সোনা কান্তি বড়ুয়া : মানবতার কল্যাণে নিবেদিত জাতিসংঘ এবং সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল আমার ভাষনে অভিজ্ঞতা, দীর্ঘ অনুশীলন ও পর্যবেক্ষণের ফল এ জাতিসংঘ! জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান গড়ে তোলার নাম জাতিসংঘ! জাতিসংঘের সদর দপ্তর নিউইয়র্কে হলেও জাতিসংঘের বেশ কিছু অঙ্গ সংগঠনের প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের জেনেভা, নেদারল্যান্ডসের হেগ, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা, কানাডার মন্ট্রিয়ল, ডেনমার্কের কোপেনহেগেন, ESCAP, BANGKOK, THAILAND জার্মানীর বন ও অন্যত্র অবস্থিত।

২০১০ সালে ৩ JUNE সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জাতিসংঘ সম্মেলনে আমার ভাষনের বিষয় বস্তু ছিল : “ভারতে মানবাধিকার প্রসংগ!” জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের নাম মানবাধিকার! মানবতার কল্যাণে নিবেদিত “ভারতে ধর্মের শ্রেষ্ঠত্বের কথা, বাণী, উপদেশ ইত্যাদি যে রয়েছে, সেগুলি কেবল পুস্তকের মধ্যে এবং কথার মধ্যেই সীমিত। উদার বিশ্ব ভ্রাতৃত্ব অস¤প্রদায়িক ভাবনা, অস¤প্রদায়িক চেতনাকে ব্রাহ্মণগণ সা¤প্রদায়িক ধর্ম বানিয়ে অঞ্চলের গরীর মানুষদেরকে হিন্দুধর্মের অপব্যবহার করে দলিত বা চন্ডাল বানিয়ে তাদেরকে পদে পদে অপমানিত করেন।

ভারতে দলিত সমাজ নিয়ে বর্ণবিদ্বেষ কেন? ব্রাহ্মণগণ বিদেশী তুর্কী বা গ্রীকদের সাথে সসন্মানে কথা বলেন, কিন্তু একই অঞ্চলের গরীর মানুষদেরকে হিন্দুধর্মের অপব্যবহার করে দলিত বা চন্ডাল বানিয়ে তাদেরকে পদে পদে অপমানিত করেন। দলিত সমাজ নিয়ে এতো হাঙ্গামা কীসের? মানবতাকে বাদ দিয়ে জাত ও ধর্ম দিয়ে তো আজ আর মানুষের মগজ ধোলাই করা যায় না। “শাসনে যতই ঘেরো, আছে বল দূর্বলেরো!” ‘সুবিধা বঞ্চিত নকশাল দলিত ও মানুষ! ভারতে সংস্কৃতির মূল কথা হলো বিশ্বমানবতা, অসা¤প্রদায়িকতা ও স¤প্রীতি। ধর্মের নামে পৃথিবীতে হাজার হাজার বছর হতে নারীদেরকে শোষণ করা হয়েছে, দাসত্বের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা হয়েছে এবং অর্থ, শিক্ষা, সম্পত্তি সবকিছু হতে বঞ্চিত করা হয়েছে। তেমনিভাবে ধর্মগুরুরা নারী-পুরুষের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি করেছেন, উঁচু-নীচু, সাদা-কালো ইত্যাদির মাধ্যমে বৈষম্য করেছেন। যত অন্যায়-অনাচার সবই তাঁরা বৈধ করেছেন!

