অনলাইন ডেস্ক : রাষ্ট্রপতির আমন্তণে ঢাকায় এসেছেন মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ চীন সাগরে ঘেরা বোর্নিয়ো দ্বীপের ছোট্ট দেশ ব্রুনেইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ। দুপুরে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন তিনি।
বিমানবন্দরে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ ব্রুনেইয়ের সুলতানকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বিমান থেকে নামার সময়ে ২১বার তোপধ্বনি দেওয়া হয় এই সরকার প্রধানের সম্মানে। এরপর সুলতান হাসানাল বলকিয়াহকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। পরে দুই রাষ্ট্রপ্রধান অভ্যর্থনা মঞ্চে ওঠেন। সুলতানকে গার্ড অব অনার দেয় তিন বাহিনী একটি চৌকস দল। এসময় ব্রুনেই ও বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বাজানো হয়। বিমানবন্দরে অভ্যথ্যনা শেষে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেন এই সুলতান।

হাসান অল বলকিইয়া বিশ্বব্যাপী বিলাশী সুলতান হিসেবে পরিচিত। তিনি সোনায় মোড়ানো গাড়িতে চলেন। প্রাসাদও তার সোনার তৈরি। এই সুলতানের আস্তাবলের ঘোড়ারাও থাকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে। চলুন জেনে আসি এই সুলতানের জীবনচরিত।

নাম তৃতীয় হাসান অল বলকিইয়া ইবনি ওমর আলী সইফউদ্দিন। তবে গোটা দুনিয়া তাঁকে হাসান অল বলকিইয়া নামেই চিনে। মালয়েশিয়া এবং দক্ষিণ চীন সাগরে ঘেরা বোর্নিয়ো দ্বীপের ছোট্ট দেশ ব্রুনেইয়ের সুলতান। ইসলামিক রীতি অনুযায়ী দেশটির সুলতানের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীও তিনি। সঙ্গে অর্থ, বিদেশ, প্রতিরক্ষা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্ব নিজের কাছেই রেখেছেন। আবার পুলিশ সুপার এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানের দায়িত্বও সামলাচ্ছেন তিনিই।

সোনার কাঠি নিয়েই জন্মেছিলেন হাসান অল বলকিইয়া। দুনিয়ার ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছেন। এই সে দিন পর্যন্ত তিনি ধনীতম ব্যক্তির তকমা দখল করে বসেছিলেন। তবে ইদানীং তাঁকে পিছনে ঠেলে শীর্ষে উঠে এসেছেন জনৈক এলন রিভ মাস্ক। টেলসা-র প্রতিষ্ঠাতা মাস্কের ঝুলিতে রয়েছে ২৪ হাজার ৯৩০ কোটি ডলার।

ধনসম্পত্তির হিসাবে এলন মাস্কের থেকে পিছিয়ে পড়লেও কম বিলাসী নন হাসানঅল বলকিইয়া। ১৯৬৭ সালে ব্রুনেইয়ের সুলতানের গদিতে বসার পর থেকে তাঁর ধনসম্পত্তি বেড়েছে হু হু করে।

রাজ পরিবারেই জন্ম বলকিইয়ার। ১৯৪৬ সালের ১৫ জুলাই বাবা তৃতীয় সুলতান ওমর আলী সইফউদ্দিনের ঘরে জন্ম নেন তিনি। ১০ সন্তানের মধ্যে বাবা তাঁকেই রাজ্য চালানোর জন্য বেছে নিয়েছেন। সেই থেকে এই ৭৫ বছর বয়সেও রাজ্য সামলে চলেছেন বলকিইয়া।

ব্রুনেইয়ের দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার আগে নিজেদের প্রাসাদেই প্রাথমিক শিক্ষাদীক্ষার পাঠ প়ড়ানো হয়েছিল সুলতানকে। পরে অবশ্য উচ্চশিক্ষার জন্য মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশন যোগদান করেন তিনি। এর পর ইংল্যান্ডের রয়্যাল অ্যাকাডেমি থেকে স্নাতক স্তরের ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি পাঁচটি পুত্রসন্তান এবং সাতটি কন্যাসন্তানের জনক বলে শোনা যায়।

দুনিয়ার সুলতানদের মধ্যেও প্রথম সারিতে রয়েছেন ব্রুনেইয়ের সুলতান। পৈত্রিক সূত্রে ধনপ্রাপ্তির পাশাপাশি তাঁর সে দেশের তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস ভান্ডারগুলি থেকে মুনাফাও জুড়েছে তাঁর সম্পত্তিতে। ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত তিনিই ছিলেন বিশ্বের ধনীতম। সে সময় তাঁর নিট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ১৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

তেল উৎপাদনের হিসাবে মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম এবং তাইল্যান্ডের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পঞ্চম দেশ হল ব্রুনেই। অপরিশোধিত তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস রফতানির বিপুল অর্থও জমা পড়ছে সুলতানের কোষাগারে।

ধনসম্পত্তির মালিক হওয়ার পাশাপাশি তা খরচ করাতেও কম উৎসাহী নন ব্রুনেইয়ের ৯২তম সুলতান। হটকারস রিপোর্ট নামে একটি ওয়েবসাইট জানিয়েছে, তাঁর ১১০টি গ্যারাজে রয়েছে প্রায় সাত হাজার গাড়ি। তার মধ্যে ৫০০টি রোলস রয়েস এবং ৩০০টি ফেরারি। সব মিলিয়ে যার মূল্য ৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি। সেই সঙ্গে রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল প্রাইভেট জেট। রয়েছে সোনায় মোড়া বোয়িং ৭৪৭-৪০০ বা এয়ারবাস এ৩৪০-২০০ জেটও।

ব্রুনেইয়ের সুলতানের প্রাসাদও কম জমকালো নয়। ২ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার ওই প্রাসাদের রয়েছে ১ হাজার ৭০০টি ঘর। ২৫৭টি বাথরুম। সঙ্গে পাঁচটি সুইমিং পুল। পাশাপাশি, ১১০টি গ্যারাজ এবং ২০০টি ঘোড়ার জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আস্তাবলও জুড়ে নিন।

টাইমস পত্রিকা বলছে, এই বিলাসী সুলতান মাসে অন্তত এক বার তাঁর চুলে ছাঁট দেন। তিন থেকে চার সপ্তাহ অন্তত তাঁর চুল ছাটতে তার খরচ পড়ে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। লন্ডন থেকে উড়ে আসেন তাঁর হেয়ারড্রেসার। তাঁকে প্রথম শ্রেণির বিমানভাড়ার ১২ হাজার ডলার।