শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : গল্পের নাম ‘হোং ফেন’, আমি যার ভাবার্থ করেছি ‘লাল প্রসাধনী’! এই গল্পটাকে ছোট গল্পই বলা যায়, তবে গল্পটা আকারে বেশ বড়। গল্পের লেখক সু থোং, এই নামটি লেখকের ছদ্মনাম। ‘লাল প্রসাধনী’ গল্পের প্রেক্ষাপটের সময়কাল হচ্ছে গত শতাব্দীর পঞ্চাশ দশক। গল্পটার শুরু করছি, পাঠকদের অনুরোধ করছি গল্পটা পড়ার জন্য!

(পূর্ব প্রকাশের পর)

সৈনিকটি সিয়াও অ-র হাতের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে কি যেন বললো, তারপর স্থান ত্যাগ করলো, একটু পরে সিয়াও অ শুনতে পেলো ঐ সৈনিকটি গান গাইছে : মুক্ত অঞ্চলের আকাশটা রোদ ঝলমলে, মুক্তাঞ্চলের মানুষ অবগাহন করে সুখশান্তির সরোবরে!

প্রায় আধা ঘন্টা পরে, ডিউটিতে থাকা সৈনিকটি গুদামের ভিতরে ঢুকলো, সে দেখতে পেলো, সিয়াও অ গুদাম ঘরের লোহার কড়িকাঠের সাথে দড়ি বাঁধছে। তৈরী করছে একটা ফাঁস, খুব ধীরে ধীরে নিজের মাথাটা ফাঁসের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে। সৈনিকটি শঙ্কিত হয়ে চেঁচিয়ে উঠলো, আট নম্বর! খবরদার, তুমি নড়ো না! সৈনিকটি খুব দ্রুত উপরের দিকে তাগ করে বন্দুকের গুলির ফাঁকা আওয়াজ করলো। সিয়াও অ ঘাড় ফিরিয়ে সৈনিকটির দিকে তাকালো, সে হাত দিয়ে গলার রশিটা আড়াল করার চেষ্টা করে বললো, তুমি গুলি করেছো কেনো? আমি তো লুকিয়ে পালিয়ে যাচ্ছি না। সৈনিকটি তাড়াতাড়ি দৌড়ে এসে রশিটা ধরে ফেললো, তুমি বলো, তুমি কি মরতে চাচ্ছো? সিয়াও অ ভাবলেশহীন অভিব্যক্তি নিয়ে মাথা নাড়লো, আমি মরতে-ই চাই, আমি ত্রিশটা বস্তা সেলাই-এর কাজ শেষ করতে পারি নাই, তুমি বলো, আমি আর কি করতে পারি?

ব্যারাকের ভিতরের সবাই গুলির শব্দ শুনে এ দিকে ছুটে আসলো। পতিতা মেয়েগুলো জানালার ফাঁক দিয়ে ভিতরে তাকালো। রুই ফং বললো, সিয়াও অ, ঐ ছেলেটি কি তোমাকে গুলি করেছে? তরুণ বয়সের একজন সেনা অফিসার কয়েকজন সিপাহী সাথে নিয়ে ছুটে এসে সিয়াও অ-কে ঠেলে ধাক্কাতে ধাক্কাতে পুরনো অস্ত্রাগার গুদামের বাইরে নিয়ে আসলেন। সিয়াও অ মুখ ঢেকে কাঁপতে কাঁপতে বেড়িয়ে এলো। সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, ত্রিশটা পাটের বস্তা সেলাই করার কাজ আমি শেষ করতে পারি নাই। এক মাত্র মরণ ছাড়া আমার তো আর কোন গতি নাই! সিয়াও অ-র কানে আসলো পতিতা মেয়ে গুলোর দুঃখ-বিলাপ আর সমবেত কান্নার শব্দ। সেনা কর্মকর্তাটি হুঙ্কার দিয়ে উঠলেন, কান্নাকাটি করা যাবে না, যে-ই আবর কান্না শুরু করবে, তাকে-ই খতম করা হবে! সাথে সাথে-ই কোন একটা মেয়ে উচ্চ স্বরে বলে উঠলো, মরতে দেয়া হবে না, কাঁদতেও দেয়া হবে না। এমন দিন কি ভাবে কাটাবো? এর চেয়ে বরং আমাদের সকলকে-ই মেরে ফেলো! ঠিক বুঝা গেলো না, কার উস্কানিতে যেন পতিতা মেয়েদের একটা ঝাঁক ছুটে এসে সেনা অফিসার ও সিপাহীদের পা জড়িয়ে ধরলো, ওরা টেনে ছিঁড়ে ফেলার উপক্রম করলো সৈনিকদের জামা। কেউ কেউ সিপাহীদের প্যান্টের চেইন ধরে টানাটানি আর চিমটি কাটা শুরু করলো। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই গোটা ব্যারাকে উদ্ভব হলো চরম বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির। দূরের হুইসেল টাওয়ারের সার্চ লাইট গুলো জ্বলে উঠলো। বন্দুকের ফাঁকা গুলির আওয়াজও শুনা গেলো বেশ কয়েক বার। সিয়াও অ লাফ দিয়ে একটা দেয়ালের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালো। সে-ই তো যেন বারুদে আগুন দিয়ে এমন যুদ্ধ পরিস্থিতির সূচনা করেছে। ওর ঐ কাজের ফলাফল যে এমন হবে, তা সে কল্পনাও করে নাই!

