সেই ‘আদিবাসী’ অঙ্কের টানাটানি?
মনুষ্যত্বের বাঁধনে সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির সাধনা! কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঊনবিংশ শতকে জন্মগ্রহণ করে বিংশ শতকের প্রথমার্ধ পর্যন্ত দেখে সংখ্যালঘু নির্যাতন উপশমে তুখোড় ‘ঘরে-বাইরে’ (রচিত হলো) ছোটগল্প লিখেছিলেন: আদিবাসী’ সংস্কৃতিতে উদ্ভাসিত বাংলাদেশের সংবিধান! ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান পুরোহিত ভ্যাটিকানের পোপ ফ্রান্সিস (Pope Francis) গত ২৪শে জুলাই, ক্যানাডায় আসেন ক্যানাডার আদিবাসীদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য এবং এর অংশ হিসাবে তিঁনি গত পরশু, ২৯ জুলাই, নুনাভুটের রাজধানী ইকালুইটে আসেন ইনুইটদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করতে! (লিখেছেন – শ্রদ্ধাভাজন অশুদ্ধ আচার্য্য, কানাডা প্রবাসী)।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদ কর্তৃক বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রেরিত প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার করে আদিবাসীদের যোগ্য সম্মান এবং অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি মোঃ ফয়েজ উল্লাহ এবং সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবির কথা জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন আজ (২৯ জুলাই) সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক রেজোয়ান হক মুক্ত স্বাক্ষরিত এক প্রেস বার্তায়।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, উগ্রপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীর নষ্টরা বলে, তবুও তিনি জাতীয় কবি নন কেন? ড. হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ- যাঁকে বাতিলের চেষ্টা করে আসছে নষ্টরা পবিত্র পাকিস্তানের কাল থেকে; পেরে ওঠেনি। এমনই প্রতিভা ঐ কবির, তাঁকে বেতার থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয় জুড়ে বাজেন; তাঁকে পাঠ্যপুস্তক থেকে বাদ দিলে তিনি জাতির হৃদয়ের কাব্যগ্রন্থে মুদ্রিত হয়ে যান, তাঁকে বঙ্গভবন থেকে বাদ দেওয়া হলে তিনি সমগ্র বঙ্গদেশ দখল করেন; তাঁর একটি সঙ্গীত নিষিদ্ধ হলে তিনি জাতীয় সঙ্গীত হয়ে ওঠেন।”
বাংলাদেশে আমি মানুষ: এ কথা কাহাকেও বলতে শুনি না কেন? ড. হুমায়ুন আজাদ বলেছেন, প্রতিক্রিয়াশীল উগ্রপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীর নষ্টরা অনেক লড়াই করেছে তাঁর (“বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ) সাথে, পেরে ওঠেনি; তাঁকে মাটি থেকে বহিষ্কার করা হলে তিনি আকাশ হয়ে ওঠেন; জীবন থেকে তাঁকে নির্বাসিত করা হলে তিনি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন জাতির স্বপ্নালোকে। নষ্টরা তাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে আপ্রাণ। যদিও তিনি জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, তবুও তিনি জাতীয় কবি নন। তাঁর নামে ঢাকায় একটি রাস্তাও নেই; সংস্থা তো নেই। তাতে কিছু যায় আসেনি তাঁর; দশকে দশকে বহু একনায়ক মিশে যাবে মাটিতে। তিনি বেঁচে থাকবেন বাঙলায় ও বিশ্বে।”
আদিবাসী’ জুম্মদদের কে দুঃখের দহনে করুন রোদনে আর কতকাল ধরে তিলে তিলে ধ্বংস করবে? দেশে আইনের শাসনে গবেষণার তথ্যানুসারে আদিবাসী’ শব্দ ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশ সরকারর অন্যায় ন্যায় হল, সত্য হল অসত্য, অসত্য হল সত্য! আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার না করার সার্কুলার সংবিধান-পরিপন্থী ও উচ্চ আদালত অবমাননাকর: ৫০ বিশিষ্ট নাগরিক (Hill Voice -জুলাই ৩০, ২০২২)!
