শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : গল্পটার নাম ‘সিয়াও থৌ’, যার অর্থ চোর!
লেখকের নাম সু থোং, আমি শুনেছি এটা এই লেখকের ছদ্মনাম।
‘তু চ’, যার বাংলা প্রতি শব্দ হচ্ছে পাঠক! নামের চীন দেশের একটা জনপ্রিয় পাক্ষিক পত্রিকায় কয়েক বছর আগে এটা প্রকাশিত হয়েছিল।
গল্পটা পড়ে আমার ভালো লেগেছে। তাই অনুবাদ করেছিলাম ওটা বছর দু’য়েক আগে।
আমার ভাতিজা রাশেদকে ঐ বঙ্গানুবাদ টাইপ করতে দিয়েছিলাম। সে শেষ করে, ওটা মেইল করে আমার কাছে পাঠিয়েছে তাও বছর খানেক হয়ে গেছে!
গত সপ্তায় ওটা প্রিন্ট করেছি, মোট হয়েছে এগারো পৃষ্ঠা।
ভাবছি আমার ঋধপবনড়ড়শ বন্ধুদের পড়তে দেবো প্রতিদিন এক পৃষ্ঠা করে। এক পৃষ্ঠা মানে রাশেদের টাইপ করা এক পৃষ্ঠা, আমার হাতের লেখা নয়!
তাহলে শুরু করছি!
গল্পের নাম চোর!
আমার জন্ম সুছোয়ান প্রদেশে, আমি বড় হয়েছিও সেখানে। আমার আম্মা ছিলেন জুনিয়র স্কুলের শিক্ষিকা, আমার আব্বা ছিলেন বিমান বাহিনীর গ্রাউন্ড ক্রু। আব্বা খুব কমই বাড়ি আসতেন।
একটা ছোট্ট থানা শহরে আমরা থাকতাম। সেখানে থান ফং ছিলো আমার এক মাত্র বন্ধু, সে আর আমি সমবয়সী। ঐ সময় আমাদের বয়স কতোই বা হবে, আট কিংবা নয়!
থান ফং-দের বাসা ছিলো আমাদের বাসার ঠিক পাশেই। তার বাবা ছিলেন একজন কামার, মা ছিলেন গ্রাম থেকে আসা গৃহিণী। ঐ বাড়িতে ছিলো অনেকগুলো শিশু, তাদের মধ্যে থান ফং-ই ছিলো একমাত্র ছেলে, বাকি সবাই মেয়ে। এ থেকে বুঝা যায়, বাড়ির সবারই প্রগাঢ় আদর পেতো থান ফং।
ঐ সময়, শুধু আমিই জানতাম, থান ফং-এর চুরি করার অভ্যাসের ব্যাপারটা! ছোট থানা শহরটার সব বাসা থেকেই সে চুরি করতো। তবে আমাকে না জানিয়ে সে এই কাজগুলো করতো না। কারণ, সে আমাকে তার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে করতো। আর বাস্তবে তাকে আমিও অনেক আপদ-বিপদ থেকে রক্ষা করতাম।
একবার কোন এক বাড়ি থেকে থান ফং একটা ঘড়ি চুরি করেছিলো। তখনকার দিনে একটা ঘড়ি, এখনকার মতো এতটা সহজ লভ্য ছিলো না। ঐ বাড়ির কয়েকজনের সন্দেহের দৃষ্টি ছিলো থান ফং এর প্রতি। একদিন বাড়ির কয়েকজন মানুষ এক সাথে থান ফং-দের বাসায় এলেন। থান ফং বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো, সে ওদের বাড়ির ভিতরে ঢুকতে দেয় নাই!
থান ফং-এর বাবা-মা ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসলেন। তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না, যে তাঁদের ছেলে ঘড়ি চুরি করছে কিংবা চুরি করার মতো সাহস ওর আছে!
