অনলাইন ডেস্ক : ডেক্সামেথাসন নামের প্রদাহনাশক একটি ওষুধকে বলা হচ্ছে হাসপাতালে থাকা মারাত্মক অসুস্থ কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য দারুণ কার্যকর এক চিকিত্সা। ব্রিটেনে পরিচালিত এক ট্রায়ালে দেখা গেছে—এই ওষুধ জীবনরক্ষায় কার্যকরী। অনেকেই হয়তো এই ওষুধের সঙ্গে আগে থেকেই পরিচিত; কিন্তু অধিকাংশ মানুষেরই এটি সম্পর্কে ধারণা কম। এটি একটি স্টেরয়েড। শরীরে প্রদাহনাশক হরমোনের উত্পাদন বাড়িয়ে দিয়ে এটি ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
এটি কীভাবে কাজ করে: শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শ্লথ করার মাধ্যমে কাজ করে এই ওষুধ। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা যখন করোনা ভাইরাস সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, তখন প্রদাহ তৈরি হয। মাঝেমধ্যে লড়াই তীব্র হয়ে ওঠে এবং তার প্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরের কোষগুলো আক্রমণের শিকার হয়; ফলাফল হিসেবে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ওষুধ শুধু তাদের জন্যই যথাযথ, যারা হাসপাতালে ভর্তি এবং কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন গ্রহণ করছেন কিংবা ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। অর্থাত্ গুরুতর অবস্থায় থাকা রোগীদের জীবন বাঁচাতেই কেবল ভূমিকা রাখতে পারে এই ওষুধ। যাদের মৃদু উপসর্গ রয়েছে তাদের জন্য এই ওষুধ কার্যকর নয় বরং শুরুতেই রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শ্লথ করে দিয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে।
করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডেক্সামেথাসনকে বিরাট সাফল্য হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এই ওষুধ ব্যবহার করলে ভেন্টিলেটারে থাকা রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি এক-তৃতীয়াংশ কমানো যাবে। আর যাদের অক্সিজেন দিয়ে চিকিত্সা করা হচ্ছে তাদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঝুঁকি এক-পঞ্চমাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ড একটি গবেষণা পরিচালনা করছে, যার কোডনেম ‘রিকভারি’ বা র্যানডমাইজড ইভালুয়েশন অব কোভিড-১৯ থেরাপি। এই গবেষণায় দেখা হচ্ছে, অন্যান্য অসুখের জন্য এখন যেসব ওষুধ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে কোনোটি কোভিড-১৯ চিকিত্সায় কাজে লাগানো যায় কি না। গবেষণার আওতায় ২১ হাজার রোগীকে ১০ দিন ধরে প্রতিদিন ছয় মিলিগ্রাম করে ডেক্সামেথাসন প্রয়োগ করা হয়। এদের সঙ্গে তুলনা করে দেখা হয় আরো ৪ হাজার ৩০০ রোগীর সঙ্গে, যাদের কোনো অতিরিক্ত ডেক্সামেথাসন দেওয়া হয়নি। সেই ট্রায়ালেই মিলেছে বিস্ময়কর এই ফলাফল। বিজ্ঞানীদের আশা, শেষ পর্যন্ত হয়তো ডেক্সামেথাসনকে আরো কিছু ওষুধের সঙ্গে মিলিয়ে প্রয়োগ করা যাবে, যার ফলে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের মৃত্যুর ঝুঁকি আরো কমবে।
ওষুধটির কিছু সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, যেমন—অনিদ্রা, উত্কণ্ঠা, স্থূলতা এবং শরীরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে যাওয়া। কিছু বিরল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও দেখা যায়, যেমন—চোখের সমস্যা, দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণ। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে তাই স্বল্পমাত্রায় প্রয়োগ করা প্রয়োজন যাতে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না দেখা দেয়। —বিবিসি