ইশ্বর বলতে কিছুই নেই,ধর্ম হল লুঠেরাদের ধান্ধা সবকিছু মানুষের কল্পনা, সুতরাং কাল্পনিক ইশ্বরের পিছনে সময় নষ্ট করো না, তুমি নিজেই নিজের মুক্তিদাতা ও ত্রাণকর্তা। প্রকৃতি সবসময় তার নিজ ধর্মতায় চলে এতে কারোর হাত নেই, শোনা কথায় বিশ্বাস করোনা, বিভিন্ন গ্রন্থে লেখা আছে বলে বিশ্বাস করো না, পূর্বপুরুষগণের দ্বারা প্রচলিত বলে বিশ্বাস করো না, লোকসমাজে প্রচলিত বলেই বিশ্বাস করো না, আবেগের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই বিশ্বাস করো না, এটা সত্যি হতে পারে মনে হয়, এমন ভেবে ও বিশ্বাস করো না, তোমার বিবেক আছে, জ্ঞান-প্রজ্ঞা আছে, নিজেই সবকিছু বিচার-বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নাও। সর্বদা সৎ কর্ম করে যাও, সকল প্রাণীকে মৈত্রী দাও ভালোবাসো। / সা¤প্রদায়িকতার বিষবাষ্প যখন সারা উপমহাদেশকেই ক্রমশ গ্রাস করে চলেছে।

বাঙালি সংস্কৃতির মূল কথা হলো বিশ্বমানবতা, অসা¤প্রদায়িকতা ও স¤প্রীতি। ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী ভুসুকু আজ আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হলেন” থেকে ঐতিহাসিক’ শব্দের অভ‚তপূর্ব সংযোজন হয়েছিল। স¤প্রতি টরন্টোর বাংলাদেশী সাপ্তাহিক আজকাল (১১ আগষ্ট, ২০০৯) পত্রিকার ৩০ পৃষ্ঠায় ইংরেজি সংবাদে আমরা পড়েছি, বৌদ্ধধর্ম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মের পুরস্কার লাভ করেছেন।” এবং আগামীর বাংলাদেশ হবে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত একটি দেশ। জনষব মহসিনুল হক: (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ, চাঁদপুর, SAMAKAL, 13 NOVEMBER 2023), লিখেছেন, “আমরা চাই বাংলাদেশের তরুণদের একদিকে থাকবে বিশ্বাস, আরেকদিকে থাকবে যুক্তি ও বিবেক। ধর্মের জিগির তুলে মুক্তচিন্তা বা বিশ্বাসকে ভুল পথে প্রবাহিত করে স্বার্থোদ্ধারে দেশ-জাতির জন্য ক্ষতিকর কাজে তাদের কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। ধর্ম হবে এক আলোকবর্তিকা। সমাজে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানুষকে উজ্জীবিত করে তোলার মূলমন্ত্র হবে এই ধর্ম। সবার ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক জীবন হবে নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সংস্কার ও আদর্শ দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত। সেখানে কেউ কারও বিশ্বাসের প্রতি অবজ্ঞা হেতু কুৎসিত আক্রমণ করবে না।

এই প্রজন্ম স্বপ্ন দেখে, আগামীর বাংলাদেশ হবে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত একটি দেশ। এই বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিকের মধ্যে থাকবে গভীর দেশপ্রেম। তারা হবে এই দেশ ও জাতির সম্পদের রক্ষক, সৎ ও আদর্শ নাগরিক। সেই বাংলাদেশে শুধু শাস্তির ভয়ে নয়, বরং আত্মার তাগিদেই মানুষ যাবতীয় অপরাধ থেকে নিবৃত্ত থাকবে। প্রতিটি জীবন ও সম্পদের থাকবে পূর্ণ নিরাপত্তা। এ দেশে নারীকে কেউ কখনও অসম্মান করার কথা কল্পনাতেও ভাববে না। স্কুলফেরত ছোট্ট শিশুটি সড়ক কিংবা ফুটপাত ধরে নিশ্চিন্তে পথ হেঁটে পৌঁছে যাবে নিজ বাড়িতে।

ভারতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উগ্র সা¤প্রদায়িকতাকে প্রত্যাখ্যান করছেন, এই কথায় আশাবাদী হওয়া যায়, যদিও আশাবাদের সীমা নিয়ে উদ্বেগ থাকেই। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ উদারবাদী ধর্মনিরপেক্ষতার গুরুত্ব অনুধাবন করে সহিষ্ণুতার পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করছেন, এ কথা ভাবলে নিশ্চয়ই ভাল লাগে, কিন্তু বাস্তব কতখানি ভাল লাগার মতো, তা নিয়ে সংশয় আছে। তবে অনুমান করা চলে, দেশের মানুষ বুঝেছেন যে, খালি পেটে ধর্ম হয় না— বেঁচে থাকতে হলে ধর্মের আগে অন্ন প্রয়োজন। আশা করা যায়, মানুষ এও ধরে ফেলেছেন যে, অন্নসংস্থানে ব্যর্থতাকে ঢাকার জন্যই এত সা¤প্রদায়িক আস্ফালন। এর পরেও কে কোন দিকে যাবেন, তা এক বিরাট কৌতূহলের বিষয়, হয়তো আগামী দিনের গবেষণারও বিষয়। ইতিহাস বলে, দীর্ঘ দিন ধরে মানুষকে বোকা বানানো চলে না। ভারতের মাটিতে এই কথাটি যে বিভেদ-মাতোয়ারা নেতাদেরও স্মরণ করিয়ে দেওয়া গেল, তার জন্য কৃতিত্বটি সাধারণ মানুষেরই। সা¤প্রদায়িকতার কারবারির যে দেশশাসনের অধিকার থাকে না, বাইশ বছর সা¤প্রদায়িক কার্যক্রমে নিযুক্ত থাকার পর ও দশ বছর বিভেদপন্থী প্রধানমন্ত্রী থাকার পরেও নরেন্দ্র মোদীকে দিয়ে এই কথা বলিয়ে দিতে পারলেন— ভারতীয় নাগরিক।

সবাই কে জানান। বিশ্বের ৫৭ টি মুসলিম দেশের মিলিত সর্বমোট জিডিপি দুই ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার। যেখানে আমেরিকা একাই ২১ ট্রিলিয়ন, চায়না ৯ ট্রিলিয়ন, জাপান ৭ ট্রিলিয়ন, জার্মানি ২.৪ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার (purchasing power parity basis)। প্রায় অর্ধেক আরব মহিলা অক্ষরজ্ঞানহীন। ৫৭টি মুসলিম দেশের ১৬০ কোটি জনগণের জন্য ৬০০টিরও কম বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যেখানে ভারতে আছে ৮৪০৭টি এবং আমেরিকায় ৫৭৫৮টি।

১৬০ কোটি মুসলমান জনগোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র ১৫ জন মুসলমান নোবেল বিজয়ীর তালিকায় (২০২৩ সাল পর্যন্ত) স্থান পেয়েছেন। এই পনেরো জনের ১০ জনই পেয়েছেন নোবেল পুরষ্কারের সবচেয়ে বেশী বিতর্কিত বিষয়Ñ শান্তিতে। মাত্র তিনজন বিজ্ঞানে। ১৯৭৯ সালে পদার্থ বিজ্ঞানে প্রফেসার আবদুস সালাম (যাকে তাঁর দেশ পাকিস্তানে মুসলমান বলেই স্বীকার করা হয় না) এবং ১৯৯৯ সালে রসায়নে আহমেদ জেওয়াল এই দুজনই আবার গবেষণা চালিয়েছেন অমুসলিম দেশে। অন্যদিকে, এক কোটি ৪০ লাখ ইহুদী জনগোষ্ঠীর প্রায় ২০০ জনের কাছাকাছি মানুষ নোবেল বিজয়ী। অর্থাৎ বিশ্বের এক-চতুর্থাংশ জনগোষ্ঠীর (মুসলমান) আহরণ মোট নোবেলের মাত্র এক শতাংশ। আর ইহুদীরা বিশ্বজনগোষ্ঠীর মাত্র ০.২৩ শতাংশ; কিন্তু তারা মোট নোবেলের ২২ শতাংশের অধিকারী।

মুসলমান জনগোষ্ঠীর গড়ে প্রতি ১০ লাখে ২৩০ জন বিজ্ঞানী। যেখানে আমেরিকায় প্রতি ১০ লাখে ৪,০০০, জাপানে প্রতি ১০ লাখে ৫,০০০ জন। মুসলমান জনগোষ্ঠীর গড় শিক্ষিতের হার ৪০ শতাংশ। যেখানে খ্রিস্টান জনগোষ্ঠীর গড় শিক্ষিতের হার ৯০ শতাংশ। সংক্ষেপে, মুসলিম জনগোষ্ঠী আজ জ্ঞান-বিজ্ঞান-শিক্ষা-অর্থনীতিসহ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বে সর্বনিম্ন।

