অনলাইন ডেস্ক : মাত্র ১০ বছরের শিশু ম্যাথিউ। সিরিয়ায় আইএস শিবির থেকে সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে হুমকি দিয়েছিল। অবশেষে সে তার জন্মভূমি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরেছে। ফিরেই তার অনুভূতি ‘সুমধুর এক স্বস্তি’। উল্লেখ্য, মার্কিন এই বালককে তার মা ও সৎপিতা সিরিয়া নিয়ে যায়। তখন তার বয়স মাত্র ৭ বছর। এর তিন বছর পরে সে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে একটি ভিডিও পোস্ট করে। তাতে সে ট্রাম্পকে বলে, যুক্তরাষ্ট্রে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হোন।
বর্তমানে তার বয়স ১৩ বছর। ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী তাকে সিরিয়া থেকে দেশে ফিরিয়ে নেয়। তারপর থেকে সে বসবাস করছে তার আসল পিতার সঙ্গে। সে বলেছে, দেশে ফিরতে পেরে আমি স্বস্তিতে আছি। যা ঘটেছে তা ঘটে গেছে। সেটা আমার অতীত। ওই সময়ে আমি এত ছোট ছিলাম যে, আমি আসলে বাস্তবতা বুঝতে পারিনি। ম্যাথিউয়ের সঙ্গে যেসব ঘটনা ঘটে গেছে তা থেকে সরে আসতে তাকে কাউন্সিলিং করা হয়েছে। তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথ দেখানো হয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
ম্যাথিউয়ের সৎপিতা মুসা আল হাসানি ২০১৭ সালের গ্রীষ্মে ড্রোন হামলায় মারা যায় সিরিয়ায়। সন্ত্রাসে অর্থায়নের কারণে এ মাসে অভিযুক্ত করা হয়েছে ম্যাথিউয়ের মা সামান্থা স্যালিকে। তাকে সাড়ে ৬ বছরের জেল দেয়া হয়েছে।
২০১৫ সালের এপ্রিল। এ সময় সাধারণ অন্য মানুষের মতোই ম্যাথিউকে সঙ্গে নিয়ে তার মা ও সৎপিতা সিরিয়ায় পাড়ি জমায়। প্রথমে তারা তুরস্কের সানলিউরফা প্রদেশের সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করে। সে সম্পর্কে ম্যাথিউ বলেছে, ওই সময় খুব অন্ধকারের ভিতর আমরা একটি এলাকার ভিতর দিয়ে দৌড়াতে থাকি। এটা ছিল রাতের বেলা। বেশ কতগুলো স্থান ছিল কাঁটাতারের বেড়া দেয়া। এসব নিয়ে ভাবার সময় ছিল না। এর ফাঁক গলিয়ে আমরা দৌড়াতে থাকি- প্রথমবার সেইসব দিনের কথা বিবিসি প্যানোরামা প্রোগ্রামে বলেছে ম্যাথিউ এভাবে।
সিরিয়ার রাকায় পৌঁছে যায় তারা। এটা ছিল আইএসের রাজধানী। ম্যাথিউয়ের সৎপিতা আল হাসানিকে সেখানে সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়। তিনি পরিণত হন আইএসের একজন স্নাইপারে। আস্তে আস্তে সেখানকার পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা হতে থাকে ম্যাথিউয়ের। তার ভাষ্য এ রকম- আমরা যখন প্রথম রাকা’য় পৌঁছলাম, সেখানকার একটি অংশে অবস্থান নিলাম। এটা ছিল কোলাহলময়। গোলাগুলি চলতো হরদম। দূরে কোথাও বিস্ফোরণের শব্দ হলেও আমরা অতোটা ভয় পেতাম না। কিন্তু ২০১৭ সালের শুরুর দিকে মা যুক্তরাষ্ট্রে তার এক বোনকে ইমেইল করলেন। আমাদের পালিয়ে আসার জন্য অর্থ সহায়তা চাইলেন তার কাছে। এতে যুক্ত করা হলো ম্যাথিউয়ের হতাশাজনক চেহারা।
সিরিয়ায় যাওয়ার পর ম্যাথিউকে আত্মঘাতী একটি বেল্ট পরতে বাধ্য করতো আল হাসানি। এটা ছিল তার নির্দেশনা। তাকে যদি কেউ উদ্ধার করতে যায় তাহলে ওই বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশনা দেয়া হয়। আরেকটি ভিডিওতে ম্যাথিউকে দেখা যায় গুলিভর্তি একে-৪৭ রাইফেল ধরে আছে। তাকে এমনটা করতে নির্দেশ দিয়েছিল তার সৎপিতা। ওদিকে রাকায় আকাশ থেকে তীব্র আক্রমণ শুরু করে মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোট। তাদের একটি বোমা আঘাত করে প্রতিবেশী একটি বাড়িতে। এতে ওই বাড়িটি ধ্বংস হয়ে যায়। এ থেকে ম্যাথিউয়ের মধ্যে ধারণা জন্মাতে থাকে এই ধ্বংসস্তূপ ত্যাগ করতে হবে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তখনও নিজেদের বিজয় দাবি করে যাচ্ছে আইএস। ঠিক এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে উদ্দেশ্য করে একটি ভিডিও বার্তা তৈরি করতে বাধ্য করা হয় ম্যাথিউকে। তাতে সে ট্রাম্পকে বলে- আমার এই ভিডিও ট্রাম্পের উদ্দেশে, যিনি হলেন ইহুদিদের হাতের পুতুল। আল্লাহ আমাদেরকে বিজয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আল্লাহ আপনাকে পরাজিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই যুদ্ধ শুধু রাকা বা মসুলেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এই যুদ্ধ শেষ হবে আপনার দেশে। তাই প্রস্তুত হোন। লড়াই শুরু হবে।
এ বিষয়ে ম্যাথিউ বলেছে, তার সামনে এই ভিডিও বানানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। কারণ, তার সৎপিতা তার ওপর রেগে আগুন হয়ে ছিলেন। তার সম্পর্কে ম্যাথিউ বলেছে, তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, সে পরাজিত হচ্ছে। তার মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
মানসিকভাবে তিনি খুবই অস্থির। এর অল্প পরেই ড্রোন হামলায় নিহত হন আল হাসানি। ম্যাথিউ বলে, এতে আমি খুশি হয়েছিলাম। কারণ, সুস্পষ্টভাবে তাকে আমি পছন্দ করিনি। একজন মানুষ মারা গেছে খুশি হওয়া উচিত নয়। কিন্তু তার মৃত্যুতে আমি খুশি হয়েছিলাম। আমরা তখন আনন্দে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম।