শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : অবিন্যাস্ত পোশাক পরিহিত সিয়ে দেশের রাজধানী বাসীরা এলোমেলো উসকোখুসকো চুল নিয়ে পাগলের মতো পূর্ব থেকে সোজা পশ্চিমে —– যে, যে দিকে পারে সেই দিকেই ছুটছে, পালাচ্ছে! আমি লক্ষ্য করলাম কয়েক জন পুরুষ বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে নগর প্রাচীর বেয়ে উঠছে দেয়ালের উপরে। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তীরের আঘাতে লুটিয়ে পড়তে শুরু করলো ওরা। আমি দেখতে পেলাম, ভেঙ্গে যাওয়া পাথরের টুকরার মতোই ঐ লোকগুলো শূন্যের মধ্য দিয়ে পতিত হচ্ছে নীচে, ওদের কন্ঠ থেকে ভেসে আসছে চরম হতাশা আর ক্রন্দন মিশ্রিত গোঙানির আওয়াজ!

ফং কুয়ো দেশের এক দল অশ্বারোহী সৈন্য যখন দ্রুত ছুটে আসলো দক্ষিণ তোরণ সরাইখানার সামনে, তখন আমি যেন পুরপুরি বুদ্ধি শূন্য হয়ে গেলাম। আমার মনে আছে, ইয়েন লাঙ আমাকে ওখানকার একটা ঘাসের স্তুপের দিকে নিয়ে গিয়ে ওটার ভিতরে ঠেলে ঢুকিয়ে দিয়েছিলো। “লুকিয়ে থাকুন, ওদের নজর এখানে পড়বে না!”, ইয়েন লাঙ বলেছিলো যে, সে ভাবছে ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো-কেও এখানে লুকিয়ে রাখবে। কিন্তু এই ঘাসের আঁটির স্তুপে শুধু একজন মানুষকেই লুকিয়ে রাখা সম্ভব ছিলো। ইউ সুয়ো-কে যখন আমার পাশে ধাক্কা দিয়ে ঠেলে ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলো, তখনই শ’ শ’, খস খস শব্দ করে ঘাসে আঁটিগুলো খুলে পড়তে শুরু করলো। আমি শুনতে পেয়েছিলাম ইয়েন লাঙ-এর বলা শেষ কথাটা, “ইউ সুয়ো, তুমি ভয় পেয়ো না! আমি তোমাকে বড় পিপা-টার মধ্যে লুকিয়ে রাখবো!”, তারপর ইয়েন লাঙ খুব তাড়াতাড়ি ঘাসের আঁটিগুলোকে এক সাথে সুমার করে শক্ত করে বেঁধে দিলো, আর আমার চোখের সামনে নেমে আসলো আলকাতরার মতো কালো অন্ধকার। আমার দৃষ্টি ঢাকা পড়ে গেলো শুকনা ঘাসের স্তরের মধ্যে।

আমি পতিত হলাম অন্ধকারের মধ্যে! শুনতে পেলাম সরাইখানার অঙ্গনে ভয় জাগানো হুমকির বার্তা স্বরূপ ঘোড়ার খুড়ের অস্পষ্ট আওয়াজ। শুনতে পেলাম গাছের উপরে এবং মুরগীর খোয়াড় আর গাড়ির পাটাতনের নীচে লুকিয়ে থাকা দড়াবাজ শিল্পী দলের ছেলেগুলোর একজনের পর আরেক জনের কন্ঠ থেকে নির্গত রক্ত হীম করা চিৎকার! শুনতে পেলাম ভোঁতা কোন অস্ত্র দিয়ে বাড়ি মেরে মটকার মতো বড় পিপাটা ভেঙ্গে চূর্ণ করে ফেলার আওয়াজ। আমার কানে এসেছিলো কম পক্ষে পনেরো জন দড়াবাজ শিল্পীর দুর্ভাগ্যজনক মৃত্যু যন্ত্রণার তীক্ষ্ণ আর্তনাদ! তাদের গলার আওয়াজ শুনে বুঝা যাচ্ছিলো যে, এই বিপর্যয়কর পরিস্থিতিটা ছিলো ওদের কাছে একেবারেই অপ্রত্যাশিত, যাকে মোকাবেলা করার কোন প্রস্তুতিই ঐ হত্যাযজ্ঞের শিকার হওয়া ছেলেগুলোর ছিলো না একটুও! বুঝা যাচ্ছিলো, কোন এক কালে ওরা ছিলো কতোই না আনন্দে বিভোর —— নিষ্পাপ সরল মনে ঘুরে বেড়ানোর জীবনে অভ্যস্ত খেলা দেখাবার শিল্পী!

