শামীম আহসান মহাবুল্লাহ : আমি এই পতিতাদের দালানের সামনে ঘুরা ফেরা করার সময়, এক জন খানসামা এসে দু’টি লন্ঠনের মধ্যে একটা উঠিয়ে নিলো, সে ঘাড় বাঁকিয়ে আমার উদ্দেশ্যে বললো, “লি নামের মেয়েটি এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, ওর কাছে খদ্দের এসেছে! চাং নামের মেয়ে-টির হাতে অবশ্য এই মুহূর্তে কোন কাজ নেই। জমিদার পুত্র, তুমি উপরে যেতে পারো, তুমি কি চাং নামের মেয়েটির সাথে দেখা করতে চাও?”

“আমি কোন জমিদার পুত্র নই, আমি হচ্ছি দড়ির উপর দিয়ে চলার রাজা!”, আমি বললাম।
“তোমারা কি খেলা দেখিয়ে রোজগার করো?”, খানসামাটি আমার পোশাকের দিকে লক্ষ্য করলো। তারপর সে ফিক করে হেসে বললো, “খেলা দেখানোও ভালো কাজ! যদি তোমার টাকা হয় অনেক! এখনকার সময়ে প্রচলিত ধারাই হচ্ছে, টাকা খরচ করে মুখের হাসি কেনা, আর এ কাজে জগতের সবচেয়ে সাশ্রয়ী জায়গা তো হচ্ছে এটাই! তুমি তো জানো না, দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার সময় কখন তুমি নীচে পড়ে যাবে! নীচে পড়ে মরে গেলে, তখন তো চাইলেও আর আনন্দ ফুর্তি করতে পারবে না!”

“আমি হচ্ছি দড়ির উপর চলার রাজা, কখনও-ই আমি দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার সময় পড়ে যাবো না, পড়ে গিয়ে মরে যাবো না!”, আমি খানসামাটিকে চলে যেতে দিলাম না। ওর কাছ থেকে হুই ছোট রানীর হদিস জানতে চাইলাম। আমি তাকে বললাম, “নয় নম্বর মেয়েটি কোথায় গেছে? যদি আমাকে ওর হদিস জানাও, তবে তুমি আমার কাছ থেকে টাকা পাবে পুরস্কার হিসেবে!”

“নবম মেয়েটি রাজধানী শহরে গেছে বড় অঙ্কের টাকা রোজগার করতে! সবাই বলে, নয় নম্বর, ঐ মেয়েটি দেহ ব্যবসা করেছে ঠিকই, তবে সে অন্য আট দশটা সাধারণ পতিতার মতো ছিলো না! তুমি কি জানো, ওর কাছে ছিলো রাজ প্রাসাদের গোপন খবর! সে সম্রাটকে সঙ্গ দিয়েছে! ওর বখরা অন্য সব পুরনো পতিতাদের পাওয়া অংশের সমান ছিলো না। একটু রাগ হওয়াতেই সে এখান থেকে চলে গেছে।”, খানসামাটি আমার খুব কাছাকাছি কানে কানে কি যেন বলতে গিয়েও হঠাৎ থমকে গেলো। সে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, “আসলে তুমি কে বলো তো ? তুমি সব সময় এখানে ঘুর ঘুর করো, শুধুই কি নয় নম্বর মেয়েটির খোঁজে?”

আমি জানি না, ওকে কি ভাবে আমি ব্যাখ্যা করতে পারি আসল ঘটনা, সে কারণে মুখে যা আসে তা-ই বললাম, “আমি হচ্ছি ওর নাগর!”

