শওগাত আলী সাগর
টরন্টোয় এখন বাংলাদেশি অতিথিদের ভীড়। না, বাণিজ্যমন্ত্রী নেতৃত্বে সরকারি বেসরকারি পর্যায়ের যে ১৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল এখন টরন্টোয় রয়েছেন- তাদের কথা বলছি না। তাদের নিয়ে আসলে তেমন কিছু বলারও নাই। প্রভিন্সিয়াল একটি চেম্বারের সাথে যৌথভাবে আয়োজিত একদিনের একটি সেমিনারে বক্তৃতা করতে রাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে কেন কানাডা ছুটে আসতে হয়, এই সেমিনারে তাদের কি ভূমিকা সেগুলো নিয়ে আলোচনার সুযোগ আছে। এফবিসিসিআইর সভাপতিসহ এই ১৯ জন প্রতিনিধি কি কিংবা কতোটুকু ভূমিকা রেখেছেন- সেগুলো নিয়ে আলোচনার আগ্রহ আপাতত নাই।
বাণিজ্য বিষয়ক একটি সেমিনারে বক্তৃতা করা ছাড়া বাণিজ্যমন্ত্রীর আর কোনো প্রোগ্রাম ছিলো কী না, ফেডারেল সরকারের কোনো পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মন্ত্রীর দেখা সাক্ষাতের কোনো সুযোগ হয়েছে কী না, সেমিনারের বাইরে প্রভিন্সিয়াল সরকারের কোনো পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সাথে আমাদের বাণিজ্যমন্ত্রীর দেখা সাক্ষাতের সুযোগ হয়েছে কী না- এইসব তথ্য আমাদের হাইকমিশন কিংবা টরন্টোর কনসুলেট জেনারেল জানাননি। আমাদের নিজস্ব সূত্রে এই ধরনের কোনো কর্মসূচীর তথ্য পাওয়া যায়নি। ফলে বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৯ সদস্যের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের কানাডা সফরকে কারো কাছেই তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু মনে হচ্ছে না।
তার চেয়ে বরং আমাদের মনোযোগ কেড়েছে বাংলাদেশ থেকে আসা অভিভাবকদের, যারা তাদের সন্তানদের কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে রেখে যেতে এসেছেন। গত কয়েকদিনে নানা কারণে যে সংখ্যক অভিভাবকের সাথে কথা হয়েছে, তাতে ধারণা করা যায়- এই সংখ্যাটা একেবারেই কম না। সন্তানদের টরন্টোয় রেখে যেতে আসা অভিভাবকদের সাথে কথা বলে, কোনো কোনো শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে মনে হয়েছে- আলোচনার জন্য এটি বরং অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কানাডা তার অভিবাসন নীতিতে বিদেশি শিক্ষার্থীদের গুরুত্ব দিচ্ছে। কানাডীয়ান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্র্যাজুয়েশন করার পর একটি নির্দিষ্ট সময় কানাডায় অবস্থান করার পর এই শিক্ষার্থীরা কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ কানাডায় তাদের শিক্ষার্থীদের পাঠানোর জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ কর্মসূচীও নিচ্ছে। বাংলাদেশ সরকারিভাবে এ নিয়ে কোনো তৎপরতা চালাচ্ছে কী না- তা আমাদের জানা নেই।
কানাডীয়ানরা এতো বিদেশি শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসছে কেন? সন্দেহ নেই- কানাডার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে বিকশিত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থীরা নিজের খরচে কানাডায় থেকে পড়াশোনা করে নিজেদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলছে। তারপর তারা কানাডায় চাকরি নিয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনও করছে। এই পর্যায়ে এসে কানাডা তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দিচ্ছে। অর্থাত্ কানাডা অন্য দেশের অর্থে অন্য দেশের ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন পেশায় যোগ্য করে গড়ে তোলার পর তাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ দিয়ে তাদের রেখে দিচ্ছে। এতে কানাডা একদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে, অন্যদিকে বিনা খরচে পেশাদার, শিক্ষিত শ্রমশক্তি পাচ্ছে। কানাডা এই কাজটি করছে পরিকল্পনা করেই।
এর মধ্যে থেকেও অনেকে পড়াশোনা শেষে নিজ দেশে ফিরে যায়, যাবেও। ভারত তো বিশেষ প্রণোদনা নিয়ে অনেককে নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে। ভারত বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থী পাঠাতে যেমন দেনদরবার করে, আবার পড়াশোনা শেষে তাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতেও নানা প্রণোদনা দেয়। বাংলাদেশ কিন্তু দুটোর কোনোটাই করে না।