পতিতাদের লেবার ক্যাম্পে ঘটা এই রায়ট বা দাঙ্গা পরিস্থিতি তৈরী হওয়ার খবর খবরের কাগজেও এসেছিলো। এটা ছিলো ১৯৫০ সালের বসন্তের শেষ ভাগের একটা ঘটনা। পত্রিকার খবর সাধারণত খুব সংক্ষিপ্ত আর সাধারণ প্রতিবেদন হিসাবেই আসে। প্রতিবেদনে সিয়াও অ-র নাম প্রকাশ করা হয় নাই? আর তাই দাঙ্গার মূল হোতা যে সিয়াও অ, তা কেউ-ই বুঝতে পারে নাই! (ক্রমশ)

৭.
পরদিন সকালে সিয়াও অ-কে লেবার ক্যাম্প হেড কোয়ার্টার্স থেকে ডেকে পাঠানো হলো। ওখানে এসেছেন কয়েক জন নারী কর্মকর্তা। তাদের সবারই আছে কানের লতি বরাবর সমান করে ছাটা চুল। তারা সবাই চেহারায় একটা অদ্ভুত ভাব এনে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সিয়াও অ-র দিকে তাকালেন। পরস্পরের সাথে কানে কানে কি যেন বললেন। তারপর শুরু হলো সুদীর্ঘ আলাপ, কথাবার্তা আর প্রশ্নবান!

রাতে সিয়াও অ-র ভালো ঘুম হয় নাই। সে যখন সচেতন হয়ে উপলব্ধি করলো যে, এত সব ঝড়-ঝাপটা আর ঝামেলার হেতু সে নিজেই, তখন থেকেই উদ্বিগ্নতা তাকে পেয়ে বসলো। যদি ওরা বন্দুকের ট্রিগার চেপে গুলি করে ওকে মেরে ফেলতো তাহলেও বোধ হয় মন্দ হতো না! কিন্তু এখন যদি তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে সিয়াও অ-কে পাটের বস্তা গোছগাছ করার কাজসহ চল্লিশটা বস্তা কিংবা পঞ্চাশটা পাটের বস্তার মুখ সেলাই করতে দেয়, তাহলে কি হবে? ওকে আবার ঢুকতে হবে অচল অবস্থার আরেকটা কানা গলিতে। যদি ছিউ ই থাকতো এখানে, তাহলে ছিউ ই ওকে সাহায্য করতো। কিন্তু হায়! ছিউ ই তো ওকে একা ফেলে রেখে পালিয়ে গেছে! জেরা করার মতো কথাবার্তা চললো এক টানা সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত! শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রায় পুরো সময়টাই সিয়াও অ বার বার অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছিলো। সে মাথা নীচু করে পায়ের আঙ্গুলগুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো। তার নজরে আসছিলো পায়ে যে মৌজা জোড়া পরে পান্নার মেঘ মহল্লা থেকে বেরিয়ে এসেছিলো, সেই জোড়ার একটা মৌজায় ছিদ্র হয়েছে, ছিঁড়ে গেছে, দেখা যাচ্ছে ফুটা দিয়ে বেরিয়ে আসা ফ্যাকাশে পায়ের আঙ্গুল!

