অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত যারা ক্ষমতায় এসেছেন, তাদের মধ্যে কেবল তিনি এবং তার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই এ মাটির সন্তান। আর এ কারণেই তিনি ত্যাগ স্বীকার করে জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ইতালি সফরের প্রথম দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রোমের একটি হোটেলে ইতালি আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের জন্ম বিহারে, এরশাদের জন্ম কুচবিহারে, খালেদা জিয়ার জন্ম শিলিগুড়িতে। তাদের একজনও এই মাটির সন্তান না। প্রধানমন্ত্রী নিজের প্রসঙ্গে বলেন, আমার জন্ম এই মাটিতে, তাই আমাদের মাটির টান আছে। এই জন্য আমাদের একটা কর্তব্যবোধও আছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট ঘাতকের বুলেটে বাবা-মাসহ পরিবারের প্রায় সকল সদস্য্যকে হারানোর কথা স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, জীবনের সবকিছু ত্যাগ করে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের কাজটি করে যাচ্ছি।
সেই চিন্ত থেকেই আমরা প্রতিটি পদক্ষেপ নিচ্ছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের আর কেউ পেছনে টেনে ধরতে পারবে না। আমরা সামনে এগিয়ে যাবোই। এটাই হলো সব থেকে বড় কথা। দেশের উন্নয়নে তার সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের যে কোনো জাতির সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা বাংলাদেশ এখন অর্জন করেছে। এ দেশের সব উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ শতাংশ এখন নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন হয়। বাংলাদেশ নিয়ে অতীতে বিদেশিদের নেতিবাচক মনোভাব ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন একটা সময় ছিলো, যখন বাংলাদেশের নাম শুনলে আগেই বলত ‘ওহ বাংলাদেশ’ ওখানে তো ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, মানুষ খেতে পায় না, দুর্ভিক্ষ লেগে থাকে। বাংলাদেশটাকে হেয় করে দেখাটা আমাদের জন্য লজ্জাজনক ছিল এবং কষ্টের ছিলো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময়ের দাতা দেশগুলোও এখন বাংলাদেশকে ‘উন্নয়ন সহযোগী’ মনে করে সহযোগিতা করতে আসে মন্তব্য করে সরকার প্রধান বলেন, কারো কাছে আমরা ভিক্ষা চাই না। আমরা নিজেরা পারি সেটা প্রমাণ করেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষাপট মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বব্যাংক চেয়েছিল আমাদেরকে বদনাম দিতে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম। তারপর বলেছিলাম ওটা আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করব। আজকে আমরা নিজস্ব অর্থায়নে করছি। নিজের প্রতিজ্ঞার বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় এমন বাংলাদেশ গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা করেছি যেনো বাংলাদেশ শুনলে মানুষ বলে, নাহ বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে। আজকে মুজিববর্ষে এসে এইটুকু দাবি করতে পারি- আমরা কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বিশ্বে সেই জায়গায় আনতে সক্ষম হয়েছি।
বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় প্রবাসীদের অবদানের কথাও স্মরণ করেন। তবে তিনি সতর্কও করেন। প্রবাসীদের উদ্দেশে বলেন, জাতির পিতা চেয়েছিলেন বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের জনগণ মাথা উঁচু করে চলবে। সেই মাথা উঁচু করে চলবার মতনই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি। আপনাদেরকেও সেভাবে আপনাদের আচার-আচরণ ব্যবহার- সবকিছুতে সেটা বজায় রাখতে হবে। যেন দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়। বিমানবন্দরে প্রবাসীদের হয়রানি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসলে আমাদের দেশের কিছু মানুষের চরিত্রই খারাপ। যেই শুনে বাইরে থেকে আসবে, ভাবে যে একটু চাপ দিলেই মনে হয় কয়েকটা ডলার পাওয়া যাবে। একটা কথা মনে রাখবেন। ঘুষ দেয়া বা নেয়া সমান অপরাধ।
এটা দিয়ে অভ্যাসটা আপনারা খারাপ করেছেন। এখন আর এটি দিবেন না। স্থানীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মনে রাখতে হবে, আমার বয়স হয়ে গেছে। আগে অনেক ঘুরেছি, এখন আর এত সম্ভব না। অনেক কাজ এখনও বাকি। কাজেই যেটুকু সময় পাই, দেশের কাজ করার চেষ্টা করি। ?যত দ্রুত সম্ভব দেশটাকে উন্নত করতে চাই। এতে সকলের সহযোগিতা চাই। শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি তাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান শিকদার, আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. ইদ্রিস ফরাজী, সাধারণ সম্পাদক হাসান ইকবালসহ ইউরোপ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, সফরের দ্বিতীয় দিনের (৫ই ফেব্রুয়ারি) প্রথম কর্মসূচি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী রোমে দূতাবাসের নব নির্মিত চ্যান্সেরি ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। স্থানীয় ভিয়া দেল আন্তারতিদে এলাকায় চ্যান্সেরি ভবন উদ্বোধন কালে প্রধানমন্ত্রীর বোন শেখ রেহানা এবং মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল সঙ্গে ছিলেন।