খুরশিদ শাম্মী: ঝলমল রৌদ্রোজ্জ্বল দিন। বাতাসের উষ্ণতা মিষ্টি ও সহনীয়। টরন্টোর বাংলাদেশি প্রবাসীদের প্রাণকেন্দ্র ড্যানফোর্থের খুব কাছাকাছি ডেন্টোনিয়া পার্কের এক চিলতে জমি লৌহ নির্মিত বেষ্টনী ঘেরা। ওই বেষ্টনীকে কেন্দ্র করে অর্গানাইজেশন ফর টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে মনুমেন্ট ইনক্ এর পরিচালকমণ্ডলী, স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ ও প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট টরন্টো সিটির কর্মকর্তাদের উপস্থিতি। সবার চোখে রাশি রাশি হাসি। বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ সেখানে উপস্থিত হন টরন্টোর মেয়র জন টরি স্বয়ং। উপলক্ষ্য, টরন্টোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মনুমেন্ট, অর্থাৎ শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য ভূমি খনন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সংগঠনের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক আজাদ। তিনি উপস্থিত অতিথিবৃন্দ, সংগঠনের পরিচালকমণ্ডলী ও সকল দাতাদের ধন্যবাদ জানান। শীঘ্রই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে তিনি সমগ্র বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে আবারও মিলিত হওয়ার আশা ব্যক্ত করে তাঁর বক্তব্য শেষ করেন।
মেয়র জন টরি তাঁর বক্তব্যে কানাডার বিচিত্রতার কথা বলেন। তিনি মনে করেন, মাতৃভাষার জন্য এক সময় কেবল বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশের জনগণকে লড়াই করতে হয়েছে; এখনও করতে হচ্ছে। মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে মনুমেন্ট এক প্রতীকী মাত্র। এই মনুমেন্টে এসে জনগণ বাহান্ন’র ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবে। তিনি বাংলা কমিউনিটি ও সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।
বিচেস ইস্ট-ইয়র্ক এর কাউন্সিলর ব্রাড ব্রাডফোর্ড বলেন, এটা এক বিশেষ মুহূর্ত আমাদের সকলের জন্য। আজ আমরা এখানে, কারণ আপনাদের সকলের গত এক বছরের নয়, এক দশকের ব্যয় করা সময়, শ্রম, মেধা ও প্রচেষ্টার ফল। তিনি সংগঠনের পরিচালকমণ্ডলীসহ এই প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন বিচেস ইস্ট-ইয়র্কের প্রাক্তন কাউন্সিলর জ্যানেট ডেভিসের প্রতি, যিনি শুরু থেকে সংগঠনকে সহযোগিতা করে এসেছিলেন।
বক্তব্য শেষে টরন্টো মেয়র জন টরি’র নেতৃত্বে ভূমি খনন (গ্রাউন্ড ব্রেকিং) করা হয়। এর মাধ্যমে টরন্টোর বাংলাদেশি প্রবাসীদের অনেক দিনের পালিত এক স্বপ্ন বাস্তবায়নের যাত্রা পেলো ভিন্ন এক মাত্রা। টরন্টোতে একটি স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের স্বপ্ন নিয়ে ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে অর্গানাইজেশন ফর ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাংগুয়েজ ডে মনুমেন্ট ইনক্। দীর্ঘ ছয় বছর তাদের অর্থ সংগ্রহ ও সিটির নিয়মানুযায়ী ধাপে ধাপে সকল কার্য শেষে ডেন্টোনিয়া পার্কে নির্ধারিত স্থানে ভূমি খননের মাধ্যমে শুরু হয় স্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ। এই পর্বে মেয়রের সঙ্গে ছিলেন, সংগঠনের চেয়ারপার্সন ব্যারিস্টার চয়নিকা দত্ত, কাউন্সিলর ব্রাড ব্রাডফোর্ড, অন্টারিও প্রদেশের সংসদ সদস্য ডলি বেগম, রীমা বার্নস-ম্যাকগোয়ন, কানাডার কেন্দ্রিয় সংসদ সদস্য নাথানিয়েল আর্সকিন-স্মিথ এবং সংগঠনের পরিচালকমণ্ডলী।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সাংবাদিকবৃন্দ, সিটির নির্মাণ প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীগণ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক রিজওয়ান রহমান। বিশ্বব্যাপী মহামারীর কারণে সিটি কর্মকর্তাদের অনুরোধে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান খুব সীমিত মানুষের উপস্থিতিতে করতে বাধ্য হয় কমিটি।