অনলাইন ডেস্ক : আগামী পহেলা অক্টোবর পিপল’স রিপাবলিক অব চায়নার ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। জাতীয় এ দিবস সামনে রেখে চীনের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা দেশি-বিদেশি ১৫ গুণীজনকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়া হয়েছে। রবিবার সকালে বেইজিংয়ে গ্রেট হল অব দ্য পিপলে জাঁকজমকপূর্ণ এক আয়োজনের মধ্য দিয়ে তাদের সম্মাননা পদকে ভূষিত করেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এর আগে ১৩ই সেপ্টেম্বর সম্মাননা প্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেন তিনি।

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সিপিসি’র সেন্ট্রাল কমিটির পলিটিক্যাল ব্যুরোর স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য খাই চি। জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। এরপর একে একে মোট ৩ ক্যাটাগরিতে মেডেল অব দ্য রিপাবলিক, ফ্রেন্ডশিপ মেডেল ও জাতীয় সম্মানসূচক মেডেল দেয়া হয় গুণীজনদের।

লাল ও সোনালী রঙের মেডেল অব দ্য রিপাবলিক দেয়া হয় দেশ গঠন ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বৃহৎ পরিসরে অবদান রাখা ব্যক্তিদের। অন্যদিকে সোনালী ও নীল রঙের ফ্রেন্ডশিপ মেডেল দেয়া চীনের আধুনিকায়ন, পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও সমন্বয়ে ভূমিকা রাখা বিদেশি বন্ধুদের। এছাড়া জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন খাতে বিশেষ অবদান রাখা ব্যক্তিদের দেয়া হয় লাল ও সোনালী রঙের সম্মানসূচক মেডেল।

এ বছর মেডেল অব দ্য রিপাবলিক দেয়া হয়েছে মোট চারজনকে। এই সম্মাননা প্রাপ্তরা হলেন- চীনের হয়ে একাধিক যুদ্ধে অংশ নেয়া ৯৩ বছর বয়সী বীরসেনানী হুয়াং জংদা; ক্ষেপণাস্ত্র, রকেট ও মহাকাশ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখা ৯২ বছর বয়সী বিজ্ঞানী ওয়াং ইয়ংজি; চায়নিজ একাডেমি অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের শিক্ষাবিদ ও চিকিৎসক ওয়াং যানি এবং চায়নিজ একাডেমি অব সায়েন্সের শিক্ষাবিদ ও বিজ্ঞানী লি সেনশেং।

অন্যদিকে ফ্রেন্ডশিপ মেডেলে ভূষিত করা হয়েছে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও ব্রিকস জোটের বহুজাতিক আর্থিক সংস্থা- নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রধান জিলমা রুসেফকে। ব্রাজিলসহ লাতিন অ্যামেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে চীনের সম্পর্ক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য এই সম্মাননা দেয়া হয় তাকে। বিদেশিদের জন্য এটি চীনের সর্ব্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা।

এছাড়া বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, অর্থনীতি, শিক্ষা, ক্রীড়া ও শিল্প খাতে জাতীয় পর্যায়ে অবদানের জন্য দশজনকে দেয়া হয়েছে বিশেষ সম্মাননা মেডেল। মঞ্চে উপস্থিত থেকে প্রত্যেকের গলায় মেডেল পরিয়ে দেন শি।

পরে সম্মাননাপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বিশেষ বক্তব্য রাখেন চীনের প্রেসিডেন্ট। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, চীনকে আরো শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সবাইকে সম্মাননাপ্রাপ্ত এই অগ্রদূতদের কাছ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। গত ৭৫ বছরে চীনের ঐতিহাসিক উত্থানের পেছনে বিভিন্ন খাতে অনেক মানুষ পথপ্রদর্শক ও নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। আজকের সম্মাননাপ্রাপ্তরা সেই মানুষদেরই উজ্জ্বল প্রতিনিধি। চীনের ইতিহাসে তাদের অবদানের কথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

সমাজ ও রাষ্ট্রকে নিজের প্রয়োজনেই গুণীজনদের কদর করতে হয় উল্লেখ করে শি বলেন, তাদের অবদানেই টেকসই উন্নয়ন ও সফলতার দিকে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, সোনালী সময়ই বীরদের ডেকে নেয় ও তাদের পরিচর্যা করে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই বীরদের আবির্ভাবের মধ্য দিয়েই নিশ্চিত হয় রাষ্ট্রের সাফল্য ও দেশবাসীর কল্যাণ। প্রতিটি পর্যায়ে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি যেন গুণীজনদের পরিচর্যা করে এবং তাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা ও শিক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সমাজকে উৎসাহিত করে। প্রত্যেকেই যেন গুণীজনদের অনুসরণে সচেষ্ট হয়।

চীনের অগ্রযাত্রায় পাশে থেকে ফ্রেন্ডশিপ মেডেলে ভূষিত বিদেশি বন্ধুদের স্মরণ করে শি বলেন, যারা সুদিনে-দুর্দিনে চীনের পাশে ছিল, আছে ও থাকবে চীনারা কখনোই তাদের ভুলে যাবে না। সবসময় চীন তাদের কথা মনে রাখবে। এ প্রসঙ্গে এ বছর ফ্রেন্ডশিপ মেডেল পাওয়া জিলমা রুসেফকে বিশেষভাবে অভিনন্দিত করেন শি জিন পিং।