যে সমস্ত মুসলমান ভাই তাদের অনুন্নত জন্ম-ভ‚মি ছেড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত কাফেরের দেশে ভাগ্য উন্নয়নে পাড়ি দিয়েছেন, তাদের পরিমান মোট বিশ্ব-মুসলিম জনসংখ্যার প্রায় তিন শতাংশ (৫ কোটি); এ ছাড়াও মোট মুসলিম জনসংখ্যার ২৩.৩ শতাংশেরও বেশী মুসলমানদের নিবাস উন্নয়নশীল অমুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে। অর্থাৎ মোট মুসলিম জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি বসবাস করছেন এবং বেড়ে উঠছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ অমুসলিম দেশগুলোর নাগরিকদের সাথে একই কাতারে; একই পানি-হাওয়া-বাতাস ও সরকারী সুযোগ সুবিধা নিয়ে। তথাপি, বিশ্ব জনগোষ্ঠীর এক-চতুর্থাংশ প্রতিনিধিত্বকারীর পক্ষ থেকে যখন একটি আবিষ্কারও বর্তমান বিশ্বের আপামর জনসাধারণের উপকারার্থে দেখা যায় না, তখন বুঝতে অসুবিধা হয় না যে এই স¤প্রদায়ের চিন্তা-চেতনা-ভাবাদর্শে একটি মৌলিক গলদ আছে! কী সে গলদ?
মুসলিম স¤প্রদায়ের সাথে বিশ্বের অন্যান্য স¤প্রদায়ের একটি মৌলিক ও সাধারণ পার্থক্য হলো – ধর্ম। একজন মুসলমানের মেধার সাথে একজন অমুসলমানের মেধার তেমন কোন পার্থক্য না থাকলেও তাদের চিন্তা-ভাবনা-চেতনা-মন-মানসিকতার পার্থক্য অনেক! সুতরাং আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, মুহাম্মদের বাণী (কুরান-হাদিস) ও শিক্ষা গত ১৪০০ বছর ধরে শুধু অবিশ্বাসীদেরই নয় (১৭:৮২); বিশ্বাসী-অবিশ্বাসী নির্বিশেষে পৃথিবীর সকল মানুষেরই শুধু ক্ষতিই বৃদ্ধি করে চলেছে! (মুতাসিম ফুয়াদ)!

পাকিস্তান বৌদ্ধ দেশ ছিল এখন মুসলিম দেশ!
২. আফগানিস্তান ছিল বৌদ্ধ দেশ এখন মুসলিম দেশ।
৩. কাজাখস্তান ছিল বৌদ্ধ দেশ এখন মুসলিম দেশ।
৪. উজবেকিস্তান ছিল বৌদ্ধ দেশ এখন মুসলিম দেশ।
৫. তাজিকিস্তান ছিল বৌদ্ধ দেশ এখন মুসলিম দেশ।
৬. আজারবাইজান বৌদ্ধ দেশ ছিল এখন মুসলিম দেশ।
৭. মালদ্বীপ বৌদ্ধ দেশ ছিল এখন মুসলিম দেশ।
৮. বাংলাদেশ ছিল বৌদ্ধ দেশ এখন মুসলিম দেশ,অবশিষ্ট বিলুপ্তি সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
৯. মালয়েশিয়া বৌদ্ধ দেশ ছিল এখন মুসলিম দেশ।
১০. ইন্দোনেশিয়া বৌদ্ধ দেশ ছিল এখন মুসলিম দেশ।
১১. খোটান বৌদ্ধ দেশ ছিল এখন মুসলিম দেশ।
১২. তুর্কমেনিস্তান বৌদ্ধ দেশ ছিল এখন মুসলিম দেশ।
১৩. কিরগিস্তান ছিল বৌদ্ধ দেশ এখন মুসলিম দেশ।
১৪. ইরান প্রদেশ ছিল বৌদ্ধ দেশ এখন মুসলিম দেশ।
১৫. বেলুচিস্তান প্রদেশ ছিল বৌদ্ধ দেশ এখন মুসলিম দেশ। হলো কেন?