খানসামার চেহারার অভিব্যক্তি বদলিয়ে গেছে, সে হয়ে গেছে হত বিহ্বল, চরম বিস্মিত! তার হাত থেকে লন্ঠনটা দুম করে নীচে পড়ে গেলো। “ও মা!”, খানসামাটি উচ্চ স্বরে চেঁচিয়ে উঠলো, “তুমিই কি হচ্ছো সিংহাসনচ্যুত সম্রাট তুয়ান পাই তুমি এসেছো অগ্নি ময়ুর দালানে প্রাক্তন রানী, নয় সংখ্যা ধারী সেই মেয়েটিকে খুঁজতে!”, খানসামাটি আনন্দে আত্মহারা হয়ে আমার জামার হাতা টেনে ধরে দালানের দরজা দিয়ে ভিতরের দিকে ছুটতে ছুটতে বললো, “উপরে আসো, চা খাও, তোমার একটা পয়সাও খরচ করা লাগবে না, কি সৌভাগ্য আমার! আমিই প্রথম তোমার স্বর্গীয় মুখমণ্ডলটা দেখতে পেয়েছি!”

আমার জামার একটা হাতা এই সময় টান খেয়ে জামা থেকে আলাদা হয়ে ছিঁড়ে গেলো। খানসামাটির এমন ‘পর্যবেক্ষণ’ আর এই ‘আবিষ্কার’, আমাকে করে তুললো আতঙ্কিত আর ভীতসন্ত্রস্ত! আমি যেন আমার অতি পছন্দের জামার ছিঁড়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া হাতাটার সাথে বেশ খানিকটা রূঢ় ব্যবহার করেই সম্পর্কচ্ছেদ করলাম। ঐ হাতাটাকে সাথে না নিয়ে ওখানে রেখেই ছুটলাম বড় রাস্তার দিকে! শুনতে পেলাম, সেই বুদ্ধিমান সূক্ষ্ণ পর্যবেক্ষক পুরুষ মানুষটি অগ্নি ময়ুর দালানের সামনে থেকে আমাকে উচ্চ স্বরে ডাকছে, “সিয়ে সম্রাট ফিরে আসো! আমি তোমার জন্য নয় নম্বর মেয়েটিকে খুঁজে দিবো! তোমার এক পয়সাও খরচ করতে হবে না!”, আমি এক-হাতা বিচ্ছিন্ন হওয়া ঢোলা জামাটা খুলে ফেলে ওর দিকে ফিরিয়ে দুলিয়ে নাড়লাম। ওর মতোই একই রকম উচ্চ স্বরে ওর কথারই জবাব দিলাম,
“না! ওকে খুঁজার দরকার নাই! ওকে আর কখনও-ই খুঁজার দরকার নাই!”

ঐ কথাগুলো সত্যিই ছিলো আমার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে বেরিয়ে আসা শব্দ! হুই ছোট রানী এবং আমার ব্যক্তিত্ব ও ভাগ্য কর্তৃক নির্ধারিত জীবনের চলার পথ সম্পূর্ণ বিপরীত, একে বারেই আলাদা! হুই ছোট রানী তো যেন ইতিমধ্যেই পরিণত হয়েছে একটা স্বাধীন শ্বেতশুভ্র বিহঙ্গে! আমরা তো একই আকাশের নীচে উড়ে বেড়াচ্ছি, আমাদের দেখা হওয়া আর বিদায় নিয়ে চলে যাওয়া শুধুই যেন হাত নাড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ! সব কিছুই যেন প্রমাণ করছে যে, বিহঙ্গকুলের প্রতি আমাদের প্রত্যেকেরই আছে গভীর আকর্ষণ, প্রগাঢ় শ্রদ্ধা, আমরা দু’জনেই যেন উড়ে যাচ্ছি পাখীদের মতো, বিভোর হয়ে আছি স্বপ্নের ঘোরে, এক সাথে নয়, আলাদা আলাদাভাবেই!

দু’জনের পথই আলাদা, কিন্তু গন্তব্য একই!