আমি ইয়েন লাঙ-এর মৃত্যুর ঠিক আগ মুহূর্তের আর্তনাদকে অন্যান্য মৃত্যু-যন্ত্রণা ধ্বনিগুলো থেকে পৃথক করতে পারি নাই। আবার এমনও হতে পারে, সরাইখানার ভেতরে সংগঠিত বড় গণহত্যার সময় , হয়তো সে কোন শব্দই করে নাই! কৈশোর কালে যখন সে রাজ প্রাসাদের ভিতরে প্রবেশ করে শুরু করেছিলো নিজের কর্মজীবন, তখন থেকেই সব সময়ই সে ছিলো চুপচাপ আর লাজুক প্রকৃতির। পরে আঙ্গিনায় সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা মৃত দেহগুলোর মাঝে আমি খুঁজে পেয়েছিলাম ঐ মটকার মতো বড় পিপাটাকে। ইয়েন লাঙ বিধ্বস্ত মটকাটার মধ্যে বসে আছে! ওর মাথাটা ঝুলে আছে ভেঙ্গে যাওয়া বড় পিপাটার কিনারায়। ওর বুকের উপর আছে তিনটা ক্ষত স্থান। যেন তিনটা লাল ফুল ফুটে আছে, যা কিনা মানুষের চোখের দৃষ্টির জন্য হতে পারে একটা ধাক্কা, একটা অভিঘাত! আমি ওর কর্তিত মুন্ডুটা উঁচু করে ধরে সোজা করলাম। মৃত ব্যক্তিকে মুখোমুখি করলাম, বিপর্যয় পরবর্তী শূন্য মহাকাশের দিকে! বসন্ত কালের সূর্য কিরণ রক্তের কটু গন্ধ ভরা বাতাস ভেদ করে এসে পড়ছে, আলোকিত করছে চার পাশের সব কিছু। ইয়েন লাঙ-এর জ্বল জ্বলে লাল হয়ে ওঠা গালে কয়েক ফোঁটা স্বচ্ছ অশ্রæ বিন্দু দৃশ্যমান হয়ে আছে। ওর ঠোঁটের প্রান্তে ললাটের নীচে এখনও কমতি হয় নাই, সেই বিশেষ বৈশিষ্ট্য পূর্ণ লাবণ্যের যা কিনা ফুটে উঠতো ওর চেহারায় সেই বালক বয়সে, যে বছর সে খোজা দাস হিসেবে সবে মাত্র এসেছিলো, সেই কান্তিযুক্ত অবয়ব সবার হৃদয়ে সৃষ্টি করতো ওর প্রতি একটা বিশেষ স্নেহ ভরা আকর্ষণ!

পিপার ভিতরে জমে থাকা পানি ও মানুষের রক্ত মিশে একাকার হয়ে আছে। আমি ভুলে গিয়েছিলাম ইয়েন লাঙ-এর হাঁটুর নীচে কি আছে, তা দেখার! আমি ওর দেহটাকে টেনে বের করার পর খুব সহজেই ভাঙ্গা মটকার মধ্যে নজরে আসলো, আরেকটা মৃত দেহ! আর সেই দেহটা হচ্ছে আট বছরের ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো-র। ওর বেগুনি বর্ণের জামাটা এরই মধ্যে লাল রঙে রঞ্জিত হয়ে গেছে! ছোট্ট মেয়েটি ওর কোলের মধ্যে দৃঢ়ভাবে জড়িয়ে রেখেছে খেলা দেখাবার সময় ওর নিজের ব্যবহার করা একটা ছোট গাছের গুড়ি —-জটিলতাহীন ছোট মাপের সহজ-সরল খেলা দেখাবার একটা উপকরণ! ইউ সুয়ো-র দেহে তলোয়ারের আঘাতের কোন চিহ্ন আমার নজরে আসে নাই! কিন্তু ওর শ্বাস-প্রশ্বাস ইতিমধ্যেই যেন বরফ শীতল হয়ে জমে গেছে, নিথর হয়ে গেছে পুরপুরি! আমার মনে হচ্ছে ইয়েন লাঙ নিজের দেহটা দিয়ে ছোট্ট মেয়েটাকে ঢেকে রেখেছিলো, ওর শরীরে ফং কুয়ো দেশের সৈন্যদের তলোয়ারের আঘাত লাগতে দেয় নাই। তবে ইয়েন লাঙ-এর মৃত দেহটার চাপেই হয়তো শ্বাসরুদ্ধ হয়ে দুর্ভাগা ছোট্ট মেয়েটার মৃত্যু হয়েছে!