ভারতের সুবিধাবঞ্চিত নর নারী মানুষদের আন্দোলনের নাম নকশাল কমিউনিস্ট আন্দোলন এবং দলিত সমাজ নিয়ে আন্দোলন! নকশাল আন্দোলন একটি কমিউনিস্ট আন্দোলনের নাম। বিংশ শতাব্দীর সপ্তম দশকে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি থেকে শুরু হয়ে এটি ধীরে ধীরে ছত্তীসগঢ? (তদানীন্তন মধ্যপ্রদেশ) এবং অন্ধ্র প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে এটি একটি সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। ভারতের সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা “রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং” (“র”) এর হিসেব অনুযায়ী প্রায় ২০, ০০০ মাওবাদী সক্রিয় ভাবে এ কার্যক্রমে যুক্ত আছে। তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে শঙ্কিত হয়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ মাওবাদীদের কে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা বৃহত্তর হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

নকশাল আন্দোলন একটি কমিউনিস্ট আন্দোলনের নাম। বিংশ শতাব্দীর সপ্তম দশকে পশ্চিমবঙ্গের নকশালবাড়ি থেকে শুরু হয়ে এটি ধীরে ধীরে ছত্তীসগঢ? (তদানীন্তন মধ্যপ্রদেশ) এবং অন্ধ্র প্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ক্রমে এটি একটি সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল।

নকশাল বা নকশালবাদী বলতে উগ্র বামপন্থী দলগুলোকে নির্দেশ করা হয়। এসব দলের জন্ম হয়েছিল চিন-সোভিয়েত (Sino-Soviet split) ভাঙনের সময়। মতাদর্শগত ভাবে এরা মাও সে তুং-এর পদাঙ্ক অনুসরণকারী। নকশাল আন্দোলন শুরু হয়েছিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। ধীরে ধীরে তা ভারতের অনুন্নত অঞ্চলসমূহে যেমন:ছত্তিশগড়, অন্ধ্রপ্রদেশ, ইত্যাদি রাজ্যের প্রান্তিক এলাকাগুলিতে প্রসারিত হয়ে পড়ে। [১] এরা মার্ক্সবাদ এবং লেনিনবাদে বিশ্বাসী এবং ২০০৪ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মাওবাদী) নামক দল প্রতিষ্ঠা করে এরা নিজেদের কার্যকলাপ প্রসারিত করেছে। ভারতের প্রায় ৪০% অঞ্চলে তাদের কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়েছে, বিশেষ করে “রেড করিডোর” অঞ্চলে প্রায় ৯২০০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে তারা তাদের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। সিপিআই (মাওবাদী) এবং আরও কিছু নকশালপন্থী দলকে ভারত সরকার সন্ত্রাসবাদী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে। [২]। ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত সরকার নকশাল নির্মূলে তাদের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এতে উগ্রবামপন্থী আক্রান্ত অঞ্চল ছত্তিশগড়, উড়িষ্যা, অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে, তাদের পলায়নের সব রাস্তা বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। (ইতিহাস! চারু মজুমদার! কানু সান্যাল)!