হিল ভয়েস, ৩০ জুলাই ২০২২, বিশেষ প্রতিবেদক: ৫০ জন বিশিষ্ট নাগরিকের যৌথ বিবৃতিতে আদিবাসী শব্দটি ব্যবহার না করার জন্য গোয়েন্দা সংস্থার প্ররোচনায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের ১৯ জুলাই ২০২২-এর সার্কুলার সংবিধান-পরিপন্থী ও উচ্চ আদালত অবমাননাকর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অবিলম্বে উক্ত সার্কুলেশন প্রত্যাহারের জন্য উক্ত বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ আহবান জানিয়েছেন। ৫০ জন বিশিষ্ট নাগরিকের পক্ষে এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হদার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয় যে-
“আমরা গভীর ক্ষোভ ও বিস্ময়ের সঙ্গে জেনেছি যে, তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সকল টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধানদের কাছে একটি সার্কুলার পাঠিয়ে বলা হয়েছে ‘৯ আগস্ট ২০২২ তারিখ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত টকশো-তে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধ্যকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য’ বলতে হবে। যে সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় এই সার্কুলার প্রচার করেছে, সেই সরকারের ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ২৮(ক) ধারায় একাধিকবার আদিবাসী শব্দটি স্পষ্ট করে ব্যবহার করা হয়েছে।
এই সার্কুলারটি আসলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার পরিপত্রকে ভিত্তি করেই রচিত এবং তার অনুলিপি হিসেবেই প্রচার করা হয়েছে। কোন শব্দটি সংবিধান সম্মত কিংবা অসাংবিধানিক তা নির্ধারণ করার এখতিয়ার একটি গোয়েন্দা অধিদপ্তর কিংবা তথ্য মন্ত্রণালয়ের সার্কুলার প্রণয়নকারীদের কাছে কখন কিভাবে গেল তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সঙ্গে আমরা বলতে বাধ্য হচ্ছি যে, এটি চরম অনধিকার চর্চার পর্যায়ে পড়ে, যা মোটেই কাম্য নয়, আইনসম্মতও নয়।
উক্ত নির্দেশনায় আরো বলা হয় যে, “৯ আগষ্ট ২০২২ তারিখ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত টকশো-তে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।”
দেশে গত পাঁচ বছরে সংঘটিত জঙ্গি মৌলবাদী ও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গঠিত গণকমিশনের শ্বেতপত্র আগামী ১৯ জানুয়ারি ২০২২ প্রকাশ করা হয়েছে। শনিবার একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কার্যালয়ে গণকমিশনের তৃতীয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় (দৈনিক সমকাল, 02 January 2022)! শ্বেতপত্রে ২০১৬ সালে ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান ক্যাফেতে জঙ্গি হামলা থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে জঙ্গি মৌলবাদী ও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাসের পাঁচ বছরের ঘটনাবলী তুলে ধরা হবে।
একাত্তররের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং জাতীয় সংসদের আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক ককাস যৌথভাবে গত বছর এ গণকমিশন গঠন করেছিল। গণকমিশনের সভাপতি বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের সভাপতিত্বে সভায় বলা হয়, দুই খণ্ডে প্রকাশিতব্য এই শ্বেতপত্রে জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের বহুমাত্রিক কার্যক্রম তুলে ধরার পাশাপাশি এ বিষয়ে সরকার ও নাগরিক সমাজের করণীয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব করা হবে। এছাড়াও জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, সা¤প্রদায়িকতা ও সংখ্যালঘু নির্যাতনের নির্বাচিত কলাম, সংবাদ ও ছবি প্রকাশ করা হবে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদ কর্তৃক আমাদের দেশের সংবিধানে সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সংবিধানের কোন ধারা বা বিষয় নিয়ে কোন বিতর্ক বা মতান্তর দেখা দিলে তার ব্যাখ্যা একমাত্র দেশের সর্বোচ্চ আদালত বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টই দিতে পারবে। কারণ অন্য কোন প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠী বা ব্যক্তি নয়। আর বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টেরই এক রায়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, আদিবাসী শব্দটি ব্যবহারে কোন আইনগত প্রতিবন্ধকতা নেই। একটি সংঘবদ্ধ গোষ্ঠী বাংলাদেশ থেকে ‘আদিবাসী’ জুম্মদদের তাড়িয়ে দিয়ে সম্পদ ও রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইছে। এখন প্রজ্ঞাপন দিয়ে বলা হচ্ছে – “আসন্ন ৯ ই আগষ্ট ২০২২ ইং আদিবাসী বর্ষ” তে আদিবাসী বলা যাবে না, যা সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতা বলা হয়েছে।” উল্লেখ্য, গত ১৯ জুলাই ২০২২ তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয় (টিভি-২ শাখা)-এর উপসচিব শেখ শামছুর রহমানের স্বাক্ষরিত ‘সংবিধান সম্মত শব্দ চয়ন প্রসঙ্গে’ শীর্ষক এই নির্দেশনা জারি করা হয় হয়। ‘সদর দপ্তর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিচালকের ০৪.০৭.২০২২ তারিখের ২২ সংখ্যকপত্র’ বরাত দিয়ে এই নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, “বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বিভিন্ন ছোট ছোট স¤প্রদায়গোষ্ঠীকে উপজাতি/ক্ষুদ্র জাতিসত্তা/নৃ-গোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।” বৌদ্ধ নগরী মুন্সিগঞ্জের নাটেশ্বর গ্রামে মাটির নিচে লুকানো কেন?
