ফরিদ আহমেদ : ভোর ছয়টায় হিরো আলমকে তাঁর অফিস থেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো ডিটেকটিভ ব্রাঞ্চের পুলিশরা। অফিসে নিয়ে আট ঘণ্টা আটকে রাখে তারা হিরো আলমকে। ওই সময়ে তাঁর উপরে চালানো হয় তীব্র মৌখিক এবং মানসিক নির্যাতন। নির্যাতন শেষে একটা মুচলেকা নিয়ে তারা ছেড়ে দেয় হিরো আলমকে। সেই মুচলেকাতে বলা হয়েছে হিরো আলম আর কখনো কোনো গান বিকৃত করে গাইবেন না।
ডিবি অফিসে তাঁকে তুলে নিয়ে যাবার আগে হিরো আলম তাঁর অফিসেই ঘুমিয়ে ছিলেন। অতর্কিতে সেখানে ডিবি পুলিশের দল এসে হাজির হয়। কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট ছাড়াই তাকে তুলে নিয়ে যায় তারা। এমনকি নিজেদের পরিচয়ও তারা তাঁকে দেয়নি। হিরো আলমের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘তারা যখন ভোর ৬টার দিকে আমার অফিসে আসে, তখন আমি শুয়েছিলাম। তারা আমার পিসি নিয়ে যেতে চায়। হার্ডডিস্ক খোলা ছিল। তারা বলে হার্ডডিস্ক কই? তোর এখানে অশ্লীল কাজকর্ম হয়, তুই অশ্লীল উল্টাপাল্টা কাজকর্ম করিস। তোর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। আমি তখন কিছুই বলিনি। তারা কে বা কারা পরিচয়ও দেয়নি। আমাকে বলে, চল আমাদের সঙ্গে। আমি তখন কিছু না বলে তাদের সঙ্গে যাই।’
অফিসে নিয়ে যাবার পরে শুরু হয় তাঁর উপরে মৌখিক এবং মানসিক নির্যাতন। তাঁকে তুই-তোকারি করে সম্বোধন করা হয়। তাঁর চেহারা নিয়ে অসম্মানজনক কথা বলে তারা। হিরোর মতো লাগে না বলে তাঁর হিরো নাম পরিবর্তনের পরামর্শ দেয়। হিরো আলমের কারণে বিদেশে তারা মুখ দেখাতে পারে না বলেও উল্লেখ করে তারা। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে নানাজনের অভিযোগ আছে বলেও জানায়। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সাইবার ক্রাইমে তাঁর সাত বছরের জেল হবে বলেও ভয় দেখায় তারা।
সবশেষে তিনি কেনো রবীন্দ্র সঙ্গীত গাইলেন, সেটা নিয়েও প্রশ্ন তোলে তারা। সেই প্রশ্ন তোলাটা এমন যে হিরো আলমের রবীন্দ্র সংগীত গাওয়াটা যেন এক মহা অপরাধের মধ্যে পড়ে।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে, সংবাদপত্রে এবং সামাজিক মাধ্যমে গত কয়েক বছর ধরেই হিরো আলম এক আলোচিত চরিত্র। তাঁর হাস্যকর ধরনের অভিনয়, উচ্চারণগত ত্রুটি, আঞ্চলিক টান, অপটু আচরণ এবং তাল-লয়হীন গান নিয়ে প্রচুর পরিমাণে ট্রল হয়েছে। এই ট্রলগুলো তাঁকে মানসিকভাবে কতোটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করেছে জানি না, তবে আর্থিকভাবে তাঁর জন্য ব্যাপক লাভ হয়েছে। নেতিবাচক প্রচারণা দিয়েই মানুষের কাছে সুপরিচিত হয়ে উঠেছেন তিনি। ফলে, তাঁর যে কোনো গান কিংবা কনটেন্টেরই প্রচুর পরিমাণে ভিউ থাকে ইউটিউবে। নিশ্চিতভাবেই সেখান থেকে তিনি তাঁর রোজগারের একটা বড় অংশ পেয়ে থাকেন।
মধ্যবিত্তের ট্রলের শিকার হয়ে নেতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে পরিচিতি পেলেও, হিরো আলমের লক্ষ্য কিন্তু মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজ নয়। নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘাটতি, পরিশীলিত এবং পরিমার্জিত আচরণের অভাব, সুশোভিত না হওয়া, পারিবারিক ঐতিহ্যহীনতা, এগুলোর ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট পরিমাণে সচেতন। সচেতন বলেই এই শ্রেণীর শ্রোতা বা দর্শকের দিকে তিনি নজর দেননি। তাঁর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিলো নিজের শ্রেণীর মানুষদের দিকেই। তিনি নিজেও যেহেতু ওই শ্রেণী থেকে এসেছেন, তাঁর সাথে তাঁর দর্শক-শ্রোতাদের সংযোগটা খুব মসৃণ, সহজাত এবং উষ্ণ। এদেরকে আনন্দ দেওয়া, বিনোদিত করাই ছিলো তাঁর মূল লক্ষ্য। ফলে, তাঁর সমস্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেই স্থূলতার ছাপ প্রকটভাবে বিদ্যমান। সূ² রুচির কারো পক্ষে সেগুলো থেকে আনন্দ নেওয়াটা একটু অসম্ভব ব্যাপারই বলা চলে।
