অনলাইন ডেস্ক : ক্যালিফোর্নিয়া। টানা ছয় দিন ধরে ভয়াবহ দাবানলে পুড়ছে লস অ্যাঞ্জেলেস শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। আগামী কয়েকদিনেও এই দাবানল কমার আশঙ্কা নেই। উল্টো ঝোড়ো বাতাসের কারণে এটি আরো বিপজ্জনক দিকে মোড় নিতে পারে বলে গভীর উদ্বেগ জানানো হচ্ছে।
এ অবস্থায় সবাইকে অবাক করে দিয়ে চিরবৈরি যুক্তরাষ্ট্রকে দাবানল মোকাবেলায় সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে ইরান। ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমে মোহাজেরানি জানিয়েছেন, মার্কিন প্রশাসনকে সাহায্যের জন্য প্রস্তুত তেহরান। মার্কিন ফায়ারফাইটারদের পাশে থেকে দাবানল নিয়ন্ত্রণে কাজ করতে দ্রুততার ভিত্তিতে জরুরি সেবায় নিয়োজিত কর্মী পাঠাতে প্রস্তুত তারা।
চলমান এই দাবানলে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর লস অ্যাঞ্জেলসের বিশাল অঞ্চল কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ভস্ম হয়ে গেছে দশ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো। নিহত বিশ জনেরও বেশি। ভয়াবহ এই দুর্যোগে মার্কিনীদের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে এক ভিডিও বার্তায় মোহাজেরানি বলেন, যুদ্ধ হোক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন কোনো জাতির ঘরবাড়ি আর প্রাকৃতিক সম্পদ ভস্মীভূত হচ্ছে, তখন অন্য জাতি নির্বিকার থাকতে পারে না। ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানলে যারা ঘরবাড়ি ও নিরাপদ আবাসস্থল হারিয়েছে ইরানবাসী তাদের প্রতি সমব্যথী। ভয়াবহ এই দাবানল মোকাবেলায় যে কোনো সময় জনবল ও সহায়তা পাঠাতে প্রস্তুত তেহরান।
এর আগে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি-আইআরসিএস-এর পক্ষ থেকেও ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল মোকাবেলায় জনবল, সরঞ্জামসহ সব ধরনের সহায়তা পাঠানোর প্রস্তাব দেয়া হয়। এ ব্যাপারে অ্যামেরিকান রেড ক্রসের সিইও’র সাথে যোগাযোগ করেছেন আইআরসিএস-এর প্রধান পিরহোসেইন কলিভান্দ। এক বার্তায় কলিভান্দ বলেন, ভয়াবহ এই দাবানল কেবল যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সংকট নয়, বিশ্বের যে কোনো বিবেকবান মানুষই- মানুষ ও প্রাকৃতিক সম্পদের এই বিপুল ক্ষয়ক্ষতিতে আক্রান্ত বোধ করবে।
এদিকে চিরশত্রু দেশটিকে ইরানের সহায়তা দেয়ার এই প্রস্তাব অনেকটা অবাক করার মতো বিষয় হয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, ইরান নিজেই অভ্যন্তরীণভাবে অনেক সংকটের মধ্যে আছে। এরপরও যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করতে চাওয়ার এই ঘোষণা ইতিবাচক।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য মতে, এই মুহূর্তে ব্যাপক অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সংকটে ভুগছে ইরান। জ্বালানি সংকটের কারণে এ সপ্তাহান্তে অনেক অঞ্চলের স্কুল ও সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া প্রায় প্রতি গ্রীষ্মেই বনাঞ্চলে দাবানল মোকাবেলায় হিমশিম খেতে হয় দেশটিকে। পরিবেশবাদীরা দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষ করে পাহাড়ি অঞ্চলে দাবানল ও অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণের সক্ষমতা বাড়াতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। এই পরিস্থিতিতেও ইরান যুক্তরাষ্ট্রকে দাবানল মোকাবেলায় সহায়তা করতে চাইছে, এটিকে উদার কূটনীতির অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
এদিকে ইরানের কট্টরপন্থীদের একাংশ লস অ্যাঞ্জেলেসের নারকীয় এই দাবানলকে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এর জেরে যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর সমালোচনায় মেতেছে দেশটির কট্টরপন্থি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এই দাবানলকে খোদার গজব বলে অভিহিত করছে তারা।
ইরানি সংবাদমাধ্যম কেহান মন্তব্য করেছে, মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে ইসরাইলকে সমর্থন দেয়ার জন্যই এই গজব পাঠানো হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। একই ধরনের মন্তব্য করেছে আরেক সংবাদমাধ্যম জাম-ই-জাম। এই দাবানলকে আগুনের ফেরেশতা বলে অভিহিত করেছে তারা। এছাড়া ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার এক প্রতিনিধি মন্তব্য করেছেন, এই গজব যুক্তরাষ্ট্রের ওপর খোদার পাঠানো এক শাস্তি।