ঐ সময় থান ফং, আগত লোকদের উদ্দেশ্যে অশ্রাব্য গালাগালি করছিলো, আর তার বাবা একটানা থান ফং-এর কান মোলে দিচ্ছিলেন।
হঠাৎ করে থান ফং উঁচু স্বরে আমার নাম ধরে ডাকলো! সে আমাকে বেড়িয়ে আসতে বললো। আমি বেড়িয়ে আসলাম। আমি বললাম, থান ফং চুরি করেনি! আমি এটা প্রমাণ করতে পারবো!
আমি এখনও মনে করতে পারি, ঐ সময় থান ফং এর চেহারায় ফুটে উঠেছিলো অহঙ্কারের হাসি! আর ওর বাবা-মার চোখে আমি দেখেছিলাম কৃতজ্ঞতার চাউনি!
আপাতদৃষ্টিকে ভরসা করে থাং ফং এর বাবা-মা বলেছিলেন, এটা হচ্ছে আমাদের স্কুলের লি আপার ছেলে। ওর পারিবারিক শিক্ষা যথেষ্ট ভালো। ও কখনোই মিথ্যা কথা বলে না।
আমার কারণেই আপাতত এই অভিযোগের নিষ্পত্তি হলো!
ক’দিন পর, যাদের ঘড়ি হারিয়েছিলো, তাঁরা বাড়ির ভেতরেই ঘড়িটা খুঁজে পেলেন!
তাঁরা আবার থান ফং-দের বাড়ি এসেছিলেন, থান ফং এর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য!
তাঁরা বলেছিলেন যে, না বুঝে, ঠিক মতো না খুঁজেই থান ফং-কে চোর সাবস্ত করে তাঁরা থান ফং এর প্রতি অবিচার করেছেন!
তাঁরা উপহার হিসেবে থান ফং এর জন্য এনেছিলেন বড় এক বাটি সুপ।
থান ফং দুই হাতে সুপের বাটি ধরে, আমাকে ডাকলো সুপ খাওয়ার জন্য। আমাদের মুখে তখন দেখা দিয়েছে গর্বের হাসি।
তবে ব্যপারটা ছিলো এ রকম।
আমি থান ফং-কে নির্দেশ দিয়েছিলাম, চুরি করে আনা ঘড়িটা গোপনে গোপনে ওদের বাড়িতে রেখে আসতে।
থান ফং-এর ছিলো একটা ‘অমূল্য রত্ন ভাণ্ডার’!
আর সেটা ছিলো উত্তরাধিকারী বিহীন বৃদ্ধ চাং কাকার বাড়ির শুয়োরের খোয়ারটি!
এখন বলতে হাসি পাচ্ছে যে, ভিতরের ‘অমূল্য’ জিনিসগুলোর মধ্যে মূলত ছিলো : অনেকগুলো ওষুধের বোতল এবং ইঞ্জেকশনের সিরিঞ্জ, এ্যানাম্যালের কাপ, মাছি মারার রেকেট, তামার তার, লোহার তার, দিয়াশলাই, দর্জিদের সেলাই এর সময় ব্যবহার করা আঙ্গুল টুপি, লাল মাফলার, কাপড় শুকাবার হ্যাঙ্গার, শুকনা তামাকের প্যাকেট, অ্যালুমিনিয়ামের চামচ… সবই ইতঃস্তত বিক্ষিপ্ত কিছু আজেবাজে জিনিস।
থান ফং, তার ‘অমূল্য’ জিনিসগুলো আমাকে দেখতে দিত প্রায়ই।
কোন একদিন আমরা দু’জনে এক সাথে ওখানে গিয়েছিলাম। থান ফং ‘অমূল্য রত্ন ভাণ্ডারের’ ওষুধের বোতলগুলো সরিয়ে ভিতর থেকে বের করে আনলো একটা লাল রঙের খেলনা রেলগাড়ী, যেটা দেখামাত্র আমার হীন চিন্তার লোভ দমন করা কঠিন হয়ে পড়ছিলো।
থান ফং খুবই সাবধানে ধীরে ধীরে রেল গাড়িটা হাতের উপর তুলে নিয়ে বললো : “তুমি দেখ!”