শেষ পর্যন্ত আমি আমার প্রতি সর্বদা একনিষ্ঠ অনুগত বিশ্বস্ত সেবক দাসটিকে চিরতরে হারালাম, যে ছিলো আমার প্রতি ঈশ্বরের কৃপা-উপহার স্বরূপ! ইয়েন লাঙ সব সময়ই কাজ করেছে আমার জন্য। আসলে সে আমাকে বাঁচাতে গিয়েই নিজে মরেছে! আর এভাবেই সে তার আনুগত্যের শপথ বাক্যকে বাস্তবায়িত করেছে, যে শপথ সে নিয়েছিলো ঐ বছর, যে বছর সে প্রবেশ করেছিলো শুদ্ধাচার অনুশীলন গৃহে কাজ করার নিমিত্তে! আমার মনে আছে, সে যখন বারো বছর বয়সে প্রথম সিয়ে রাজ প্রাসাদে এসেছিলো, তখন আমাকে বলেছিলো, “জাঁহাপনা, আমি আপনার জন্য মরতেও পারবো।”, কত বছর পরে, সে এখন সত্যিই মারা গেছে! সে সাথে করে নিয়ে গেছে ওকে দেয়া আমার এক মাত্র উপহারটি! পঞ্চাশ ভরি রূপার বিনিময়ে স্বচ্ছ ধারা-র ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো-কে আমি ক্রয় করেছিলাম ওর জন্যই! আমার মনে হয়, আমার দেয়া এই উপহারটাই ছিলো ওর জীবনের শেষ বারের মতো একটা হৃদয় ছোঁয়া ভালোবাসার প্রাপ্তি, আর এর মধ্যেই হয়তো অন্তর্নিহিত ছিলো ভিন্ন এক ধরনের ঐশ্বরিক ইচ্ছার বহিঃপ্রকাশ!

গণহত্যা এরই মধ্যে থেমেছে, ফং কুয়ো দেশের সৈন্যরা তাদের অস্ত্র গুটিয়ে ধারালো তলোয়ার খাপের মধ্যে ভরে ফেলেছে, ওরা নগর চত্বরে সমবেত হয়েছে মদ খাওয়ার জন্য। আরও এক দল কালো পোশাক পরিহিত অশ্বারোহী সৈন্য শুরু করেছে গণহত্যা থেকে রক্ষা পাওয়া রাজধানী বাসীদের প্রতি সমন জারী করা! ঐ সৈন্যরা হুকুম দিচ্ছে সিয়ে রাজ প্রাসাদের দিকে যাওয়ার জন্য। আমি বেঁচে যাওয়া মানুষের দলের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করে জায়গা করে নিলাম, হেঁটে চললাম সিয়ে রাজ প্রাসাদের দিকে। বেশ কয়েক বার টপকিয়ে যেতে হচ্ছিলো রাস্তার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বেশ কয়েকটা মৃত দেহ! জন স্রোতের মধ্যে কেউ কেউ লুকিয়ে লুকিয়ে অভিশাপ দিচ্ছিলো ফং কুয়ো দেশের রাজা চাও মিয়েন-কে! আমি হাঁটতে হাঁটতে দেখছিলাম আমার দুই হাতের তালু। হাতের তালুগুলোর উপর রক্ত-লাল রঙের ছাপ পড়েছে —— শুকিয়ে গেছে সেই ছাপের দাগ! আমি ঐ লাল দাগ মুছে ফেলার চেষ্টা করছি —- কিন্তু হায়, ওটা যে কোন ভাবেই করতে পারছি না! আমি অবশ্য জানি দাগগুলোর অস্বাভাবিক স্থায়িত্বের কারণ! আসলে আমি নই, আমার নয় —– এখানে লেগে আছে অন্য মানুষের রক্ত, যা শুধুমাত্র ইয়েন লাঙ কিংবা ইউ সুয়ো-রই নয়! আরও লেগে আছে রানীর মর্যাদা থেকে অপসারিত তাই নিয়াং, শিক্ষা নবিশ সেনা কর্মকর্তা ইয়াং সোং, রাজ চিকিৎসক ইয়াং তোং, সেই সাথে আছে সীমান্ত এলাকায় নিহত হওয়া সৈনিক ও সেনা কর্মকর্তাদের রক্ত ! আমি জানি ওরা এরই মধ্যে ওদের হাতের বিশেষ ছাপ খোদাই করে দিয়েছে আমার হাতের তালুর ঠিক মাঝখানে! তাহলে প্রশ্ন একটা থেকে যাচ্ছে, মৃত্যুর আমন্ত্রণ শুধু আমাকেই কেনো রেহাই দিয়েছে? তবে কি আমি একজন, যন্ত্রণাকর পাপে পূর্ণ —— ক্ষমার অযোগ্য অপরাধে অপরাধী মানুষ? অকস্মাৎ এক ধরনের দুঃখ বোধ আমার হৃদয়কে আঁকড়িয়ে ধরলো, ক্রন্দন রতো গণহত্যার বিপর্যয় থেকে বেঁচে যাওয়া রাজধানীবাসীদের সাথে আমিও ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলাম! আর ওটাই ছিলো সত্যিকারের সাধারণ মানুষ হিসাবে আমার কর্মজীবনের প্রথম চোখ বেয়ে নেমে আসা অশ্রæ জলের ফোঁটা!

সিয়ে রাজ বংশের ষষ্ঠ সম্রাট তুয়ান ওয়েন-এর মৃত্যু হয়েছিলো সিয়ে রাজ প্রাসাদের সেই বিশাল অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে! তুয়ান ওয়েন পুড়ে অঙ্গার হয়ে গিয়েছিলো! পরবর্তী কালে মানুষ জন বিলাস কেন্দ্র প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের ভিতর থেকে খুঁজে পায় ওর দেহাবশেষ! ওর চেহারাকে সনাক্ত করা যাচ্ছিলো না, শুধু একটা জিনিস সনাক্ত করা হয়েছিলো, সেটা ছিলো শরীরের শীর্ষ দেশে থাকা কালো চিতার অবয়ব খোচিত রাজ মুকুটটি, যেটার মধ্যে খোদাই করা ছিলো স্বর্ণ, জেড পাথর আর নানা রকম অমূল্য রত্ন! বিশাল আগুন ওটাকে গ্রাস করে নাই। সেটা আগের মতোই আছে! মরে যাওয়া মানুষটার মাথার খুলিতে টান টান করে কুঞ্চিত হয়ে এঁটে গিয়েছে!

ষষ্ঠ সিয়ে সম্রাট তুয়ান ওয়েন-এর সিংহাসনে আসিন থাকার সময় কাল ছিলো মাত্র ছয়টা বছর! সে হচ্ছে সর্বকালের মধ্যে সবচেয়ে সল্প আয়ুর সিয়ে সম্রাট! একই সাথে সব চাইতে দুর্ভাগ্যবান মানুষ! পরবর্তী প্রজন্মের ইতিহাসবিদরা মনে করেন, তুয়ান ওয়েন ছিলো একটা বিজিত দেশের সম্রাট —— ওর নির্লিপ্ততা, অহঙ্কার, দম্ভ এবং অতিরিক্ত আত্ম বিশ্বাস একটা চমৎকার সুন্দর দেশকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে গেছে!

আমি হয়ে গেছি একজন বাইরের মানুষ, যার সাথে কোন কিছুরই সম্পর্ক নাই। এ বছরের বসন্ত কালে আমি বহু বার তুয়ান ওয়েন-কে স্বপ্নে দেখেছি, আমরা একই পিতার ঔরসে ভিন্ন মাতার গর্ভজাত সন্তান, বৈমাত্রেয় ভাই; যদিও সে ছিলো আমার সহজাত শত্রু! স্বপ্নের মধ্যে আমরা ছিলাম প্রশান্ত এবং উদ্বেগহীন! আমরা একই ভান্ড থেকে পান করেছি, স্বপ্নের মাঝেই কালো চিতার অবয়ব খোচিত মুকুট নিয়ে আমাদের মধ্যাকার দীর্ঘ দিনের বৈরিতার হয়েছে চূড়ান্ত অবসান! আমরা উপলব্ধি করতে পেরেছি যে, আমরা দু’জনেই ইতিহাস কর্তৃক হয়েছি প্রতারিত!

চন্দ্র বর্ষের তৃতীয় মাসের নবম দিনে, ফং কুয়ো দেশের দশ হাজার সৈন্যের একটা বিরাট দল ঝাঁটিয়ে পরিষ্কার করে নেয়ার মতো নির্বিচারে লুণ্ঠন চালায় সিয়ে দেশের সর্বত্র! সতেরোটা বিভাগ আর আশিটা জেলা—- একে বারেই খালি-নিঃশেষ হয়ে পরিণত হয় বস্তায় ভরা দ্রব্যে!

উপকথা সুলভ ‘মহান’ ব্যক্তিত্ব ফং কুয়ো দেশের সম্রাট চাও মিয়েন এসে দাঁড়িয়েছেন সিয়ে রাজ প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের সামনে, উনি মুখোমুখি হয়েছেন ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের পর বেঁচে থাকা মানুষগুলোর চোখ বেয়ে নেমে আসা উষ্ণ অশ্রু জলের —– এক সাথে জড়ো করলে যার পরিমাণ হতে পারে একটা মহাসাগর সম! চাও মিয়েন নিজ হাতে উত্তোলন করলেন নীল রঙের জোড়া ঈগলের অবয়ব খোচিত ফং কুয়ো দেশের পতাকা, তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করলেন, “শক্তিহীন পচনধরা সিয়ে দেশের পতন ঘটেছে ইতিমধ্যেই! এখন থেকে আসমানের নীচে, জমিনের উপরে, সকল যুদ্ধে অপরাজেয় জোড়া ঈগলের প্রতিকৃতি সম্বলিত নীল নিশান বরাবর আরোপিত হচ্ছে স্বর্গীয় আশীর্বাদের তকমা!”
্রসিয়ে প্রাসাদের গোপন ইতিহাস-এর নথিপত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চন্দ্র বর্ষের তৃতীয় মাসের বিপর্যয়ে সিয়ে দেশের রাজ পরিবারের প্রায় এক’শ জন সদস্য এবং তাদের উত্তরসূরীদের প্রায় সম্পূর্ণভাবেই নিঃশেষিত করে ফেলা হয়েছিলো। রক্ষা পেয়েছিলেন মাত্র একজন মানুষ, যিনি নিজের আভিজাত্যকে অবনমিত করে পরিণত হয়েছিলেন একজন সাধারণ মানুষে, তিনি হচ্ছেন পঞ্চম সিয়ে সম্রাট তুয়ান পাই! বাস্তবে রাজকীয় মর্যাদা হারানোর পর তুয়ান পাই পরিণত হয়েছিলেন সর্বত্র ঘুরে বেড়ানোর ভবঘুরে —– একজন দড়ির উপর হাঁটার দক্ষতা অর্জনকারী দড়াবাজী খেলার শিল্পীতে!

পূর্ব সূর্য জেলার অধিবাসী লেখক সিয়াও সিয়াও শাং, তাঁর লেখা সিয়ে প্রাসাদের গোপন ইতিহাস গ্রন্থের শেষ ভাগ সিয়ে দেশের নানা গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মৃত্যুর খুঁটিনাটি দিয়ে পূর্ণ করেছেন, সর্বমোট লিপিবদ্ধ আছে :
সিয়ে সম্রাট তুয়ান ওয়েন: মৃত্যু হয় প্রজ্জ্বলিত সিয়ে রাজ প্রাসাদের অগ্নিকাণ্ডের মধ্যে।
শান্ত রাজ কুমার তুয়ান উ : মৃত্যুর কারণ, সিয়ে রাজ প্রাসাদের বিশাল অগ্নিকাণ্ড। (চলবে)