একটা দেশে একক রুচির মানুষ থাকে না। প্রতি মানুষ যেমন আলাদা, শিক্ষা, পরিবেশ এবং সংস্কৃতি ভেদে তাদের রুচিও ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আমাদের দেশও তার ব্যতিক্রম কিছু না। এখানে সূ² রুচির মানুষ যেমন আছে, তেমনি আছে মধ্যম রুচি কিংবা স্থূল রুচির মানুষ। রুচির ক্ষেত্রে সবাইকে সর্বোচ্চ মানে থাকতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতাও মানুষের নেই। যে কারণে একদল যেখানে ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’ দেখে পরিতৃপ্ত হবে, আরেকদল সেখানে কোনো আনন্দের উপকরণই পাবে না। তারা ছুটবে ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার’ দিকে। মানুষের রুচির এই রকমভেদ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে, এগুলো নিয়ে হা হুতাশ করার কোনো প্রয়োজনীয়তা থাকতো না। স্থূল রুচির যে, তাকে জোর জুলুম করে সূ² রুচির বানানো যায় না। খুব বড়জোর রুচি উন্নতি করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে, সেই কাজটা সহজ কোনো কাজ নয়। এটা কঠিন একটা কাজ। এর জন্য দীর্ঘ মেয়াদের পরিকল্পনা করতে হয় এবং কষ্টকর একটা পথ পাড়ি দিতে হয়।
আমাদের মধ্যবিত্তের সমস্যা হচ্ছে সেই কষ্টকর রাস্তায় আমরা হাঁটতে চাই না। সহজ পথে পুলিশের সাহায্য নিয়ে জোর করে নিম্নশ্রেণীর স্থূল রুচিকে একেবারে ধারালো ছুরি মতো ঝকঝকে তকতকে করে তুলতে চাই। অথচ, এর বদলে, উপেক্ষাটাই হতে পারতো সবচেয়ে সহজ সমাধান। হিরো আলম তার মতো করে মানুষদের বিনোদিত করছেন, কোনো অপরাধ করছেন না, কাজেই তিনি তাঁর মতো থাকুক। যাঁরা নিজেদের উন্নত রুচির বলে মনে করেন, তাঁরা তাঁদের বৃত্তের মধ্যকার রুচিশীল বিষয় নিয়ে থাকতে পারতেন। সমস্যা হয়েছে রুচিশীল বলে দাবিদাররা এই সহজ এবং সভ্য সমাধানের পথে হাঁটতে চাননি। তাঁরা অপ্রয়োজনীয় এক অপার কৌতূহল নিয়ে হিরো আলমের কাজ দেখেছেন, এবং সেই কাজ দেখে নিজেদের আহত করেছেন। তাঁদের অত্যন্ত নাজুক উন্নত মননশীলতা হিরো আলমের স্থূলতায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। এই আঘাতের দায় কিন্তু হিরো আলমের না। তিনি কাউকে আমন্ত্রণ করে তাঁর কাজ দেখাননি, কিংবা জোর জবরদস্তি করেও কাউকে দেখতে বাধ্য করেন নাই। যারা দেখেছে, তারা স্বেচ্ছাতেই দেখেছে। নিজে নিজে কেউ আহত হলে, দায়ভার পুরোটাই তার।
হিরো আলমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের প্রধানটাই ছিলো গানের বিকৃতি, বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথের গানের বিকৃতি। বাকি যে সব অভিযোগ ডিবি এনেছে, সেগুলো মূলত আইওয়াশ। হিরো আলমকে দুর্বল করার জন্য সেই অভিযোগগুলোকে আনা হয়েছ। রবীন্দ্রনাথের গানের বিকৃতিই যে প্রধান অভিযোগ ছিলো, সেটা তাদের কর্মকাণ্ডেই বোঝা যায়। নানা অভিযোগ শেষে ভয়ংকর আক্রোশ নিয়ে তারা বলেছে, ‘তুই রবীন্দ্র সংগীত গাইলি কেন?’ যে মুচলেকাটা তারা নিয়েছে সেখানেও হিরো আলম বলতে বাধ্য হয়েছেন যে তিনি রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের গানকে বিকৃত করে আর গাইবেন না।