সে একই কথা কয়েকবার বললো, একই সময়ে নিজের কনুই দিয়ে আমাকে ঠেকালো যাতে আমি রেলগাড়ীটার কাছে না যেতে পারি। সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললো: “তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে শুধু দেখ, ওটা কিন্তু তোমার হাত দিয়ে ধরা বারণ।”
ঐ লাল রঙের লোহার খোলসে মোড়ানো রেলগাড়ীটার ছিলো একটা ইঞ্জিন এবং চারটা বগি, ইঞ্জিনের ছিলো ধোঁয়া বের হওয়ার চিমনি, আরও ছিলো ইঞ্জিনের মধ্যে বসা ইঞ্জিন চালক। এখনকার সময়ের বাচ্চাদের কাছে এ রকম একটা রেলগাড়ী মোটেও কোন অবাক করা খেলনা নয়। কিন্তু ঐ কালে সুছোয়ান প্রদেশের একটা ছোট থানা শহরের একটা ছেলের কাছে ওটার মর্যাদা, কি আর বলি? যেন বাস্তব জগতের সবচেয়ে সেরা, সবচেয়ে সুন্দর বস্তু ছিলো ওটা।
আমার মনে আছে, আমি যেন পরিণত হয়েছিলাম এক টুকরো লোহায় যেটাকে তীব্র আকর্ষণ করছিল একটা শক্তিশালী চুম্বক। একটা নিষিদ্ধ টান অনুভব করছিলাম শুধুমাত্র ওটাকে স্পর্শ করতে। কিন্তু যত বারই এগিয়ে গেছি, তত বারই থান ফং আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলো, ধরতে দেয়নি।
আমি উত্তেজনার বশে জোড়ে বলে উঠি : “কোত্থেকে চুরি করেছো ওটা? কার জিনিস?”
থান ফং আমাকে জানালো, খেলনাটার মালিক হচ্ছে ছাং তু হাইজিন অফিসের ডাক্তার সাহেবের ছোট মেয়েটা।
কেউ শুনে ফেলতে পারে, তাই থান ফং আমাকে উঁচু গলায় কথা বলতে বারণ করলো।
সে আদর করার মতো করে রেলগাড়ীটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে হঠাৎ করেই হেসে উঠে বললো : “এটাকে চুরি বলা ঠিক হবে না। ঐ বোকার হদ্য মেয়েটা খোলা জানালার তাকে রেখেছিলো রেলগাড়ীটা।
ওটা যেন আমার জন্যই অপেক্ষা করছিলো!
আমিও চমৎকারভাবে বাইরে থেকে হাত ঢুকিয়ে ওটা উঠিয়ে নিয়ে আসলাম।”
থান ফং আমার চোখের সামনে আমাকে দেখিয়ে পকেট থেকে বের করলো একটা ছোট চবি।
খুব সাধারণ চাবি, যেটা দিয়ে স্প্রিং টাইট করা যায়।
থান ফং এর মুখে দেখা দিলো একটা মিষ্টি দুষ্টু মুচকি হাসি।
সে রেলগাড়ীটা মাটিতে রাখলো। চাবি দিয়ে গাড়িটার স্প্রিং-এ দম দিলো। এরপর আমি দেখলাম ছোট রেল গাড়িটা শুয়োরের খোয়ারে দৌড়ানো শুরু করেছে।
ছোট রেলগাড়ীটা শুধু সোজা চলতে পারে, বাঁক নিয়ে ঘুরতে পারে না।
আর রেলের হুইসেলের শব্দও করতে পারে না।
যাই হোক, আমার কাছে গাড়িরা ছিলো যেন একটা অলৌকিক বাস্তবতা!
আমার ভিতরের তীব্র বিস্ময় আমি প্রকাশ করতে চাচ্ছিলাম না। আমি বললাম : “তুমি কি মনে করেছিলে, গাড়িটা চলতে পারবে না?
