অনলাইন ডেস্ক : ২০২৩ এ একুশের গ্রন্থমেলায় প্রবাসী কন্ঠের কলামিষ্ট জসিম মল্লিকের দুটি নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে। একটি উপন্যাস, আমি একবার বৃষ্টিকে ছুঁয়েছিলাম এবং অন্যটি স্মৃতিকথা রাতের আঁধারে নীল। বই দুটি টরন্টো বইমেলায় পাওয়া যাবে। এছাড়াও জসিম মল্লিকের অন্যান্য বইগুলোও মেলায় পাওয়া যাবে। টরন্টো বইমেলা ২২ ও ২৩ জুলাই ২০২৩ এ অনুষ্ঠিত হবে। রয়েল কানাডিয়ান রিজিয়ন হল, স্থান ৯ জড রোড, টরন্টো।
উপন্যাস :
আমি একবার বৃষ্টিকে ছুঁয়েছিলাম
আমি একবার বৃষ্টিকে ছুঁয়েছিলাম এক তরুণের গল্প। মেধাবী, স্মার্ এক তরুণ ঢাকা আসার পর যেসব ঘটনার মুখোমুখী হয় তারই কাহিনী বির্ণিত হয়েছে এই উপন্যাসে। পুরো কাহিনী জুড়ে রয়েছে বিচিত্র সব ঘটনার ঘনঘটা। অদ্ভুত সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে তরুণের। তার নাম অভিক। সে কানাডা থেকে বাংলাদেশে এসেছে জরুরি প্রয়োজনে। সাহসী, সুদশন এবং অনেষ্ট এক তরুণ। ঢাকায় পা দেওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই সে এক ঘুর্ণিপাকের মধ্যে পড়ে যায়। এক রিয়েলটরের হাত থেকে সম্পত্তি উদ্ধারের অভিযানে নেমে পড়ে। কিন্তু এই শহরের কিছুই বুঝতে পারে না। উল্টো অভিককে সাইজ করার সব চেষ্টা করতে থাকে রিয়ালটর। প্রচ্ছন্ন হুমকি দিতে থাকে এ দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার। যেটা করেছিল অভিকের বাবাকে। অভিক মোটেও তাতে বিচলিত না। সে প্রতিজ্ঞা করে রিয়েলটরকে দেখে নেবে। যত ক্ষমতাবানই হোক অভিক হাল ছাড়বে না। এর মধ্যে জিনিয়া নামে এক ধণাঢ্য মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। সেই ত্রাতা হিসাবে আবির্ভুত হয়।
কিভাবে অভিককে উদ্ধার করেছিল জিনিয়া? এর মধ্যে সোনিয়া নামে আর এক মেয়ে জাড়িয়ে পড়ে অভিকের সাথে। শুরু হয় জিনিয়া আর সোনিয়াকে নিয়ে এক মধুর টানাপেড়েন। এসব নিয়ে টানটান গল্প আমি একবার বৃষ্টিকে ছুঁয়েছিলাম। অত্যন্ত মানবিকভাবে ঘটনাগুলো বর্ণনা করেছেন লেখক। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো দারুণ রোমান্টিক উপন্যাস আমি একবার বৃষ্টিকে ছুঁয়েছিলাম। আমি একবার বৃষ্টিকে ছুঁয়েছিলাম উপন্যাসটি প্রকাশ করেছে অনন্যা। প্রচ্ছদ করেছেন মোস্তাফিজ কারগর।
রাতের আঁধারে নীল
রাতের আঁধারে নীল স্মৃতি গদ্যের বই। জসিম মল্লিকের এটি নবম স্মৃতিগদ্যের বই। এর আগের বইগুলো হচ্ছে এলবেলে এবং হৃদয়ে প্রেমের দিন- প্রকাশ করেছে কথাপ্রকাশ। আমার মা প্রকাশ করেছে রিদম প্রকাশনা সংস্থা। স্মৃতির নির্জণতা, থোকায় থোকায় জোনাক জ্বলে, ভালোবাসার চাষাবাদ, স্বপ্ন কাজল মাখা, মায়া ভরা এই সংসারে এবং শুধু আকাশ জানে- প্রকাশ করেছে অনন্যা। আনন্দের কথা হচ্ছে বইগুলো যথেষ্ট পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। একজন লেখকের সবচেয়ে বড় স্বার্থকতা যে পাঠকরা বইগুলো গ্রহণ করেছেন। লেখকের