সিয়াও অ মেহেরবানি করে তোমার অভিজ্ঞতার কথা বলো। একজন মহিলা কর্মকর্তা সিয়াও অ-র দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বললেন, তুমি ভয় পেয়ো না, আমরা তো তোমার বোনের মতো, একই শ্রেণীর মানুষ!

সিয়াও অ-র শরীরে একে বারেই কোন বল নাই, সে মাথা নেড়ে বললো, আমি কোন কিছু বলতে চাচ্ছি না। আমি ত্রিশটা পাটের বস্তার মুখ সেলাই করে প্রতিদিনের কাজ শেষ করতে পারি না, এই-ই —– এর বাইরে আমার আর কিছু বলার মতো কথা নাই!

তোমার এমন আচরণ নতুন করে জীবন গড়ে মানুষ হওয়ার কাজের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। খুব নরম গলায় নারী কর্মকর্তাটি বললেন, আমরা শুনতে চাই, তুমি কেনো মরতে চেয়েছিলে! তোমার মনে কোন তিক্ত ক্ষোভ থাকলে আমাদেরকে বলো। আমরা সবাই একই শ্রেণীর মানুষ, সবাই কষ্টদায়ক তিক্ত জীবন থেকে উঠে এসেছি।

আমি তো আগেই বলেছি, আমার হাতের আঙ্গুলে ফোস্কা পড়েছে, আমি ত্রিশটা বস্তার মুখ সেলাই করতে অক্ষম, এর বদলে আমি শুধুই যেতে পারি মৃত্যুর দিকে!

পতিতালয়ে তুমি হয়েছো শোষণ-বঞ্চনার চাপের শিকার, বেশ কয়েক বছর ধরেই, তোমার হৃদয়ে জেঁকে বসেছিল তিক্ততা আর ঘৃণা। একে প্রতিহত করার মতো শক্তি তোমার ছিলো না। তোমার ভয়, নতুন ভাবে আবার না শত্রæর হাতে গিয়ে পড়তে হয়! তাই তুমি মরে যাওয়ার চিন্তা করেছো, আমি কি ঠিক বলছি?

আমি জানি না । সিয়াও অ তখন পর্যন্ত মাথা নীচু করে ছিঁড়ে যাওয়া মৌজার ছিদ্রের দিকে তাকিয়ে ছিলো, সে বললো, আমার খুব ভয় লাগছে।
তুমি একেবারেই ভয় পেয়ো না। এখন কেউ-ই তোমার কোন ক্ষতি করতে আসবে না। তোমারা শ্রম অনুশীলন শিবিরে এসেছো, নিজেদেরকে বদলে নিতে, সংশোধন করতে। তোমারা এখন সংগ্রাম করছো যত দ্রæত সম্ভব নতুন মানুষ রূপে ভালো মানুষ হিসেবে সমাজে ফিরে আসতে। পতিতালয় হচ্ছে পুরনো চীনের উৎপাদিত দ্রব্য যা এখন অচল। তোমরা এরপরে কি করবে ভাবছো? তোমারা কি শ্রমিক হতে চাও, না কি দোকানে জিনিস পত্র বিক্রির কাজ করতে চাও?

আমি জানি না, একটা কিছু হলেই চলবে —- একটা কিছু করলেই চলবে, তবে শুধু এমন কোন কাজ নয়, যা খুব ক্লান্তিকর!
ঠিক আছে। সিয়াও অ, তুমি এখন বলো, তুমি কি ভাবে পতিতালয়ের মাসীর খপ্পরে পড়েছিলে? আমরা তোমাকে সহায়তা করতে চাই। আমরা চাচ্ছি আগামী মাসে যে নারী-সম্মেলন হতে যাচ্ছে, তাতে তুমি যোগ দাও। তুমি মাসী এবং পতিতালয়কে অভিযুক্ত করবে তোমাকে অপমানিত ও নিষ্পেষিত করার দায়ে। তুমি ঐ সম্মেলনে কথা বলবে।

আমি কিছুই বলতে চাচ্ছি না। সিয়াও অ বললো, এত মানুষের সামনে এমন কাজ নিয়ে আলোচনা কি ভাবে করবো? আমার মুখ দিয়ে এমন কথাগুলো কি ভাবে আসবে?

