গত ১৪ই আগস্ট, শুক্রবার সন্ধ্যায় টরন্টো ফিল্ম ফোরাম এর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র কার্যালয়ে এক স্মরণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ এবং খ্যাতিমান সিনেমাটগ্রাফার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর পুত্র মিশুক মুনীরের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানানো হয়। উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের কালো রাতে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হন এবং ২০১১ সালের ১৩ই আগস্ট বাংলাদেশের মানিকগঞ্জে এক সড়ক দূর্ঘটনায় তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর প্রাণ হারান।

টরন্টো ফিল্ম ফোরামের আয়োজনে এই স্মরণ অনুষ্ঠানের শুরুতে এই তিনজনসহ আগষ্ট মাসে মৃত্যুবরণ করেছেন এমন কয়েকজন কীর্তিমান বাঙালি যেমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, কবি শামসুর রাহমান, কবি শহীদ কাদরী, হূমায়ন আজাদ, ক্ষুদিরাম বসু প্রমুখের ওপর নির্মিত এনায়েত করিম বাবুলের সম্পাদিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তাগণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত করেন। সবাই পরম শ্রদ্ধায় বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, বাঙ্গালী জাতি ধন্য যে এমন একজন মহাপুরুষ বাংলার মাটিতে জন্মেছিলেন, যিনি বাংলাদেশের মানুষকে বুঝিয়েছিলেন দেশের স্বাধীনতা কেন প্রয়োজন এবং এই স্বাধীনতা পেতে হলে কী করতে হবে। বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, বঙ্গবন্ধু যে সুন্দর, দূর্নীতিমুক্ত, ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা অর্জনের জন্য আমরণ যে যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাবেন। সেই সাথে তারা ঘৃণা প্রকাশ করেন সেই সব অমানুষ ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির প্রতি যারা বংগবন্ধুর মত একজন মহামানবকে হত্যা করেছেন। বক্তাদের কথায় উচ্চারিত হয় অন্নদা শংকরের সেই অনিন্দ্য সুন্দর পংতিমালা;
যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা
গৌরী যমুনা বহমান
ততদিন রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান

তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু যে সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই বাংলায় চলচ্চিত্র ক্ষেত্রে ঈপ্সিত অবদান রাখার জন্য তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর তৈরি হয়ে উঠেছিলেন। ইতোমধ্যে দু’জনের কাজ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছিল। উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ১৩ই আগস্ট তারেক মাসুদ পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘কাগজের ফুল’ এর শ্যুটিং লোকেশন থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীর সহ মোট পাঁচজন প্রাণ হারান। মিশুক মুনীর ‘কাগজের ফুল’ এর সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করছিলেন। টরন্টো ফিল্ম ফোরামের অধিকাংশ সদস্যই চলচ্চিত্র নির্মাণ ও সামাজিক পরিচয়ে এই দু’জনের খুবই ঘনিষ্ঠজন। টরন্টো ফিল্ম ফোরাম এর সভাপতি এনায়েত করিম বাবুলের সভাপতিত্বে এই স্মরণ অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ ও বক্তব্য রাখেন শেখ শাহনওয়াজ, নাহিদ কবীর কাকলী, নবিউল হক বাবলু, শিখা রঊফ, সোলাইমান তালুত রবিন, জগলুল আজিম রানা, ফাইজ নূর ময়না, হিমাদ্রী রয়, গোপা চৌধুরী, আরিফ হোসেন বনী, রেজিনা রহমান, বিদ্যুৎ সরকার, অপু রোজারিও এবং সাহিদুল আলম টুকু।

টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিকের সঞ্চালনায় স্মরণ অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন হিমাদ্রী রয় এবং সংগীত পরিবেশন করেন নাহিদ কবীর কাকলী ও নবিউল হক বাবলু।