অনলাইন ডেস্ক : ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে শ্রীলঙ্কা। তীব্র অর্থনৈতিক সংকটে দেশটির রাজনীতি থেকে শুরু করে মানুষের দৈনন্দিন জীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত। এরইমধ্যে জ্বালানি সংকটে দেশের সকল স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কান কর্তৃপক্ষ।

একইসঙ্গে সরকারি কর্মকর্তাদেরও অফিসে না আসার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২০ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এপি ও ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তীব্র জ্বালানি ঘাটতি ও পরিবহন সুবিধার সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি কর্মকর্তাদের শুক্রবার অফিসে আসতে বারণ করেছে শ্রীলঙ্কার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এর পরিবর্তে তাদেরকে বাড়িতে থেকেই কাজ চালাতে (ওয়ার্ক ফ্রম হোম) বলা হয়েছে। অবশ্য অত্যাবশ্যকীয় পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের এই আদেশের বাইরে রাখা হয়েছে।

এপি বলছে, জ্বালানির ক্রমবর্ধমান ঘাটতির কারণে শ্রীলঙ্কার প্রাদেশিক ও সরকার অনুমোদিত স্কুলগুলোও শুক্রবার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সংকট এতোটাই বেড়েছে যে, হাজার হাজার মানুষ একসঙ্গে সারা দেশে জ্বালানি স্টেশনগুলোতে সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছেন।

শ্রীলঙ্কা এখন প্রায় পেট্রলবিহীন অবস্থায় রয়েছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটি অন্যান্য জ্বালানিরও তীব্র ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহ করতে না পারায় কর্তৃপক্ষ সারাদেশে দিনে চার ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ বন্ধ ঘোষণা করেছে।

ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটি দেউলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে থাকায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে জ্বালানি, গ্যাস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের আমদানির অর্থ পেতে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে অর্থনৈতিক ও জ্বালানি সংকটের মধ্যেই দেশজুড়ে বিরোধীদের প্রতিবাদ ও অস্থিরতা চলছে। বিক্ষোভকারীরা গ্যাস ও জ্বালানির দাবিতে প্রধান সড়ক অবরোধ করেছে।

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় আরও ৯ জন নতুন মন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। নতুন নিয়োগ পাওয়া নয় জন মন্ত্রীই শুক্রবার শপথ নিয়েছেন। এতে করে আগের মন্ত্রিসভার পদত্যাগের পর সরকারকে স্থিতিশীল করার চেষ্টার অংশ হিসেবে নিয়োগ করা নতুন মন্ত্রীদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে।

এপি বলছে, নতুন মন্ত্রীদের মধ্যে চারজন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য, তিনজন ক্ষমতাসীন দলের এবং বাকি দুইজন প্রধান বিরোধী দলের সদস্য। এর আগে গত সপ্তাহে ক্ষমতাসীন দলের চারজন সংসদ সদস্যকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে শ্রীলঙ্কা। এরপর থেকে তামিল সংকটসহ বহু সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার এই দ্বীপরাষ্ট্রটিকে। বর্তমানে আর্থিক সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে দেশটিতে। এই সংকট থেকে আদৌ পুনরুদ্ধার করা সম্ভব কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বিশেষজ্ঞরা।

এই পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে-সহ গোটা রাজাপাকসে পরিবারকে দায়ী করছে লংকানরা। দীর্ঘদিন ধরেই প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে। দল, মত, সম্প্রদায় নির্বিশেষে শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা একজোট হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। চলছে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ।

অন্যদিকে, বৈদেশিক মুদ্রার অভাবের কারণে শ্রীলঙ্কায় এই সংকট দেখা দিয়েছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। কারণ নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা কম হওয়ায় এই দ্বীপরাষ্ট্রকে অধিকাংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

এজন্য প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন। অথচ রাজকোষ ফাঁকা! ফলে পণ্যের সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমেছে। এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে জিনিসপত্রের দাম। সঙ্গে যোগ হয়েছে তীব্র জ্বালানি সংকটও। আর তাই চলমান এই সংকটে খুব একটা আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না অর্থনীতিবিদরাও।