‘দড়ির উপর চলার রাজা’ দড়াবাজী খেলার দলের ভিতরের গোপন কথা অগ্নি ময়ুর দালানের খানসামাটি কর্তৃক উন্মোচিত হয়ে গেলো। আর এই খবরটা আন্দোলিত করলো সৌরভ জেলা সদর শহরকে! পরের দিন আমাদের অস্থায়ী আবাস তোঙ পরিবার-এর স্মৃতি মন্দিরের সমাবেশ কক্ষের সদর দরজার সামনে ভীড় জমালো অনেক মানুষ! কেতাদুরস্ত পোশাক পরিহিত জেলা প্রশাসনের তরুণ কর্মকর্তারা নিঃশব্দে দুই পাশে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় ছিলেন, আমরা কখন বেরিয়ে আসবো! অবশ্য এই তরুণ কর্মকর্তাদের সারির মধ্যে ছিলেন এক জন বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ, তিনি হচ্ছেন সৌরভ জেলার জেলা হাকিম তু পি ছঙ!

ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো বাইরে এসে মানুষের ভীড় দেখে এবং হট্টগোলের শব্দ শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলো। সে ভয় পেয়ে ভিতরে গিয়ে লুকিয়ে ছিলো, সহস পাচ্ছিলো না আবার বাইরে আসতে! ইয়েন লাঙ ভিতরে গিয়ে ওকে কোলে তুলে জড়িয়ে ধরে রাখছিলো। ঐ দিন আমি আধা ঘুম আধা জাগরিত চোখ নিয়ে উপস্থিত হলাম এক দল মানুষের সামনে যারা মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে আমাকে সম্মান দেখাচ্ছিলো। আমি শুনতে পাচ্ছিলাম কেউ কেউ আমাকে উদ্দেশ্য করে উচ্চ স্বরে বলছিলো, দীর্ঘজীবী হোন ! খানিকটা সময়ের জন্য আমি কিংকর্তব্য বিমূঢ? হয়ে পড়েছিলাম। ৭২ বছরেরও বেশী বয়সের সৌরভ জেলার তু পদবী ধারী জেলা-হাকিম আমার পায়ের কাছে মাটিতে নুয়ে পড়ে আমার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন! তার চেহারায় ফুটে উঠেছে লজ্জিত হওয়ার মিশ্র অভিব্যক্তি! আরও আছে প্রগাঢ় বিস্ময় এবং অল্প হলেও খানিকটা ভয়ের ছাপ! “অনুগ্রহ করে এই জেলার এই প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে ক্ষমা করেন, যে কিনা চোখ থাকতেও হয়ে গেছে অন্ধের মতো! চিনতে পারে নাই সম্মানিত গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে! চিনতে পারে নাই মঙ্গলময় শুভ লক্ষণ যুক্ত সিয়ে সম্রাটকে!”, তু পদবী ধারী জেলা-হাকিম পাথরের পাটাতন বিছানো পথের উপর মাথা ঠুকে বললেন, “অনুগ্রহ করে সিয়ে সম্রাট আমার বাড়ীতে আসুন, একটু পদধূলি দেন!”

“আমি তো সিয়ে সম্রাট নই , আপনি কি জানেন না যে, আমি অনেক আগেই অবমূল্যায়ীত হয়ে পরিণত হয়েছি একজন সাধারণ মানুষে?”

“এখনকার সময়ে সিয়ে সম্রাট দুর্ভাগ্যের মুখামুখি হয়েছেন। কিন্তু তা সত্বেও সব কিছুরই উর্ধ্বে আছে একটা ব্যাপার, আর সেটা হলো তিনি তো মহান দেহধারী দেশের রাজাধিরাজ! তিনি তাঁর ভ্রমণ পথে এসেছেন এই জেলায়, এটা তো জেলা বাসীদের সৌভাগ্য। তাঁর এই আগমনের ব্যাপারটা সাধারণ মানুষের মধ্যে আলোচিত হবে। ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ এক নজর দেখতে আসবে তাঁকে! এই নগন্য কর্মকর্তা উদ্বিগ্ন বোধ করছে সিয়ে সম্রাটের নিরাপত্তার বিষয়ে। তাই সম্রাটের প্রতি সবিনয় অনুরোধ, যতো দ্রæত সম্ভব এই স্মৃতি মন্দির-এর অঙ্গন ছেড়ে চলে আসুন, আপনার জন্য নিবেদিত আমার বাস ভবনে, তা’হলে এই জেলায় থাকা কালিন সময়ে সাধারণ মানুষ আপনাকে বিরক্ত করতে পারবে না!”

