হাসান আমিন : তহবিলের অচলাবস্থার মধ্যেই টরন্টোর রাস্তায় নিরুপায় ও অসহায় অবস্থায় পতিত আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয়ণ সংকট এড়াতে একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য চাপ দিচ্ছে কমিউনিটি গ্রুপগুলো। কেউ কেউ আবার যেখানে আবাসন ও অন্যান্য সুবিধা রয়েছে সেখানে শরনার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার কথাও বলছে।

সিটি অব টরন্টো আশ্রয়ণ সক্ষমতা বাড়াচ্ছে ও অন্তত ৩০০ শরনার্থী টরন্টোর দুটি চার্চে যাত্রী যাপন করছেন। এই অবস্থায় শরনার্থীদের জন্য স্বেচ্ছাসেবীর প্রয়োজনীয়তা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, যাতে করে তাদের শরনার্থী স্ট্যাটাসের জন্য তারা সহায়তা করতে পারেন। সেই সঙ্গে তাদের আয়েও সহায়তা করতে পারেন।

নাইজেরিয়ান কানাডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের ওকি ইঘোবর বলেন, আফ্রিকান কমিউনিটির মধ্যকার প্রবাসী, সামাজিক কর্মী, নার্স, চিকিৎসক এবং বিশেষ করে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আপনাদের সাহায্য আমাদের এই মুহূর্তে খুব দরকার। কমিউনিটির জন্য অনেক কিছু করতে হবে। এখন আমরা যা করছি তা সাময়িক পদক্ষেপ এবং এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই আমরা।

আশ্রয়প্রার্থীদের অন্যতম ৪১ বছর বয়সী রনি লুগোনজা। সমকামিতাকে অবৈধ ঘোষণা করে এ বছর আইন পাসের পর উগান্ডা থেকে পালিয়ে আসতে হয়েছে তাকে। আইনে সমকামিতার শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়েছে।
সিটিভি নিউজ টরন্টোকে তিনি বলেন, আপনাকে সেখঅনে ধরা পড়লে জেলে যেতে হবে। এর ফলে শাস্তিও হতে পারে। আমাদেরকে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসতে হয়েছে।

গত ৬ জুলাই তিনি কানাডায় আসেন এবং রাস্তায় রাত কাটাতে হচ্ছে তাকে। তিনি বলেন, তবে চার্চে একটি খাট পাওয়ায় তার চেয়ে এটা ভালো। তার টরন্টোতে আসার কারণ এটা ভালো শহর। তবে চাকরির জন্য কানাডার যেকোনো স্থানে যেতে তিনি প্রস্তুত। সমগ্র কানাডাকেই আমি মুক্ত দেশ মনে করি।

আরেকটি ফেডারেল কর্মসূচির আওতায় কুইবেকের রক্সহ্যাম রোডের একদল শরনার্থীকে একটি হোটেলে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তাদেরকে আশ্রয় দেওয়ার সক্ষমতা নেই বলে সরকারের তরফ থেকে জানানোর পর তাদের জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ফেডারেল সরকারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আশ্রয়প্রার্থীদের বর্তমানে কুইবেকের ১০টি হোটেলের ৭৫১টি কক্ষে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্টারিওতে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে ১৭টি হোটেলের ২ হাজার ৭৩৭টি কক্ষে। এই শরনার্থীদের সিংহভাগ নাইজেরিয়ার। শরনার্থীদের আটলান্টিক প্রদেশে স্থানান্তর শুরু হয় ১৮ ফ্রেবুয়ারি। এখন পর্যন্ত সেখানে ৪৮১ জন আশ্রয়প্রার্থীকে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে হ্যালিফ্যাক্সে গেছেন ১৬৩ জন, ফেডেরিক্টনে ৭৯ জন, মঙ্কটনে ১৩৪ জন এবং সেন্ট জোন্সে ১০৫ জন।

“যদিও আশ্রয়প্রার্থীদের এই অনিয়মিত আগমন ২৫ মার্চ, ২০২৩ থেকে হালনাগাদ করা ”সেইফ থার্ড কান্ট্রি এগ্রিমেন্ট” বাস্তবায়নের সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এর আগে আগমনের উচ্চ হার কুইবেকে সর্বজনীনভাবে অর্থায়ন করা পরিষেবা এবং বাসস্থানের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল।

এই চাপ কমাতে সাহায্য করার জন্য আইআরসিসি অন্যান্য প্রদেশ এবং পৌরসভার সাথে কাজ করেছে নতুন গন্তব্য চিহ্নিত করার জন্য যেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের থাকার সক্ষমতা আছে। এ ছাড়া কানাজুড়ে আশ্রয়ের দাবিদারদের একটি ভারসাম্য বজায় রাখাও পরিকল্পনায় রয়েছে। কারণ এককভাবে কোন প্রদেশ এত বৃহৎ সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থীদের ভার বহনে সক্ষম নয়।

অভিবাসন ও শরণার্থী বোর্ডের পরিসংখ্যান অনুসারে, মন্ট্রিলে ৩৪ হাজার ৪৪৭ জন শরণার্থীর তালিকা করা হয়েছে। এটি টরন্টোতে ১৭ হাজার ৩১৭, মেট্রো ভ্যাঙ্কুভারে প্রায় ৩ হাজার ৬৩৯ এবং অন্যান্য স্থানে এর সংখ্যা অনেক তুলনামূলক কম – উদাহরণস্বরূপ, হ্যালিফ্যাক্সে মাত্র ২৫২ জন আছে।
গত মাসে ফেডারেল সরকার অন্তবর্তীকালীন আবাসন সহায়তা কর্মসূচির এক বছরের বর্ধিতকরণ উদ্বাস্তু সহায়তার জন্য ২১২ মিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যার মধ্যে ৯৭ মিলিয়ন টরন্টোর জন্য নির্ধারিত হয়েছে।
“উত্তর টরন্টোর বিভিন্ন চার্চে অস্থায়ী আশ্রয় দেওয়া শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জরুরী বাসস্থান সুরক্ষিত করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে টরন্টো শহর।

আফ্রিকান কানাডিয়ান সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের কাবু আসান্তে বলেছেন, তিনি একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের আশা করছেন যা কানাডায় প্রবেশ করার সাথে সাথে যারা উদ্বাস্তু মর্যাদা দাবি করে তাদের জন্য কিছু নিরাপত্তা প্রদান করতে পারে। দেশের বিভিন্ন অংশে লোকেদের নিয়ে যাওয়া সেই সমাধানের অংশ হতে পারে, তিনি বলেছিলেন। প্রতিটি সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে বের করার জন্য শহরের সাথে কাজ করার জন্য তিনি প্রস্তুত বলেও জানান। সূত্র : সিটিভি নিউজ