মধ্যে এক ধরণের সরলতা আছে, সহজ স্বাভাবিক ভঙ্গিতে লেখেন। তিনি অকপটে গল্প বলতে পারেন। নিজের কথা বলতে পারেন। নিজেকে ভাঙচুর করতে পারেন। এমন কিছু অনুভ‚তি আছে, কষ্ট আছে বা আনন্দ যা সবার সাথে মিলে যায়। যা অন্যকে ছুঁয়ে যায়। জসিম সেই কথাই বলতে পারেন। মানুষের মনোজাগতিক বিষয় ও সম্পর্কের টানাপোড়েনের কথা আশ্চর্য্য মুন্সীয়ানায় তুলে আনেন। যেনো লেখক পাঠকের মুখোমুখি বসে গল্প করছেন। এছাড়া এমন কিছু ঘটনা ও অতীত স্মৃতি রয়েছে যা পাঠক হৃদয়কে আপ্লæত করে, আন্দোলিত করে। ভাবার সুযোগ দেয় অনেক কিছু। প্রতিটি লেখাতেই রয়েছে ভালোবাসার জয়গান। ভালোবাসাই সব। ঘৃণা কিছুই দিতে পারে না। রাতের আঁধারে নীল প্রকাশ করেছে রিদম প্রকাশনা সংস্থা। প্রচ্ছদ করেছেন ইকবাল হোসেন সানু।
লেখক পরিচিতি :
জীবন যে এক আশ্চর্য্য গল্প, বয়ান; জসিম মল্লিক তার নিপুণ কারিগর। যে জীবনকে নিবারণ করা যায় না, অনিবার্য; জসিম সেই কাহিনীই তুলে ধরেন। গভীর বোধ, বেদনা আর বিহবলতা না থাকলে জীবনকে কতটুকুই বা বোঝা যায়। বোঝে মানুষ? হয়তো তা বুঝতেই জসিম ছুটে যান বরিশাল থেকে টরন্টো, মরক্কো থেকে মেক্সিকো, দুবাই থেকে ডালাস, আবার টোকিও থেকে মিলানো। পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত। ডানা ঝাপটানো পাখির মতোন। এই বয়ে চলা, উড়ে চলাই তাকে ঋদ্ধ করেছে, জীবনের বোধ ও গভীরতায় করেছে সমৃদ্ধ। তাই হতাশাকে প্রশ্রয় দেন না তিনি। জসিমের লেখায় ও যাপনে তাই ফুটে উঠে। কেননা জসিম জানেন, জীবন মানেই ব্যর্থতা না, সেখানে সফলতাও আছে, শুধু ব্যর্থ বলে কোন জীবন নেই। তা তিনি বিশ্বাসও করেন না। তাই জসিমের চরিত্ররা হারতে হারতে জিতে যায়, জিততে জিততে হেরে যায়। কিন্তু সেই হেরে যাওয়াটা সৈয়দ ওয়ালি উল্লাহর উজানে মৃত্যুর মতো। পাওলো কোয়েলহোর আবার তল থেকে উঠে আসার মতো, হারাকু মুরাকামির ভাঙচুর ভাঙচুর শব্দের মধ্যেও জয়ের প্রবল স্বপ্ন। জসিম মল্লিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর। ১৯৮৩ সালে সাপ্তাহিক বিচিত্রায় যোগ দেন। প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৯৯৩ সালে। ইতিমধ্যে ৪০টির বেশি বই প্রকাশিত হয়েছে। লিখেছেন অনেক উপন্যাস, গল্প, নিবন্ধ ও স্মৃতিকথার বই। ভৌগলিক রেখা আর সীমানায় বিশ্বাস করেন না বলেই হয়তো জসিম মানুষকে আশ্চর্য্য ছুঁতে পারেন। জসিম মল্লিক বাংলা একাডেমি, জাতীয় প্রেসক্লাব এবং বরিশাল ক্লাবের জীবন সদস্য। সাহিত্যে সার্বিক অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ পুরস্কার ২০২২ পেয়েছেন। মুক্তিযদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী। জন্ম বরিশাল শহরে ১৯৯৬১ সালে। ২০০৩ সাল থেকে স্বপরিবারে কানাডার টরন্টো শহরে বাস করছেন। ছেলে অর্ক, মেয়ে অরিত্রি ও স্ত্রী জেসমিনকে নিয়ে বসবাস। দেশ বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় বিরামহীন লিখে যাচ্ছেন।