অনলাইন ডেস্ক : বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান আর আগস্ট মাস এলেই জঙ্গিরা তৎপর হয়ে ওঠে। এই চিত্র বেশ কয়েক বছর ধরেই। এবারও ঈদ ও আগস্ট মিলিয়ে জঙ্গিদের তৎপরতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। জানা গেছে, বিভিন্ন সময় জামিনে এবং সাজা শেষ করে কারাগার থেকে বের হয়ে ঘুরছে শতাধিক দুর্ধর্ষ জঙ্গি। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে, যারা বাইরে আছে তাদের সবাইকে মনিটরিংয়ে রাখা হয়েছে। সম্প্রতি কিছু জঙ্গি আটক হওয়ার পর নতুন ধরনের হামলার পরিকল্পনার চিত্র সামনে এসেছে। এ কারণে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে সারা দেশের সব ইউনিটে চিঠি দিয়ে জঙ্গিদের ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, জঙ্গিদের আমরা নিয়ন্ত্রনে এনেছি, কিন্তু সমূলে উত্পাটন করতে পারিনি। ছোট ছোট ‘স্লিপিং সেল’ এখনো বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। সেগুলোর কার্যকারিতা তেমন কিছু নেই। তিনি বলেন, কূটনৈতিক এলাকা ও ধর্মীয় উত্সব স্থলসহ সব জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে ও সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। আমি মনে করি, জঙ্গিদের সেই সক্ষমতা, সেই দক্ষতা নেই। বাংলাদেশের মানুষ জঙ্গিদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয় না, তাদের সম্পর্কে সব সময় আমাদের অবহিত করছেন, যে যেখানে নিউজ পাচ্ছেন। এজন্য আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গি দমনে সফল হয়েছিল।

২০১৬ সালে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ছয় দিন পর ৭ জুলাই শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে হামলার চেষ্টা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে জঙ্গিদের সংঘর্ষও হয়। এরপর আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে জঙ্গি নেতাদের প্রায় সবাই ধরা পড়ে বা মারা যায়। তাতেই জঙ্গিদের মেরুদ্ল ভেঙে পড়ে—দাবি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আশঙ্কা উড়িয়ে দিলেও পুলিশ সদর দপ্তর থেকে দেশের সব ইউনিটে চিঠি দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে। পুলিশের মহাপরিদর্শক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সারা দেশের সব ইউনিটকে সতর্ক করেছি। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আমাদের যে অভিযানটা চলছে, সেটা অব্যাহত থাকবে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট জঙ্গিদের ব্যাপারে নিবিড়ভাবে খোঁজ রাখে। এই ইউনিটের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত রয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে শতাধিক দুর্ধর্ষ জঙ্গি এখন কারাগারের বাইরে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এই জঙ্গিরা উদ্বেগের কারণ। সম্প্রতি বেশ কয়েক জন জঙ্গি আটক হয়েছে। তাদের কাছ থেকেও নতুন করে সংগঠিত হওয়ার কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। পাশাপাশি তাদের পরিকল্পনার একটা অংশও জানা গেছে।’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, যারা জামিনে বা সাজা শেষ করে বের হয়েছে তাদের আমরা মনিটরিং করছি। আমরা দেখেছি, বিভিন্ন ধর্মীয় উত্সবের সময় জঙ্গিরা আগ্রাসি হয়ে উঠে। আবার আগস্ট মাসেও তাদের তত্পরতা থাকে। এ কারণে আমরা বাড়তি সতর্কতা নিয়ে রাখছি।

পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘জঙ্গিদের এখন মূল টার্গেট পুলিশ। বিগত বছরগুলোতে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে পুলিশের কঠোর অভিযানের কারণে জঙ্গিরা প্রতিশোধ হিসেবে বারবার পুলিশকে টার্গেট করছে। গত বছরও ঈদের আগে ও পরে এবং আগস্ট মাসে জঙ্গিদের টার্গেট হয়েছিল পুলিশ।’

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, র্যাবের সব ইউনিটকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গি প্রতিরোধে র্যাবের অভিযান অব্যাহত আছে।

গত ১৯ জুলাই পুলিশ সদর থেকে সব ইউনিটে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, সকাল ৬টা থেকে ৮টা বা সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০টার মধ্যে হামলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে পুলিশ সদস্য, পুলিশের স্থাপনা ও যানবাহন, বিমানবন্দর, দূতাবাস, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত ও মিয়ানমার বা এসব দেশের স্থাপনা ও ব্যক্তি এবং শিয়া ও আহমদিয়া মসজিদ, মাজারকেন্দ্রিক মসজিদ, মন্দির, চার্চ ও প্যাগোডাকে উল্লেখ করা হয়েছে। হামলাকারীর সম্ভাব্য বয়স হবে ১৫ থেকে ৩০ বছর। হাতে তৈরি গ্রেনেড, বোমা, ক্ষুদ্রাস্ত্র কিংবা ছুরি-চাপাতি দিয়ে হামলা হতে পারে। জঙ্গিরা পুলিশের পোশাক পরে তাদের স্থাপনায় প্রবেশ করতে পারে।

পুলিশ সদর দপ্তর থেকে চিঠি পাঠানোর পাঁচ দিনের মাথায় গত শুক্রবার রাত ৯টায় রাজধানীর পল্টন মোড়ে পুলিশের একটি চেকপোস্টের পাশে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পল্টন থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলাও হয়েছে। এই বোমার সঙ্গে গত বছর ঢাকায় পুলিশের ওপর হওয়া হামলায় ব্যবহূত বোমার মিল রয়েছে। শনিবার রাত সোয়া ১০টার দিকে গুলিস্তানে বঙ্গবন্ধু স্কয়ারের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে গ্রেনেডসদৃশ আরেকটি বস্তু। যদিও এতে বিস্ফোরক ছিল না। বোমা নিষ্ক্রিয়করণকারী দল এর ভেতর শুধু বালু পেয়েছে।