অনলাইন ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে ১০০ দিনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে এক মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানিয়েছেন।
ঢামেক হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সভাকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এ পর্যন্ত যারা আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্দেশে হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নে ১০০ দিনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছি।’
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে:
১. আন্দোলনে আহতদের চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত ওয়ার্ড স্থাপন এবং বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ।
২. পুরাতন কেবিনগুলো সংস্কার করা।
৩. হাসপাতালের আইসিইউ–এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
৪. হাসপাতালের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি এবং যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করা।
৫. হাসপাতালে পরিষ্কার–পরিছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করা।
৬. হাসপাতালে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের এবং বহিরাগত দালালদের প্রবেশ করতে না দেওয়া।
৭. হাসপাতাল চত্বরে বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সরিয়ে সেই জায়গায় রোগী এবং রোগীর স্বজনদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করা।
৮. হাসপাতালে রাজস্ব বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট এবং এক্সরে, সিটি স্ক্যান ইত্যাদি হাসপাতালেই বাধ্যতামূলক করার ব্যবস্থা।
৯. রোগীদের টিকিটিং ব্যবস্থার ডিজিটাল কার্যক্রম জোরদার করা।
১০. হাসপাতালে ডিজিটাল প্রেসক্রিপশন কার্যক্রম শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া।
১১. হাসপাতালে বিভিন্ন দুর্নীতি প্রতিরোধে কার্যক্রম ব্যবস্থা জোরদার করা।
১২. রোগীদের সঙ্গে চিকিৎসক নার্স এবং স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সম্পর্ক উন্নয়নে বিভিন্ন পরিবর্তন নিশ্চিতকরণে উদ্যোগ নেওয়া।
১৩. হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম জোরদারে উদ্যোগ নেওয়া।
১৪. হাসপাতালে অভ্যর্থনা/তথ্যকেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে স্বাস্থ্য শিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করা।
ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক আরও বলেন, ‘হাসপাতালে স্বাস্থ্যকর্মীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং রোগীদের সঙ্গে আচরণগত পরিবর্তন নিশ্চিত করতে ক্রমাগত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও বেশি রোগীদের সেবার পরিকল্পনা মাথায় রেখে মেগা পরিকল্পনার ভিত্তিতে ২৭টি ভবন নতুন করে নির্মিত হবে। এরমধ্যে ছয়টি হাসপাতাল হবে ১৭ তলা বিশিষ্ট এবং বাকিগুলো হবে ২০তলা বিশিষ্ট।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আপনারা জানেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি দুই হাজার ৬০০ শয্যার হাসপাতাল হলেও এখানে ৪ হাজার রুগীর সেবা দেওয়া হয়। হাসপাতালে কোনোভাবেই ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স মালিকদের বারবার বলার পরেও তারা সরে না যাওয়ায় সেনাবাহিনী দিয়ে সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছে। তারা এখন হাসপাতালে বাইরে অবস্থান করছে, আমরা মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি নামমাত্র মূল্যে তাদের একটি জায়গার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে তারা একইসঙ্গে ২০০ গাড়ি রাখতে পারবে। হাসপাতালে যারা স্পেশাল ডিউটি করতো, তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের এখানে বৈধভাবে যারা আছেন, তারাই শুধু ডিউটি করবেন।’
হাসপাতালের চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের এখানে যেসব প্যাথলজিক্যাল টেস্ট হয় সেগুলো এখানেই করতে হবে। যেগুলো এখানে হয় না সেগুলো অন্য জায়গায় যেতে পারে। কিন্তু যেগুলো এখানে হয় সেগুলোর সঙ্গে চিকিৎসকরা অন্যগুলো বাইরে পাঠিয়ে দিচ্ছেন– এগুলো কোনোভাবে বরদাস্ত করা হবে না।’
ব্লাড ব্যাংকে রক্ত নেওয়ার বিষয়ে ঢামেক হাসপাতাল পরিচালক বলেন, ‘এখানে অনেক গ্রুপের রক্তই থাকে না। আমরা বলে দিয়েছি রোগীদের সঙ্গে যে গ্রুপের রক্তই থাকুক সেই গ্রুপের রক্ত ব্লাড ব্যাংকের জমা দিয়ে আপনার চাহিদা অনুযায়ী রক্ত নিয়ে যাবেন।’