“এমনটার বোধ হয় একে বারেই কোন দরকার নাই!”, আমি নীচু স্বরে বিড়বিড় করে তু বংশ পদবী ধারী জেলা-হাকিম-এর প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলাম। আমি বললাম, “এখন আমি শুধু মাত্র এক জন দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার কৌশল প্রদর্শন কারী শিল্পী মাত্র! কে আসবে একজন দড়াবাজ শিল্পীকে মারতে? চার দিকে ভীড় করে দড়াবাজী খেলা দেখতে আসা দর্শকদের আমি ভয় পাই না! এক জন কলা কৌশল প্রদর্শন কারী শিল্পীর জন্য দর্শক যতো বেশী আসে ততই ভালো! সৌরভ জেলা-র সাধারণ মানুষ আমাকে যথেষ্ট উৎসাহিত করেছে, করেছে প্রশংসা আমার কলা কৌশল প্রদর্শনীর! আমার বিশ্বাস দড়ির উপর দিয়ে হাঁটার কৌশলে আমি অর্জন করেছি অপ্রতিদ্ব›দ্বী দক্ষতা!”

এই দিন ‘দড়ির উপর চলার রাজা’ নামের দলটার দড়াবাজী খেলা প্রদর্শনীর সময়, আমার মনে হচ্ছিলো, যদি ঈশ্বর সহায় হোন, তা’হলে দর্শকরা পিপীলিকার ঝাঁকের মতো রাস্তার মাথায়, খোলা জায়গায়, চার পাশের সব দিকে ভীড় জমিয়ে দাঁড়াবে, দলের দক্ষতার প্রদর্শনী দেখবে! ইয়েন লাঙ এবং ছোট্ট মেয়ে ইউ সুয়ো-র গাছের গুড়ি গড়িয়ে নেয়ার খেলা এরই মধ্যে দর্শক নন্দিত হয়েছে ব্যপকভাবে। দর্শকদের সামনে বকের মতো দড়ির উপর আমার দাঁড়িয়ে থাকার ব্যাপারটা তৈরী করেছে, প্রবল বৃষ্টির মাঝে বজ্র নাদের মতো আনন্দ উচ্ছ¡াসের ধ্বনি! ভীড় করা মানুষ পাগলের মতো চিৎকার করছে, কেউ কেউ কেঁদে উঠছে, ওরা বলছে, ‘সিয়ে সম্রাট! সিয়ে সম্রাট! দড়ির উপরের রাজা! দড়ির রাজা!’, আমি জানি, একজন দড়াবাজী খেলা দেখাবার শিল্পী হিসাবে আমি এরই মধ্যে জয় করেছি মানুষের মন! যেমন অলৌকিক, তেমনই আবেগ ভরা এই মন জয়ী জনপ্রিয়তা!
আমি আরও শুনতে পাচ্ছি একটা অস্পষ্ট প্রতিধ্বনির শব্দ, ওটা আসছিলো অজানা ধূসর রঙের ক্লান্ত-শ্রান্ত একটা চড়ুই পাখীর মুখ থেকে! ঐ ধূসর চড়ুই পাখীটা অগ্নি ময়ুর দালানের ছাঁইচ-এর উপর বসে ছিলো, এখন উড়ে আসছে আমার উদ্দেশ্যে! ওর কন্ঠ থেকে নির্গত হচ্ছে মানুষের হাহাকারকে ছাড়িয়ে যাওয়া বিলাপের শব্দ
উ —— উ—–উ (—– —-)
যার ভাবার্থ হতে পারে নাই —– নাই —— নাই!

শুরুটা হয়েছিলো সৌরভ জেলা শহরের রাস্তার মাথা থেকে। আমার ‘দড়ির উপর চলার রাজা’ দড়াবাজী খেলার দলের খ্যাতি তৈরী করেছিলো একটা বিশাল আনন্দের উচ্ছ্বাস! কোন একটা সময় কালে, এই দলটা অর্জন করেছিলো ব্যপক জনপ্রিয়তা। পরবর্তীতে সিয়ে রাজ প্রাসাদের গোপন ইতিহাস-এর নথিতে এসেছে : ‘দড়ির উপর চলার রাজা’, নামের দড়াবাজ শিল্পী দলের প্রদর্শনীর সময় রাস্তা গুলো ফাঁকা হয়ে যেতো, সব মানুষ এসে ভীড় করতো দড়াবাজী খেলার অনন্য দক্ষতা আর নৈপুণ্য দেখার জন্য। পূর্ব সূর্য জেলার অধিবাসী লেখক সিয়াও সিয়াও শাং-এর মতে, ‘দড়ির উপর চলার রাজা’ দলের সাফল্য প্রকৃত পক্ষে একটা ব্যতিক্রমধর্মী অকস্মাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনা : “সিয়ে দেশের পরবর্তী কালীন প্রলম্বিত ইতিহাস! যখন দেশটা ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েছে, সাধারণ মানুষের মধ্যে এসেছে ব্যাপক অসন্তুষ্টি, সকল ব্যবসা-বানিজ্য আর পেশাদার মানুষদের কর্ম ক্ষেত্রে এসেছে স্থবিরতা! এমনই সময়, বিনোদন প্রেক্ষাগৃহ নাশপতি বাগান গীতি মঞ্চ-এর ভিতরে ‘দড়ির উপর চলার রাজা’ দড়াবাজ দলের জনপ্রিয়তার কারণ যে শুধু মাত্র অনন্য সাধারণ দক্ষতার প্রদর্শন, আর দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ার বুৎপত্তি ও কৌশল —- তা নয়! এর বাইরেও ছিলো আরেকটা ব্যাপার, আর সেটা হলো মূল খেলোয়াড় ‘দড়ির উপর হাঁটার রাজা’-র দেহটা! সেই খেলোয়াড়টি —– সেই মানুষটি ছিলো সিংহাসন হারানো এক জন সম্রাট! ক্রিড়া নৈপুণ্য দেখার পাশাপাশি আমজনতার অন্তরে ছিলো প্রবল আকাঙ্ক্ষা, ঐ মানুষটিকে স্বচক্ষে দেখার, যে মানুষটি কোন এক কালে ছিলেন দেশের রাজাধিরাজ! আর পরবর্তীতে জীবিকা নির্বাহ করেছেন দড়াবাজী শিল্পকলার কসরত দেখিয়ে, সেই অদ্ভুত মানুষটির অনন্য সাধারণ দক্ষতা, যার নজির সেই সুদূর অতীত কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত আর দ্বিতীয়টি নেই —- এমন কে আছে যে নিজের চোখে দেখতে চাইবে না সেই অসাধারণ মানুষটিকে?”
্রসিয়ে রাজ প্রাসাদের গোপন ইতিহাস-এর নথি, এ ব্যাপারে হয়তো সঠিক বিবেচনা প্রসূত মতামতই দিয়েছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস, কারো পক্ষেই জানা সম্ভব নয় আমার পরবর্তী কালের অর্ধ-জীবনের সব গুলো গল্প! সেই মানুষটা যদি পূর্ব সূর্য জেলার সিয়াও সিয়াও শাং হোন, কিংবা অন্য যে কোন এক জন বিরক্তিকর একঘেয়ে বুদ্ধিজীবিই হোন! কেউ-ই সেই গোপন ইতিহাসের নথি পাঠ করে বুঝতে পারবে না, আমার বাকী অর্ধেক জীবনের সব কাহিনী গুলোর মর্ম আর ভাবার্থ!

ঐ বছরের বসন্ত কাল নাগাদ, দড়াবাজী খেলোয়াড়দের দলটা স¤প্রসারিত হয়েছে, পরিণত হয়েছে আঠারো সদস্যের একটা শিল্পীদের দলে। বিশ ধরনের বিভিন্ন কলা কৌশল প্রদর্শনের দক্ষতা অর্জন করেছে এই বড় দলটি। (চলবে)