অনলাইন ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফল মানতে এখনো নারাজ। তার পরও নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার আসন্ন প্রশাসন গোছাতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে তিনি হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ হিসেবে রন ক্লেইনের নাম ঘোষণা করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান হতে পারে বেশ কয়েক জন নারীর।
বাইডেনের মন্ত্রিসভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুসান রাইস। বাইডেন বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ফোনালাপ করছেন। তবে অভিযোগ পাওয়া গেছে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বাধায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের অভিনন্দন বার্তা পাচ্ছেন না বাইডেন। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দৈনন্দিন কাজে মনোযোগ না দিয়ে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছেন। এখনো ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু করেনি তার প্রশাসন। মিশিগানে মামলা হয়েছে এবং জর্জিয়ায় পুনরায় ভোট গণনা হচ্ছে এবং হাতে।
হোয়াইট হাউজের পরবর্তী চিফ অব স্টাফ রন ক্লেইন
হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ হিসেবে ঘনিষ্ঠ সহযোগী রন ক্লেইনকে মনোনীত করেছেন বাইডেন। পূর্বে সিনেট জুডিশিয়ারি কমিটিতে বাইডেনের সহযোগী ছিলেন ক্লেইন। পরবর্তী সময়ে ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের চিফ অব স্টাফ ছাড়াও সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরেরও চিফ অব স্টাফ ছিলেন ক্লেইন। প্রেসিডেন্টের দৈনন্দিন কাজের তালিকা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন চিফ অব স্টাফ। হোয়াইট হাউজের চিফ অব স্টাফ রাজনৈতিকভাবে নিয়োগ পাওয়ায় সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন হয় না।
এদিকে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে কে কে থাকছেন শিগিগরই তাদের নাম ঘোষণা করতে পারেন বাইডেন। যদিও মন্ত্রিসভার মনোনীতদের নিয়োগের জন্য সিনেটের অনুমোদন লাগবে। সিএনএন জানায়, ওবামা প্রশাসনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিকেন হতে পারেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা। অর্থ, প্রতিরক্ষা, বিচার, স্বরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে দেখা যেতে পারে নারীদের। এছাড়া মন্ত্রিসভায় জায়গা পেতে পারেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স, যিনি দলের প্রার্থিতার লড়াইয়ে বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।
মিত্র দেশের নেতাদের সঙ্গে আলাপ বাইডেনের
জো বাইডেনকে বিদেশি নেতাদের শুভেচ্ছা গ্রহণে বাধা দিচ্ছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পাঠানো বার্তাগুলো মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে জমা পড়ে আছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সিএনএন আরো জানিয়েছে, বাইডেনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে গত সপ্তাহে অনেক দেশ থেকে বার্তা এসেছে। ঐতিহ্যগতভাবে সেসব বার্তা নতুন প্রেসিডেন্টের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভোটের ফল না মানায় তার প্রশাসন শুভেচ্ছা বার্তাগুলো বাইডেনের কাছে পৌঁছে দিতে বাধা দিচ্ছে। তবে প্রশাসনের বাধার মুখে বসে নেই বাইডেন। তিনি মিত্র দেশের নেতাদের সঙ্গে ফোনালাপ করছেন। গতকাল তিনি কথা বলেছেন জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ার নেতাদের সঙ্গে। ফোনালাপে বাইডেন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে সম্পর্ক আরো গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
কাজ নয়, আইনি লড়াইয়ে মনোযোগী ট্রাম্প
সিএনএন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনের ফল নিয়ে আইনি লড়াইয়ে যতটুকু আগ্রহী নিজের কাজে ততটুকু আগ্রহী নন। মনে হচ্ছে তিনি বিনা ছুটিতেই কাজে অনুপস্থিত। ছয় দিনের মধ্যে গত বুধবার তিনি প্রবীণ দিবস উপলক্ষ্যে ভার্জিনিয়ার আর্লিংটনে জাতীয় সমাধিতে শ্রদ্ধা জানালেও কোনো কথা বলেননি। জানা যায়, বাইডেনের জয় চ্যালেঞ্জ করে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে আবারও ক্ষমতায় থাকতে মরিয়া ট্রাম্প। প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনে তার আগ্রহ খুব কম দেখা যাচ্ছে। গত কয়েক দিনে ট্রাম্প এমন কোনো কাজ করেননি, যাতে মনে হয় তিনি এখন দেশ চালাচ্ছেন। তবে হোয়াইট হাউজের এক মুখপাত্রের দাবি, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সব দায়িত্বই পালন করছেন।
আরো মামলা, জর্জিয়ায় ভোট পুনর্গণনা
ভোট জালিয়াতির অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকটি মামলা করেছে ট্রাম্পের প্রচারণা টিম। মিশিগানের ফেডারেল আদালতে নতুন করে আরেকটি মামলা করেছে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির। ডেট্রয়েট শহরে নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ ও নির্বাচনে জয়ের ঘোষণা না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। মিশিগানে বাইডেন ১ লাখ ৪৮ হাজারেরও বেশি ভোট পেয়ে জিতেছেন। এখন পর্যন্ত মোট ২৯০টি ইলেকটোরাল ভোট পেয়েছেন তিনি। এর আগে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির পেনসিলভেনিয়ার ফেডারেল আদালতেও একই রকম মামলা করে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাম্প প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, আগামী সপ্তাহে উইসকনসিনেও আনুষ্ঠানিকভাবে পুনর্গণনার জন্য অনুরোধ জানানোর পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প।