শওগাত আলী সাগর: ১. ‘আমরা কি এই বিল্ডিংটায় যাচ্ছি?’- কুইন্সপার্ক সাবওয়ে স্টেশন থেকে বেরিয়ে পায়ে হেঁটে আমরা যখন বিল্ডিংটার সামনে এসে দাঁড়ালাম ঠিক তখনি- কথামালা প্রশ্নটা করে।
‘এটাতো প্রভিন্সিয়াল লেজিসলেটিভ বিল্ডিং- অন্টারিও পার্লামেন্ট, উই কেইম ফ্রম স্কুল টু ভিজিট দিস বিল্ডিং!’
: হ্যাঁ, তোমার এই বিল্ডিংটায় যাচ্ছো। আমি জবাব দেই।
: আই থট, ইট উইল বি ইন অ্যানি বেসমেন্ট, হোয়ার মোস্ট অব দ্যা বাংলাদেশি প্রোগ্রামস আর অ্যারেঞ্জড। সন্ধ্যার আলো আঁধারীতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের কথাটাকে খানিকটা ঘুরিয়ে ফেলে কথামালা। ‘নট অল’ আই মিন বেসমেন্ট লাইক হল… ইউ নো হোয়াট, আই ডিড নট থট উই আর অ্যাটেন্ডিং অ্যা মিটিং ইন পার্লামেন্ট বিল্ডিং, হোয়্যার, প্রভিন্সিয়াল এমপিস মিট.
২. কথামালা আর বর্ণমালা এসেছে- ডলি বেগমের ইয়থ ক্যাবিনেটের অরিয়েনেটশন মিটিং এ যোগ দিতে। স্কারবোরো সাউথ্ওয়েষ্ট নির্বাচনী এলাকা থেকে নির্বাচিত প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টের সদস্য ডলি বেগম একটি ইয়থ ক্যাবিনেট গঠন করেছেন। এই ক্যাবিনেটের সদস্যদের কাজ হবে- প্রভিন্সের নীতি নির্ধারনীয় নানা বিষয়ে এই ক্যাবিনেটের সদস্যরা ডলি বেগমকে পরামর্শ দেবেন, সরকারের যে সব বিষয় তাদের পছন্দ না সেগুলো নিয়েও খোলামেলো কথা বলবেন- এইসব ইয়ুথরা। ডলি বেগমের অফিস যখন- ইয়ুথ ক্যাবিনেটে অংশ নেয়ার আবেদন পত্র আহ্বন করে তখন বর্ণমালা- কথামালা দুজনেই তাতে আবেদন করে।
৩. বিল্ডিংটার গেটে সিকিউরিটি ডেস্কে কথামালাই এগিয়ে যায়। নিজের পরিচয়, আইডি কার্ড দেখিয়ে ভেতরে প্রবেশের ছাড়পত্র পাওয়ার পর একজন সিকিউরিটি যখন জানতে চায়- নির্দিষ্ট রুমটা খুঁজে পেতে কোনো সহায়তা লাগবে কী না- কথামালা জানিয়ে দেয়- নো থ্যাংকস। প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্ট ভবনের ভেতর মিটিং রুমটা খুঁজে বের করতে পারবে কী না- তা নিয়ে আমার সংশয় থাকলেও দু বোন সেটাকে একদমই পাত্তা দিলো না।
৪.বর্ণমালা- কথামালার সঙ্গে আমাদের হরহামেশাই রাজনীতি নিয়ে কথা হয়। ডাগ ফোর্ডকে আর কতো বছর সহ্য করতে হবে, ট্রুডো কি আসলেই দেশ ভালো চালাচ্ছে, ছাত্রদের মধ্যে এনডিপির এতো সমর্থন কেন- মেয়র জন টরির সমস্যাটা কি- এসব নিয়ে দু বোনোর সাথে আমাদের আলোচনা হয়, তর্ক হয়। তর্ক উসকে দিয়ে আমরা আসলে তাদের মতামত শুনি, যুক্তিগুলো শুনি।
ডলি বেগমের ইয়ূথ ক্যাবিনেটের আইডিয়াটাও আমার দারুন পছন্দ। বাচ্চা বাচ্চা ছেলে মেয়েরা রাজনীতি নিয়ে, প্রভিন্সের প্রয়োজন নিয়ে, সরকারের নীতি পদক্ষেপ নিয়ে কথা বলবে, নিজেদের মতামত দেবে, একজন জনপ্রতিনিধি সেগুলো শুনবেন- সেইগুলো শুনে নিজের কর্মপরিকল্পনা সাজাবেন- কি সাংঘাতিক ব্যাপার! এভাবেই তো ওদের চিন্তার মধ্যে ’ফিলিংস অব এমপ্ওায়ারমেন্ট’ তৈরি হয়!
৫. ডলির ওরিয়েন্টেশন থেকে আসার পর থেকেই কথামালা তার জ্যাকেটটা অধিকাংশ সময় পরে থাকে। প্লাস টেম্পারচোরেও জ্যাকেট পরেই স্কুলে যায়। ব্যাপার কি! ভালো করে তাকাতেই পরিষ্কোর হয়ে যায়। পার্লামেন্ট বিল্ডিং এ প্রবেশের সময় সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স হিসেবে একটা স্টিকার লাগিয়ে দেয়া হয়েছিলো জামায়। জ্যাকেটে সেই স্টিকারটা এখনো আছে। কথামালা কি তা হলে কুইন্সপার্কে যাবার স্মৃতিটাকে এভাবে ধরে রাখতে চায়? অন্যদের দেখাতেও চায় কি?
কথামালার কীর্তি দেখে আমরা চুপচাপ হাসি। আর ভাবি- ডলি কি এভাবেই আমাদের ‘ইয়ূথ’দের মনের ভেতর স্বপ্ন তৈরি করে দিচ্ছেন?