আমি গানের লোক না। গান সম্পর্কে আমার খুব একটা ধারণা নেই। এ ক্ষেত্রে আমার জ্ঞান অগভীরই বলা চলে। সেই অগভীর জ্ঞান দিয়েও আমি যেটা বুঝতে পারি, সেটা হচ্ছে, একই গানকে বিভিন্ন শিল্পী বিভিন্নভাবে গেয়ে থাকেন। কোনো একটা গানের একক কোনো স্ট্যান্ডার্ড নেই। সেটা থাকলেও লাভ হতো না কোনো। সব শিল্পীর মান এক রকম না। ফলে, তাঁরা গাইতে গেলে, গানের কিছু না কিছু বিচ্যুতি কিংবা বিকৃতি ঘটবেই। শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে এগুলোকে সহজভাবেই নেওয়া হয়। হিরো আলমের ক্ষেত্রে পুলিশ অবশ্য সেটাকে সহজভাবে নেয়নি। তাঁকে পরিষ্কারভাবে বলে দেওয়া হয়েছে বিকৃত করে গান না গাইতে।
শিল্প-সাহিত্য, গান-বাজনা, এগুলো হচ্ছে মানুষের চিত্ত বিনোদনের উৎস। এই জায়গায় কাউকে স্ট্যান্ডার্ড সেট করে দিয়ে বলা যায় না যে এই মানে না পৌঁছাতে পারলে সে গাইতে পারবে না। প্রতিটা মানুষেরই অধিকার আছে গান গাইবার। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন মানুষ গণ উৎপাত তৈরি না করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই চর্চাতে তাকে বাধা দেওয়াটা তার ব্যক্তিগত অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপের সামিল। পুলিশ ঠিক সেই কাজটাই করেছে। হিরো আলম তাঁর সংগীত জ্ঞান যতোটুকু, ততোটুকু দিয়েই গান-বাজনা করছেন। বে-আইনি কোনো কাজ করছেন না। সেটাকে গ্রহণ করা কিংবা বর্জন করার পুরো অধিকার রয়েছে জনগণের। এখানে পুলিশি হস্তক্ষেপই বরং বে-আইনি এবং সুস্পষ্টভাবে নাগরিক অধিকারের উপরে হস্তক্ষেপ।
কারো গান ভুল সুরে গাইলে বা বিকৃতি ঘটালে এবং সেগুলোকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করলে, এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানানোর একমাত্র অধিকার রয়েছে গানের স্রষ্টার, কিংবা এর মালিকানা যার হাতে রয়েছে তার। রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল, দুইজনেই গত হয়েছেন বহু বছর হলো। রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরো জটিল। তাঁর গানে তাঁর কিংবা তাঁর কোনো প্রতিনিধিরও কোনো অধিকার নেই। তাঁর মৃত্যুর ষাট বছর পর, ২০০১ সাল থেকে তাঁর সমস্ত সৃষ্টির উপর থেকে কপিরাইট উঠে গিয়েছে। গানসহ তাঁর অন্যান্য সকল সৃষ্টিই এখন পাবলিক ডোমেইন। কাজেই, রবীন্দ্রনাথ সব গানের সুর দিয়ে গেছেন, স্বরলিপি তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন, এখন সেই বেঁধে দেওয়া সুরে এবং স্বরলিপিতেই গাইতে হবে, নইলে বিকৃতি হবে এবং তাঁর জন্য পুলিশ ডেকে নেবে, এটা হতে পারে না।
জীবিত থাকার সময়ে রবীন্দ্রনাথ তাঁর গানের ব্যাপারে বেশ সংরক্ষণবাদী মনোভাবের ছিলেন। তাঁর নিজের বেঁধে দেওয়া সুরের বাইরে অন্য কেউ গান করুক সেটা তিনি চাইতেন না। এ নিয়ে প্রখ্যাত শিল্পী দীলিপ কুমার রায়ের সাথে একবার তাঁর কথা বিনিময়ও হয়েছে। গান গাইতে গেলে বড় শিল্পীরা সেখানে নিজস্ব কিছু কাজ যুক্ত করে দেন। সেই স্বাধীনতা দীলিপ কুমার রায় চেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে। রবীন্দ্রনাথ সেটা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। নজরুলের আবার এতে কোনো আপত্তি ছিলো না। তাঁর গান নিয়ে রবীন্দ্রনাথের মতো অমন খুঁতখুঁতে তিনি ছিলেন না। যথেষ্ট উদার মানসিকতার ছিলেন। রবীন্দ্রনাথের কাছ থেকে স্বাধীনতা না পেয়ে রবীন্দ্র সংগীত আর গাইবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দীলিপ কুমার রায়।