নকশাল শব্দটি এসেছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একটি ছোটগ্রাম ’’’নকশালবাড়ি’’’ থেকে। বিগত শতাব্দির ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) যে কোনোদিনই বিপ্লবের পথে এগোবে না এটা পার্টির অভ্যন্তরে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন সময় আলোচিত ও বিতর্কিত হয়ে আসছিল।। দলের অভ্যন্তরীণ আলোচনায় নিয়ন্ত্রক নেতৃত্বের পরিস্কার বার্তা ছিল, “এই সমাজ ব্যবস্থার মধ্যেও মানুষকে উপকার দেয়া সম্ভব”। এর বিরুদ্ধ চিন্তাধারা তখন থেকেই সক্রিয় ছিল; যারা মনে করতো বিপ্লবের মাধ্যমেই সমাজ ব্যবস্থার পরিবর্তন না করলে, মানুষকে কোনো স্থায়ী উপকার দেয়া সম্ভব নয়। ১৯৬৬র খাদ্য আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বহু প্রাণ বলি হওয়ার পর দল যেভাবে এতগুলো প্রাণের বিনিময়ে ১০০ গ্রাম গম ও ৫০ গ্রাম চালের পরিবর্তে আন্দোলনটিকে নষ্ট করে দিল সেটা ওই বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠির মতে দলের নিয়ন্ত্রক নেতৃত্বের বিরুদ্ধ তাদের নতুন করে চোখ খুলে দিয়েছিল। কাজেই নকশালবাড়ির কৃষক বিদ্রোহ ওই বিরুদ্ধ চিন্তার ধারাবাহিক ফল। এই আন্দোলনটাকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে পুরো পরিপ্রেক্ষিতটা পরিস্কার হয় না। প্রকৃতপক্ষে, নকশালবাড়ির ঘটনা দলের ওই মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রথম সদর্থক আন্দোলন।

এখানে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র একাংশ ১৯৬৭ সালে তাদের নেতৃবৃন্দের বিরোধিতা করে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী-লেনিনবাদী) একটি পৃথক উগ্র বামপন্থী দল গঠন করেন। এ বিপ্লবী দলের নেতৃত্বে ছিলেন চারু মজুমদার, সুশীতল রায়চৌধুরী, কানু সান্যাল ও জঙ্গল সাঁওতাল। এ বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল ১৯৬৭ সালের ২৫ মে তারিখে। তখন নকশালবাড়ি গ্রামের কৃষকদের উপর স্থানীয় ভ‚স্বামীরা ভাড়াটে গুন্ডার সাহায্যে অত্যাচার করছিল। এরপর এই কৃষকরা ঐ ভ‚স্বামীদের সেখান থেকে উৎখাত করে। [২]

অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীকাকুলামে নকশাল স্মারক স্তম্ভ! চারু মজুমদার চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মাও সে তুং এর অনুসারী ছিলেন। তিনি মনে করতেন ভারতের কৃষক এবং গরিব মানুষদের মাও সে তুং এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে শ্রেণিশত্রুদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রাম করা প্রয়োজন। তার কারণ তারাই সর্বহারা কৃষক শ্রমিকদের শোষণ করে। তিনি নকশালবাড়ি আন্দোলনকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তার লেখনীর মাধ্যমে। তার বিখ্যাত রচনা হল ‘’’হিস্টরিক এইট ডকুমেন্টস্’’’ বা আট দলিল যা নকশাল মতাদর্শের ভিত্তি রচনা করে। [৪] বিশিষ্ট বামপন্থী বুদ্ধিজীবী সরোজ দত্ত শ্রেণিশত্রু খতমের রাজনীতির পক্ষে একাধিক প্রবন্ধ রচনা করেন নকশালদের মুখপত্র ‘দেশব্রতী’ পত্রিকায়। নকশালপন্থীরা পরবর্তীতে সিপিআই (এম) থেকে বেড়িয়ে ‘’’অল ইন্ডিয়া কমিটি অব কমিউনিস্ট রেভুলশনারী’’’(এ আই সি সি সি আর) গঠন করেন। ১৯৬৯ সালে এ আই সি সি সি আর থেকে জন্ম নেয় কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী-লেনিনবাদী)। বাস্তবে সকল নকশালবাদী দলেরই উদ্ভব হয়েছে সিপিআই (এম এল) থেকে। তবে “মাওবাদী কমিউনিস্ট সেন্টার্” নামে একটি ভিন্ন মতাদর্শের দল ছিল। তাদের উদ্ভব হয়েছিল “দক্ষিণদেশ গ্রুপ” নামে একটি সংগঠন থেকে; যার নেতৃত্বে ছিলেন অমূল্য সেন, কানাাই চ্যাটার্জি ও চন্দ্রশেখর দাশ। এরা CCCRএর অঙ্গ হিসেবে যুক্ত থাকলেও চারু মজুমদারের নেতৃত্বে সিপিআই (এমএল) এ তারা যুুুুক্ত না হয়ে উক্ত মাওবাদী কমিউনিস্ট কেন্দ্র গঠন করে স্বাধীনভাবে বিপ্লবী আন্দোলন চালয়ে যেতে থাকে। পরবর্তী ক্ষেত্রে, ভেঙ্গে যাওয়া সিপিআই (এমএল) থেকে বেরিয়ে আসা “পিপলস ওয়ার গ্রুপ” (PWG) এবং “মাওবাদী কমিউনিস্ট কেন্দ্র” (MCC) একত্রিত হয়ে ২০০৪ সালে “কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মাওবাদী)” গঠন করে। এছাড়া ভিন্ন মতাদর্শের আর একটি দল হল “অন্ধ্র রেভুলশনারী কমিউনিস্টস্” এবং তারা “টি. নাগি রেড্ডি”-র “মাস লাইন” মতবাদের অনুসারী ছিল।

