অনলাইন ডেস্ক : চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের জিয়াওটং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শিক্ষার্থীদের বয়স ছয়-সাত বছরের বেশি নয়। সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। তাদের মধ্যে একজনের হাতে নকল বন্দুক। বাকিরা তাকে অনুসরণ করে বন্দুক ধরার কৌশল রপ্ত করছে।
শুধু বেইজিংয়েই নয়, এমন চিত্র এখন দেশটির বহু প্রদেশে। তাইওয়ানের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান যুদ্ধের আশঙ্কা ও বহির্বিশ্বের হুমকি এড়াতে প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন। মাতৃভূমি রক্ষায় জাতীয়তাবাদের বীজ বপন করা হচ্ছে ছোট থেকেই। ফলে পড়াশোনার পাশাপাশি সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে বাধ্য হচ্ছে চীনা শিশুরা।
রোববার দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে আসে এমনই তথ্য।
শিশুদের সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়ে গত এপ্রিলে অনলাইনে বিভিন্ন ছবি অন্তর্ভুক্ত করে সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই পোস্টে স্কুলটি একটি ক্যাপশন জুড়ে দেয়। সেখানে লেখা, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্কুলটি ‘দেশপ্রেমের মূল বিষয়বস্তুকে প্রচার করার পাশাপাশি আদর্শ রাজনৈতিক এবং নৈতিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত করতে’ কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
পোস্টটিতে তারা আরও লিখেছে, ‘আমরা জাতীয় প্রতিরক্ষা শিক্ষার একটি শক্তিশালী পরিবেশ তৈরি করব। সমৃদ্ধ ও বর্ণাঢ্য কার্যক্রম পরিচালনা করব। শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম, সেনাবাহিনীর প্রতি ভালোবাসা এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা গড়ে তুলব এবং ছোটবেলা থেকেই মাতৃভূমিকে রক্ষা ও রক্ষা করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা গড়ে তুলব।’
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কেন্দ্রীয় সামরিক কমিশন জানুয়ারিতে এ ধরনের স্কুলকে ‘মডেল স্কুল’ হিসাবে অভিহিত করে। এর পর থেকে চলতি বছর এ ধরনের ‘মডেল স্কুলের’ সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও দেশটিতে ১৫ বছরের কম বয়সি ছাত্রদের জন্য ‘ক্যাডেট প্রশিক্ষণ’ আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। এ বিষয়ে ন্যাশনাল ডিফেন্স এডুকেশন আইন সংশোধনের প্রস্তাব করা একটি বিল এপ্রিলে রাবার-স্ট্যাম্পিং ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেসে প্রথম পাঠ করা হয়েছিল।
তবে শিশুদের এ সামরিক প্রশিক্ষণের নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। অস্ট্রেলিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের চায়না প্রোগ্রামের প্রধান বেথানি অ্যালেন বলেন, ‘ছোট এবং কম বয়সি শিশুদের সামরিক শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত করা চীনের ক্রমবর্ধমান আক্রমণাত্মক বৈদেশিক নীতিকে স্বাভাবিক করে তুলছে।’
তবে চীনের এ কার্যক্রমে আপত্তি নেই অনেক অভিভাবকদেরও। পাশাপাশি চীনের সেনা কর্মকর্তাদের অনেকের সন্তানই এখন এ ধরনের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। দেশটির সাবেক সৈনিক শাঙ্গুও ফেং রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলেন, তিনি নিজেও সিচুয়ানের একটি স্কুলে এ ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
বিবৃতিতে তিনি আরও বলেন, ‘এটি শিশুদের দৃঢ়তা, সাহস এবং কঠোর পরিশ্রমী গুণাবলী তৈরি করতে সাহায্য করতে পারে।’