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পরে পরিস্থিতি আরো কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাঁর মৃত্যুর পরে তাঁর গানের অভিভাবক হয়ে বসে রবীন্দ্র ভারতী মিউজিক বোর্ড। বাঁশের চেয়ে যেমন কঞ্চি যেমন বড় হয়, এঁরাও তেমনি রবীন্দ্রনাথের চেয়েও আরও বেশি সংরক্ষণবাদী এবং প্রতিক্রিয়াশীল ছিলেন। এর চরম ভুক্তভোগী ছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস। তিনি তাঁর আত্মজীবনী ‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত’ বইতে সেই কাহিনি লিপিবদ্ধ করে গেছেন। দেবব্রত বিশ্বাসকে রীতিমত জ্বালিয়ে মেরেছিল ‘রবীন্দ্রভারতী মিউজিক বোর্ড’। রবীন্দ্রনাথের গানের কপিরাইট তাঁদের হাতে ছিল। ফলে, রবীন্দ্র সংগীতের যে কোনো রেকর্ডকেই বিশ্বভারতীর অনুমোদন নিতে হতো বাজারজাত করার আগে। রবীন্দ্রভারতী একাধিকবার দেবব্রত বিশ্বাসের গানকে অনুমোদন দেয় নি বিচ্যুতি এবং অতিরিক্ত বাদ্যযন্ত্র ব্যবহারের অজুহাত তুলে। এর ফলে, হতাশ হয়ে ১৯৭০ সালের পরে তিনি আর কোনো রবীন্দ্র সংগীত রেকর্ড করাননি।
এখন আর রবীন্দ্রনাথ নেই, রবীন্দ্রভারতী মিউজিক বোর্ডও নেই, কিন্তু রয়ে গিয়েছে রবীন্দ্র পূজারীবৃন্দ। রবীন্দ্রনাথের কপিরাইটবিহীন গানকে ‘বিকৃত’ করে গাইলেও তাদের অনুভুতিতে গিয়ে আঘাত লাগে, গায়ে ফোস্কা পড়ে। গায়ে ফোস্কা পড়ার সে প্রতিক্রিয়াতেই আজ হিরো আলমকে শুনতে হয়েছে, ‘তুই রবীন্দ্র সংগীত গাইলি কেন?’, এই অপমানজনক কথা। এর জন্য দিতে হয়েছে অবমাননাকর মুচলেকা। রবীন্দ্রনাথের বিশুদ্ধ সংগীতকে বিকৃত করবে না সে আর।
তবে, পুরোটাই যে অনুভূতিতে আঘাতজনিত প্রতিক্রিয়ামূলক কর্মকাণ্ড, এমনটা নাও হতে পারে। হিরো আলম সুবিধা বিহীন একটা প্রান্তিক সমাজে জন্মগ্রহণ করেছেন। ওই রকম পরিবেশে যারা জন্মায়, তারা কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমেই জীবিকা অর্জন করে। হিরো আলম সেটা করতে চাননি। তিনি পা রেখেছিলেন সাংস্কৃতিক জগতে। শুরু করেছিলেন একেবারে শূন্য থেকে। তারপর সেখান থেকে তিনি উঠে আসা শুরু করেছিলেন শুধুমাত্র নিজের অক্লান্ত প্রচেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম আর আকাশ ছোঁয়ার এক বুক স্বপ্ন নিয়ে। তাঁর যে খুব একটা প্রতিভা আছে, এমনও না। কিন্তু, সেই সব ঘাটতিকে তিনি পিছনে ফেলেছেন অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে। এক সময়ের হত-দরিদ্র একজন মানুষ এখন সফল মানুষ হিসাবে পরিণত হয়েছেন, পরিচিতিও পেয়েছেন ব্যাপকভাবে। তাঁর এই সাফল্য কি কারো মধ্যে হিংসার জন্ম দিয়েছে? দিতেও পারে। মানুষের মনের সংকীর্ণতা বোঝা মুশকিল।
যেটাই হোক না কেনো, হিরো আলমের উপরে রাষ্ট্রের একটা প্রতিষ্ঠান বড় ধরনের অন্যায় করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হচ্ছে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখা। সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাদ দিয়ে এরা গানের শুদ্ধতা বজায় রাখার লড়াইয়ে নেমে গিয়েছে। সাংস্কৃতিক চর্চা কেমন হবে, সেটার মান ঠিক করে দিচ্ছে তারা অযাচিতভাবে। একই সঙ্গে বিনা কারণে দেশের একজন নাগরিককে হেনস্থা করছে, অপমান করছে, তার নাগরিক অধিকারকে ক্ষুণ্ণ করছে।
এগুলো করে কি হিরো আলমকে ঠেকাতে পারবে তারা? আমারতো মনে হয় না। হিরো আলমের জনপ্রিয়তাই তারা বরং বাড়াচ্ছে বুদ্ধি-বিবেচনা-বিহীন বৈষম্যমূলক অত্যাচারী আচরণ করার মাধ্যমে।