Home কানাডা খবর টরন্টো ফিল্ম ফোরাম-এর আয়োজনে ‘একাত্তরের কারাবাস’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত

টরন্টো ফিল্ম ফোরাম-এর আয়োজনে ‘একাত্তরের কারাবাস’ প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত

অনলাইন ডেস্ক : গত ৩ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা এবং ৮টায় টরন্টো ফিল্ম ফোরামের আয়োজনে টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীণ সেন্টারে ফরহাদ ফয়সল এবং সিনহা মনসুরের নির্দেশনায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের পাকিস্তানের কারা জীবনের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘একাত্তরের কারাবাস’ প্রদর্শিত হয়।
‘একাত্তরের কারাবাস’ এর নির্মাতাদ্বয় ফরহাদ ফয়সল এবং সিনহা মনসুর একটি নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের বঙ্গবন্ধুর কারাবাসের সময়টিকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরেন। তাঁদের এই উপস্থাপনায় বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনের অনেক অজানা অধ্যায় প্রথম বারের মত সাধারণ দর্শকের সামনে উঠে এসেছে। ‘একাত্তরের কারাবাস’ এর কাহিনী শুরু হয় পাকিস্তানের উর্দুভাষী সৈনিকদের বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি হীন মনোভাবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মেডিকেল কোরের সৈনিক আব্দুল মালেকের প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে। বাংলাদেশের ভোলা জেলার চর কুমারীয়া’র আব্দুল মালেক পাকিস্তানীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতিপক্ষ সৈনিকদের জানিয়ে দেন ‘জয় বাংলা’ ¯েøাগানে নিজের অবস্থান। ফলে তাঁকে সহ্য করতে হয় অবর্ণনীয় অত্যাচার এবং কারাবরণ। তাঁর এই কারাবরণ অনাকাংখিত ও অপ্রত্যাশিত হলেও আব্দুল মালেকের জীবনের এক অপার আনন্দ মূর্তিমান হয়ে উঠে যখন তিনি জানতে পারেন তাঁকে যে কারাগারে বন্দী রাখা হয়েছে সেখানেই বন্দী আছেন বাঙালির মুক্তির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সৈনিক আব্দুল মালেকের সাথে বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতের সাথে সাথে দর্শকদের সামনে ধীরে ধীরে উঠে আসতে থাকে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনের কিছু অংশ। বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনের সময়টি ক্যামেরার সামনে উঠে আসার সাথে সাথে নির্মাতাদ্বয় প্রাসংগিকভাবে পর্দায় তুলে ধরেন তাঁর সাথে সম্পর্কীত অতীতের কিছু ঘটনাবলী যেগুলোর ধারাবাহিকতায় অনিবার্য হয়ে উঠে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর কারা জীবনের অনেক বিষয়ই আমাদের কাছে অজানা। মুক্তিযুদ্ধের একেবারে শুরু থেকে ১৯৭২ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত অনেক সময়ের স্রোত বয়ে গেছে। নিশ্চয় এর মধ্যে ঘটে গেছে অনেক ঘটনা প্রবাহ যেগুলো নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ মানুষ এবং বঙ্গবন্ধু প্রেমিকদের কাছে মূল্যবান এবং আগ্রহের বিষয়। সেদিক দিক দিয়ে ইতিহাসে ঘটে যাওয়া এমন এক চরিত্রকে বের করে তাঁর কথা পর্দার সামনে তুলে ধরার জন্য নির্মাতা দুজন অনেক প্রশংসার দাবীদার।

‘একাত্তরের কারাবাস’ এর প্রামাণ্যকরণের জন্য স্বাভাবিকভাবেই নির্মাতাদের প্রয়োজন পড়ে রি-কনস্ট্রাকশনের, আর এর জন্য বঙ্গবন্ধুর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য বেছে নেন অভিনেতা শহীদুজ্জামান সেলিমকে। শহীদুজ্জামান সেলিমের সাবলীল অভিনয় দর্শকদের ভাল লেগেছে। তাঁর এই অভিনয়ের মধ্য দিয়ে দর্শকদের কাছে মূর্ত হয়ে উঠে দৃঢ়চেতা সিংহ হৃদয়ের এক মহান মানুষের নিজ মাটি ও মানুষের প্রতি অপার ভালবাসার কিছু আবেগীয় মুহূর্ত। সেই সাথে সিনহা মনসুরের গবেষণা ও গ্রন্থণায় এ প্রামাণ্যচিত্রে শিমুল ইউসুফের ধারা বর্ণনা এক অপূর্ব দেশপ্রেমের আবহ তৈরি করে। সিনহা মনসুরের প্রযোজনায় এই প্রামাণ্যচিত্রে চিত্রগ্রহণ করেছেন আনোয়ার হোসেন বুলু এবং সম্পাদনায় ছিলেন কায়ছার জিতু।

টরন্টো ফিল্ম ফোরামের আয়োজনে ‘একাত্তরের কারাবাস’ এর প্রদর্শনী শেষে প্রামাণ্যচিত্রটি নিয়ে আলোচনায় অংশ নেন কবি আসাদ চৌধুরী, সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর, অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ, প্রকৌশলী মোহাম্মদ সালাম এবং টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করিম বাবুল। আলোচকবৃন্দ এমন এক বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য নির্মাতাদের অভিনন্দন জানান এবং প্রত্যাশা করেন আগামীতে বঙ্গবন্ধুর আরও অনেক অজানা বিষয় নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণে নির্মাতারা এগিয়ে আসবেন। সেই সাথে আলোচকরা আশা ব্যক্ত করেন, বঙ্গবন্ধু এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারাই চলচ্চিত্র নির্মাণ করবেন তারা যেন অনেক যত্ন নিয়ে আমাদের ইতিহাসের এই অমূল্য সময় এবং ব্যক্তিকে উপস্থাপিত করেন। টরন্টো ফিল্ম ফোরাম আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে উপস্থাপনা করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের ফিল্ম স্ক্রীণিং সেক্রেটারী রেজিনা রহমান।

Exit mobile version