অনলাইন ডেস্ক : ডিসেম্বরের শেষের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর দুই সপ্তাহের মধ্যে ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চল ভ্রমণে গেছেন ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত এক ভ্রমণে মঙ্গলবার গ্রিনল্যান্ডের রাজধানী নুউকে পৌঁছেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের বড় ছেলে ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র।

নুউক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলোর লাইভস্ট্রিম অনুযায়ী, ট্রাম্প জুনিয়র তার বাবার ব্যক্তিগত বিমান ‘ট্রাম্প ফোর্স ওয়ানে’ করে বেলা ১২টা ৫০ মিনিটের (জিএমটি) দিকে নুউকে পৌঁছেছেন।

গ্রিনল্যান্ডের স্থানীয় এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়রের এই ভ্রমণ চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা স্থায়ী হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেখানকার সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার বৈঠকের কোনও পরিকল্পনাও করা হয়নি।

এর আগে, সোমবার তার বাবার সাম্প্রতিক মন্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে এক পডকাস্টে ট্রাম্প জুনিয়র বলেছিলেন, ‘‘না, আমি গ্রিনল্যান্ড কিনছি না। অনেক মজার। আমি আসলে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এক ব্যক্তিগত সফরে গ্রিনল্যান্ডে যাচ্ছি।’’ একই দিনে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত-প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দ্বীপটির প্রশংসা করে পোস্ট দেন। গ্রিনল্যান্ডকে আবারও মহান করে তোলার অঙ্গীকার করেন তিনি।

ট্রাম্প বলেন, ‘‘গ্রিনল্যান্ড অবিশ্বাস্য এক জায়গা এবং যদি কখনও এটি আমাদের দেশের অংশ হয়, তাহলে জনগণ ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে।’’

গত ২৩ ডিসেম্বর ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত এই প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, “সারা বিশ্বের নিরাপত্তা এবং স্বাধীনতার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা এবং নিয়ন্ত্রণ এই মুহূর্তে অত্যাবশ্যক।”

ট্রাম্প পোস্ট দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউটে এগেডে বলেন, “গ্রিনল্যান্ড আমাদের। আমরা বিক্রির জন্য নই এবং কখনও এমনটা ঘটবে না। দীর্ঘদিন ধরে আমরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করছি এবং নিশ্চিতভাবেই তা আমরা বৃথা যেতে দেব না।”

বিশ্বের সবচেয়ে বড় দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডের আয়তন ২১ লাখ ৬৬ হাজার ৮৬ বর্গকিলোমিটার, জনসংখ্যা মাত্র ৫৬ হাজার ৫৮৩ জন। এই জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশই ইনুইট জাতিগোষ্ঠীভুক্ত। গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান উত্তর আমেরিকা অঞ্চলে হলেও দ্বীপটি ডেনমার্কের অধীন একটি স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রদেশ। এ দ্বীপের বাসিন্দারাও ডেনমার্ক এবং ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নাগরিক।

আর্কটিক এবং আটলান্টিক সাগরকে পৃথককারী দ্বীপটির নাম গ্রিনল্যান্ড হলেও উত্তর মেরুর কাছাকাছি অবস্থান হওয়ার কারণে বছরের বড় একটি সময় তুষারাচ্ছাদিত থাকে। দ্বীপটির ভূপৃষ্ঠের গভীরে জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন খনিজ পদার্থ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূতত্ত্ববিদরা।

গ্রিনল্যান্ডের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা অবশ্য নতুন নয় ট্রাম্পের। এর আগে ২০১৯ সালে যখন প্রথম মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, সে সময় একবার তিনি বলেছিলেন, ‘কৌশলগত কারণে’ যুক্তরাষ্ট্রের উচিত এ দ্বীপটি কিনে নেওয়া।

শুধু গ্রিনল্যান্ড নিয়েই তার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়ে ক্ষান্ত হননি ট্রাম্প। গত ২২ ডিসেম্বর নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা এক বার্তায় পানামা খাল দখল করার হুমকিও দিয়েছিলেন তিনি।

ট্রুথ সোশ্যালে পানামা খালের একটি ছবি পোস্ট করেন ট্রাম্প। সেই ছবিতে খালের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের পতাকার একটি ছবি রয়েছে। ছবির নিচে ট্রাম্প লেখেন, “যুক্তরাষ্ট্রের খালে সবাইকে স্বাগতম।”

তার এই ছবি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রেকর্ডকৃত বক্তব্য প্রকাশ করে পানামার প্রেসিডেন্টের দপ্তর। সেই বক্তব্যে দেশটির প্রেসিডেন্ট জোসে রাউল মুলিনো বলেন, “পানামা খাল ও তার আশপাশের প্রতি ইঞ্চি জমির মালিক পানামা এবং এটিই বলবৎ থাকবে। এই ব্যাপারটি পানামার সার্বভৌমত্বের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং এ ইস্যুতে পানামা কখনও আপোস করবে না।”

সূত্র: রয়টার্স, সিবিএস।