অনলাইন ডেস্ক : আশির দশকের শেষের দিকে সিনেমায় আসেন রঞ্জিতা। নব্বইয়ের দশকজুড়ে ছিল তাঁর উপস্থিতি। ‘পাথরের পৃথিবীতে কাচের হৃদয়’ গানটির জন্য সিনেমাপ্রেমী দর্শকেরা মনে রেখেছেন রঞ্জিতাকে। গানটির ছবির নাম ‘ঢাকা ৮৬’। নায়করাজ রাজ্জাক পরিচালিত এ ছবিতে অভিনয় করে আলোচনায় আসেন রঞ্জিতা। এতে তিনি বাপ্পারাজের বিপরীতে অভিনয় করেন। সে সময় বেশ কিছু ছবিতে অভিনয়ের জন্য দর্শকদের স্মৃতিতে এখনো রয়ে গেছে তাঁর মুখ। অকালপ্রয়াত সংগীতশিল্পী জুয়েলের বোন তিনি।
রঞ্জিতার চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ার প্রথম দিকে ঝলমলে হলেও পরে তাঁর পথ বেঁকে যায়। এই সময়ে এসে রঞ্জিতা খুব ভালো নেই। বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ভাইসহ থাকেন বনশ্রীতে ভাড়া বাসায়। ভাই নিয়মিত ভাড়া দিতে পারছেন না বলে বাড়িওয়ালা টু-লেট বোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছেন। হাতে কাজ নেই বলে রঞ্জিতা পড়ে গেছেন বিপাকে।
আলাপচারিতায় রঞ্জিতা জানান, ২০০৫ সালের পর আর সিনেমায় অভিনয় করেননি তিনি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিনয় ছাড়েননি। জড়িত আছেন বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে। শিল্পী সমিতির গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনও করেছেন। কিন্তু জয়ী হয়ে কমিটিতে যেতে পারেননি।
রঞ্জিতা বলেন, ‘পরিকল্পনা করে নির্বাচন করিনি। মিশা সওদাগর ও জায়েদ খানকে বলেছিলাম আমাকে আজীবন সদস্য করে নেওয়ার জন্য। তারা বলল, আপনি আমাদের সঙ্গে নির্বাচন করবেন। পরে তারা আমাকে ছাড়াই প্যানেল জমা দিল। একেবারে শেষ দিন নায়িকা মৌসুমী আমাকে মনোনয়নপত্র কিনে দেয়। আমি স্বতন্ত্র থেকে দাঁড়াই।’
`ঢাকা ৮৬` ছবিতে অভিষেক হয় রঞ্জিতার। ছবি: সংগৃহীত
‘ঢাকা ৮৬’ ছবিতে অভিষেক হয় রঞ্জিতার। ছবি: সংগৃহীত
রঞ্জিতা সিনেমায় আসেন ১৯৮৭ সালে। তাঁর বাবা ছিলেন নায়করাজের বন্ধু। একপ্রকার খেলাচ্ছলেই ‘ঢাকা ৮৬’ ছবির নায়িকা হওয়া তাঁর। প্রথম ছবিতে নজর কাড়ার পর নায়করাজের পরিচালনায় ‘রাজা মিস্ত্রী’ ও ‘জ্বীনের বাদশা’ ছবিতে অভিনয় করেন রঞ্জিতা। মাত্র এক টাকা সাইনিং মানি নিয়ে তাঁর ক্যারিয়ার শুরু হয়। মোট ২৯টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি।
কথাপ্রসঙ্গে রঞ্জিতা বলেন, ‘সেই সময় এফডিসির এক ফ্লোর থেকে আরেক ফ্লোরে দৌড়ে বেড়িয়েছি। এই কক্সবাজার, এই ময়মনসিংহ। ব্যস্ততার কোনো কমতি ছিল না। এখন এফডিসির পরিবর্তন হয়েছে অনেক। সমিতির অনেক সাজসজ্জা বেড়েছে। কিন্তু সিনেমার সেই রমরমা আর নেই। হলগুলো তো একরকম বন্ধই হয়ে গেছে।’
রঞ্জিতা অভিনয়ের পাশাপাশি ছবি প্রযোজনা করতেন। তিনি ১৮টি ছবি প্রযোজনা করেছেন। যার মধ্যে রয়েছে ‘কুংফু কন্যা’, ‘মরণ লড়াই’, ‘ক্যারাটি মাস্টার’, ‘প্রেমিক রংবাজ’ ইত্যাদি। ছবিগুলোর মধ্যে ১৪টি ছবিই ব্যবসাসফল বলে রঞ্জিতার দাবি। একেকটি ছবি দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসা করেছে।
ব্যবসায়িক সাফল্যের পরও রঞ্জিতার ভাগ্যে বিপর্যয় নেমে এল কেন?
রঞ্জিতা জানান, তাঁর বাবা ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। পাশাপাশি তাঁদের নানা রকম ব্যবসা ছিল। রঞ্জিতার বোনের স্বামী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে শোধ করতে পারেননি। তাঁদের বাড়ি নিলামে ওঠে। সে খবর শুনে তাঁর মা স্ট্রোক করে মারা যান। এর মধ্যে ভাই সংগীতশিল্পী জুয়েলও মারা যায়। এসব কারণে রঞ্জিতার জীবনে দুর্যোগ নেমে আসে।
বর্তমানে ভাইয়ের রোজগারে টান পড়েছে করোনার কারণে। কিন্তু বাড়িওয়ালা সে কথা বুঝতে নারাজ। একসময়ের গ্ল্যামারাস নায়িকার কণ্ঠে বিষণ্নতার সুর চলে আসে।
রঞ্জিতা সরকারের কাছে তাঁদের বাড়ি ফিরে পাওয়ার জন্য সহযোগিতা চান। কিন্তু জানেন না কোন প্রক্রিয়ায় সেটা পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, ‘কাজ না করলে আমরা খাব কী? আর আমাদের সংসারই-বা চলবে কেমন করে। তাই আমাদের কাজের সুযোগ দরকার।’
রঞ্জিতার দাবি, মার্শাল আর্টে দেশের প্রথম ব্ল্যাকবেল্টধারী তিনি। সিনেমার প্রয়োজনে শিখেছেন আত্মরক্ষার কৌশল। জীবনযুদ্ধেও করে চলেছেন লড়াই। জীবনযুদ্ধে লড়ছেন প্রতিনিয়ত। পাথরের পৃথিবীতে সামনে আর কত লড়তে হবে জানেন না তিনি।