আরিফ হোসেন বনি : গত ২৮শে অক্টোবর, শুক্রবার, টরন্টো ফিল্ম ফোরামের ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টারে বিশ্বখ্যাত ফরাসী-সুইস চলচ্চিত্র নির্মাতা জ্য লুক গদার রেট্রোস্পেক্টিভ এর তৃতীয় দিনে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী এবং আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এ অনুষ্ঠানে ১৯৬৭ সালে নির্মিত গদারের চলচ্চিত্র ‘লা শিনোয়েজ’ প্রদর্শিত হয়। গদারের জীবন ও কর্ম এবং ‘লা শিনোয়েজ’ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সহ সভাপতি এবং বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের সাবেক সভাপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা আমিনুল ইসলাম খোকন।
উল্লেখ্য, গত শতাব্দীর ৫০ এবং ৬০ এর দশকে একদল ফরাসী চলচ্চিত্র নির্মাতা চলচ্চিত্রের ভাষার যে আমূল পরিবর্তন করেন জ্য লুক গদার হচ্ছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। চলচ্চিত্র নিয়ে তাঁদের সেই আন্দোলন বিশ্ব চলচ্চিত্রে ফরাসী ‘নব তরঙ্গ’ নামে পরিচিতি লাভ করে।
গদার ১৯৩০ সালের ৩রা ডিসেম্বর প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন। ৪ বছর বয়সে তাঁর পরিবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় বসবাস শুরু করলে তাঁর শৈশব এবং কৈশোরকাল সেখানেই কাটে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর তিনি প্যারিসে ফিরে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার জন্য। তারপর তাঁর জীবন ফ্রান্স এবং সুইজারল্যান্ডে দুই দেশেই কাটে। ২০২২ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর তিনি সুইজারল্যান্ডের রোলে শহরে মৃত্যুবরণ করেন। অধিকাংশ চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, তিনি বিশ্ব চলচ্চিত্রের সর্বকালের সেরা ১০জন চলচ্চিত্র নির্মাতাদের একজন। তাঁর বিশেষ কোন চলচ্চিত্রের জন্য তাঁকে অস্কার পুরস্কার দেওয়া না হলেও ২০১০ সালে চলচ্চিত্রে তাঁর অনন্য অবদানের জন্য সম্মানসূচক অস্কার দেওয়া হয়, কিন্তু জ্য লুক গদার সেটা গ্রহণ করেননি। ১৯৬০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০টি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। গদারের উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলি হচ্ছে, ব্রেথলেস (১৯৬০), এ ওমেন ইজ ওমেন (১৯৬১), কনটেম্পট (১৯৬৩), লা শিনোয়েজ (১৯৬৭), লেটার টু জেন (১৯৭২), ফার্স্ট নেম কারমেন (১৯৮৩), কিং লেয়ার (১৯৮৭), ইন প্যারিস অব লাভ (২০০১), এবং দ্য ইমেজ বুক (২০১৮)।
গদার রেস্ট্রোপেক্টিভ এর তৃতীয় দিনে তাঁর চলচ্চিত্র ও কর্মের উপর আলোচনা করতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম খোকন গদারের ‘লা শিনোয়েজ’ চলচ্চিত্রের বিভিন্ন দিক এবং এই চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রেক্ষাপটের উপর আলোকপাত করেন। সেই সাথে তিনি তুলে ধরেন চলচ্চিত্রটি কেন বিশ্ব চলচ্চিত্রে একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে রয়েছে। ‘লা শিনোয়েজ’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর পর চলচ্চিত্রটি নিয়ে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি এনায়েত করিম বাবুল, অর্থ সম্পাদক সাহিদুল আলম টুকু, অনুষ্ঠান সম্পাদক সোলায়মান তালুত রবিন, কার্যনির্বাহী সম্পাদক শেখ শাহনওয়াজ এবং পারভেজ চৌধুরী। গদার রেট্রোস্পেক্টিভ এর তৃতীয় দিনের আলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিক।
গদার রেট্রোস্পেটিভ এর শেষ দিন আগামী ১১ নভেম্বর, শুক্রবার সন্ধ্যা ৮টায় টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থস্থ ‘মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টার’ এ তাঁর ‘দ্য ইমেজ বুক’ চলচ্চিত্র নিয়ে আলোচনা করবেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সভাপতি ও চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করিম বাবুল।
চলচ্চিত্র শিল্পে গদারের অবদানকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করার জন্য টরন্টো ফিল্ম ফোরাম এই রেট্রোস্পেক্টিভ এর আয়োজন করেছে। গদারের উপর আলোচনা এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনী সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।