১৯৭০ সালের দিকে এ আন্দোলন অন্তর্দ্বন্দের কারণে কয়েকটি বিরোধী অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। ১৯৮০ সালের দিকে প্রায় ৩০ টি নকশালবাদী দল সক্রিয় ছিল এবং তাদের জনবল ছিল প্রায় ৩০,০০০। [৫] ২০০৪ সাল ভারতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে প্রায় ৯৩০০ নকশালবাদী ক্যাডার সক্রিয় রয়েছে এবং তাদের কাছে প্রায় ৬৫০০ অনিবন্ধিত অত্যাধুনিক অস্ত্র রয়েছে, এছাড়া দেশী অস্ত্র তো আছেই। [৬] Judith Vidal-Hall (২০০৬) এর মতে সা¤প্রতিক সময়ে নকশালদের সংখ্যা প্রায় ১৫,০০০ এবং তারা ভারতের বনভ‚মির প্রায় এক পঞ্চমাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। তারা তাদের কর্মকাণ্ড ভারতের ভারতের ৬০৪ টি জেলার ভেতর ১৬০ টিতে বিস্তার করেছে। [৭]
ইতিহাস বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সংশোধনবাদী চরিত্রগত কারণে তেলেঙ্গানার সংগ্রামকে নেহরুর পদতলে বিকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিপরীতে নকশালবাড়ি কমিউনিস্ট আন্দোলনের সুবিধাবাদী কেন্দ্র ও কাঠামোর উপর আঘাত হেনেই উপমহাদেশের বিপ্লব আকাঙ্ক্ষী বিপ্লবীদের নিজস্ব পার্টি গঠনের পথকে উন্মুক্ত করে দেয়। তেলেঙ্গানা পার্টি সংশোধনবাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল, নকশালবাড়ি তা করেনি। [৮]

বর্তমানে কিছু নকশালবাদী দল ভারতের মূলধারার রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, যেমন:সিপিআই (এম এল) লিবারেশন। বাংলায় বিপ্লব ! নকশালপন্থীদের পতাকা! নকশাল আন্দোলন কলকাতার ছাত্র সংগঠনগুলোর ব্যাপক সমর্থন পেয়েছিল। ছাত্রদের একটি বড় অংশ লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বিপ্লবী কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছিল। বিশেষত নামকরা স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্ররা প্রভাবিত হয়েছিল এই আন্দোলনে। চারু মজুমদার বলেছিলেন বিপ্লবী কার্যক্রম শুধুমাত্র গ্রামাঞ্চলে চালিয়ে গেলেই চলবে না, বরং একে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। তিনি নকশালদের শ্রেণীশত্রæ খতম করার নির্দেশ দেন। এ শ্রেণীশত্রæদের মধ্যে যেমন ছিল ভ‚স্বামী তেমনি ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশ অফিসার, রাজনীতিবিদ এবং আরও অনেকে।

সোনাকান্তি বড়ুয়া, বিবিধ গ্রন্থ প্রণেতা, কলামিষ্ট এবং মানবাধিকার কর্মী। ) সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে REPRESENTATIVE OF THE WORLD FELLOWSHIP OF BUDDHISTS, BANGKOK , THAILAND