হাসান আমিন : হাউজিং মার্কেটে ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা গত মার্চ মাসে আবার শুরু হয়েছে বলে লক্ষ্য করা গেছে, এমনটাই জানিয়েছে টরন্টো রিজিওনাল রিয়েল এস্টেট বোর্ড (টিআরআরইবি)। এর কারণ হিসেবে তারা বলছে, এই অঞ্চলের গড় বাড়ির দাম ২০২২ সালের মে মাসের পর থেকে প্রথমবারের মতো গড় তালিকা মূল্যের উপরে ওঠানামা করছে।

অন্টারিও বোর্ড গত ৫ এপ্রিল, বুধবার দেখেছে যে একটি বাড়ির গড় দাম গত মাসে ১১ লাখ ৮ হাজার ৬০৬ কানাডিয়ান ডলার পর্যন্ত উঠেছে যা আগের মাসে ১০ লাখ ৯৬ হাজার ৫১৯ ডলার ছিলো। এই বৃদ্ধির পরও গত মার্চ মাসে গড় মূল্য ১২ লাখ ৯ হাজার ৮৬৬ ডলার থেকে প্রায় ১৫ শতাংশ কম ছিল। তারপরও মাসটিতে ক্রেতাদের দরকষাকষি হাউজিং মার্কেটকে চাঙ্গা করে তোলে।

রিয়েল এস্টেট বোর্ডের গত মাসের পরিসংখ্যানে বেশ কয়েক মাস মন্থর অবস্থায় কাটানোর পরে বাজার দৃঢ় হচ্ছে বলেই মনে হয়েছে। অবশ্য বিক্রি সাধারণ অন্যান্য বছরের তুলনায় কমে গেছে এবং সুদ এবং বন্ধকের হার বেড়ে যাওয়ায় দাম কমতে শুরু করেছে।

টিআরআরইবির সভাপতি পল ব্যারন একটি বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা বছরের প্রথম ত্রৈমাসিকের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে টরন্টো আঞ্চলিক রিয়েল এস্টেট বোর্ডের সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে রিপোর্ট করছে যে, বৃহত্তর টরন্টো এলাকার অনেক জায়গায় ক্রেতাদের মধ্যে প্রতিযোগিতায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে।

পরিসংখ্যান ইঙ্গিত করে যে সম্ভাব্য গৃহ ক্রেতারা ঋণের খরচ বেড়ে যাওয়া সত্তে¡ও বাজারে যাওয়ার আস্থা ফিরে পাচ্ছেন এবং শেষ পর্যন্ত কম দামের সুবিধা নিতে চাইছেন।

স্বতন্ত্র বাড়িগুলোর গড় মূল্য ছিল ১৪ লাখ ৬৮ হাজার ৬৫১ কানাডিয়ান ডলার, যা এক বছর আগের তুলনায় ১৩.৫ শতাংশ কম। যেখানে আধা-স্বতন্ত্র সম্পত্তি ১৭ শতাংশের বেশি কমে ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৯২৪ ডলারে নেমে এসেছে। টাউনহাউসগুলোর গড় খরচ ১৪ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ৯ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৬ ডলার হয়েছে, যেখন কন্ডো এবং অ্যাপার্টমেন্টগুলো ১৩ শতাংশ কমে ৭ লাখ ৩ হাজার ৫৬৬ ডলারে দাঁড়িয়েছে।

টিআরআরইবি দেখেছে যে, মার্কেটে মার্চের সমন্বিত বেঞ্চমার্ক মূল্য ছিল ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫০০ ডলার। যা বছরের পর বছর ভিত্তিতে ১৬.২ শতাংশ কমেছে, তবে প্রকৃত এবং ঋতুগতভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ উভয় ভিত্তিতেই মাসে-মাসে বেড়েছে। মার্চ মাসে ৬ হাজার ৮৯৬ টি বাড়ি বিক্রির তথ্য রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত ফেব্রুয়ারিতে ছিলো ৪ হাজার ৭৬৫টি। যাইহোক, বিক্রি এখনও ২০২০ সালের মার্চ মাসের তুলনায় ৩৭ শতাংশ কম। সে বছরের এই সময়ে বাড়ি বিক্রি হয়েছিলো ১০ হাজার ৮৬২টি।

রিয়েল ব্রোকারেজের অংশ ওয়ান গ্রুপের ব্রোকার ও প্রতিষ্ঠাতা নাসমা আলী বলেন, মার্চ মাসে আমরা তালিকায় আরও কার্যকলাপ লক্ষ্য করেছি এবং আমাদের ক্রেতাদের পাশাপাশি আমরা লক্ষ্য করতে শুরু করেছি যে ক্রেতারা অন্যান্য ক্রেতাদের সাথে আরও বেশি করে প্রতিযোগিতা করছে।

গত বছর সত্যিকারের কোনও প্রতিযোগিতা ছিল না। হাউজিং মার্কেট অত্যান্ত নাজুক ছিল। গত বছর আপনি যখন একটি বাড়ি তালিকাভুক্ত করেছিলেন, তখন আপনি এটি বিক্রি করবেন কিনা তাও আপনি জানতেন না, কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন, বলেন তিনি।

অন্য দিকে, বিএমও ক্যাপিটাল মার্কেটের সিনিয়র ইকোনমিস্ট প্রিসিলা থিয়াগামূর্তি গত মাসের বাড়ি বিক্রির কার্যকলাপকে ‘পদানত’ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। “মার্চ মাসে বাজারের অবস্থা দৃঢ় হওয়ার সাথে সাথে একটি বটমিং প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার লক্ষণ দেখা গেছে বলে বিনিয়োগকারীদের একটি নোট লিখেছেন প্রিসিলা।

“ব্যাংক অফ কানাডা সুবিধাজনকভাবে তার অবস্থানে ঝুলে থাকার কারণে আরও ক্রেতা এখন বাজারে প্রবেশ করতে শুরু করেছে।” কিন্তু বিক্রেতারা দ্রæত মার্কেটে ফিরে আসছে না। অনেকেই কেনা-বেঁচা বন্ধ রেখেছেন কারণ তারা গত বছরের এই সময়ে তাদের নিকরবর্তীরা যে অবস্থানে ছিলো সে অবস্থানে যাওয়া পর্যন্ত, অর্থাৎ কম দামের জন্য অপেক্ষা করছেন।

তাদের এ সতর্ক অগ্রসর গত মাসে নতুন তালিকাকে ১১ হাজার ১৮৪ সংখ্যায় ঠেলে দিয়েছে, যা ২০২২ সালের মার্চের তুলনায় ৪৪ শতাংশ কম। গত ৪ এপ্রিল, মঙ্গলবার গ্রেটার ভ্যাঙ্কুভারের রিয়েল এস্টেট বোর্ড প্রকাশ করেছে যে এক বছর আগের থেকে মার্চ মাসে বাড়ির বিক্রয় ৪২.৫ শতাংশ কমেছে এবং ১০ বছরের মৌসুমী গড় থেকে ২৮.৪ শতাংশ কম। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ৪ হাজার ৪০৫ টি এবং ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৮০৮ টি বাড়ি বিক্রির তুলনায় চলতি বছরের মার্চে মোট ২ হাজার ৫৩৫ টি বাড়ি বিক্রি হয়েছে। সূত্র : সিবিসি নিউজ