দেখলে গাড়িটা কি সুন্দরভাবে চলছে।
যদি না চলতো, তবে ওটার নাম রেলগাড়ীই হতো না।”
বাস্তবে আমার মাথায় সেই বিপজ্জনক দুর্বুদ্ধির উদয় হলো সেই মূহূর্তেই।
আমি কোনভাবেই যেটা মাথা থেকে সরাতে পারছিলাম না।
আমি দৌড়ে গিয়েছিলাম ছাং তু হাইজিন অফিসের ডাক্তার এর খোঁজে। আমি তাকে বলেছিলাম যে, থান ফং ওনার মেয়ের ছোট খেলনা রেলগাড়ীটা চুরি করেছে। আমি ছিলাম আমার বন্ধুর বিরুদ্ধে চক্রান্তকারী, আসলে চক্রান্ত করার অনুভূতি মোটেও প্রীতিকর নয়।
আমার ভালো লাগছিলো না।
ঐ দিন সন্ধ্যায় আমি বাসায়ই ছিলাম। কান খাড়া করে রেখেছিলাম পাশের বাসায় কি ঘটছে শুনার জন্য।
যা আশংকা করছিলাম তাই হলো!
ডাঃ হ, তাঁর মেয়েটাকে সাথে নিয়ে থান ফং-দের বাসায় এলেন।
আমি শুনতে পেলাম থান ফং এর আম্মা কেশে গলা পরিষ্কার করে জোড়ে জোড়ে থান ফং-কে ডাকলেন।
থান ফং এর আব্বা প্রচণ্ড রাগ নিয়ে আমাদের বাসায় এলেন। তিনি আমাকে প্রশ্ন করে জানতে চাইলেন, থান ফং কোথায় গেছে।
আমি নিশ্চুপ রইলাম, থান ফং এর আব্বা এবার জিজ্ঞেস করলেন যে, ডাঃ হ এর বাসা থেকে ছোট রেলগাড়ী থান ফং সত্যিই চুরি করেছে কি না।
আমি আবারও নিশ্চুপ রইলাম।
কোন কিছুর প্রমাণ দেয়ার সাহস আমার ছিলো না।
সেদিন থান ফং এর বাবার শুকনো মুখে আমি দেখেছিলাম তীব্র রাগ! তাঁর চেহারাটা ছিলো যেন গনগনে আগুন থেকে তুলে আনা এক টুকরো লাল অতি উত্তপ্ত লোহার খণ্ড। আমার মনে হচ্ছিল ওনার প্রচণ্ড রাগ, ওনার হাত দুটোকে দিয়ে মানুষ পর্যন্ত খুন করাতে পারবে।
থান ফং এর বাবার প্রচণ্ড রাগের গগন বিদারী চিৎকার শুনে আমার খুব ভয় হলো, আমি অনুতপ্ত হলাম। কিন্তু তখন অনেক দেরী হয়ে গেছে, অনুশোচনা করার সময় আর অবশিষ্ট নাই।
ঠিক এই সময় আমার আম্মা স্কুল থেকে ফিরলেন। বাসায় ঢুকবার আগে তিনি থান ফং-দের বাড়ির দরজায় অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলেন।
আম্মাকে আসতে দেখেই আমি বাড়ির ভিতরে ঢুকেই মশারীর পিছনে লুকালাম।
আমার আম্মা আমাকে মশারীর পিছন থেকে টেনে বাইরে আনলেন।
আমি চরম অসহায় বোধ করছিলাম। থান ফং এর বাবা-মা আমার আম্মার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
আমার আম্মা বললেন, “মিথ্যা বলা যাবে না। আমাকে বলো, থান ফং ঐ রেলগাড়ীটা নিয়ে ছিলো কি না?”
আমার আম্মার সেই কঠোর মনোভাব এবং কঠিন দৃষ্টির বর্ণনা আমি দিতে পারবো না। আমার মনের দৃঢ়তা, মনের প্রতীরক্ষা ব্যবস্থা যেন সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলো।
আমার আম্মা বললেন, “সে যদি খেলনাটা নিয়ে থাকে তবে, তুমি মাথা নাড়ো উপর থেকে নীচে, যদি না নিয়ে থাকে তবে ডান থেকে বামে।”
যার অর্থ হাঁ কিংবা না বলা।
আমি হাঁ সূচক মাথা নাড়লাম।
এর পরপরই আমি দেখলাম, থান ফং এর বাবা ঠিক একটা কামানের গোলার মতোই ছিটকে বেড়িয়ে গেলেন।
থান ফং এর মা ধপাস করে আমাদের সদর দরজায় বসে পরলেন। তিনি নাক ঝাড়লেন, বেশ খানিকটা সর্দি ফেললেন। তারপর কেঁদে কেঁদে অনুযোগ করলেন।
তিনি ঠিক কি কথা বলেছিলেন এখন আর আমার হুবহু মনে পড়ছে না। কিন্তু তাঁর কথার মধ্যে অভিযোগ ছিলো, যে তাঁর পুত্র সঙ্গদোষে নষ্ট হয়ে গেছে, এ জন্যই পরিবারের সুনামহানীকর কাজ করেছে।
থান ফং এর মায়ের ঝগড়াটে উস্কানীমূলক কথা শুনে আমার আম্মা যথেষ্ট রাগ করলেন। কিন্তু তাঁর শিক্ষা তাঁকে প্রতিপক্ষের অমার্জিত কথার উত্তর দিতে বিরত রাখলো।
আমার আম্মার ভিতরের সম্পূর্ণ রাগ গিয়ে পড়লো আমার উপর…. তাঁর হাতে ছিলো নোট খাতা, তা দিয়েই আমার গালে দিলেন চড়।
কোন এক জন বারান্দায় টাঙ্গানো বড় ঘন্টা ঘড়িতে বাড়ি দিলো, পূণ্য অর্ঘ দালানের সামনে ভীড় করা জনতা মাথা নীচু করে কুর্নিশ করে অভিবাদন জানালো, ওরা আমাকে অভিবাদন করেছে।
এবার আমার পালা ওদেরকে প্রত্যাভিবাদন জানানো, তাই আমিও মাথা নীচু করে ওদের উদ্দেশ্যে কুর্নিশের ভঙ্গি করলাম।
নিঃশব্দ নীরবতার মাঝে প্রধান পুরোহিতের গুরু গম্ভীর কন্ঠস্বর ভেসে আসে : “পরলোকগত সম্রাটের ওয়াসীয়ত নামা।
রাজ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী কে হবেন, কে হবেন, কে হবেন….।”
পুরোহিতের কথার প্রতিধ্বনি ভেসে এলো চার দিক থেকে।
জনতার অভিবাদনের প্রতি উত্তর স্বরূপ আমার দাদীও আমার পাশে থেকে, আমার পরে, জনতার উদ্দেশ্যে মঞ্চের মেঝের উপর লুটিয়ে পরে প্রত্যাভিবাদন জানালেন। আমি লক্ষ্য করলাম, তাঁর কোমর বন্ধে ঝুলানো আছে জেড পাথরে চিতা বাঘের মুখের অবয়বের কারুকাজ সংবলিত রাজ দণ্ড! যা কিনা রাজ ক্ষমতার নির্দেশক।
রাজ দণ্ডটি ওনার সাথেই লুটিয়ে মঞ্চের মেঝে স্পর্শ করেছে, যেটা এই মুহূর্তে আছে আমার কাছ থেকে সামান্য একটু দূরে! আমার মনযোগ সব কিছু থেকে সরে গিয়ে কেন্দ্রীভূত হলো এক জায়গায়!
আমি সংগোপনে আমার হাতটা বাড়িয়ে মুঠ করে ধরলাম রাজ দণ্ডটা, আমার ইচ্ছা করছে দাদীর কোমর বন্ধ থেকে ওটা টেনে ছিঁড়ে ফেলতে! কিন্তু আমার দাদী সতর্ক মানুষ, তিনি আমার ইচ্ছাটা আঁচ করতে পেরেছেন!
তিনি আমার হাতটা চেপে ধরলেন? খুব আস্তে, রাজকীয় ভঙ্গিমায় তিনি বললেন, “তুয়ান পাই, তোমার বাবার উত্তরাধিকার নামায় কি আছে সেটা মনযোগ দিয়ে শোনো!”
আমি শুনতে পেলাম, পুরোহিত হঠাৎ করেই পাঠ করলেন, আমার নাম ! (চলবে)