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরর ভাষায়,
“অহমিকা বন্দীশালা হতে। ভগবান তুমি
নির্দ্দয় এ লোকালয়, এ ক্ষেত্র তব জন্মভূমি।
ভরসা হারালো যারা, যাহাদের ভেঙেছে বিশ্বাস
তোমারি করুনা বিত্তে ভরুক তাদের সর্বনাশ
আপনারে ভুলে তারা ভুলুক দুর্গতি। আর যারা
ক্ষীণের নির্ভও ধ্বংস করে, রচে দুর্ভাগ্যের কারা;
দুর্বলের মুক্তি রুধি, বোসো তাহাদেরি দুর্গদ্বারে,
তপের আসন পাতি, প্রমাদ বিহ্বল অহঙ্কারে।
পড়–ক সত্যের দৃষ্ঠি; তাদের নিঃসীম অসমমান
তব পুণ্য আলোকেতে লভুক নিঃশেষ অবসান।” (২৯ জুলাই ১৯৩৩ সাল)!
বিবৃতিতে আদিবাসীদের উপর সংঘটিত সকল সা¤প্রদায়িক হামলার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, “বাংলাদেশের সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাংলাদেশে বসবাসরত বিভিন্ন ছোট ছোট স¤প্রদায় বা গোষ্ঠীকে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্তা বা নৃগোষ্ঠী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য টেলিভিশনগুলোকে অনুরোধ করেছে তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়। ১৯ জুলাই মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শেখ শামছুর রহমানের সই করা এক চিঠিতে টেলিভিশনগুলোর কর্তৃপক্ষকে এই অনুরোধ করা হয়েছে।
এ অবস্থায় আগামী ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ এবং সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ সুশীল সমাজের অন্য ব্যক্তিদের বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ‘আদিবাসী’ শব্দটি ব্যবহার না করার বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা সম্পর্কে প্রচারের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, “হাজার বছর ধরে বসবাস করে আসা জনগোষ্ঠী শুধুমাত্র সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময় তাদের সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় অবজ্ঞার শিকার হতে হয়েছে। বিভিন্ন সময় নির্যাতন, নিপীড়ন, গুম, খুনের শিকার হতে হয়েছে, অথচ কোন বিচার হয়নি। বর্তমান সরকার সেই একই ধারায় সংখ্যালঘ্যু স¤প্রদায় সহ আদিবাসীদের উপরে নির্যাতন, নিপীড়ন এবং হামলার বিচার করতে ব্যর্থ। ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিদের পাশাপাশি আদিবাসীদেরও রক্ত ঝরেছে। তারাও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলো এদেশের স্বাধীনতার জন্য। বাংলাদেশ যেমন একজন বাঙালির তেমনি এদেশ একজন আদিবাসীর। শুধুমাত্র সংখ্যায় কম বলে তাদের দেওয়া হচ্ছে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর তকমা, যা কোন ভাবেই মেনে নেওয়া হবে না। আদিবাসীদের তাদের যোগ্য সম্মান ফিরিয়ে দিতে হবে। আদিবাসীদের উপরে সকল নির্যাতন এবং হামলার বিচার করতে হবে।”
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সভাপতি’র জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা শুভেচ্ছা বক্তব্য! আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি’র FUTURE শুভেচ্ছা বক্তব্য (FOR THE NEXT ৯ আগস্ট ২০২১)! বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবার এসেছে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। এই মহান দিবসে আমি বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৯০টি দেশের ৪০ কোটির অধিক আদিবাসী ও সকল মুক্তিকামী মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ দিবসটি আদিবাসী জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নব চেতনায় উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন। বিশেষ অনুপ্রেরণার দিন। ভারতে আদিবাসী স¤প্রদায় থেকে রাস্ট্রপতি বানাচ্ছে আর বাংলাদেশে আদিবাসী শব্দটি ও বিলুপ্ত করে দিয়েছে।
সর্বোপরি সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদের ২(ক) ও ২(খ) ধারায় যে বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা দেয়া রয়েছে তাতেও এই সার্কুলারে সম্পূর্ণ অস্বীকার করা হয়েছে। একজন কি কি শব্দ চয়ন করলেন তাতে রাষ্ট্রের কারও কিছু বলার নাই, যদি এই শব্দ ব্যবহারে অন্য কারও প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণা না ছাড়ানো হয়। তাই এই সার্কুলার তথা নির্দেশনার প্রতি আমরা তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সাথে এ ধরনের আমলাতান্ত্রিক ঔদ্বত্যপূর্ণ সার্কুলার জারি করে আদিবাসী ও অন্যান্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিভ্রান্ত করা কিংবা স্বাধীন মতামত প্রদানকারী নাগরিক সমাজ, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবীদের হেয় করার প্রচেষ্টা থেকে সংশ্লিষ্ট সকল মহলকে বিরত থাকার আহ্বান রাখছি। আর অবিলম্বে তথ্য মন্ত্রণালয়ের আলোচ্য এখতিয়ার বহির্ভূত সার্কুলার প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।”
বিবৃতিতে যারা স্বাক্ষর করেছেন তারা হচ্ছেন:
