বিদ্যুত সরকার : জলের সাথে তোমার যোগাযোগ জন্ম থেকেই। জলাধার ও জলধারা তোমার প্রিয় বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। জলের সাথে তোমার প্রথম যোগাযোগ বাড়ির স্বচ্ছ জলের আধার পদ্ম পুকুর। শৈশব থেকে পদ্মপুকুর নামটি হাজারো বার তোমাকে শুনতে হয়েছে। তোমার ডাগর ডাগর চোখের মতোন শান্ত পদ্মপুকুর। একটু হাওয়া পেলে তির তির করে কেপে ওঠে ছোট ছোট ঢেউ তুলে। ঠিক যেমন তোমার চোখ, একটু আঘাতে কেমন কান্না হয়ে ঢেউ তুলে চোখ সরোবরে। ‘জলকে চল..’ বলেই তুমি নিজেই জলে মিশে যাও অবলিলায়। তোমার জলজ অনুভূতিগুলো ভীষণ প্রকট। বর্ষার থৈ থৈ জল চারিদিকে কেমন অন্তহীন এক সাগরের আমেজ নিয়ে আসে তোমার জন্য। তোমার হ্রদয় মন কেমন সাগরের মতো বিশালতা খুঁজে পায়। জলের গভীরে পানকৌড়ি হয়ে পেয়ে যাও সুখের শীতল ঠিকানা। তুমি তো সেই শৈশব থেকেই বাড়ির পাশের পদ্ম পুকুর দেখে দেখে বড় হয়েছো। তাই পদ্ম পুকুরটা তোমার অনেক প্রিয়। শান বাঁধানো ঘাটে বসে বসে তুমি জলের মধ্যে অন্য একটি ‘তুমি’ দেখতে পাও, কথা বলতে মন চায়। অতপর: তোমার পা দিয়ে স্থির জলরাশি ভেংগে দিয়ে খুশী হও। ছোট ছোট বৃত্ত হয়ে জলছবিটি কেমন করে আবার জলেতেই মিলিয়ে যায়। এ এক নতুন খেলায় তুমি মেতে উঠতে প্রতিদিন স্নান করতে গিয়ে। কখনো কখনো সাঁতার কেটে কেটে চলে যেতে ফুটে থাকা পদ্মফুলগুলোর কাছাকাছি। হাত দিয়ে ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে করতো এর গোলাপী লাল পাপড়িগুলো। পদ্মপাতার জলবিন্দুর চঞ্চলতা তোমাকে খামোখাই অস্থির করে দিতো যখন তখন। মাস যায়, বছর যায় সেই পুকুরের জলে অবগাহন করে করে তুমি নিজেই পদ্ম ফুল হয়ে মেলে ধরলে নিজকে। রংয়ের মহিমায় গুন গুন করে গুঞ্জন তুলে ভ্রমর এসে ভীড় করলো তোমার চত্স্পুাশ্বে। তখন থেকেই তুমি নিজকে নিয়ে ভাবতে শিখলে। পদ্ম পুকুরের ছোট ছোট ঢেউগুলো তোমার শরীর ছুয়ে ছুয়ে যায়। তুমি নিজেই জানো না কখন তুমি কেপে কেপে ওঠো ছোট নরম ঢেউগুলোর পরম আদরে। তুমি আন্দোলিত হও। বর্ষার বারিধারা তোমাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এক সুখের সাগরে। খোলা জানালায় চোখ রেখে দৃষ্টি মেলে দাও বৃষ্টির অপরুপ দৃশ্যতে। পদ্মপুকুরে বৃষ্টি পড়ার মনোরম দৃশ্যে তোমার দৃষ্টি স্থির হয়ে থাকে অনন্ত কালের জন্য। পুকুরের জলে বৃষ্টি ঝড়ছে অঝোড়ে, বৃষ্টি পড়ার ছন্দময় শব্দে তুমি কান পেতে রও মেঘ বালিকা সেজে। তোমারও বুঝি ইচ্ছে করে একরাশ বৃষ্টি হয়ে পদ্মপাতায় ঝড়ে পরতে মাঝে মাঝে। কখনো ঝর্না হয়ে পাহাড়ের শরীর ছুয়ে নেমে পড়ো পাদদেশে, খড়স্রোতা নদী হয়ে এগিয়ে চলো সমুদ্রে সঙ্গমে। হাওয়া বদলের মতো জলের সহযাত্রী হয়ে পৌঁছে যেতে চাও অনন্তের সীমারেখায়। জলের কাছেই তোমার সকল অনুযোগ, জলের কাছেই যতো তোমার চাওয়া পাওয়া, জলের অতলেই মিশে আছে তোমার প্রতিচ্ছায়া। উতসের সন্ধানে খুঁজে পাও চোখের সজল উঠোনে।
বিদ্যুত সরকার : লেখক ও আলোকচিত্রী, টরন্টো, কানাডা