অনলাইন ডেস্ক : চীনা কোম্পানি ডিপসিকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত নতুন চ্যাটবট যুক্তরাষ্ট্রে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। ডিপসিকের আর-১ মডেল বাজারে আসার পর, এর কারণে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ চিপ ফার্ম এনভিডিয়ার মার্কেট ভ্যালু প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে। ডিপসিক দাবি করছে, তাদের এই মডেলটি তৈরি করতে মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যেখানে অন্য প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো একই মডেল তৈরি করতে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানায়, ডিপসিকের চ্যাটবটের কারণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খাতে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে, কারণ এর খরচ কম, কিন্তু ফলাফল সমান। যুক্তরাষ্ট্রে চিপ বিক্রির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার পর চীনা কোম্পানিগুলো একসাথে কাজ করতে শুরু করে এবং নতুন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম কম্পিউটিং শক্তি প্রয়োগে এমন একটি মডেল তৈরি করেছে, যা পূর্বের তুলনায় অনেক সাশ্রয়ী।
ডিপসিকের এই সাফল্যের কারণে, মার্কিন প্রযুক্তি কোম্পানির মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে শুরু করেছে। ডিপসিকের আর-১ মডেলটি মুক্তি পাওয়ার পর মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে এটি যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি ডাউনলোড হওয়া অ্যাপ হিসেবে পরিণত হয়েছে। এ ঘটনা প্রযুক্তি খাতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডিপসিকের বিষয়ে বলেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি শিল্পের জন্য একটি সতর্কবার্তা। তবে একই সঙ্গে তিনি এটাও বলেন, “যদি আপনি কম দামে বানাতে পারেন এবং একই ফলাফল পান, তাহলে এটা আমাদের জন্য ভালো।” তিনি নিশ্চিত যে, এই খাতে যুক্তরাষ্ট্রেরই প্রভাব থাকবে এবং চীনা প্রযুক্তি সাফল্যে তিনি আতঙ্কিত নন।
ডিপসিকের ওপেন সোর্স ডিপসিক-ভি৩ মডেল দ্বারা চালিত চ্যাটবটটি তৈরি করতে গবেষকরা জানাচ্ছেন যে তাদের মাত্র ৬ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়েছে, যেখানে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো একই জিনিস তৈরিতে বিলিয়ন ডলার খরচ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে, ডিপসিকের সাফল্য প্রযুক্তি বিশ্বে আলোচনা সৃষ্টি করেছে।
চীন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে যেতে না পারে, এজন্য যুক্তরাষ্ট্র চিপ বিক্রিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। কিন্তু ডিপসিকের সাফল্য দেখিয়ে দিয়েছে, চীনা কোম্পানিগুলো পরস্পরকে সহায়তা করে এই প্রযুক্তিতে নতুন পদ্ধতির প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের খরচ কমিয়ে ফেলেছে।
ডিপসিকের প্রতিষ্ঠাতা লিয়াং ওয়েংফেং ২০২৩ সালে চীনের হাংজু শহরে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। ৪০ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা ইনফরমেশন অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে গ্র্যাজুয়েট এবং ‘হেজ ফান্ড’ নামে একটি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানও তৈরি করেছেন, যা ডিপসিককে সহায়তা করেছে।
ডিপসিকের মডেলটি চ্যাটজিপিটির সঙ্গে তুলনা করে দেখা গেছে, এটি বেশ কিছু ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির সমান দক্ষতা দেখিয়েছে। ওপেনএআই-এর প্রধান স্যাম আল্টম্যান ডিপসিকের প্রশংসা করেছেন এবং বিশেষ করে তাদের কম দামে মানুষকে সেবা দেয়ার বিষয়টি তার পছন্দ হয়েছে।
এআই সফটওয়্যার কোম্পানি ডাটাব্রিকসের এআই চেয়ারম্যান ইয়ান স্টোকা বলেছেন, ডিপসিকের কম দামের সার্ভিস এআই খাতকে সমৃদ্ধ করবে এবং এটি দ্রুত সময়ের মধ্যে বিস্তার লাভ করবে।
ডিপসিক দাবি করেছে, তাদের মডেলটিকে ২ হাজার বিশেষায়িত চিপের ওপর প্রশিক্ষণ দিলেই চলবে। যেখানে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মডেল তৈরিতে ১৬ হাজার চিপ প্রয়োজন।
এআই খাতে এই ধরনের বিপ্লবী প্রযুক্তির আবির্ভাব, যেখানে কম খরচে উচ্চমানের ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে, তা প্রযুক্তি বিশ্বকে নতুন পথে নিয়ে যাচ্ছে। যদিও এটি চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রযুক্তি প্রতিযোগিতার নতুন পর্বের সূচনা করেছে, তবে অনেকেই মনে করছেন, এর ফলে খরচ কমে যাবে এবং গ্রাহকদের জন্য আরো উন্নত সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে।
সূত্র: বিবিসি