অনলাইন ডেস্ক : পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু হওয়ার দুই সপ্তাহ পর আফ্রিকান-আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েডকে সমাহিত করা হয়েছে। এর আগে হিউস্টনের চার্চে তাঁকে শেষশ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন হাজারো মানুষ। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত সবাই বিশ্বের সব বর্ণের মানুষের জন্য সুবিচার নিশ্চিতের দাবি জানান।
বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৯ জুন হিউস্টনের ফাউন্টেন অব প্রেজ গির্জায় ফ্লয়েডের শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানাতে মরদেহ প্রায় ছয় ঘণ্টা রাখা হয়। প্রথমে মোটরগাড়িতে করে তাঁর মরদেহ হিউস্টন মেমোরিয়াল গার্ডেনসে নিয়ে আসা হয়। এরপর সব আনুষ্ঠানিকতা সেরে ঘোড়ার গাড়িতে করে মরদেহ পিয়ারল্যান্ড সিমেট্রিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁর মায়ের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত হরা হয়।
হিউস্টনের গির্জায় জর্জ ফ্লয়েডের স্মরণে বক্তব্য দিতে গিয়ে বক্তারা বলেন, ফ্লয়েডের ‘একমাত্র অপরাধ ছিল কৃষ্ণাঙ্গ হয়ে জন্ম নেওয়া’।
মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যে জর্জ ফ্লয়েড নামের এক আফ্রিকান-আমেরিকানকে গত ২৫ মে গ্রেপ্তার করতে গিয়ে নির্যাতন করেন শ্বেতাঙ্গ পুলিশ অফিসার ডেরেক চাওভিন। এতে সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় ফ্লয়েডের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ডেরেক চাওভিনসহ চার পুলিশ কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করে তাঁদের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। ফ্লয়েড হত্যার ঘটনায় ২৬ মে থেকে শুরু হওয়া বিক্ষোভ গত ১১ দিন ধরে বড় বড় নগরীতে হয়েছে। ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। প্রায় ১২ হাজার লোক এ আন্দোলনে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
শেষকৃত অনুষ্ঠানে ফ্লয়েডের ভাগনি ব্রুক উইলিয়ামস বলেন, কৃষ্ণাঙ্গদের সমস্যায় ফেলার জন্যই কিছু আইন তৈরি হয়েছে। তিনি সেসব আইন পরিবর্তনের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আইনগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন আফ্রিকান-আমেরিকানদের কোনো সিস্টেম কাজ না করে। এই আইন পরিবর্তন করতে হবে। আমরা আর কোনো হোইট ক্রাইম দেখতে চাই না।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেন শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে ভিডিওর মাধ্যমে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জর্জ ফ্লয়েডের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলেই প্রকৃত অর্থে আমেরিকা সব বর্ণের মানুষের সমান বিচার নিশ্চিত করার পথে এগিয়ে যাবে।
ফ্লয়েড সম্পর্কে ‘বাজে’ মন্তব্য করার অভিযোগে গত সপ্তাহের শেষে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কঠোর সমালোচনা করেছেন জো বাইডেন। তবে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বাইডেন কৃষ্ণাঙ্গদের শতভাগ সমর্থন পাবেন—এমন এক মন্তব্য করে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। তিনি বলেছিলেন, আফ্রিকান-আমেরিকানরা যদি ট্রাম্পকে ভোট দেন, তবে তাঁরা ‘কৃষ্ণাঙ্গ নন’।
হিউস্টনের ফাউন্টেন অব প্রেইস গির্জায় অনুষ্ঠিত ফ্লয়েডের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে তারকা, রাজনীতিকসহ প্রায় ৫০০ অতিথি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্থানীয় ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য আল গ্রিন বলেন, ‘জর্জ ফ্লয়েডের একমাত্র অপরাধ ছিল, তিনি কৃষ্ণাঙ্গ ছিলেন।’
নাগরিক অধিকার নিয়ে কাজ করা অ্যাকটিভিস্ট আল শার্পটন বলেন, ‘ঈশ্বর তাঁকে (ফ্লয়েড) এমন এক আন্দোলনের কেন্দ্রে রেখেছেন, যা পুরো বিশ্বকে পরিবর্তন করবে।’
এদিকে মিনেসোটার গভর্নর টিম ওয়ালজ ফ্লয়েডের শেষকৃত্য স্মরণে স্থানীয় বাসিন্দাদের ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড নীরবতা পালন করতে অনুরোধ করেন। মৃত্যুর আগে ৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড ধরে একজন পুলিশ কর্মকর্তা জর্জ ফ্লয়েডকে মাটির সঙ্গে হাঁটু দিয়ে চেপে ধরে রেখেছিলেন।