ঐ নোংরা কাজের বিষয়ে তোমাকে কিছু বলতে হবে না। মহিলা কর্মকর্তার চেহারা খানিকটা লাল হয়ে উঠলো, তিনি ব্যাখ্যা করে বললেন, তুমি কি বুঝতে পারছো? তুমি ওদের অভিযুক্ত করতে পারো, যেমন, তুমি পতিতালয়কে দায়ী করতে পারো, কি ভাবে পতিতালয় প্রতারণা করে তোমাকে ওটার ভিতরে ঢুকিয়েছে। তুমি ওখান থেকে পালাবার চেষ্টা করলে ওরা তোমাকে কি রকম ভাবে মারধর করেছে। একটু বাড়িয়ে বললেও কোন অসুবিধা নাই, আসল কথা হচ্ছে, শত্রুকে শোধ করতে দাও তোমার ঝরানো রক্তের ঋণ!
সবশেষে কয়েকটা স্লোগান দিও, আর তাতেই চলবে!

আমি ওদেরকে অভিযুক্ত করতে পারবো না, সত্যিই পারবো না! ভাবলেশহীন ভাবেই সিয়াও অ বললো, আপনারা হয়তো জানেন না, লাল রঙ্গ দলানে আমি চুক্তি পত্র স্বাক্ষর করেই নিজেকে বিক্রি করেছি। আরও বলছি, ওরা কখনও-ই আমাকে মারে নাই, আমার গায়ে হাত তুলে নাই! আমি নিয়ম মেনেই অতিথিদের সঙ্গ দিয়ে টাকা রোজগার করেছি। ওরা কেনো আমাকে মারধর করবে!
তুমি যে ভাবে বলছো, তাতে কি মনে হচ্ছে না যে, তুমি স্বেচ্ছায় লাল রঙ্গ দালানে গিয়েছো?

ঠিক কথা, আমি ওখানে নিজের ইচ্ছায়-ই গিয়েছি। সিয়াও অ আবার মাথা নীচু করলো, তারপর বললো, আমার বয়স যখন ষোল বছর তখন আমার বাবা মারা যান। আমার মা আবার বিয়ে বসে চলে গেছে নতুন সংসারে। আমার তখন অন্য কোন উপায় ছিলো না, ছেড়ে আসতে হয়েছিলো গ্রাম-দেশের বাড়ী। আমি এসেছিলাম লাল রঙ্গ দলানে জীবিকার খোঁজে। কেউ আমাকে রাখে নাই, থাকার জায়গা দেয় নাই! আমাকে নিজের টাকা নিজেই উপার্জন করতে হয়েছে নিজের বেঁচে থাকার জন্য!
রেশম তন্তু পাকিয়ে সুতা তৈরীর কারখানায় গিয়ে কাজে লেগে যাওনি কেনো? আমরাও তো গতর খাটানো কষ্ট সাধ্য কাজ করে খেয়েছি। আমরা সবাই তো রেশম গুটির সুতা তৈরীর কারখানায় কাজ করতে ঢুকেছি, আমরাও তো টাকা রোজগারই করেছি!

আপনারা তো কষ্ট করতে ভয় পান না। আমি কিন্তু কষ্টকর কাজকে ভয় পাই। সিয়াও অ-র চোখের দৃষ্টিতে ফুটে উঠলো সীমাহীন দুঃখের ছাপ। সে হঠাৎ করেই মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো। কাঁদতে কাঁদতে বললো, আপনারা হচ্ছেন অবস্থাপন্ন বিত্তবান ঘরের মেয়ে। আর অন্য দিকে, আমার জম্মই তো হয়েছে অনাদরে অবহেলায়, দরিদ্র ঘরে, আমি তো জম্মগত ভাবেই একটা সস্তা দ্রব্য। আমার তো আর কোন উপায় নাই। আমি তো জানি না, কেনো জম্ম থেকেই আমি হয়েছি একটা মূল্য হীন জিনিস!

