মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, টরন্টো, কানাডা : ১০ই এপ্রিল, ২০২২। মাহে রমজানের নবম দিন। টরন্টোসহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি শহরে বসবাসরত চট্টগ্রামবাসীদের হৃদয়ে এই দিনটি বিশেষভাবে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কেননা, তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির ব্যবধান অবশেষে কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে বৈ কি। কানাডায় বসবাসরত হাজারো চট্টলাবাসীর দীর্ঘদিনের চাহিদার প্রতি সম্মান রেখে, মূল চট্টগ্রাম সমিতির অবয়বে, চট্টগ্রাম সমিতি ঢাকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের চট্টগ্রাম সমিতির মন-মনন -মানসিকতা আর কার্যক্রমের সাথে সঙ্গতি রেখে নতুন আঙ্গিকে-নব উদ্যোমে -নতুন চিন্তাচেতনায়- ধর্মীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে শুরু হয় চট্টগ্রাম সমিতি কানাডা ইনকের নতুন পদযাত্রা। ওই দিন ইফতার মাহ্ফিলে উপচে পড়া মানুষের ঢল থেকে বুঝার আর কিছুই বাকি রইলডি- কানাডার চট্টগ্রামবাসীরা এই দিনটির জন্যেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন। তাদের সৌম্য শান্ত পরিতৃপ্তির হাসিমাখা প্রশান্তিময় মুখাবয়ব দেখে মনে হচ্ছে যেন দীর্ঘ বছরের জমে থাকা ক্ষোভ- অস্বস্তি আর অপ্রাপ্তির হাহাকারে তপ্ত হৃদয়ের যেন এক পশলা শান্তির বারিধারা প্রবাহিত হয়ে গেল। সন্ধ্যার অনেক আগ থেকেই সভাস্থল ডানফোর্থস্থ রয়েল কানাডিয়ান লিজিয়ন হল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। মনে হচ্ছিলো কানাডার বুকে যেন একখন্ড চট্টগ্রাম।

সন্ধ্যা ৭টায় অনুষ্ঠান শুরু হয় পবিত্র আল-কোরআন থেকে তেলাওয়াত মধ্য দিয়ে। তেলাওয়াত করেন ইমাম বাহাইকি। সংক্ষিপ্ত আলোচনা এবং ইফতার ও দোয়া মাহফিল এই দুই পর্বে সাজানো ছিল অনুষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন তানভি হক। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া ।

প্রাদেশিক সংসদ সদস্য শ্রদ্ধেয়া ডলি বেগম আমাদের সাথে উপস্থিত থেকে আমাদেরকে ধন্য করেছেন। সেই সাথে আরো উপস্থিত ছিলেন কম্যুনিটির অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। তারা হলেন: সর্বজন শ্রদ্ধেয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. শেখ মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন, বিশিষ্ঠ নাট্যব্যাক্তিত্ব বাংলাদেশ থিয়েটার টরোন্টোর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাবিবুল্লাহ দুলাল, বিশিষ্ঠ নাট্যকার, অভিনেতা, চাকসুর সাবেক জিএস আজিম উদ্দিন আহমেদ, চাকসুর সাবেক সহ-আপ্যায়ন সম্পাদক শফিউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন ছাত্র নেতা, বিশিষ্ঠ সংগঠক নাজমুল মুন্সি, নাট্য নির্দেশক আহমদ হোসেন, ঘজই ঞঠ এর চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ফোরামের সভাপতি আব্দুল হালিম, সাপ্তাহিক বাংলা কাগজের সম্পাদক এম আর জাহাঙ্গীর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সাবেক শিক্ষক ড. আজিজুর রহমান, কেমিস্ট ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ কামাল উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষক, বর্তমানে সেন্টেনিয়াল কলেজের শিক্ষক সোহেল চৌধুরী, ফেয়ারট্যাক্স একাউন্টিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শাহবুদ্দিন, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আনোয়ারুল কবির, কানাডা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি আমিন মিয়া, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন কানাডার সভাপতি ড. হুমায়ুন কবির, অন্টারিও আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মাসুদ আলী, কানাডা মহিলা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী হাসিনা আক্তার জানু, বেঙ্গলী কালচারাল এসোসিয়েশনের সভানেত্রী ফারহানা পল্লব সহ আরও অনেকেই।

আলোচনায় অংশ গ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: জয়নাল আবেদীন, বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব হাবিব উল্লাহ দুলাল, টরোন্টো ডিসট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের শিক্ষক সৈয়দ মো: ফখরুদ্দিন, কানাডা আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুর রহমান প্রিন্স, সমিতির যুগ্ম-আহবায়ক ও বিশিষ্ঠ ব্যবসায়ী মো: হাসান, যুগ্ম-আহবায়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম, যুগ্ম-সদস্য সচিব Peel Region Board of Education এর শিক্ষক হাসান তারেক চৌধুরী, সদস্য মানস রক্ষিত ও শেখ জসিম উদ্দিন। বক্তাদের বক্তব্যে সমিতির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও কার্যক্রম ফুটে উঠে। চট্টগ্রাম সমিতির আগামীতে আরও বৃহত্তর পরিসরের বিভিন্ন আয়োজনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন সমিতির নেতৃবৃন্দ।

দ্বিতীয় পর্বে ছিল দোআ ও মিলাদ। পরিচালনা করেন বিশিষ্ঠ ইসলামী চিন্তাবিদ ইমাম বাহাইকি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ইফতার বক্স সকলের কাছে পৌছিয়ে দেয়া হয়। ইফতার পর্ব শেষে সকলে নৈশভোজে অংশ গ্রহণ করেন। পোলাও, বিফকারী, মিক্সড ভেজিটেবল, সালাদ ও চিকেন বিরিয়ানির সমন্বয়ে সুস্বাদু নৈশভোজ সকলে পরিতৃপ্তির সহিত উপভোগ করেন।
ইফতার ও নৈশভোজ পরিবেশনে ছিলেন প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম, মো: হাসান, আহসান উল করিম লাভু, সুমন কায়সার, শেখ জসিম উদ্দিন, হাসান তারেক, মো: এরশাদ, মো: মাকসুদ, নাইমা ফেরদৌসি। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন মাহবুবুল চৌধুরী সাইফুল, নাসিমা আকতার ইলিয়াস, শাহজাদী চৌধুরী। এক ঝাঁক দক্ষ, নিবেদিতপ্রাণ ও আন্তরিক কর্মীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিন-শতাধিক অতিথির ইফতারসহ নৈশ ভোজের এই সফল আয়োজনের ধারাবাহিকতা আগামীতেও চলমান রাখবে চট্টগ্রাম সমিতি কানাডা ইনক।