১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও চেয়ারপার্সন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন; ২. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি ও চেয়ারপার্সন, এএলআরডি; ৩. ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ট্রাস্টি, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র; ৪. ড. হামিদা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী; ৫. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি; ৬. শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ; ৭. প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও গবেষক; ৮. ড. মেঘনা গুহঠাকুরতা, নির্বাহী পরিচালক, রিসার্স ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশ (রিব); ৯. রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; ১০. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ১১. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যন্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি; ১২. রানী ইয়েন ইয়েন, চাকমা রানী ও উপদেষ্ট চাকমা সার্কেল চীফ; ১৩. কাজল দেবনাথ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ; ১৪. অ্যাড. জেড আই খান পান্না, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ১৫. অ্যাডভোকেট তবারক হোসাইন, সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট; ১৬. ড. আবুল বারকাত, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও উপদেষ্টা, এইচডিআরসি; ১৭. রেহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক; ১৮. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশ ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি); ১৯. ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট); ২০. বদিউল আলম মজুমদার, সম্পাদক, সুজন; ২১. আহরার আহমেদ, এমিরেটাস অধ্যাপক, ব্লাক হিল স্টেট ইউনিভার্সিটি ও ডিজি, জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশন; ২২. শারমিন মুর্শিদ, নির্বাহী পরিচালক, ব্রতি; ২৩. সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; ২৪. ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী; ২৫. জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ; ২৬. শাহীন আনাম, নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন; ২৭. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা; ২৮. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ২৯. বীনা ডি’ কস্টা, অধ্যাপক, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি; ৩০. ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ৩১. তাসনিম সিরাজ মাহবুব, সহযোগি অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ৩২. সামিনা লুত্ফা, অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ৩৩. ফেরদৌস আজীম, অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়; ৩৪. গীতি আরা নাসরিন, অধ্যাপক গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ৩৫. ফেরদৌস আজিম, অধ্যাপক, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়; ৩৬. ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ৩৭. জোবাইদা নাসরীন কণা, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; ৩৮. নোভা আহমেদ, গবেষক ও শিক্ষক নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়; ৩৯. মাহরুখ মহিউদ্দিন, ম্যানিজিং ডিরেক্টর, বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস কাউন্সিল; ৪০. পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন; ৪১. রেজাউল করিম লেনিন, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী; ৪২. সায়দিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক ও গবেষক; ৪৩. মো. নুর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী; ৪৪. শাহনাজ হুদা, অধ্যাপক, ইংরেজী বিভাগ, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়; ৪৫. হানা শামস আহমেদ- মানবাধিকার ও আদিবাসী অধিকার কর্মী; ৪৬. রেজাউল করিম চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ট্রাস্ট; ৪৭. অরূপ রাহী, সঙ্গীতশিল্পী ও লেখক; ৪৮. দীপায়ন খীসা, তথ্য ও প্রচার সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম; ৪৯. নীনা গোস্বামী, আইনজীবী ও সিনিয়র উপ-পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র; ৫০. জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সভাপতি’র জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা শুভেচ্ছা বক্তব্য! আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি’র শুভেচ্ছা বক্তব্য (৯ আগস্ট ২০২১)! বছর ঘুরে আমাদের মাঝে আবার এসেছে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস। এই মহান দিবসে আমি বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পক্ষ থেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৯০টি দেশের ৪০ কোটির অধিক আদিবাসী ও সকল মুক্তিকামী মানুষকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। এ দিবসটি আদিবাসী জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নব চেতনায় উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন। বিশেষ অনুপ্রেরণার দিন। এ বছরও কোভিড ১৯ মহামারির কারণে ভিন্নভাবে দেশের আদিবাসী জনগণ আদিবাসী দিবস উদযাপন করছে। এবার জাতিসংঘ ঘোষিত আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় “কাউকে পেছনে ফেলে নয়ঃ আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন সামাজিক অঙ্গীকারের আহ্বান।”
বিশ্ববৌদ্ধ পুরস্কার প্রাপ্ত প্রখ্যাত মানবতাবাদী লেখক সোনা কান্তি বড়ুয়া (Bachelor of Arts, University of Toronto), The Author’s World famous and glorious New Book entitled ÒPRE – VEDIC MOHENJODARO BUDDHISM & MEDITATION IN THE NUCLEAR AGE , (516 Pages) “ সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি!