শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : নিরাপদ রাজ কুমার পদবী ধারী তুয়ান সুয়েন : দেহ থেকে ধর বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিলো। ধর রাখা হয়েছিলো নিরাপদ রাজ কুমারের বাস ভবনে, দেহটা ফেলে রাখা হয়েছিলো রাস্তায়!
বিলাসী রাজ কুমার পদ মর্যাদা ধারী তুয়ান মিং : হাত পা কেটে দেহকে টুকরা টুকরা করে ফেলে দেয়া হয় ওর নিজ বাস ভবনের চত্বরে থাকা পানির কুয়া-র মধ্যে।
পূর্বাঞ্চলের সামন্ত রাজা তা চুন : ফং কুয়ো দেশের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার সমরে নিহত হয়েছেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে। পরবর্তী কালে লোক জন তার কবরের উপর নির্মাণ করেছে পূর্বাঞ্চল সুবাদারের সৌধ।
দক্ষিণ অঞ্চলের সামন্ত রাজা চাও ইয়ো : ফং সেনাদের হাতে দেশের পতনের পর বর্মহীন অন্তর্বাস পরিহিত নিরাপত্তা রক্ষীর হাতে নিহত হন।
উত্তর অঞ্চলের সুবাদার তা ইউ : দুই হাত , দুই পা আর মাথাটাকে পাঁচটা ঘোড়া দিয়ে বিপরীত দিকে টেনে দেহটাকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলো ফং কুয়ো দেশের সৈন্যরা, পরে ওর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ গুলো মদের মটকার মধ্যে চুবিয়ে রেখেছিলো নগরবাসীরা।
দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সুবাদার তা ছিং : ইয়াও কুয়ো দেশে পালিয়ে যাওয়ার পথে ধাবমান তীরের আঘাতে মারা গেছেন।
উত্তর পূর্ব অঞ্চলের সুবাদার তা তঙ : স্বর্ণের টুকরা গলাধঃকরণ করে আত্মহত্যা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী যুয়ো লিং : ফং রাজার সামনে কুর্নিশ করার সময় ফং রাজা নিজ হাতে ছুরি দিয়ে তাকে হত্যা করেন, পরে মানুষ জন ওর উপর থুথু নিক্ষেপ করেছে!
ভূতপূর্ব প্রধানমন্ত্রী ফং আও : দেয়ালে মাথা আর কপাল ঠুকে ঠুকে মারা গেছেন; যিনি ছিলেন এক প্রজম্মের মধ্যে সিয়ে দেশের অনন্যসাধারণ প্রধানমন্ত্রী।
সম্রাজ্ঞী হুয়াং ফু শ্র : আত্মহত্যা করেছেন, তাঁর মৃত্যু হয়েছিলো সাদা রেশম কাপড়ের ফাঁস গলায় ঝুলিয়ে।
যুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাং সিউ : সিয়ে দেশের পতনের পর উদ্বেগ, দুঃচিন্তা আর অতিরিক্ত ক্ষোভের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কফের সাথে রক্তপাত হতে থাকে, এই অসুখেই তিনি মারা যান।
ধর্মীয় আচার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী চ্রু ছাং : দেশের অপমান জনক পতন সহ্য না করতে পেরে পুরো পরিবারের সব সদস্যসহ এক সাথে বিষাক্ত মদপান করে মারা গেছেন!
রাজধানী রক্ষার দায়িত্ব প্রাপ্ত সম্মুখ সমরের রাজকীয় সেনা দলের যোদ্ধা হাই চোং : সব্জীর বাজারে ওর ফুলে উঠা মৃত দেহ পাওয়া গিয়েছিলো, মৃত্যুর কারণ স্পষ্ট নয়।
৫.
আমার সিয়ে দেশ! আমার মনোরম, সুন্দর —– কিন্তু ঈশ্বর প্রদত্ত সত্তাপে বিপর্যস্ত দুর্ভাগা সিয়ে দেশ, এখন এরই মধ্যে হয়ে গেছে অস্তিত্বহীন! এটা তো ছিলো প্রকৃতির সাথে নিবিড় ভাবে একাত্ম একটা দেশ, আর এখন অনিবার্য ভাবেই মিশে গেছে ফং দেশের সীমানার মধ্যে, যা কিনা বহু দার্শনিকের অশুভ ভবিষ্যৎ বাণীকে রূপ দিয়েছে বাস্তবতায়!
ফং কুয়ো দেশ থেকে আগত শাসনকর্তা সিয়ে দেশের রাজধানী শহরের একটা সহজ নাম দিয়েছেন : ‘ছাং চৌ’! এ বছর বসন্ত কালে ফং দেশ থেকে অনেক কারিগর,
শিল্পী, মিস্ত্রিরা এসেছে। নির্মাণ করতে শুরু করেছে অনেকগুলো অদ্ভুত গোল আকৃতির বাসা-বাড়ী, দালান, খিলান আকৃতির তোরণ এবং মঠ-মন্দির! সব জায়গায়ই শোনা যাচ্ছে হাতুড়ি দিয়ে পেরেক ঠুকার শব্দ এবং আরও কানে আসছে ফং দেশের মানুষ জনের খুব দ্রæত উচ্চারণে বলা দুর্বোধ্য অপভাষা! ওরা সিয়ে দেশের সব রকম চিহ্ন একে বারেই ধুয়ে মুছে পরিষ্কার নিশ্চিহ্ন করে ফেলতে চাচ্ছে! ছাং চৌ-র সাধারণ মানুষ এখন তাদের ঐতিহ্যের পোশাক পরিচ্ছদ বদলিয়ে ফেলে পরিধান করা শুরু করেছে ফং দেশের জটিল, ভারী কাজ কর্মের জন্য অনুপযোগী অসুবিধা সৃষ্টিকারী অতিরিক্ত ঢোলা পোশাক! সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পথ খুঁজে নিয়ে চলা ফেরা করে শহরের মানুষ জন! তাদের অভিব্যক্তি দেখে মনে হয়, তারা হয়ে গেছে ভাবলেশহীন, ক্লান্ত-শ্রান্ত! তাদের সম্পর্কে বলা যায়, টালমাটাল অবস্থার অশান্তির জীবন —– এখন পর্যন্ত চলছে বিরামহীনভাবেই! সিয়ে দেশের রাজধানী সিয়ে চিং কিংবা ছাং চৌ —— নাম যেটাই হোক না কেনো, এই শহরে এই মানুষগুলো বসবাস করেছে প্রজম্মের পর প্রজম্ম ধরে। তাদের এখন চলাফেরা আর নিত্যদিনের কাজ কর্ম করতে হয় অতি সাবধানে, সতর্কতার সাথে!
আমার কাছে মনে হচ্ছে একটা অনাথ আত্মা যেন সিয়ে রাজ প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে! এই ধ্বংসাবশেষ রূপী সম্পত্তিটি ছাং চৌ-র সাধারণ মানুষের কাছে যেন মুক্তা ও অন্যান্য রত্ন পাথর সংগ্রহ করার একটা স্বর্গ রাজ্য, যেখানে মানুষ জন প্রবেশ করে খুবই ধীর পদক্ষেপে সম্মানের সাথে। এক লোক একটা বকের গলার আকৃতির রূপার কেতলির জন্য অবিরাম ঝগড়া করে যাচ্ছে, শেষ পর্যায়ে শুরু হয়েছে হাতাহাতি, যাতে সম্পৃক্ত হওয়া মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে! ঐ বলিষ্ঠ যুবক বকের মুখের আকৃতির কেতলিটা বগল দাবা করে প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময়, বেশ কয়েক জন মহিলা ও শিশু ইট ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে ওর দিকে ছুঁড়ে মারা শুরু করেছে। আমি দেখতে পাচ্ছি একটা ছেলে, মানুষের ভীড় থেকে খানিকটা দূরে বসেছে এক গাদা ভাঙ্গা-চোরা টালির স্তুপের উপর, গভীর মনোযোগ দিয়ে একাগ্র চিত্তে কি যেন খুঁড়ে বের করছে। কিছুক্ষণ পর আমি নীরবে ঐ ছেলেটির ঠিক পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম, ওর কায়িক পরিশ্রমকে মনে মনে প্রশংসা করছিলাম আমি। ছেলেটিকে দেখে মনে হয় ওর বয়স বারো কিংবা তেরো বছর হবে। ওর মুখমন্ডলে লেগে আছে ধূলা, ছাই আর কাদা, সব মিলিয়ে অসহ্য রকম নোংরা হয়ে আছে ওর অবয়ব এবং শরীর। ওর কালো রঙের চোখের মনিতে আছে সতর্কতার চিহ্ন, অভিব্যক্তিতে ফুটে উঠেছে শঙ্কা। সে ভয় পাচ্ছে! কারণ সে ভেবেছে, আমি যদি না আবার ওর খুঁড়ে বের করা মূল্যবান দ্রব্য জোর করে কেড়ে নিয়ে যাই! সে খুব দ্রæত তার গায়ের জামাটা খুলে পায়ের নীচে স্তুপ করে রাখা ওর উদ্ধার করা জিনিসগুলো ঢেকে ফেললো!
“আমি তোমার কোন জিনিসই নিয়ে যাবো না, আমি তো কোন কিছুই চাইছি না!”, আমি আমার হাত প্রসারিত করে ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। আমি তাকে দেখালাম, আমার পরিষ্কার হাত দু’টো, যা প্রমাণ করছে, আমি এখানে এসে ধ্বংসস্তুপের নীচের কোন কিছু নিয়ে ঘাটাঘাটি করি নাই! আমি বললাম, “তুমি তো অনেক ক্ষণ ধরেই খুঁড়াখুঁড়ি করছো, খুঁড়ে কি কি জিনিস বের করেছো?”
ঝিঁঝি পোকার কৌটা! ছেলেটি পায়জামার ভিতরে ঊরুসন্ধিতে হাত দিয়ে টেনে বের করলো একটা সোনার কলাই করা পরিষ্কার কাদা মুক্ত চিনামাটির কৌটা। সে ওটা দু’হাত দিয়ে উঠিয়ে দেখাবার সময়, আমার চোখের দৃষ্টি ওটাকে চিনতে পারলো, প্রাসাদের ভিতরে আমার ছোট বেলায় ওটা ব্যবহৃত হতো, আমার পোষা ঝিঁঝি পোকাদের রাখার নিমিত্তে!
“আর কি উদ্ধার করেছো খনন করে?”
“পাখীর খাঁচা!”, সে তার জামা দিয়ে ঢেকে রাখা কিছু একটা টেনে বের করে আমাকে দেখালো, ওখানে আছে দুইটা ফুলের নকশা কাটা জাল দিয়ে ঘেরা পাখীর খাঁচা। খাঁচা দু’টির আকৃতি ভারী কোন জিনিসের চাপে এরই মধ্যে বিকৃত হয়ে গেছে। কিন্তু আমি ঠিকই চিনতে পারছি, বহু দিন আগে এই জোড়া পাখীর পিঞ্জর শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহের ভিতরে ঝুলিয়ে রাখা হতো। এমন কি আমার এটাও মনে আছে, যে দিন আমাকে শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহ ত্যাগ করতে হয়েছিলো সে দিনও এই পিঞ্জিরার মধ্যে ছিলো উজ্জ্বল লাল ঠোঁট আর সবুজ পালক বিশিষ্ট চমৎকার এক জোড়া চড়ুই পাখী!
আমি ঐ ছেলেটির দিকে তাকিয়ে হাসলাম। ওর পক্ষ থেকেই পাখীর খাঁচাটাকে আবার ঢেকে দিলাম। আমি বললাম, “এটা হচ্ছে পঞ্চম সিয়ে সম্রাটের ছোট বেলার খেলনা —- একটা খেলার সামগ্রী! এটা হতে পারে মহামূল্যবান একটা কিছু, আবার হয়তো বা এর এক পয়সার মূল্যও নাই! তুমি এটা রেখে দাও!”
“তুমি কে?”, ছেলেটি সন্দেহ ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি কেনো ধনরতেœর খোঁজে এখানে খুঁড়াখুঁড়ি করতে আসছো না?”
“আমিই তো সেই ব্যক্তি, যে মানুষটি ধনরত্নগুলো লুকিয়ে রেখেছে এখানে!”, আমি খুব নীচু স্বরে ছেলেটিকে এই কথাগুলো বললাম।
সতেরো জন দড়াবাজ শিল্পীকে দাফন করা হলো ছাং চৌ-র একটা নামহীন কবরস্থানে। ওটা হচ্ছে আগের জমানার একটা শস্য গুদামের ধ্বংসাবশেষ। সিয়ে দেশের বিশাল শস্য গুদামে জমা করা খাদ্য শস্য যুদ্ধের বিশৃঙ্খলায় এরই মধ্যে লুন্ঠিত হয়েছে, পড়ে আছে খালি হয়ে! খালি মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেকগুলো খড়ের মাদুর। গুদামের ছাদটা ঢেকে গেছে গজিয়ে ওঠা বড় বড় উলু ঘাসে। আমি ইয়েন লাঙ, ইউ সুয়ো এবং অন্যান্য দশটিরও বেশি দড়াবাজ শিল্পীদের লাশ এখানে এনে দাফন করেছি। আমি জানি না কে প্রথম বারের মতো এই শস্য গুদামের জায়গাটাকে কবর দেয়ার স্থান হিসাবে ব্যবহার করেছে! ঐ দিন আমি কয়েকজন নগরবাসীর পথ অনুসরণ করেছিলাম, যারা যাচ্ছিলেন অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া অনুষ্ঠানে। আমি সতেরো জন যাযাবরের মতো ভ্রাম্যমাণ দড়াবাজী খেলার শিল্পীদের মৃত দেহগুলো এক এক করে সমতল পাটাতন ওয়ালা একটা ঠেলা গাড়ির উপর রেখে ছিলাম। রাতের অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে, ফং কুয়ো দেশের সৈনিকদের নিরাপত্তা চৌকির দৃষ্টি এড়িয়ে, অন্যান্য মানুষদের অনুসরণ করে আমি ঐ ভারী শবদেহবাহী ঠেলা গাড়িটা ঠেলে ঠেলে নিয়ে এসেছিলাম শস্য গুদামে। শস্য গুদামের চার পাশের খালি জায়গা ইতিমধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেছে নতুন কবরে। কবরের গর্ত খুঁড়ার জন্য আমাকে সব ধরনের সক্ষমতা কাজে লাগাতে হয়েছে, পুরো সমাধি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সরু ছোট গর্তে কবর হয়েছিলো নির্মম হিংস্রতায় অপমৃত্যু হওয়া ঐ দড়াবাজ শিল্পীদের। একই সাথে আগমন করা আরও কয়েকজন, যারা দাফনের কাজে এসেছেন, তাদের মৃত দেহ কবর দেয়ার কাজ এরই মধ্যে অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তারা কতোগুলো কবরের উপর বসে বসন্তের রাতের ঠান্ডা বাতাসের প্রভাব দূর করার জন্যই পান করছেন ঘন দেশী চোলাই মদ। এদের মধ্যে একজন আমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে দৌড়ে কাছে এসে বললেন, “এতো লাশ কবর দিতে এসেছেন আপনি একা? সবাই কি আপনার পরিবারের সদস্য?”
“না! ‘দড়ির উপর চলার রাজা’, দড়াবাজ শিল্পী দলের সদস্য ছিলো ওরা। আমিই ওদেরকে ঠেলে দিয়েছি ফং কুয়ো দেশের লোকজনের ছুরিকাঘাতের মধ্যে, আমাকে অবশ্যই ওদের প্রতি জনকে শান্তিতে বিশ্রাম নেয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে!”
