অনলাইন ডেস্ক : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনায় বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যুক্ত করতে সরকার নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

প্রধানমন্ত্রীকে ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, যে ব্যক্তিটি জাতীয় নেতৃত্বের অভাবে দুর্যোগময় মুহূর্তে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, জাতীয় নেতৃত্ব সেদিন যে দায়িত্ব পালন করতে পারেননি একজন মেজর সেই দায়িত্ব পালন করেছিলেন জাতির কান্ডারী হিসেবে তিনি ভূমিকা পালন করেছিলেন। আজকে তার বিরুদ্ধে সমস্ত মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে মিডিয়ার সমস্ত আলো একজন ব্যক্তির দিকে টেনে নিয়ে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিষোদগার করছেন।

সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ নাগরিক অধিকার আন্দোলন ফোরামের উদ্যোগে প্রয়াত শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমেদের স্মরণে শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে তিনি এসব কথা বলেন।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিয়ে রিজভী আরও বলেন, ১৫ আগস্টে শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু নিয়ে আপনারা যে মামলা করেছিলেন সেই মামলাতেও তো শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম ছিল না। তিনি তো তখন ছিলেন সামরিক বাহিনীর দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথম ব্যক্তি যিনি তার কোনো দায়দায়িত্ব নেই কারণ তিনি আওয়ামী লীগ করেন আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রী ছিলেন তিনি বাদ। বহুদলীয় গণতন্ত্র জিয়াউর রহমান চালু করেছিলেন এটাই ছিল তার অপরাধ। তিনি যদি বাকশালকে সাপোর্ট করতেন তাহলে এ ধরনের কোনো কথাই আসত না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, দেশের এই গর্বিত সন্তান সেক্টর কমান্ডার এবং তার রাজনৈতিক দর্শন এবং তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শুধু বহুদলীয় গণতন্ত্র নিশ্চিতকরণে নয় উৎপাদন উন্নয়নের রাজনীতি এবং বাংলাদেশকে একটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্র এটা জনগণ উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন জিয়াউর রহমানের সময়। এখানেই কষ্ট হচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নেত্রীর। তার এত জনপ্রিয়তা কেন? তার রাজনৈতিক দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ এবং বহুদলীয় যে চেতনা এই চেতনা কেন এখানে প্রতিষ্ঠা করেছে এটাই তাদের কষ্ট। তাকে হত্যা করল চিটাগাং সার্কিট হাউসে সেই পতাকাটি বহন করলেন তার সহধর্মিণী খালেদা জিয়া। এই কারণেই সমস্ত প্রতিহিংসা জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার ওপরে। এই যে কমিন্টমেন্ট গণতন্ত্রে, শেখ হাসিনার চেয়ে গণতন্ত্রের কমিটমেন্টে বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন চ্যাম্পিয়ন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার কথার সঙ্গে কাজের মিল রয়েছে। যেটা অঙ্গীকার করেন অঙ্গীকার থেকে বিচ্যুত হন না। এই জন্যেই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যত রাগ ঈর্ষায় যে মামলার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই কোনো সাক্ষী নেই সেই মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে রাখা হয়েছিল। আর আজকে জিয়াউর রহমানকে নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করে যুক্ত করতে চাচ্ছে ১৫ আগস্টের সঙ্গে। খন্দকার মোশতাক বাকশালের প্রভাবশালী নেতা ও আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা তিনি রাষ্ট্রপতি হলেন পাশাপাশি ক্যাবিনেট পার্লামেন্ট সবই আওয়ামী লীগের তাদেরকে তো আপনি তেমন কিছু বললেন না?

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব আরও বলেন, ৭২ থেকে ৭৫ ক্যাবিনেটে আবদুল মান্নান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, মোশতাকের ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলেন তারপরেও বিভিন্ন আমলা ও সামরিক কর্মকর্তারা পরবর্তীতে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন সে সময় তারা চাকরি করেছেন তারপরে আপনার আওয়ামী লীগের এমপি হয়েছে মন্ত্রী হয়েছে তাদেরকে তো কিছু বলেন না।

ড. এমাজ উদ্দিনের মৃত্যুতে সরকার শোকবাণী না দেয়ায় ছোট হয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, প্রফেসর এমাজউদ্দিনের ছাত্র শুধু বিএনপি নয় আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য দলের রয়েছে। শোকবাণী না দিয়ে তারা কি বড় হয়েছেন? না, তারা বড় হননি। তিনি তো রাজনৈতিক মতবাদের ঊর্ধ্বে সবার উপরে তিনি ছিলেন শিক্ষক এই অভিভাবকের ছোঁয়া যারা পেয়েছেন তারাই শুধু বলতে পারবেন তিনি কেমন মানুষ ছিলেন। আমরা আজকে এমন সংকীর্ণতায় ভুগছি যে এই রকম একজন মহীরুহের মৃত্যুতে আমরা শোক বাণী পর্যন্ত দিতে পারছি না।

আয়োজক সংগঠনের চেয়ারম্যান কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব এম জাহাঙ্গীর আলমের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় আরও বক্তব্য দেন- বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. সুকুমাল বড়ুয়া, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. আবদুল লতিফ মাসুম, বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবু নাসের মোহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, বিলকিস ইসলাম প্রমুখ।