মহিলা কর্মকর্তারা এক পর্যায়ে বাক্যহারা হয়ে গেলেন। তারা সিয়াও অ-কে আবারও কিছু একটা বলতে গিয়েও বললেন না, পিছিয়ে আসলেন। এরপর ভিতরে আসলেন কয়েকজন সামরিক পোশাক পরিহিত শৃঙ্খলা রক্ষক সেনা কর্মকর্তা। এদের মধ্যে একজন অফিসার একটা ছোট থলে সিয়াও অ-র পায়ের দিকে ছুঁড়ে মারলেন, তারপর বললেন, আট নম্বর, তোমার বড় বোনের পাঠানো উপহার দ্রব্য এটা। থেলেটার বাইরে থাকা সিল্কের ফিতা দেখেই সিয়াও অ বুঝতে পারলো যে, ছিউ ই কারো মাধ্যমে ওটা এখানে পাঠিয়েছে। সে থলের মুখটা খুললো, ওটার ভিতরে ভরা আছে সিল্কের মৌজা, সাবান, ঘাস থেকে তৈরী টিসু পেপার, আরও আছে অনেক রকম শুকনা মিষ্টি ও পিঠার মতো খাবার। সিয়াও অ অনুভব করলো, ছিউ ই সত্যিই ওকে ভুলে যায়নি। বিশাল এই জগৎ তো খামখেয়ালির চঞ্চলতায় ভরা, কে রাখে কার খোঁজ! তবে এতো কিছুর মাঝেও ছিউ ই আর সিয়াও অ-র ভগ্নীসুলভ বন্ধুত্বের ভিত্তি যে খুব দৃঢ়, সেটা বলা যায় নিঃসন্দেহেই! সিয়াও অ থলে থেকে একটা কাগজে মোড়ানো শুকনা মিষ্টি তুলে নিয়ে বাইরের আবরণ ছুটিয়ে মিষ্টির উপরের কাগজ খুলে মিষ্টিটা মুখে পুরে নিলো। এই ছোট মিষ্টির টুকরাটা কোন এক ভাবে যেন ঐ মূহুর্তেই জীবনের প্রতি সিয়াও অ-র আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারলো! তারপর মিষ্টিটা চিবাতে চিবাতে সে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে।হেঁটে ক্যাম্পটা অতিক্রম করার সময় স্বাভাবিক ভাবেই ওর কোমরটায় খানিকটা ঢেউ খেলে মোচর দেয়ার ভঙ্গি ফুটে উঠলো! সিয়াও অ হচ্ছে একটা চিকন-মাঝারি গড়নের মেয়ে, তার কোমরটা যেন উইলো গাছের শাখা —- নরম আর দুর্বল! পাটের বস্তার গুদামের দরজায় পৌঁছে সিয়াও অ আরেকটা মিষ্টির টুকরার মোড়কের কাগজ খুললো। সিয়াও অ-র নজরে আসলো সদর দরজার সামনে পীচ গাছের নীচে দাঁড়িয়ে আছে একজন পাহারারত সৈনিক। সিয়াও অ ঐ সৈনিকটির দিকে তাকিয়ে একটা মনোমুগ্ধকর হাসি হেসে বললো, স্যার! আপনি কি একটা শুকনা মিষ্টি খাবেন? সৈনিকটি ভ্রæ কুঁচকিয়ে মুখ বাকা করে বললো, কে খাবে তোমার মিষ্টি? কখনো-ই না, অসহ্য! (ক্রমশ)

৮.
শ্রম অনুশীলন শিবিরে সিয়াও অ-র জন্য জিনিসপত্র ভরা উপহার দ্রব্যের থলেটা দিতে গিয়েছিল লাও ফু। শুরুতে সে যেতে চায় নাই। কিন্তু হতাশাগ্রস্ত ছিউ ই-র একগুঁয়ে পিড়াপিড়ির কারণে শেষ পর্যন্ত সে রাজী হয়, ছিউ ই বলেছে, লাও ফু, তোমার মনুষ্যত্ব বোধ আছে কিনা তা এবার বুঝা যাবে। লাও ফু বললো, কোন্ সিয়াও অ-র কথা বলছো? ঐ চিকন রোগা হলুদ চুলের মেয়েটা কি? তুমি তো মোটা মানুষ পছন্দ করো, চিকন মেয়ে পছন্দ করার মানুষও পৃথিবীতে আছে, সেই কারণে করো সম্পর্কে খারাপ কিছু বলো না, সিয়াও অ তো সব সময়ই তোমার সম্পর্কে ভালো কথা বলতো, (চলবে)