অনলাইন ডেস্ক : গত ২৪ জুন, শনিবার অত্যন্ত সাফল্যের সাথে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টোর নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক ও আনন্দমেলা। টরন্টোর বাঙালি এলাকা বলে পরিচিত ড্যানফোর্থের ডেন্টোনিয়া পার্কে হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে অত্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। দিনব্যাপি এই অনুষ্ঠানে ছিল নানা রকমের পণ্যের স্টল এবং মনোজ্ঞ একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন। দিনের শুরুতে কিছুটা বৈরি আবহাওয়ার পূর্বাভাস ছিল, সকালের দিকে একপশলা বৃষ্টিও হয়ে যায়। কিন্তু বেলা গড়াতেই মেঘ কেটে যায় এবং চমৎকার একটি রৌদ্রোজ্জ্বল দিন অনুষ্ঠানটি স্বার্থক করে তুলতে আমাদের সহায়তা করে।

অনুষ্ঠানে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত কমিটিকে সবার সামনে পরিচয় করিয়ে দেন নির্বাচন কমিশনার আফসার আহমেদ (ফেরদৌস)। পরিচয়পর্বের পর জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মুশতাক আহমেদ, রেশাদ চৌধুরী, আহাদ খন্দকার, ছাদ চৌধুরী, মিজান চৌধুরী, দেবব্রত দে (তমাল), সাবেক সাধারণ সম্পাদক মৌসুফ জায়গীদার, জুন্নুন চৌধুরী, সুদীপ সোম (রিঙ্কু) এবং সামী চৌধুরী (লিটন) কে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা সূচক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।

অনুষ্ঠানে ছিল প্রায় ৭০টি পণ্য ও খাবারের স্টল। স্টলগুলোতে বিক্রি হচ্ছিল কাপড়, অলঙ্কার, প্রসাধনীসহ নানা রকমের দেশী-বিদেশী পণ্য। খাবারের স্টলগুলোতে ছিল নানারকমের দেশীয় খাবারের সমাহার। প্রায় প্রতিটি স্টলেই মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা যায়। স্টল বরাদ্দ এবং স্টল ম্যানেজমেন্টের দুরুহ কাজ সম্পন্ন করতে দিনভর পরিশ্রম করে গিয়েছেন হাবিবুর রহমান চৌধুরী (মারুফ), মনসুর আহমেদ, আলী হোসেন, আব্দুস সালাম এবং নাহিদ আহমেদ। মেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল মনোজ্ঞ একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পরবর্তী প্রজন্মের শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল নানা রকমের আয়োজন এবং যেমন খুশি তেমন সাজ প্রতিযোগীতা। বিকাল ৪টায় পবিত্র কোরওয়ান তেলওয়াত, গীতা এবং বাইবেল পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা করা হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই নৃত্য পরিবেশন করেন বিপ্লব কর ড্যান্স স্কুল- নৃত্যকলা কেন্দ্রের শিক্ষার্থীরা।এর পর সঙ্গীত পরিবেশন করেন গুণী শিল্পি রিধি, রুখসানা, মৌসুমী এবং নাচ পরিবেশন করেন তিন্নি। বিশেষ আকর্ষণ হিসাবে সঙ্গীত পরিবেশন করেন টরন্টোর প্রখ্যাত শিল্পি শামীম চৌধুরী এবং রিংকো। সর্বশেষে অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ হিসাবে স্টেইজ মাতিয়ে তুলেন বাংলাদেশের কিংবদন্তী প্লে-ব্যাক সিঙ্গার রিজিয়া পারভীন এবং ফিডব্যাক ব্যান্ডের লিড ভোকাল লুমিন। অনুষ্ঠান উপস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন ফারহানা আহমেদ, হিমাদ্রী রায়, রিফ্ফাত নূয়েরীন এবং নাঈম চৌধুরী। জালালাবাদ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সার্বিক দায?িত্বে ছিলেন স্বর্ণালী মুক্তা, রিফ্ফাত নূয়েরীন, জাহানারা নাসিমা, তাহমিনা চৌধুরী এবং নাঈম চৌধুরী। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া এই অনুষ্ঠানে সফলভাবে আয়োজন করা কিছুতেই সম্ভব হত না।

জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টোর নবনির্বাচিত কমিটির অভিষেক উপলক্ষে একটি বিশেষ স্মরণিকা প্রকাশিত হয়। টরন্টো ও টরন্টোর বাইরের লেখকদের লেখা গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধ নিয়ে প্রকাশিত এই স্মরণিকাটি ছিল মেলার অন্যতম আকর্ষণ। স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন এসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুদীপ সোম (রিঙ্কু)। স্মরণিকা সম্পাদনার দুরুহ কাজটি সম্পন্ন করতে শ্রম দিয়েছেন ইলিয়াছ খান, সন্জীব রায়, মেহেদী চৌধুরী, মাসুম মুনিম (তুহিন), এজাজ চৌধুরী এবং হাসান তারেক ইমাম। স্মরণিকার প্রচ্ছদসহ অনুষ্ঠানের ব্যানার ডিজাইনে নিজের মূল্যবান সময় ব্যায় করে আমাদের সহায়তা করেছেন সি.এম ডিজাইনের কর্ণধার ফয়সাল আহমেদ, তার প্রতি জালালাবাদ এসোসিয়েশন আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট আসনের মাননীয় এম.পি এবং কানাডার দূর্যোগ ব্যাবস্থাপনা মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার, স্কারবোরো সাউথওয়েস্ট আসনের মাননীয় এম.পি.পি এবং অন্টারিওর বিরোধীদলীয় ডেপুটি লিডার ডলি বেগম এবং ব্রান্টফোর্ড আসনের মাননীয় এম.পি ল্যারি ব্রুকস। স্পন্সরদের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন আমাদের টাইটেল স্পন্সর ব্যারিষ্টার রিজুয়ান রহমান, হিশাম চিশতী এবং ফয়সাল আহমেদ।

অনুষ্ঠানের দিন কঠিনতম কাজ হচ্ছে ফিল্ড ম্যানেজমেন্ট। জালালাবাদ এসোসিয়েশন থেকে এই কাজের সার্বিক দায়িত্বে ছিলেন জুয়েল আহমেদ, আবু জহির শাকিব, আহমেদ হোসেন লনি, আহমেদ জয় এবং আসজাদ বখত চৌধুরী। বিশাল বাজেটের এই অনুষ্ঠানের বাজেট তত্বাবধানে ছিলেন মকবুল হোসেন (মন্জু), বিবেক সেন (রাজীব), তাফাসিন চৌধুরী, ফজলুল করিম এবং ফারুক আহমেদ। সমগ্র অনুষ্ঠনের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন সংগঠনের সভাপতি মাহবুব চৌধুরী (রনি), সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মারুফ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক এবং এই অনুষ্ঠানের কনভেনর রাসেল আহমেদ।

জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব টরন্টোর পক্ষ থেকে আমাদের সকল সম্মানিত সদস্য, ট্রাস্টি এবং উপদেষ্টা মন্ডলীকে আন্তরিক ধন্যবাদ আমাদের এই অনুষ্ঠান সফলভাবে সম্পন্ন করতে আমাদের সবরকমের সাহায্য করার জন্য। আমাদের স্পন্সরদের বিশেষ ধন্যবাদ, তাদের ছাড়া এই আয়োজন কোনভাবেই সম্ভব হতনা। এই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে আমাদের কমিটির সদস্যদের সার্বিক সহযোগীতা করেছেন রাফে চৌধুরী, হাসান চৌধুরী (রাব্বী), রিমন ইসলাম,তামীম চৌধুরী (বাপ্পি), পিয়াসসহ আরো অনেকে। তাদের প্রতি আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

সর্বোপরি টরন্টোর বাঙালী কমিউনিটিকে জালালাবাদ এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ। আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্হিতি আমাদের এই প্রচেষ্টাকে স্বার্থক করেছে। এত বড় একটি আয়োজনে আমাদের পক্ষ থেকে সেসব অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তি হয়েছে, সেগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। সবার প্রতি রইল আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।