অনলাইন ডেস্ক : আগামী মার্চেই ঢাকা-টরন্টো রুটে ডানা মেলতে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। খবরে প্রকাশ, ইতিমধ্যে ড্রিমলাইনার নাইন দিয়ে সপ্তাহে তিনদিন টরেন্টোতে ফ্লাইট চালানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়ে আছে।
জানা গেছে, বর্তমানে কাতার, টার্কিশ, এমিরেটসসহ কয়েকটি এয়ারলাইন্সের ট্রানজিটের কারণ অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা সময় বেশি লাগে। কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, টরন্টো-টু-ঢাকা সরাসরি যাত্রা শুরু হলে বিমানের ফ্লাইট ১৪ ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।
সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোকাব্বির হোসেন সম্প্রতি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে এয়ার কানাডার সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করেছে বিমান। সেই প্রেক্ষিতে আগামী মার্চ থেকেই এই রুটে বিমান চালানোর কথা।
এখন প্রশ্ন উঠছে, বাস্তবে টরন্টো-ঢাকা ফ্লাইট কি আদৌ লাভজনক হবে? যেখানে বাংলাদেশ বিমানের নিউইয়র্ক, টোকিও ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে, সেখানে টরন্টোতে কিভাবে লাভজনক হবে! টরন্টোর চেয়ে নিউইয়র্কে দশ গুণ বেশি বাংলাদেশি অভিবাসী; অথচ তা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ বিমান টরন্টো-ঢাকা ফ্লাইট চালুর জন্য তিন বছর আগেও একবার দুই দেশের চুক্তি হয়েছিলো। কিন্তু এয়ার কানাডা বাগড়া দেওয়ায় সেই ‘চন্দ্রাভিজান প্রকল্প’ মুখ থুবড়ে পড়ে। পরে এয়ার কানাডার প্রস্তাব ছিলো, ঢাকার সঙ্গে দিল্লিকে যুক্ত টরন্টো-দিল্লি-ঢাকায় তাদের ফ্লাইট যাবে। কিন্তু তা বাস্তবায়ন হয়নি।
টরন্টো-ঢাকার পথে বিমান চালু হওয়ার ব্যাপারে অটোয়াস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার ড. খলিলুর রহমান বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত আমি যোগদানের অনেক আগেই চূড়ান্ত হয়েছে। কোভিড শেষ হলেই তা কার্যকরী হবে অর্থাৎ বিমান কানাডার আকাশে পাখা মেলবে।’
ধারাবাহিক ক্ষতিগ্রস্ত বাংলাদেশ বিমান এই পথে কতটা লাভবান হবে, এই প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, ‘যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা নিশ্চয় হিসাব-নিকাশ করেছেন। তবে চালু হয়ে লাভের অন্যান্য খাতগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। যেমন এই রোডের সাথে নিউইয়র্ক-লন্ডন যুক্ত করা যেতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, মালামাল আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে তা গুরুত্ব পাবে। বাংলাদেশি পণ্য নৌপথে অথবা বিমানের নানা জায়গায় ঘুরে ঘুরে ট্রানজিট হয়ে আসতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। এই পথ চালু হলে বিশ ঘণ্টার মধ্যে তাজা সবজি জাতীয় পণ্য দ্রুত চলে আসবে। যাত্রী বহনের পাশাপাশি পণ্য সামগ্রীর বিষয়টি যুক্ত হলে বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবে।
তিনি অন্য এক প্রশ্নের জবাবে জানান, এছাড়াও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গ্রিন সিগনাল তথা নির্দেশ মোতাবেক কোভিড শেষ হলেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হবে।
টরন্টোস্থ ড্যানফোর্থে অবস্থিত এয়ারলাইন্স এজেন্সি কানাডা এক্সপ্রেসের কর্ণধার মজিবুর রহমান দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে মনে করেন, টরন্টো-ঢাকা ফ্লাইট কোনোভাবেই লাভজনক হবে না। যেখানে জনবহুল প্রবাসীর শহর নিউইয়র্ক থেকে ঢাকা সার্ভিসসহ অন্যান্য রোডে বিমান লাভের মুখ দেখেনি। এখন তো আরও ভয়াবহ অবস্থা।
এদিকে করোনা মহামারির কারণে সারাবিশ্বের মতো এয়ার কানাডার যাত্রীর পরিমাণ ৯০ ভাগ হ্রাস পেয়েছে, আর্থিক ক্ষতি পূরণের জন্য আন্তর্জাতিক রোড এবং আভ্যন্তরীণ রোডে সকল এয়ার লাইন্স গত এক বছর ধরে সিংহভাগ ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এয়ার কানাডা ইতিমধ্যে এক হাজার ৭০০ কর্মী ছাটাই করছে, বৃটিশ এয়ার লাইন্সসহ সকল এয়ার লাইন্সের একই করুন অবস্থা!
এখানে আরও উল্লেখ্য, টরন্টোতে বাংলাদেশ বিমান ছিলো না কিন্তু ছিলো একটি চক্রের বিলাসবহুল অফিস এবং ‘রিজাভেশন এন্ড টিকেটিং’ পদের নিয়োজিত এক ব্যক্তি। শহরের ডাউন টাউনের ব্যয় বহুল এবং আভিজাত্য এলাকা ২০৮ ব্লোর স্ট্রিটের আট তলায় তিনকক্ষ বিশিষ্ট বিশাল অফিসের পেছনে ১৯৯৯ সালে থেকে টানা তেরো বছর তার বেতন ভাতা, অফিস ভাড়া, আনুষঙ্গিক খরচ মিলিয়ে মাসে মাসে অযথা সরকারকে গচ্চা দিতে হয়েছে হাজার হাজার ডলার। পরে দৈনিক ইত্তেফাকে অনুসন্ধানী রিপোর্টের পর ২০১৭ থেকে সেই অফিস বন্ধ হয়ে যায়।
বর্তমানে ১৮টি রুটে চলাচল করছে বিমানের ফ্লাইট। করোনার কারণে এখন অনেক সার্ভিস স্থগিত। টরন্টো, টোকিও, চেন্নাই, গুয়াংজু এইচারটি ফ্লাইট চালু হওয়ার বিষয় চূড়ান্ত; তাহলে তা দাঁড়াবে ২২টিতে। সূত্র : ইত্তেফাক