অনলাইন ডেস্ক : অপারেটরদের দাবি জার্মানির শতভাগ এলাকাই মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায়৷ কিন্তু দেশটির অনেক মোবাইল ব্যবহারকারীকেই সিগনাল পেতে যথেষ্ট বিড়ম্বনা পোহাতে হয়৷

জার্মানির রাজধানী বার্লিন থেকে গাড়িতে ৯০ মিনিটের দূরত্বে ইয়েন্স রায়েডারের বাড়ি৷ সেখানে স্মার্টফোনে সিগনাল পাওয়া তার কাছে অনেকটা সোনার হরিণ৷ ঠিকঠাক কথা বলতে হলে যেতে হয় পাঁচ কিলোমিটার দূরের একটি গ্রামে, যেখানে একটি মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার রয়েছে ৷

‘‘মানুষ এরইমধ্যে জেনে গেছে আমার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া সম্ভব নয়,’’ বলছিলেন ৫৭ বছর বয়সি রায়েডার ৷

দেশটির কয়েক লাখ মানুষ তার মতো এমন সব জায়গায় বসবাস করেন, যেখানে মোবাইল নেটওয়ার্কের কোনো সিগনালই পৌঁছে না৷ যদিও জার্মানির শতভাগ এলাকা নেটওয়ার্কের আওতায় আছে বলে গড়পড়তা দাবি করে থাকে অপারেটররা ৷

পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, মোবাইল সেবা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে থাকেন এমনকি সরকারের লোকজনও৷ যেমন অর্থমন্ত্রী পেটার আল্টমায়ার দুই বছর আগে বলেছেন প্রযুক্তির কেন্দ্রে থাকা একটি দেশের জন্য এই পরিস্থিতি ভীষণ লজ্জাজনক, যা এড়াতে তিনি নাকি যাতায়াতের সময় দেশের বাইরের কারো সঙ্গে ফোনে আলাপের ঝুঁকিই নেন না ৷

‘‘আমাকে প্রায়ই যাতায়াতের মধ্যে থাকতে হয়৷ আমি অফিসে জানিয়ে রেখেছি, এমন অবস্থায় আমি কোনো বিদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাই না৷ কারণ, তিন-চারবার তাদেরকে কল ব্যাক করা আমার জন্য খুবই লজ্জার,’’ এভাবেই হতাশা প্রকাশ করেছেন আল্টমায়ার৷

করোনা পরিস্থিতিতে মোবাইল নেটওয়ার্কের এই দুরবস্থা নতুন করে আলোচনায় এসেছে৷ বিশেষ করে যখন পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, স্কুল কিংবা কর্মস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানুষকে সামাজিক যোগাযোগের জন্য ডিজিটাল মাধ্যমের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছে৷

‘‘করোনা সংকট আমাদের অবকাঠামোর এই সমস্যাকে আঁতশ কাঁচ দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে,’’ বলেছেন দেশটির বাম রাজনৈতিক দলের আইন প্রণেতা আঙ্কা ডমসাইট-বার্গ ৷

গ্রামাঞ্চলে শুধু নেটওয়ার্কের বাজে অবস্থাই নয়, ঠিকঠাক ফাইবার সংযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি ৷

স্থায়ী ব্রডব্যান্ড সংযোগের এই দুরবস্থার মধ্যেও অনেকে পঞ্চম প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক বা ফাইভ জি ব্যবহারের স্বপ্ন দেখছেন৷ বলা হচ্ছে, ফাইভ জি-তে নিরবচ্ছিন্ন শক্তিশালী ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাবে, যা দিয়ে উচ্চ মাত্রার ভিডিও কল থেকে স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তির গাড়িও চলবে ৷
দেশটির ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন জার্মান চেম্বার্স অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমার্সের ইজা নথনাগেলও মনে করেন, এতে ব্যবসার নতুন নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে ৷ ‘‘যদিও বর্তমান ফোর-জি নেটওয়ার্কের যথেষ্ট কাভারেজ নেই, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে,’’ উল্লেখ করেন তিনি ৷

শুধু গ্রামে নয়, শহরেও কাঙ্খিত মানের নেটওয়ার্ক পান না অনেকে৷ চেম্বার্স অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড কমার্সের এক জরিপে দেখা গেছে, বার্লিনভিত্তিক এক তৃতীয়াংশ কোম্পানি মোবাইল ব্রডব্যান্ডের সেবায় অসন্তুষ্ট ৷

ওপেনসিগন্যাল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনেও জার্মানির মোবাইল নেটওয়ার্কের দুরাবস্থার চিত্র উঠে এসেছে৷ ফোর-জি মোবাইল ব্রডব্র্যান্ডের মানের দিক থেকে ১০০ টি দেশের মধ্যে ৫০ তম অবস্থানে রয়েছে জার্মানি ৷

এমনকি ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং কিরগিজস্তানের পরে দেশটির অবস্থান৷ এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র ৷

অপারেটররা বলছে, জার্মানিতে নতুন কোনো নেটওয়ার্ক স্টেশন বসাতে হলে দীর্ঘ অনুমোদন প্রক্রিয়া পেরুতে হয় ৷ আবার অনেক সময যথাযথ জায়গাও মেলে না ৷ এসব কারণেই মূলত কিছু জায়গায় নেটওয়ার্কশূন্যতা তৈরি হচ্ছে ৷

তবে সরকারের কাছ থেকে তহবিলসহ অন্যান্য সহযোগিতা নিয়ে অপারেটররা কাভারেজের এই সীমাবদ্ধতা দূর করার চেষ্টা করছে বলে জানিয়েছেন টেলিকম প্রতিষ্ঠান ভোডাফোন এর মুখপাত্র ফলকার পেটেনডর্ফ৷ ডয়চে ভেলে।