অনলাইন ডেস্ক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলতি বছরের ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে আবারও সুস্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে তার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানিয়েছেন শান্তিতে নোবেল জয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

সোমবার (৩ মার্চ) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার হাজদা লাহবিব দেখা করতে গেলে তিনি এই কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং ভোট সম্ভবত এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।

বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টাকে ইইউর সমতা, প্রস্তুতি ও সংকট ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিশনার হাজিয়া লাহবিব বলেন, ইইউ এ বছর রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় এবং মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে সহিংসতার শিকার জনগণের জন্য ৬৮ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দিয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে এই অর্থ বেশি হলেও, ক্রমবর্ধমান তহবিল ঘাটতির কারণে ক্যাম্পগুলিতে মানবিক পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতির ঝুঁকি এড়ানোর জন্য এটি এখনো যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন তিনি।

হাজিয়া লাহবিব বাংলাদেশের ক্রান্তিকালে ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে বলেছেন, আপনি অসাধারণ সময়ে অসাধারণ কাজ করেছেন। আমরা আমাদের সহযোগিতা আরও জোরদার করতে প্রস্তুত।

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগে ইইউর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুযোগ, যা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। পরিবর্তন আনতে গেলে প্রতিরোধের মুখে পড়তে হয়। তাই অনেক কিছু করা দরকার। আমরা আপনাদের পাশে আছি।

এ সময় মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গা মানবিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। এটি কয়েক বছর ধরে চলছে কোনো সমাধান ছাড়াই। এর কোনো মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ নেই।

ইইউ কমিশনারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনার বাংলাদেশ সফর আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের। জাতিসংঘ মহাসচিবও আসছেন। আমরা রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়ে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছি।

হাজিয়া লাহবিব বলেন, এই সংকটের একমাত্র সমাধান হলো শান্তি। আমাদের সব ধরনের দুর্যোগের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে, যার মধ্যে মানবসৃষ্ট দুর্যোগও রয়েছে। এ ধরনের দুর্যোগের মধ্যে ভুল তথ্য প্রচারও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

বৈঠকে তারা নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির সম্ভাবনা, বন্যা ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ নিয়েও আলোচনা করেন।

প্রধান উপদেষ্টা ইইউর সহযোগিতা চান নেপাল থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির ক্ষেত্রে, যা নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে বাংলাদেশের উত্তরণকে ত্বরান্বিত করবে। তিনি বলেন, আমরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে কথা বলি, আর এখানেই তা রয়েছে। নেপাল ও ভুটান আমাদের কাছে এই জ্বালানি বিক্রিতে আগ্রহী।

ইইউ কমিশনার বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। ইইউ বাংলাদেশকে ‘ভালো অনুশীলন’ এবং কৌশলগত প্রস্তুতির বিনিময়ে সহায়তা করতে আগ্রহী।