“কবর খুব বেশি গভীর না করলেও হয়!”, ঐ মানুষটা খানিক ক্ষণ মৌণ থাকার পর বললো, “যা-ই হোক, বর্ষা কাল আসলে লাশগুলো পুরপুরি পঁচে যাবে। যা-ই বলো না কেনো, এ রকম কবরে শুইয়ে মাটি দেয়া আসলে নিজের বিবেক বিবেচনাকে প্রতারিত করা বৈ অন্য কিছু নয়! তবে এটা ঠিক মৃত মানুষকে কবর দেয়ার জন্য প্রয়োজন শারীরিক শক্তি, আর জানা থাকা দরকার কিছু পদ্ধতি ও কৌশল! যদি তুমি আমাকে কয়েক গøাস মদ কিনার টাকা দিতে রাজী থাকো, তাহলে আমি তোমাকে কবর দেয়ার কাজে সাহায্য করবো, আধা ঘন্টাও লাগবে না কবর দেয়ার কাজ পুরপুরি ভাবে শেষ করতে!”
“না, আমাকে একা কাজ করতে দাও!”, আমি দৃঢ়ভাবে শবযাত্রায় আসা ঐ মানুষটাকে প্রত্যাখ্যান করলাম।
আমার মনে আছে, ঐ রাতে চাঁদের আলো ছিলো না, পুরনো আমলের শস্য গুদামের চার পাশটা ছিলো আলকাতরার মতো কালো অন্ধকারে ঢাকা, রাতের আঁধারের সুযোগ নিয়ে মৃত দেহ সমাহিত করতে আসা অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়ায় অংশ গ্রহণকারীরা সবাই চলে গেছে, বাকী আছি শুধু আমি! আমার মনে আছে, একে বারেই ভয় লাগছিলো না আমার! দেখতে পাচ্ছিলাম আকাশটা একটু একটু করে নীলাভ উজ্জ্বল হয়ে উঠছিলো, এক টানা লম্বা সময় ধরে শাবল চালানোর কারণে আমার দুই হাতে ছড়িয়ে পড়েছিলো সূ² সূ² রক্তের দাগ, ব্যথা পাচ্ছিলাম না, এর মধ্যেই হাত দু’টো হয়ে পড়েছে অসাড়, অনুভূতি শূন্য! মোরগ তিন বার ডাকার সময় আমি ইয়েন লাঙ এবং ইউ সুয়ো-কে সবচেয়ে বড় করে কাটা একটা কবরের মধ্যে একত্রে সমাহিত করলাম, সবশেষে এক কোদাল ভিজা মাটি দিয়ে ইয়েন লাঙ-এর ধূসর রঙের মুখটা ঢেকে দিলাম, আরও ঢেকে দিলাম ইউ সুয়োর হাতে থাকা ঐ ছোট্ট খেলনাটা —- গড়িয়ে যাওয়ার গাছের ছোট্ট গুড়িটা! আমার দেহটা যেন একটা পতনোন্মুখ প্রাচীর —– একটা বিধ্বস্ত দেয়ালের মতো পড়ে যেতে চাচ্ছে! এখন আর কেউ-ই রইলো না, যে কিনা দুঃখ ভারাক্রান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আমাকে তিরস্কার করবে কিংবা কোন কাজ দেয়ার জন্য আমাকে বলবে! এখন আমার সাথে আসলেই পুরোনো কালের সর্বশেষ বন্ধনটি কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, ইয়েন লাঙ মরে গেছে, আমি সত্যি সত্যিই হয়ে গেছি একা —— সম্পূর্ণ একা!
আমি শুয়ে পড়লাম একটা নতুন কবরের উপর, কবরটা হচ্ছে ইয়েন লাঙ আর ইউ সুয়ো-র! (চলবে)