সাহিদুল আলম টুকু : গত ২৬শে মে, শুক্রবার সন্ধ্যায় টরন্টো ফিল্ম ফোরামের আয়োজনে টরন্টোর ৩০০০ ড্যানফোর্থ এভিনিউ’র ‘মাল্টিকালচারাল ফিল্ম স্ক্রীনিং সেন্টার’ এ অম্লান কুসুম ঘোষ নির্মিত কাহিনি চলচ্চিত্র ‘সন্ন্যাসী দেশনায়ক’ প্রদর্শিত হয়। ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম মহান স্থপতি সুভাস চন্দ্র বোস এর উপর নির্মিত চলচ্চিত্রটি টরন্টোর বিজ্ঞ সমাজ উপভোগ করেন এবং চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনীর শেষে নির্মাতা অ¤øান কুসুম ঘোষ এর সাথে এক আলোচনায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, ভারত উপমহাদেশের মানুষের কাছে নেতাজী নামে পরিচিত সুভাস চন্দ্র বোস তদানিন্তন বেঙ্গল প্রভিন্সের উড়িষ্যা ডিভিশনের কটকে ১৮৯৭ সালে জন্মগ্রহণ করেন। অসম্ভব মেধাবী সুভাস বোস তাঁর বাল্যকাল থেকেই দেশ প্রেমে মহীয়ান ছিলেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইংল্যান্ডের কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেন। ১৯২০ সালে অতি কৃতিত্বের সাথে লোভনীয় ও সম্মানজনক আইসিএস (ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস) পাশ করার পরও বৃটিশদের অধীনে চাকুরী করবেন না বলে তিনি চাকুরীতে যোগ না দিয়ে সরাসরি রাজনীতিতে যোগ দেন। তিনি ১৯৩৮ এবং ১৯৩৯ সালে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং কংগ্রেসের কয়েকজন নেতার সাথে মনোমালিন্যের ফলে কংগ্রেস দল ত্যাগ করে ভারতের স্বাধীনতার জন্য ১৯৩৯ সালে নিখিল ভারত ফরওয়ার্ড বøক গঠন করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম শুরু করেন। কথিত আছে ১৯৪৫ সালের ১৮ই আগস্ট তদানিন্তন জাপানের তাইওয়ানে এক বিমান দূর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয়।
তবে সুভাস বোসের মৃত্যু নিয়ে অনেক রহস্য রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, সেই দিন সেই বিমান দূর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু হয় নি, বরং ভারত স্বাধীন হওয়ার পর চার দশক পর্যন্ত তিনি একজন সন্ন্যাসীর বেশে বেঁচে ছিলেন। যারা নেতাজীকে নিয়ে এমন দাবি করেন, তাঁদের সংগ্রহে অনেক তথ্য উপাত্ত রয়েছে, যা প্রমাণ করে নেতাজী সুভাস বোস কোনক্রমেই বিমান দূর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন নি।
‘সন্ন্যাসী দেশনায়ক’ চলচ্চিত্রের পরিচালক চলচ্চিত্র শিক্ষক অ¤øান কুসুম ঘোঘ তিন দশকের অধিক সময় ধরে সুভাস বোস’কে নিয়ে গবেষণা করছেন এবং তিনি তাঁর গবেষণায় যে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছেন, তাতে প্রমাণ হয়, নেতাজী ভারত স্বাধীনের পর আরও অনেক বছর ভারতের মাটিতেই বেঁচে ছিলেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অ¤øান কুসুম ঘোষের এই সব গবেষণালব্ধ বিষয় নিয়ে নির্মিত হয়েছে ২ ঘন্টা ২৭ মিনিটের এই কাহিনি চলচ্চিত্রটি। মা ল²ী প্রসাদ ফিল্মস প্রডাকশনের ব্যানারে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে নেতাজীর ভ‚মিকায় অভিনয় করেছেন ভিক্টর ব্যানার্জী এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্বাশত চ্যাটার্জী। এই ছবির সম্পাদনা করেছেন অর্ঘিয়াকমল মিত্র এবং শব্দ ও সঙ্গীতে কাজ করেছেন যথাক্রমে অনুপ মুখোপাধ্যায় ও দেবজ্যোতি মিশ্র। আর ক্যামেরায় কাজ করেছেন দেবনাথ গাংগুলি ও আবসার আহমেদ।
‘সন্ন্যাসী দেশনায়ক’ অম্লান কুসুম ঘোষের প্রথম কাহিনি চলচ্চিত্র। এর পূর্বে তিনি নেতাজী মৃত্যু রহস্য নিয়ে নির্মাণ করেছেন ‘বø্যাক বক্স অব হিস্টরি’ নামে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র।
চলচ্চিত্রটির প্রদর্শনী শেষে উপস্থিত চলচ্চিত্র পরিচালকের সাথে প্রশ্নোত্তর পর্ব ও আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক এবং ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বর্তমান বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম মহাপরিচালক জামিল চৌধুরী, সাংবাদিক সুমন রহমান, সাংবাদিক শওগাত আলী সাগর, বাংলাদেশ টেলিভিশনের সাবেক সংবাদ পাঠিকা আসমা আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রাক্তন এজিএস নাসির উদ দুজা, কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পারভেজ চৌধুরী, উদীচীর সাধারণ সম্পাদক মিনারা বেগম, টরন্টো ফিল্ম ফোরামের কার্যনির্বাহী সদস্য শেখ শাহনওয়াজ, দেলোয়ার হোসেন দুলাল, অপু রোজারিও প্রমুখ।
চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ও অলোচনা অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টরন্টো ফিল্ম ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মনিস রফিক।